Surah Taghabun Tafseer
Tafseer of At-Taghabun : 14
Saheeh International
O you who have believed, indeed, among your wives and your children are enemies to you, so beware of them. But if you pardon and overlook and forgive - then indeed, Allah is Forgiving and Merciful.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
১৪-১৮ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
শানে নুযূল :
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তাঁকে জনৈক ব্যক্তি
(يٰٓأَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْآ إِنَّ مِنْ أَزْوَاجِكُمْ وَأَوْلَادِكُمْ عَدُوًّا لَّكُمْ فَاحْذَرُوْهُمْ)
এ আয়াতটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন : এরা হল ঐ সকল লোক যারা মক্কাতে ইসলাম গ্রহণ করেছিল। তারা ইচ্ছা করল নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট চলে আসবে কিন্তু তাদের স্ত্রী সন্তানরা আসতে অবাধ্য হল। অতঃপর তারা যখন নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট চলে আসল তখন অন্যদেরকে দেখতে পেল যে, তারা দীনের ব্যাপারে অনেক জ্ঞান অর্জন করে নিয়েছে। তখন তারা স্ত্রী-সন্তানদের শাস্তি দিতে ইচ্ছা পোষণ করল। তখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (তিরমিযী হা. ৩৩১৭, হাসান)।
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে তাদের স্ত্রী-সন্তানদের ব্যাপারে সতর্ক করে বলছেন যে, তোমাদের স্ত্রী-সন্তানদের অনেকেই তোমাদের জন্য শত্রু। অর্থাৎ অনেক স্ত্রী-সন্তান আছে যাদের কারণে মানুষ সৎআমল থেকে দূরে সরে যায়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(يٰٓأَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تُلْهِكُمْ أَمْوَالُكُمْ وَلَآ أَوْلَادُكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللّٰهِ ج وَمَنْ يَّفْعَلْ ذٰلِكَ فَأُولٰ۬ئِكَ هُمُ الْخٰسِرُوْنَ)
“হে মু’মিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ হতে উদাসীন না করে-যারা এমন করবে (উদাসীন হবে) তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত।” (সূরা মুনাফিকুন ৬৩ : ৯)
এ জন্য আল্লাহ তা‘আলা বলেন فَاحْذَرُوْهُمْ অর্থাৎ দীনের ব্যাপারে তাদের থেকে সতর্ক থেকো।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : নিশ্চয়ই শয়তান আদম সন্তানকে ঈমান থেকে বিরত রাখার জন্য তার পথে বসে এবং বলে : তুমি ঈমান আনবে? তোমার নিজের দীন ও বাপ-দাদার দীন বর্জন করবে? কিন্তু আদম সন্তান তার কথা না শুনে ঈমান আনে। তারপর শয়তান আদম সন্তানের হিজরতের পথে প্রতিবন্ধক হয় এবং বলে তুমি হিজরত করবে? তোমার সম্পদ ও পরিবার ছেড়ে দেবে? কিন্তু তার কথা না শুনে সে হিজরত করে। তারপর জিহাদের পথে প্রতিবন্ধক হয় এবং বলে : তুমি জিহাদ করে নিজেকে হত্যা করবে? তোমার স্ত্রীকে অন্যজন বিবাহ করে নেবে, তোমার সম্পদ ভাগ করে নেবে। কিন্তু তার কথার বিপরীত করে জিহাদ করে এবং শহীদ হয়। আল্লাহ তা‘আলার হক হল তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো। (সহীহ, নাসায়ী হা. ৩১৩৪, সহীহুল জামে হা. ১৬৫২)
মুজাহিদ (রহঃ) এ আয়াতের তাফসীর বলেন : মানুষ স্ত্রী, সন্তান ও সহায়-সম্পত্তির কারণে আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্ন করে, আল্লাহ তা‘আলার নাফরমানী করে। তাদের ভালবাসায় আল্লাহ তা‘আলার বিধানকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে। (ইবনু কাসীর)।
(إِنَّمَآ أَمْوَالُكُمْ وَأَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌ)
অর্থাৎ সম্পদ সন্তান-সন্ততি আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে পরীক্ষার বস্তু তারা তোমাদেরকে হারাম উপার্জন করতে প্ররোচিত করে এবং আল্লাহ তা‘আলার অধিকার আদায় করতে বাধা দেয়। অতএব তাদের ব্যাপারে সাবধান। একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুৎবা প্রদান করছিলেন এমন সময় হাসান ও হুসাইন (রাঃ) আগমন করল। তাদের গায়ে লাল রঙের জামা ছিল। তারা হোঁচট খেতে খেতে আসছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বার থেকে নেমে এসে তাদেরকে উঠিয়ে নিলেন এবং নিজের সামনে বসিয়ে দিলেন। অতঃপর বললেন : আল্লাহ তা‘আলা সত্যই বলেছেন, নিশ্চয় তোমাদের সম্পদ ও সন্তান পরীক্ষার বস্তু। আমি এ দুজন বালককে দেখলাম হোঁচট খেতে খেতে আসছিল আমি ধৈর্য ধারণ করে থাকতে না পেরে কথা বন্ধ করে তাদেরকে নিয়ে আসলাম। ( তিরমিযী হা. ৩৭৭৪, আবূ দাঊদ হা. ১১০৯ সনদ সহীহ)।
এজন্য ঈমানের দাবী হল আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সকলের ওপর প্রাধান্য দিতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(قُلْ اِنْ کَانَ اٰبَا۬ؤُکُمْ وَاَبْنَا۬ؤُکُمْ وَاِخْوَانُکُمْ وَاَزْوَاجُکُمْ وَعَشِیْرَتُکُمْ وَاَمْوَالُ اۨقْتَرَفْتُمُوْھَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ کَسَادَھَا وَمَسٰکِنُ تَرْضَوْنَھَآ اَحَبَّ اِلَیْکُمْ مِّنَ اللہِ وَرَسُوْلِھ۪ وَجِھَادٍ فِیْ سَبِیْلِھ۪ فَتَرَبَّصُوْا حَتّٰی یَاْتِیَ اللہُ بِاَمْرِھ۪ﺚ وَاللہُ لَا یَھْدِی الْقَوْمَ الْفٰسِقِیْنَ)
“বল : ‘তোমাদের নিকট যদি আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করা অপেক্ষা অধিক প্রিয় হয় তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভ্রাতা, তোমাদের পতœী, তোমাদের স্বগোষ্ঠী, তোমাদের অর্জিত সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য যার মন্দা পড়ার আশংকা কর এবং তোমাদের বাসস্থান যা তোমরা ভালবাস, তবে অপেক্ষা কর আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত’ আল্লাহ পাপিষ্ঠ সম্প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করেন না।” (সূরা তাওবা ৯ : ২৪)
এমনকি নিজের জীবনের চেয়েও তাঁদের উভয়কে ভালবাসতে হবে। উমার (রাঃ) বলেন : হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমি আপনাকে সবকিছুর চেয়ে বেশি ভালবাসি, তবে আমার জীবনের চেয়ে বেশি নয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : না, সে সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ! যতক্ষণ না আমি তোমার নিজের জীবনের চেয়েও বেশি প্রিয় হই (ততক্ষণ তুমি পূর্ণ মু’মিন হতে পারবে না)। কিছুক্ষণ পর উমার (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : আল্লাহ তা‘আলার শপথ! আপনি আমার নিজের জীবনের চেয়েও বেশি প্রিয়। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : হে উমার! এখন (তুমি পূর্ণ মু’মিন হলে)। (সহীহ বুখারী হা. ৬৬৩২)
(وَاللہُ عِنْدَھ۫ٓ اَجْرٌ عَظِیْمٌ)
