Surah Al Mulk Tafseer
Tafseer of Al-Mulk : 1
Saheeh International
Blessed is He in whose hand is dominion, and He is over all things competent -
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
নামকরণ :
মুলক (الْمُلْكُ) শব্দের অর্থ : রাজত্ব, কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা ইত্যাদি। দুনিয়া ও আখেরাতের সকল প্রকার রাজত্ব ও ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার হাতে। তবে দুনিয়ার রাজত্ব ও ক্ষমতা ক্ষণিকের জন্য আল্লাহ তা‘আলা মানুষের হাতে দিলেও তার প্রকৃত ও একচ্ছত্র মালিক একমাত্র তিনি। তিনি যখন ইচ্ছা কারো কাছ থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নেন এবং যাকে ইচ্ছা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেন। الْمُلْكُ শব্দটি অত্র সূরার প্রথম আয়াতে উল্লিখিত আছে। সেখান থেকেই উক্ত নামে সূরার নামকরণ করা হয়েছে।
ফযীলত :
সূরা মুলক একটি বিশেষ ফযীলতপূর্ণ সূরা। আবূূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন :
إِنَّ سُورَةً فِي الْقُرْآنِ ثَلَاثُونَ آيَةً شَفَعَتْ لِصَاحِبِهَا حَتّي غُفِرَ لَهُ تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ
নিশ্চয়ই কুরআনে ত্রিশ আয়াতবিশিষ্ট একটি সূরা রয়েছে যা কিয়ামত দিবসে পাঠককে সুপারিশ করবে ফলে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে। তা হল সূরা মুলক। (আবূূ দাঊদ হা. ১৪০০, তিরমিযী হা. ২৮৯১, নাসায়ী হা. ৩১০, সহীহ)
আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : কুরআনে একটি সূরা আছে যা পাঠকের জন্য আল্লাহ তা‘আলার সাথে ঝগড়া করবে, এমনকি ঝগড়া করতে করতে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। তা হল সূরা মুলক। (দুররুল মানসুর ৬/২৪৬, মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৭/১২৩১, বণর্নাকারীগণ নির্ভরযোগ্য )
জাবের (রাঃ) বলেন : নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
(ال۬مّ۬ﭐﺆ تَنْزِیْلُ الْکِتٰبِ) (সূরা সিজদাহ) ও
(تَبَارَكَ الَّذِيْ بِيَدِهِ الْمُلْكُ)
(সূরা মুলক) না পড়ে ঘুমাতেন না। (তিরমিযী হা. ২৮১২, মিশকাত হা. ২১৫৫, সহীহ)
এ সূরা পাঠ করলে কবরের আযাব মাফ করে দেওয়া হয় বলে যে হাদীস রয়েছে তা দুর্বল। (তিরমিযী হা. ২৮৯০, মিশকাত হা. ২১৫৪)
সূরার শুরুতে আল্লাহ তা‘আলার বড়ত্ব, মানুষের জীবন ও মৃত্যু সৃষ্টির মূল লক্ষ্য তাদেরকে পরীক্ষা করা, তারকারাজি সৃষ্টি করার হিকমত, জাহান্নামীদেরকে যখন জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে তখন তাদের অবস্থা ইত্যাদি উল্লেখ করা হয়েছে। তারপর জাহান্নামকে তার নির্দিষ্ট আকৃতি, গুণাগুণ ও রক্ষকসহকারে প্রস্তুত করা, অতীতকালের কাফিরদের ওপর আপতিত আকস্মিক বিপদাপদ অবতরণ করা এবং শেষের দিকে আল্লাহ তা‘আলার কয়েকটি নেয়ামতের কথা উল্লেখ করা হয়ছে।
১-৫ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
সূরার শুরুতেই আল্লাহ তা‘আলা নিজের মহিমা, গৌরব ও মর্যাদা বর্ণনা করেছেন এবং সংবাদ দিচ্ছেন যে, তাঁর হাতেই সকল রাজত্ব ও ক্ষমতা, তিনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন, তাই তিনি বলেছেন :
(وَھُوَ عَلٰی کُلِّ شَیْءٍ قَدِیْرُ)
তিনি সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। সুতরাং তাঁকে কোন কিছুই অক্ষম করতে পারবে না। তাঁর ঊর্ধ্বে কেউ উঠতে পারবে না, তাঁর ইচ্ছাকে কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। তিনি যা ইচ্ছা করেন তাই হয়, নিজের ইচ্ছার ওপর তিনি কর্তৃত্ববান ও সর্বজয়ী।
تَبَارَكَ শব্দটি بركة থেকে উদ্ভুত। এর শাব্দিক অর্থ বেশি হওয়া। এ শব্দটি আল্লাহ তা‘আলার শানে ব্যবহার হলে এর অর্থ হয় মুশরিকরা আল্লাহ তা‘আলার সাথে যে সকল শির্ক করে তা থেকে তিনি সুমহান ও সুউচ্চ এবং সৃষ্টির প্রতি তাঁর কল্যাণ ও দয়া অনেক।
(بِيَدِهِ الْمُلْكُ) ‘যাঁর হাতে সর্বময় কর্তৃত্ব’ এখানে আল্লাহ তা‘আলার হাত অর্থে يد শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। কুরআনে আল্লাহ তা‘আলার হাত বুঝানোর জন্য এরূপ শব্দের ব্যবহার ৫/৬ বার এসেছে। সূরা মায়িদার ৬৪ নম্বর, ফাত্হের ১০ নম্বর, সোয়াদের ৭৫ নম্বর, সূরা ইয়াসীনের ৮৩ নম্বর এবং সূরা মু’মিনূনের ৮৮ নম্বর আয়াতে। এসব আয়াতে يد শব্দ ব্যবহার দ্বারা সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে, আল্লাহ তা‘আলার হাত রয়েছে এবং সে হাত প্রকৃত হাত, কোন রূপক নয় এবং তা আল্লাহ তা‘আলার শানে যেমন উপযোগী তেমন। সৃষ্টির কোন হাতের সাথে সাদৃশ্য দেওয়া যাবে না এবং অস্বীকারও করা যাবে না। অনেকে বলতে পারেন, এখানে হাত দ্বারা প্রকৃত হাত উদ্দেশ্য নয়, বরং রূপক অর্থে আল্লাহ তা‘আলার ক্ষমতাকে বুঝোনো হয়েছে, যেমন মানুষ বলে থাকে-এ বিষয়ে আমার হাত নেই। আমরা বলব, মানুষের প্রকৃত হাত আছে বলেই তো এখানে হাত শব্দটি ব্যবহার করতে পারা যাচ্ছে। এখন যদি কোন প্রাণী বলে : এ বিষয়ে আমার কোন হাত নেই, তাহলে কি তার বলা শোভা পাবে? না, কারণ প্রাণীর তো হাতই নেই, সে রূপক অর্থে ব্যবহার করবে কিভাবে? যার প্রকৃত হাত বা অন্যান্য অঙ্গ রয়েছে সে কেবল সে সকল অঙ্গ রূপক অর্থে ব্যবহার করতে পারে। তাছাড়া কুরআন ও সহীহ হাদীসে এ গুণটি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত। সুতরাং আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আক্বীদাহ হল-কোন অপব্যাখ্যা, অস্বীকৃতি ও সাদৃশ্য ছাড়াই আল্লাহর প্রকৃত হাত রয়েছে। কিন্তু হাতের ধরণ, গঠন ও প্রকৃতি সম্পর্কে একমাত্র আল্লাহই জানেন, আমরা জানি না।
তারপর আল্লাহ তা‘আলা মানুষের মৃত্যু-জীবন সৃষ্টির লক্ষ্য উদ্দেশ্য উল্লেখ করে বলেন যে, তিনি মানুষের মৃত্যু-জীবন সৃষ্টি করেছেন পরীক্ষা করার জন্য-কে সৎ আমলে শ্রেষ্ঠ। সৎ আমলের পরিচয় তুলে ধরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : সে ব্যক্তি ভাল কর্মী, যে আল্লাহ তা‘আলার হারামকৃত বিষয়াদি থেকে সর্বাধিক বেঁচে থাকে এবং আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য করার জন্য সদাসর্বদা উন্মুখ হয়ে থাকে। (কুরতুবী) মানুষের মন মগজে এ সত্যটি প্রতিষ্ঠিত হলে মানুষ সদা সতর্ক থাকে, সচেতন ও ছোট বড় যাবতীয় গুনাহ থেকে বিরত হয় এবং মনের গোপন ইচ্ছা ও প্রকাশ্য কাজ কর্ম সম্পর্কে হুশিয়ার হয়। বিশ্ব সাম্রাজের ওপর আল্লাহ তা‘আলার যে সর্বময় কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা বিরাজমান এবং তাঁর ইচ্ছা যে বাধা-বন্ধনহীন তার প্রমাণ এই যে, তিনি জীবন ও মৃত্যুর স্রষ্টা। জীবন বলতে দুনিয়া ও আখিরাতের উভয় জীবন উদ্দেশ্য। এখানে মৃত্যুকে জীবনের পূর্বে উল্লেখ করার কারণ হল, মানুষ মূলত মৃত ছিল পরে তাকে জীবন দান করা হয়েছে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(كَيْفَ تَكْفُرُوْنَ بِاللّٰهِ وَكُنْتُمْ أَمْوَاتًا فَأَحْيَاكُمْ ثُمَّ يُمِيْتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيْكُمْ ثُمَّ إِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ)
“কিভাবে তোমরা আল্লাহকে অস্বীকার করছ? অথচ তোমরা নির্জীব ছিলে, পরে তিনিই তোমাদেরকে জীবন দান করেছেন, এরপর তিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন, পরে আবার জীবিত করবেন, অবশেষে তোমাদেরকে তাঁরই দিকে ফিরে যেতে হবে।” (সূরা বাক্বারাহ ২ : ২৮ )
মরণ ও জীবনের স্বরূপ : উক্ত আয়াত থেকে বুঝা গেল, মরণ ও জীবন দুটি সৃষ্ট বস্তু। জীবন যেমন দেহের একটি অবস্থার নাম, মৃত্যুও তেমনি একটি অবস্থা। মুমূর্ষু ব্যক্তির দিকে দৃষ্টিপাত করলেই তা অনুমান করা যায়। সহীহ হাদীসে এসেছে : কিয়ামতের দিন যখন জান্নাতীরা জান্নাতে এবং জাহান্নামীরা জাহান্নামে চলে যাবে, তখন মৃত্যুকে একটি ভেড়ার আকারে উপস্থিত করা হবে এবং জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝে জবাই করে ঘোষণা করা হবে : এখন যারা যে অবস্থায় আছ অনন্তকাল সে-অবস্থায়ই থাকবে। এখন থেকে কারো মৃত্যু হবে না। (সহীহ বুখারী হা. ৬৫৮৪)
তারপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৃষ্টির নৈপুণ্যতা উল্লেখ করছেন। আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে সৃষ্টির শৈল্পিক পূর্ণতা ও চমৎকারিত্ব সম্পর্কে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন। সৃষ্টির এ পূর্ণতা ও চমৎকারিত্ব চক্ষুকে করে বিস্ময়ে বিস্ফারিত, অভিভূত ও হতভম্ব।
طِبَاقًا অর্র্থ : طبقة فوق طبقة
এক স্তরের ওপর অপর স্তর। তা হল সাত স্তর যা একটি অন্যটির সাথে মিলিত নয়। সাহাবী ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : দুনিয়ার আকাশ ও তার উপরের আকাশের মাঝে দূরত্ব্ হল পাঁচ শত বছরের দূরত্বের সমান। অনুরূপ প্রত্যেক আকাশের মাঝে পাঁচ শত বছরের সমান দূরত্ব রয়েছে। (মু‘জামুল কাবীর, ইমাম তাবরানী হা. ৮৯৮৭)
تَفٰوُتٍ বক্রতা, অসামঞ্জস্য, ত্র“টি ও খুঁত। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টিতে কোন প্রকার ত্র“টি ও অসামঞ্জস্যতা বলতে কিছুই নেই। তাই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৃষ্ট আকাশের দিকে তাকিয়ে চিন্তা করতে বললেন যে, দেখ কোন দোষ ত্র“টি খুঁজে পাও কিনা। আল্লাহ তা‘আলা পুনরায় ভালভাবে দৃষ্টি দিতে বললেন যাতে মনের ভেতর কোন প্রকার দ্বিধা না থাকে। তারপর আল্লাহ তা‘আলা নিজেই বলছেন, তাঁর সৃষ্টিতে কোন প্রকার ত্র“টি দেখতে পাবে না। বরং তোমার দৃষ্টি কোন প্রকার দোষ ত্র“টি ও অসামঞ্জস্যতা না দেখে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসবে। যে ব্যক্তি এ বিশ্বজগত এবং তার নিয়ম-নীতি ও স্বভাব-প্রকৃতি সম্পর্কে নূ্যূনতম তথ্য জানে যেমনটি আধুনিক বিজ্ঞান কিছু কিছু তথ্য উদ্ঘাটন করছে, সে নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে বিস্ময়ে স্তম্ভিত ও হতবাক না হয়ে পারবে না। এজন্যই কুরআন মানুষকে এ বিশ্ব প্রকৃতি ও তার বিস্ময়কর উপাদানগুলো পর্যবেক্ষণ করতে উদ্ধুদ্ধ করে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তারকারাজির সৃষ্টির উদ্দেশ্য কী তা ব্যক্ত করছেন। আল্লাহ তা‘আলা তারকাকে তিনটি কারণে সৃষ্টি করেছেন :
১. দুনিয়ার আকাশকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করার জন্য।
২. শয়তানের জন্য ক্ষেপাণাস্ত্রস্বরূপ। যেমন অত্র সূরার ৫ নম্বর আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে।
৩. পথ প্রদর্শনের জন্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَعَلٰمٰتٍ ط وَبِالنَّجْمِ هُمْ يَهْتَدُوْنَ )
“এবং পথ নির্ণায়ক চিহ“সমূহও। আর তারা নক্ষত্রের সাহায্যেও পথের নির্দেশ পায়।” (সূরা নাহল ১৬ : ১৬)
অতএব এ তিনটি কাজ ছাড়া তারকারাজিকে অন্য কোন উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ব্যবহার করা নিষেধ। যেমন তারকা দিয়ে বৃষ্টি প্রার্থনা করা, তারকা দ্বারা সুলক্ষণ-কুলক্ষণ গ্রহণ করা ইত্যাদি।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. সূরা মুলকের ফযীলত জানতে পারলাম।
২. আল্লাহ তা‘আলার হাত রয়েছে তার প্রমাণ পেলাম।
৩. মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে-কে উত্তম আমলে শ্রেষ্ঠ তা পরীক্ষা করার জন্য।
৪. আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টির নৈপুণ্যতা জানলাম।
৫. তারকারাজিকে মাত্র তিনটি কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। এ তিনটি ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে ব্যবহার করা নিষেধ।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings