Surah Al Jumu'ah Tafseer
Tafseer of Al-Jumu'ah : 9
Saheeh International
O you who have believed, when [the adhan] is called for the prayer on the day of Jumu'ah [Friday], then proceed to the remembrance of Allah and leave trade. That is better for you, if you only knew.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
৯-১১ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
অত্র আয়াতগুলোতে জুমু‘আর দিনে একজন মুসলিম ব্যক্তির করণীয় ও বর্জণীয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
(إِذَا نُوْدِيَ لِلصَّلٰوةِ)
জুমু‘আর সালাতের জন্য যখন আযান দেওয়া হবে তখন সবকিছু বর্জন করে সালাতের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এখানে النداء বা আযান বলতে খতিব সাহেব মিম্বারে বসার পর যে আযান প্রদান করা হয় তা বুঝানো হয়েছে। এটাকে দ্বিতীয় আযান বলা হয়। প্রথম আযান হল উসমান (রাঃ) মানুষের সংখ্যাধিক্যতার কারণে যে আযান চালু করেছিলেন। সায়েব বিন ইয়াজিদ বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বকর ও উমার (রাঃ)-এর যুগে আযান ছিল যখন খতিব সাহেব মিম্বারে বসতেন তখন। যখন উসমান (রাঃ) খলিফা হলেন আর মানুষের সংখ্যা বেড়ে গেল তখন জাওরাতে দ্বিতীয় আরেকটি আযান বৃদ্ধি করলেন। জাওরা হল الزوراء মদীনার একটি বাড়ি যা খুব উঁচু ছিল এবং মাসজিদের নিকটে ছিল। (ইবনু কাসীর, সহীহ বুখারী হা. ৯১২)
(فَاسْعَوْا إِلٰي ذِكْر)
অর্থাৎ জুমু‘আর সালাত আদায় করার জন্য মনোনিবেশ কর, সালাতের গুরুত্ব দাও। السعي দ্বারা দৌড়ানো উদ্দেশ্য নয়। কারণ সালাতের জন্য তাড়াহুড়া করা বা দৌড়ানো নিষেধ করা হয়েছে। (সহীহ বুখারী হা. ৬৩৬)
উমার (রাঃ) বলেন :
فامضوا الي ذكر الله
অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার যিকির বা সালাতের দিকে অগ্রসর হও। (ইবনু কাসীর)
ذكر الله আল্লাহ তা‘আলার স্মরণে বলতে জুমু‘আর সালাত ও উভয় খুৎবাকে বুঝানো হয়েছে। (তাফসীর সা‘দী)।
(وَذَرُوا الْبَيْعَ)
অর্থাৎ যখন আযান দেওয়া হয় তখন সকল কাজকর্ম এমনকি ব্যবসায়-বাণিজ্য বর্জন করে সালাত আদায় করতে চলো। এজন্য সকল আলেমগণ একমত যে, দ্বিতীয় আযানের পর সকল প্রকার ক্রয়-বিক্রয় হারাম। (ইবনু কাসীর)
(ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ)
অর্থাৎ ব্যবসায় বাণিজ্যসহ সবকিছু বর্জন করে সালাত আদায়ের দিকে ধাবিত হওয়া উভয় জগতের জন্য কল্যাণকর। অতত্রব আল্লাহ তা‘আলা মু’মিন বান্দাদেরকে সালাত শেষে দুনিয়াতে তিনি যে فَضْلِ বা রিযিক রেখে দিয়েছেন তা অন্বেষণ করার নির্দেশ প্রদান করছেন।
বি : দ্র : এ নির্দেশ (তথা সালাত শেষে রিযিক অন্বেষণ কর) পালন করা ওয়াজিব না। কেউ সালাত শেষে রিযিক অন্বেষণে বের না হলে গুনাহগার হবে না। মূলত এখানে নির্দেশমূলক শব্দ ব্যবহার করার কারণ হল আযানের পর ব্যবসায়-বাণিজ্য নিষেধ করা হয়েছিল নির্দেশমূলক শব্দ দ্বারা তাই বৈধ হওয়ার জন্যও নির্দেশমূলক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