অর্থাৎ যে ব্যক্তি ধন-মাল, সন্তান-সন্ততির ভালবাসার মোকাবেলায় আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্যকে প্রাধান্য দেয় এবং তাঁর অবাধ্য হয় না তার জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার। সাহাবী আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতবাসীদেরকে বলবেন, হে জান্নাতবাসী! তারা বলবে : হে প্রভু আমরা হাযির। আল্লাহ তা‘আলা বলবেন : তোমরা কি সন্তুষ্ট? তারা বলবে : কেন আমরা সন্তুষ্ট হব না অথচ আমাদেরকে এমন কিছু দিয়েছেন যা আপনার কোন সৃষ্টিকে দেননি। আল্লাহ তা‘আলা বলবেন : তোমাদেরকে কি এর চেয়ে উত্তম কিছু দেব? তারা বলবে : হে আমাদের প্রভু! এর চেয়ে উত্তম আর কী? আল্লাহ তা‘আলা বলবেন : তোমাদের ওপর আমার সন্তুষ্টি অবধারিত হয়ে গেল, আজকের পর আর কোনদিন তোমাদের ওপর অসন্তুষ্ট হব না। (সহীহ বুখারী হা. ৬৫৪৯, সহীহ মুসলিম হা. ২৮২৯)
(فَاتَّقُوا اللّٰهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ)
অর্থাৎ তোমাদের প্রচেষ্টা ও সামর্থ্যানুপাতে আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় কর। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন :
فَإِذَا نَهَيْتُكُمْ عَنْ شَيْءٍ فَاجْتَنِبُوهُ، وَإِذَا أَمَرْتُكُمْ بِأَمْرٍ فَأْتُوا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ
আমি যখন তোমাদেরকে কোন কাজ থেকে নিষেধ করি তখন তোমরা তা হতে বিরত থাক, আর যখন আমি তোমাদেরকে কোন কাজের আদেশ দেই তখন সামর্থ্যানুযায়ী তা পালন কর। ( সহীহ বুখারী হা. ৭২৮৮)
কতক মুফাসসির বলেছেন : এ আয়াত সূরা নিসার ১ নম্বর আয়াতকে রহিত করে দিয়েছে। (ইবনু কাসীর)।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন : না, সূরা নিসার ১ নম্বর আয়াতকে রহিত করেনি, বরং আল্লাহ তা‘আলাকে যথার্থ ভয় করার অর্থ হল তাঁর পথে যেমন প্রচেষ্টা করা উচিত তেমন প্রচেষ্টা করা। আল্লাহ তা‘আলার আদেশ বাস্তবায়নে যেন কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারকে ভয় না করে। সর্বত্র ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবে যদিও তা নিজের, বাপ-দাদা ও সন্তানাদির বিরুদ্ধে হয় (কুরতুবী)।
(وَاسْمَعُوْا وَأَطِيْعُوْا)
‘শোন ও আনুগত্য কর’ অর্থাৎ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কথাগুলোকে মনযোগসহ ও আমল করার উদ্দেশ্যে শোন। কেননা কেবল শুনে উপকারে আসবে না যতক্ষণ না আমল করা হবে।
(وَمَنْ يُّوْقَ شُحَّ نَفْسِه۪)
‘যারা অন্তরের কার্পণ্য হতে মুক্ত’ এ সম্পর্কে সূরা হাশরে আলোচনা করা হয়েছে।
(قَرْضًا حَسَنًا) অর্থাৎ হালাল পথে উপার্জিত বস্তু যা আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য তাঁর পথে ব্যয় করা হয়। সেটাই হল করযে হাসানাহ। যখন কোন ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার সন্তুটির জন্য কোন ব্যক্তিকে প্রদান করবে তখন আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতিদান বৃদ্ধি করে দেন। এ সম্পর্কে সূরা বাকারাতে আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. অনেক স্ত্রী-সন্তান স্বামী-পিতামাতার জন্য শত্রু। তাই তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকা দরকার।
২. যারা অন্যায় করবে তাদেরকে ক্ষমা ও দয়া করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।
৩. শরীয়তের পালনীয় নির্দেশাবলী যথাসম্ভব পালন করা উচিত, কিন্তু নিষেধাজ্ঞা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা আবশ্যক।
৪. কৃপণতা থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করার ফযীলত জানলাম।
৫. গায়েবের খবর একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা জানেন।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings