Surah Al Qalam Tafseer
Tafseer of Al-Qalam : 3
Saheeh International
And indeed, for you is a reward uninterrupted.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
নামকরণ :
কলম (الْقَلَم) একটি বস্তু যা দ্বারা লেখা হয়। এখানে কলমের অর্থ সাধারণ কলমও হতে পারে। এতে ভাগ্যলিপির কলম এবং ফেরেশতা ও মানবের লেখার কলম অন্তর্ভুক্ত। এখানে বিশেষত ভাগ্যলিপির কলমও বোঝানো যেতে পারে। ‘উবাদা বিন সামেত (রাঃ) বলেন : আমার পিতার মৃত্যুর সময় তিনি আমাকে ডেকে বললেন : আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা সর্ব প্রথম কলম সৃষ্টি করেছেন। তারপর বললেন : তুমি লেখ। কলম বলল : কী লেখব? আল্লাহ তা‘আলা বললেন : তুমি ভাগ্য লেখ এবং শেষ দিবস পর্যন্ত যা কিছু হবে তাও লেখ। (আহমাদ : ৫/৩১৭, তিরমিযী হা. ৩৩১৯, আবূ দাঊদ হা. ৪৭০০, সনদ সহীহ।) এ শব্দটি এ সূরার প্রথম আয়াতে উল্লেখ আছে বিধায় উক্ত নামে সূরার নামকরণ করা হয়েছে।
১-৭ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
ص، ق، ن এ জাতীয় “হুরূফুল মুক্বাত্বআত” বা বিচ্ছিন্ন অক্ষর সম্পর্কে সূরা বাক্বারার শুরুতে আলোচনা করা হয়েছে। এসব হুরূফের প্রকৃত উদ্দেশ্য কী তা আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন। তবে সুদ্দী, কালবী ও মুজাহিদ (রহঃ) বলেন : নূন দ্বারা উদ্দেশ্য হল সেই মাছ যা সাত জমিনের নিচে রয়েছে।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন : নূন শব্দটি ‘আর-রহমান’ শব্দের শেষ অক্ষর, সূরা ইউনুসে الر রয়েছে, সূরা মুমিনে حم রয়েছে, আর এখানে ‘ن’ উল্লেখ রয়েছে। সব মিলে الرحمن হয়েছে (কুরতুবী)।
القلم একটি বস্তু যা দ্বারা লেখা হয়। এটি শিক্ষা গ্রহণের অন্যতম একটি উপকরণ। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(الَّذِيْ عَلَّمَ بِالْقَلَمِ)
“যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন” (সূরা আলাক ৯৬ : ৪)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন : আল্লাহ তা‘আলা যে কলম সৃষ্টি করেছেন এখানে তার কসম করছেন। উবাদা বিন সামেত (রাঃ) বলেন : আমার পিতার মৃত্যুর সময় তিনি আমাকে ডেকে বললেন : আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি : নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা সর্ব প্রথম কলম সৃষ্টি করেছেন। তারপর বললেন : তুমি লেখ। কলম বলল : কী লিখব? আল্লাহ তা‘আলা বললেন : তুমি ভাগ্য লেখ এবং শেষ দিবস পর্যন্ত যা কিছু হবে তাও লেখ। (আহমাদ ৫/৩১৭, তিরমিযী হা. ৩৩১৯, আবূ দাঊদ হা. ৪৭০০, সনদ সহীহ।)
কাতাদাহ বলেন : কলম বান্দার প্রতি আল্লাহ তা‘আলার একটি বিশেষ নেয়ামত। কেউ বলেছেন : আল্লাহ তা‘আলা সবার আগে কলম সৃষ্টি করার পর তা দ্বারা যা ভবিষ্যতে ঘটবে তা লাওহে মাহফূজে লিখে কলমকে আবার তাঁর নিকট আরশের ওপরে রেখে দিয়েছেন। তারপর দ্বিতীয় কলম সৃষ্টি করে জমিনে যা কিছু হবে তা লেখার নির্দেশ দিয়েছেন। (কুরতুবী)
مَا يَسْطُرُوْنَ অর্থাৎ ما يكتبون বা কলম যা লেখে। ইবনু আব্বাস বলেন : ফেরেশতারা আদম সন্তানের যে সকল আমল লেখে। আল্লাহ তা‘আলা এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিসের শপথের জবাবে বলছেন : নিশ্চয়ই হে মুহাম্মাদ! তোমার প্রভুর অনুগ্রহে তুমি পাগল নও। যেমন মক্কার কাফিররা বলে :
(وَقَالُوْا يٰٓأَيُّهَا الَّذِيْ نُزِّلَ عَلَيْهِ الذِّكْرُ إِنَّكَ لَمَجْنُوْنٌ)
“তারা বলে ‘ওহে যার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে! তুমি নিশ্চয় উন্মাদ।” (সূরা হিজর ১৫ : ৬)
غَيْرَ مَمْنُوْنٍ
অর্থাৎ নিরবিচ্ছিন্ন, অশেষ। নবুওয়াতের দায়িত্ব পালনে যে সকল কষ্টের সম্মুখীন হয়েছো তার জন্য আখিরাতে অশেষ পুরস্কার প্রস্তুত আছে।
(خُلُقٍ عَظِيْمٍ)
অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে অনুগ্রহ করে যে চরিত্র দান করেছেন তার দ্বারা আপনি অনেক মহৎ। ইবনু আব্বাস বলেন :
علي دين عظيم من الأديان
তুমি সকল ধর্মের মধ্যে মহান ধর্মের ওপর প্রতিষ্ঠিত, সে ধর্ম হল ইসলাম। এর চেয়ে কোন ধর্ম আল্লাহ তা‘আলার কাছে প্রিয় নয় এবং অন্য কোন ধর্মে তিনি সন্তুষ্ট নন। (কুরতুবী) আমের (রাঃ) বলেন : আমি উম্মুল মু’মিনিন আয়িশাহ (রাঃ) কে বললাম : আমাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চরিত্র সম্পর্কে অবগত করুন। তিনি বললেন : আপনি কি কুরআন পড়েননি? কারণ :