আরাক বিন মালেক (রাঃ) জুমু‘আর সালাত আদায় শেষে মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে বলতেন : হে আল্লাহ! আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি ফরয সালাত আদায় করছি, এখন আপনার নির্দেশ মতে জমিনে ছড়িয়ে পড়ছি। অতএব আপনি আমাকে আপনার উত্তম রিযিক দান করুন, আপনি তো উত্তম রিযিকদাতা। কতক সালাফ থেকে বর্ণনা এসেছে : যে ব্যক্তি জুমু‘আর সালাতের পর ক্রয়-বিক্রয় করবে আল্লাহ তা‘আলা তাতে সত্তরবার বরকত দেবেন। (ইবনু কাসীর)।
(وَاذْكُرُوا اللّٰهَ كَثِيْرًا)
অর্থাৎ ব্যবসায় বাণিজ্য লেনদেন ওঠাবসাসহ সর্বাবস্থায় বেশি বেশি আল্লাহ তা‘আলার যিকির কর। কোন অবস্থাতেই যেন তাঁর স্মরণ থেকে গাফেল না হও। এজন্য হাদীসে এসেছে : যে ব্যক্তি কোন এক বাজারে প্রবেশ করল এবং বলল :
لَا اِلٰهَ اِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَاشَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰي كُلِّ شَيْئٍ قَدِيْرٍ
অর্থাৎ ‘আল্লাহ ব্যতীত সত্যিকার কোন মা‘বূদ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই ও তার জন্য যাবতীয় প্রশংসা এবং তিনি সবকিছুর উপরে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী’-তাহলে তার জন্য এক লক্ষ নেকী লেখা হবে এবং এক লক্ষ গুনাহ মোচন করা হবে। )তিরমিযী হা. ৩৪২৮, ইবনু মাযাহ হা. ২২৩৫ হাসান)।
জুমু‘আর দিনে করণীয় :
জুমু‘আর দিন মাসজিদে আসার পূর্বে গোসল করা মুস্তাহাব। এটা অধিকাংশ আলেমদের অভিমত। (সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ)।
অতঃপর জুমু‘আর সালাত আদায়ের জন্য সামর্থ্যানুযায়ী পরিষ্কার ও সুন্দর পোশাক পরিধান করবে। (আবূ দাঊদ হা. ১০৭৮, সনদ সহীহ)। তারপর যথাসম্ভব সুগন্ধি ব্যবহার করবে। অতঃপর আগেভাগে মাসজিদের দিকে রওনা দেবে। হাদীসে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন ফরয গোসলের মত গোসল করে মাসজিদে রওনা দেবে সে যেন একটি উট কুরবানী করল। তারপর যে যাবে সে ব্যক্তি গরু কুরবানী করল....। (সহীহ বুখারী হা. ৮৮১)
তারপর যথাসম্ভব সালাত আদায় করে খতীব সাহেবের খুৎবা মনযোগসহকারে শুনবে, কোন প্রকার কথাবার্তা বলবে না। কারণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : যে ব্যক্তি ইমাম সাহেবের খুৎবা চলাকালীন তার পার্শ্ববর্তী ভাইকে বলল : চুপ করুন, সে ব্যক্তি অনর্থক কাজ করল। (সহীহ বুখারী হা. ৮৯২)।
এভাবে যদি কেউ জুমু‘আর সালাত আদায় করে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার ফযীলত সম্পর্কে বলেন : এক জুমু‘আহ থেকে অপর জুমু‘আহ পর্যন্ত যে সকল অপরাধ হয়েছে তার জন্য তা কাফফারা হয়ে যাবে, তবে কবীরাহ গুনাহ থেকে বেঁেচ থাকতে হবে। (সহীহ বুখারী হা. ২৩৩)
(وَإِذَا رَأَوْا تِجَارَةً) শানে নুযূল :
জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন : একটি (বাণিজ্যিক) কাফেলা জুমু‘আর দিন আগমন করল। আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ছিলাম। মানুষেরা ১২ জন ব্যতীত সবাই চলে গেল। তখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (সহীহ বুখারী হা. ৪৮৯৯) তিরমিযীর বর্ণনামতে জাবের (রাঃ) বলছেন : একদা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু‘আর দিন খুৎবা প্রদান করছিলেন। এমন সময় মদীনাতে একটি (বাণিজ্যিক) কাফেলা আগমন করল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে ১২ জন সাহাবী ব্যতীত সবাই সেদিকে দৌড়ালো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলছেন : ঐ সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! যদি তোমরাও তাদের মতো চলে যেতে, একজনও যদি না থাকতে তাহলে উপত্যকা আগুন হয়ে তোমাদের ওপর পতিত হতো। তখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (তিরমিযী হা. ৩৩১১ সহীহ।) জাবের (রাঃ) বলছেন, ১২ জনের মধ্যে আবূ বকর ও উমার (রাঃ)-ও ছিলেন।
ঘটনাটি হচ্ছে : মদীনাতে তখন খুব অভাব-অনটন ছিল। বাইরের এলাকা থেকে কেউ কিছু আমদানী করে নিয়ে আসে না। দীর্ঘদিন পর এ কাফেলাটি আসছিল জুমু‘আর দিন খুৎবার সময়। তখন একজন ঘোষণা দিল অমুকের কাফেলা পণ্য নিয়ে এসেছে। যার কারণে সাহাবীগণ ছুটে গিয়েছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুমু‘আর দিন আগে সালাত আদায় করতেন পরে খুৎবা দিতেন ঈদের সালাতের মত। যখন এরূপ একদিন সালাত আদায় করে খুৎবা দিচ্ছিলেন আর একজন লোক প্রবেশ করে বলল : দাহইয়া বিন খলিফা তার বাণিজ্য কাফেলা নিয়ে আগমন করেছে। তখন কয়েকজন সাহাবী ব্যতীত সবাই চলে গেল। (আবূ দাঊদ তার মারাসিল গ্রন্থে জুমু‘আর খুৎবা অধ্যায়, বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য)।
(وَتَرَكُوْكَ قَآئِمًا)
এ আয়াত প্রমাণ করছে খতিব সাহেব দাঁড়িয়ে খুৎবা প্রদান করবেন। সহীহ মুসলিমের হাদীস : নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খুৎবা দুটি ছিল। দু খুৎবার মাঝে বসতেন। (সহীহ মুসলিম, মিশকাত হা. ১৪০৫)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. জুমু‘আহ প্রত্যেক সুস্থ ও বাড়িতে অবস্থানকারী প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম পুরুষ ব্যক্তির ওপর ফরয।
২. জুমু‘আর খুতবার আযানের পর সকল প্রকার ব্যবসায় বাণিজ্য হারাম।
৩. জুমু‘আর দিনের ফযীলত জানতে পারলাম।
৪. জুমু‘আর দিন দ্বিতীয় আযান দেওয়া বৈধ হবে উসমান (রাঃ) যে কারণে চালু করেছেন যদি সে কারণ পাওয়া যায়।
৫. জুমু‘আর দিনের করণীয় ও বর্জণীয় সম্পর্কে জানলাম।
৬. জুমু‘আর খুতবা হবে দু’টি এবং তা হবে দাঁড়িয়ে ও প্রয়োজনে মাতৃভাষায়।
৭. জুমু‘আর সালাত আদায় করা যেমন ওয়াজিব তেমন খুৎবা শোনাও ওয়াজিব। খুৎবা চলাকালে কথা বলা ও কোন কাজ করা নিষেধ।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings