68:24
أَن لَّا يَدۡخُلَنَّهَا ٱلۡيَوۡمَ عَلَيۡكُم مِّسۡكِينٌ٢٤
Saheeh International
[Saying], "There will surely not enter it today upon you [any] poor person."
১৭-৩৩ নং আয়াতের তাফসীর যেসব কাফির রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নবুওয়াতকে অস্বীকার করতো, এখানে তাদের দৃষ্টান্ত বর্ণনা করা হচ্ছে যে, যেমন ঐ বাগানের মালিকরা আল্লাহর নিয়ামতের অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিল এবং নিজেদেরকে আল্লাহর আযাবে নিক্ষেপ করেছিল, এই কাফিরদেরও অবস্থা অনুরূপ যে, তাদের আল্লাহর নিয়ামত অর্থাৎ তাঁর রাসূল (সঃ)-এর রিসালাতের প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ অর্থাৎ অস্বীকৃতি তাদেরকেও আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও ক্রোধের মধ্যে পতিত করে। তাই মহাপ্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ আমি এদেরকে পরীক্ষা করেছি, যেমন পরীক্ষা করেছিলাম বাগানের মালিকদেরকে। ঐ বাগানে বিভিন্ন প্রকারের ফল ছিল। ঐ লোকগুলো পরস্পর শপথ করে বলেছিল যে, অতি প্রত্যুষে অর্থাৎ রাত কিছুটা বাকী থাকতেই তারা গাছের ফল আহরণ করবে, যাতে দরিদ্র, মিসকীন এবং ভিক্ষুকরা বাগানে হাযির হওয়ার সুযোগ না পায় ও তাদের হাতে কিছু দিতে না হয়, বরং সমস্ত ফল তারা বাড়ীতে নিয়ে আসতে পারে। তারা তাদের এ কৌশলে কৃতকার্য হবে ভেবে খুব আনন্দ বোধ করলো। তারা আনন্দে এমন আত্মহারা হয়ে পড়লো যে, আল্লাহ থেকেও বিস্মরণ হয়ে গেল। তাই ইনশাআল্লাহ কথাটিও তাদের মুখ দিয়ে বের হলো না। এ জন্যেই তাদের এ শপথ পূর্ণ হলো না। রাতারাতিই তাদের পৌঁছার পূর্বেই আসমানী বিপদ তাদের সারা বাগানকে জ্বালিয়ে ভস্ম করে দিলো। তাদের বাগানটি এমন হয়ে গেল যে, যেন তা কালো ছাই ও কর্তিত শস্য। মুসনাদে আহমাদে হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা গুনাহ হতে বেঁচে থাকো। জেনে রেখো যে, পাপের কারণে বান্দাকে ঐ রিযিক হতে বঞ্চিত রাখা হয় যা তার জন্যে তৈরী করে রাখা হয়েছিল।” অতঃপর তিনি (আরবি) হতে (আরবি) পর্যন্ত আয়াত দু’টি পাঠ করেন। ঐ লোকগুলো তাদের পাপের কারণে তাদের বাগানের ফল ও শস্য লাভ হতে বঞ্চিত হয়েছিল। সকালে তারা একে অপরকে ডাক দিয়ে বলে ও ফল আহরণের ইচ্ছা থাকলে আর দেরী করা চলবে না, চলো এখনই বের হয়ে পড়ি।হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, ওটা আঙ্গুরের বাগান ছিল। তারা চুপে চুপে কথা বলতে বলতে চললো যাতে কেউ শুনতে না পায় এবং গরীব মিসকীনরা কোন টের না পায়। যেহেতু তাদের গোপনীয় কথা ঐ আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলার নিকট গোপন থাকতে পারে না সেই হেতু তিনি বলেন, তাদের এ গোপনীয় কথা ছিলঃ 'তোমরা সতর্ক থাকবে, যেন কোন গরীব মিসকীন টের পেয়ে আজ আমাদের বাগানে আসতে না পারে। কোনক্রমেই কোন মিসকীনকে আমাদের বাগানে প্রবেশ করতে দিবে না।’ এভাবে দৃঢ় সংকল্পের সাথে গরীব দরিদ্রদের প্রতি ক্রোধের ভাব নিয়ে তারা তাদের বাগানের পথে যাত্রা শুরু করলো। সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, স্বয়ং তাদের গ্রামের নামই ছিল হারদ। কিন্তু এটা সঠিক কথা নয়। তাদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, বাগানের ফল তাদের দখলে রয়েছে। সুতরাং তারা ফল আহরণ করে সবই বাড়ীতে নিয়ে আসবে। কিন্তু বাগানে পৌঁছে তারা হতভম্ব হয়ে পড়ে। দেখে যে, সবুজ-শ্যামল শস্যক্ষেত এবং পাকা পাকা ফলের গাছ সব ধ্বংস ও বরবাদ হয়ে গেছে। ফলসহ সমস্ত গাছ পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। এখন এগুলোর আধা পয়সারও মূল্য নেই। গাছগুলোর জ্বলে যাওয়া কালো কালো কাণ্ড ভয়াবহ আকার ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছে। প্রথমতঃ তারা মনে করলো যে, ভুল করে তারা অন্য কোন বাগানে এসে পড়েছে। আবার ভাবার্থ এও হতে পারে যে, তারা বললো ও আমাদের কাজের পন্থাই ভুল ছিল, যার পরিণাম এই দাঁড়ালো। যা হোক পরক্ষণেই তাদের ভুল ভেঙ্গে গেল। তারা বললোঃ ‘আমাদের বাগান তো এটাই, কিন্তু আমরা হতভাগ্য বলে আমরা বাগানের ফল লাভে বঞ্চিত হয়ে গেলাম। তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সৎ ও ন্যায়পন্থী ছিল সে তাদেরকে বললোঃ দেখো, আমি তো তোমাদেরকে পূর্বেই বলেছিলাম। তোমরা ইনশাআল্লাহ্ বলছো না কেন?' সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, তাদের যুগে সুবহানাল্লাহ্ বলাও ইনশাআল্লাহ্ বলার স্থলবর্তী ছিল। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বলেন যে, এর অর্থই হলো ইনশাআল্লাহ্ বলা। এটাও বলা হয়েছে যে, তাদের উত্তম ব্যক্তি তাদেরকে বলে? “দেখো, আমি তো তোমাদেরকে পূর্বেই বলেছিলাম যে, তোমরা কেন আল্লাহ্ তা'আলার পবিত্রতা ঘোষণা এবং প্রশংসা করছো না? এ কথা শুনে তারা বললোঃ আমাদের প্রতিপালক পবিত্র ও মহান। নিশ্চয়ই আমরা নিজেদের উপর যুলুম করেছি। যখন শাস্তি পৌছে গেল তখন তারা আনুগত্য স্বীকার করলো, যখন আযাব এসে পড়লো তখন তারা নিজেদের অপরাধ মেনে নিলো। অতঃপর তারা একে অপরকে তিরস্কার করতে লাগলো এবং বলতে থাকলো। আমরা বড়ই মন্দ কাজ করেছি যে, মিসকীনদের হক নষ্ট করতে চেয়েছি এবং আল্লাহ্ পাকের আনুগত্য করা হতে বিরত থেকেছি। তারপর তারা সবাই বললোঃ এতে কোন সন্দেহ নেই যে, আমাদের হঠকারিতা সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এ কারণেই আমাদের উপর আল্লাহর আযাব এসে পড়েছে। অতঃপর তারা বললোঃ ‘সম্ভবতঃ আমাদের প্রতিপালক আমাদেরকে এর চেয়ে উত্তম বিনিময় প্রদান করবেন। অর্থাৎ দুনিয়াতেই তিনি আমাদেরকে এর চেয়ে ভাল বদলা দিবেন। অথবা এও হতে পারে যে, আখিরাতের ধারণায় তারা এ কথা বলেছিল। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। পূর্বযুগীয় কোন কোন গুরুজনের উক্তি এই যে, এটা ইয়ামনবাসীর ঘটনা। হযরত সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রঃ) বলেন যে, এ লোকগুলো ছিল যারওয়ানের অধিবাসী যা (তৎকালীন ইয়ামনের রাজধানী) সানাআ হতে ছয় মাইল দূরবর্তী একটি গ্রাম। অন্যান্য মুফাসসির বলেন যে, এরা ছিল হাবশের অধিবাসী। মাযহাবের দিক দিয়ে তারা আহলে কিতাব ছিল। ঐ বাগানটি তারা তাদের পিতার নিকট হতে উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছিল। তাদের পিতার নীতি এই ছিল যে, বাগানে উৎপাদিত ফল ও শস্যের মধ্য হতে বাগানের খরচ বের করে এবং নিজের ও পরিবার পরিজনের সারা বছরের খরচ বের করে নিয়ে বাকীগুলো আল্লাহর নামে সাকা করে দিতেন। পিতার ইন্তেকালের পর তাঁর এই সন্তানরা পরস্পর পরামর্শ করে বললোঃ “আমাদের পিতা বড়ই নির্বোধ ছিলেন। তা না হলে তিনি এতোগুলো ফল ও শস্য প্রতি বছর এদিক-ওদিক দিয়ে দিতেন না। আমরা যদি এগুলো ফকীর মিসকীনদেরকে প্রদান না করি এবং তা যথারীতি সংরক্ষণ করি তবে অতি সত্বর আমরা ধনী হয়ে যাবো।” তারা তাদের এ সংকল্প দৃঢ় করে নিলো। ফলে তাদের উপর ঐ শাস্তি এসে পড়লো যা তাদের মূল সম্পদকেও ধ্বংস করে দিলো। তারা হয়ে গেল সম্পূর্ণ রিক্তহস্ত। এরপর আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ শাস্তি এরূপই হয়ে থাকে। অর্থাৎ যে কেউই আল্লাহর হুকুমের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং তাঁর নিয়ামতের মধ্যে কার্পণ্য করতঃ দরিদ্র ও অভাবগ্রস্তদের হক আদায় করে না, বরং তাঁর নিয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, তার উপর এরূপই শাস্তি আপতিত হয়ে থাকে। এটা তো হলো পার্থিব শাস্তি, আখিরাতের শাস্তি তো এখনো বাকী রয়েছে যা কঠিনতর ও নিকৃষ্টতর। ইমাম বায়হাকী (রঃ) একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) রাত্রিকালে ফসল কাটতে এবং বাগানের ফল আহরণ করতে নিষেধ করেছেন।
Arabic Font Size
30
Translation Font Size
17
Arabic Font Face
Help spread the knowledge of Islam
Your regular support helps us reach our religious brothers and sisters with the message of Islam. Join our mission and be part of the big change.
Support Us