فَإِنَّ خُلُقَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّي اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ الْقُرْآنَ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চরিত্র ছিল কুরআন। (সহীহ মুসলিম, আবূ দাঊদ, আহমাদ হা. ২৪৬৪৫)
আল্লাহ তা‘আলা কেবল আমাদের নাবীর চরিত্রের ক্ষেত্রেই عَظِيْمٍ শব্দটি ব্যবহার করেছেন, অন্য কোন নাবীর ক্ষেত্রে তা ব্যবহার করেননি।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجٰهِلِيْنَ)
“তুমি ক্ষমাপরায়ণতা অবলম্বন কর, সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং অজ্ঞদেরকে এড়িয়ে চল।” (সূরা আ‘রাফ ৭ : ১৯৯)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন :
(لَقَدْ جَا۬ءَكُمْ رَسُوْلٌ مِّنْ أَنْفُسِكُمْ عَزِيْزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيْصٌ عَلَيْكُمْ بِالْمُؤْمِنِيْنَ رَؤُوْفٌ رَّحِيْمٌ)
“অবশ্যই তোমাদের মধ্য হতেই তোমাদের নিকট এক রাসূল এসেছে। তোমাদেরকে যা বিপন্ন করে তা তার জন্য কষ্টদায়ক। সে তোমাদের মঙ্গলকামী, মু’মিনদের প্রতি সে দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু।” (সূরা তাওবাহ ৯ : ১২৮)
আনাস (রাঃ) বলেন : আমি দশ বছর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খেদমত করেছি, তিনি কোনদিন আমাকে বলেননি, হে আনাস! তুমি এ কাজ করলে কেন, আর এ কাজ করলে না কেন? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : নিশ্চয়ই আমি উত্তম চরিত্র পরিপূর্ণ করার জন্য প্রেরিত হয়েছি। (আহমাদ হা. ৮৯৫২, সহীহ) মোটকথা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবনটা ছিল কুরআনের বাস্তব প্রতিচ্ছবি।
আবূ যার (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : তুমি যেখানেই থাক আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় কর, কোন খারাপ কাজ হয়ে গেলে সাথে সাথে একটি ভাল কাজ কর, কেননা সে ভাল কাজ খারাপ কাজের অপরাধ মুছে দেবে। আর মানুষের সাথে ভাল ব্যবহার কর।
আবূ দারদা (রাঃ) বলেন : নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : কিয়ামতের দিন মুমিনের নেকীর পাল্লায় উত্তম চরিত্রের চেয়ে আর কিছুই ভারী হবে না। (তিরমিযী হা. ২০০২, সহীহ) এ ছাড়াও উত্তম চরিত্রের ব্যাপারে অনেক সহীহ হাদীস রয়েছে।
(فَسَتُبْصِرُ وَيُبْصِرُوْنَ)
অর্থাৎ যখন সত্য প্রকাশিত হবে এবং কিছুই গোপন থাকবে না তখন তুমি মুহাম্মাদ জানতে পারবে এবং তারাও জানতে পারবে। প্রকৃত পক্ষে কে পথভ্রষ্ট-তুমি, না তারা। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَإِنَّآ أَوْ إِيَّاكُمْ لَعَلٰي هُدًي أَوْ فِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ)
“নিশ্চয়ই আমরা অথবা তোমরা সৎপথের ওপর প্রতিষ্ঠিত কিংবা স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে পতিত।” (সূরা সাবা ৩৪ : ২৪) মূলত এখানে মক্কার কুরাইশ নেতাদের ধমক দেওয়া হয়েছে। কারণ এ সূরার সিংহভাগ ওয়ালিদ বিন মুগীরাহ, আবূ জাহল ও অন্যান্য কাফির নেতাদের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে।
الْمَفْتُوْنُ অর্থ : ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন المجنون বা পাগল। ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেছেন : যে সত্যের ব্যাপারে ভ্রান্তিতে আছে এবং তা থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে। (ইবনু কাসীর)
সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অনুসারী হিসাবে প্রত্যেক মুসলিমের উচিত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চরিত্র গ্রহণ করা। তাহলে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র সর্বত্র শান্তি বিরাজ করবে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. আল্লাহ তা‘আলা প্রথমে কলম সৃষ্টি করেছেন।
২. মানুষের তাকদীর পূব থেকেই নির্ধারিত।
৩. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উত্তম চরিত্রের অধিকারী যা আল্লাহ তা‘আলা নিজেই সত্যায়ন করেছেন।
৪. আমাদের রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চরিত্রে চরিত্রবান হওয়া উচিত।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings