Surah Al Mumtahanah Tafseer
Tafseer of Al-Mumtahanah : 2
Saheeh International
If they gain dominance over you, they would be to you as enemies and extend against you their hands and their tongues with evil, and they wish you would disbelieve.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
নামকরণ :
الممتحنة শব্দটি امتحان থেকে গৃহীত। যার অর্থ হল : পরীক্ষা করা, যাচাই করা। তাই الممتحنة অর্থ : পরীক্ষাকারী, পরীক্ষক। এ শব্দটি অত্র সূরার ১০ নম্বর আয়াতে উল্লেখ রয়েছে বিধায় উক্ত নামে সূরার নামকরণ করা হয়েছে।
আলোচ্য বিষয় : সূরার শুরুর দিকে ইসলাম ও মুসলিমদের চিরশত্রুদের সঙ্গে মুসলিমদের প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল প্রকার বন্ধুসূলভ সম্পর্ক গড়তে বারণ করা হয়েছে যদিও তারা নিকটাত্মীয় হয়। এরূপ বড় আমলের জন্য মু’মিনদের আদর্শ হল ইবরাহীম (আঃ) যিনি পিতার সাথেও সম্পর্ক ছিন্ন করতে দ্বিধাবোধ করেননি। তারপর কাফিরদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার উপকারিতা বর্ণনা করা হয়েছে। অতঃপর মু’মিন নারী যাদের স্বামী ছিল কাফির তারা হিজরত করে চলে আসলে তাদের বিধান কী হবে সে সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে এবং কীভাবে কী বিষয়ে তাদের থেকে বাইআত নেয়া হবে সে আলোচনা স্থান পেয়েছে। সূরার শেষে পুনরায় গযবপ্রাপ্ত জাতির সাথে সম্পর্ক রাখা থেকে নিষেধ করা হয়েছে।
১-৩ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
শানে নুযূল :
মক্কার কাফিররা এবং নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাঝে হূদায়বিয়াতে যে সন্ধি চুক্তি হয়েছিল মক্কার কাফিররা তা ভঙ্গ করে। এজন্য নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গোপনে মুসলিমদেরকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দিলেন। হাতেব বিন আবী বালতাআহ (রাঃ) বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী একজন মুহাজির সাহাবী। কুরাইশদের সাথে তাঁর কোন আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু তাঁর স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি মক্কাতেই ছিল। তিনি ভাবলেন যে, মক্কার কুরাইশদেরকে যদি নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এ প্রস্তুতি সম্পর্কে অবগত করি তাহলে হয়তো তারা আমার সন্তান-সন্ততি ও মাল সম্পদ হেফাযত করবে। তাই তিনি এ সংবাদটি লিখিত আকারে এক মহিলার মাধ্যমে তা মক্কার কাফিরদের নিকট প্রেরণ করেন। এদিকে ওয়াহীর মাধ্যমে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জানানো হল। তাই তিনি আলী (রাঃ), মিকদাদ ও জুবায়ের (রাঃ)-কে বললেন : যাও, তোমরা “রওযাতু খাখ” নামক স্থানে মক্কাগামী একজন মহিলাকে পাবে, তার কাছে একটি চিঠি আছে তা নিয়ে আসো। আলী (রাঃ) বলেন : এরপর আমরা রওনা দিলাম। আমাদের ঘোড়া আমাদেরকে নিয়ে ছুটে চলল। যেতে যেতে আমরা ‘রওযাতু খাখ’ গিয়ে পৌঁছলাম। সেখানে পৌঁছতেই আমরা উষ্ট্রারোহিণীকে পেয়ে গেলাম। আমরা বললাম, পত্রখানা বের কর। সে বলল : আমার সঙ্গে কোন পত্র নেই। আমরা বললাম, অবশ্যই তুমি পত্রখানা বের করবে-অন্যথায় তোমাকে বিবস্ত্র করে ফেলা হবে। এরপর সে তার চুলের বেণী থেকে পত্রখানা বের করল। আমরা পত্রখানা নিয়ে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এলাম। দেখা গেল পত্রখানা হাতিব বিন আবূ বালতাআহ এর পক্ষ হতে মক্কার কতিপয় মুশরিকের কাছে লেখা যাতে তিনি নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর গৃহীত সিদ্ধান্তের বিষয় তাদের কাছে ব্যক্ত করেছেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞাসা করলেন : হে হাতিব কী ব্যাপার? তিনি বললেন : হে আল্লাহর রাসূল! আমার ব্যাপারে তড়িৎ কোন সিদ্ধান্ত নেবেন না। আমি কুরাইশ বংশীয় লোকদের সঙ্গে বসবাসকারী একজন ব্যক্তি। কিন্তু তাদের সঙ্গে আমার কোন বংশগত সম্পর্ক নেই। আপনার সঙ্গে যত মুহাজির আছেন তাদের সবারই সেখানে আত্মীয়-স্বজন আছে। এসব আত্মীয়-স্বজনের কারণে মক্কায় তাদের পরিবার-পরিজন এবং সম্পদ রক্ষা পাচ্ছে। আমি চেয়েছিলাম যেহেতু তাদের সঙ্গে আমার কোন বংশীয় সম্পর্ক নেই তাই এবার যদি আমি তাদের প্রতি অনুগ্রহ করি তাহলে হয়তো তারাও আমার আত্মীয়-স্বজনের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়াবে। কুফর ও ধর্ম ত্যাগ করার মনোভাব নিয়ে আমি এ কাজ করিনি। তখন আল্লাহ তা‘আলা এ সূরার শুরুর আয়াতগুলো অবতীর্ণ করলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : সে সত্য কথা বলেছে, তার ব্যাপারে ভাল ছাড়া কিছুই বলো না। উমার (রাঃ) বললেন : হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমাকে ছেড়ে দিন আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : সে কি বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেনি? আল্লাহ তা‘আলা বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী সাহাবীদের ব্যাপারে বলেছেন : তোমরা যা ইচ্ছা করো আমি তোমাদের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছি। (সহীহ বুখারী হা. ৩০৮১, ৪৮৯০)
এ আয়াতগুলোতে মু’মিনদের বন্ধু গ্রহণের সীমারেখা নির্ধারণ করা হয়েছে। একজন মু’মিন কখনো আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের শত্রুদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করতে পারে না। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(يٰٓأَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُوْدَ وَالنَّصٰرٰٓي أَوْلِيَا۬ءَ ﺮ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَا۬ءُ بَعْضٍ ط وَمَنْ يَّتَوَلَّهُمْ مِّنْكُمْ فَإِنَّه۫ مِنْهُمْ)
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানদের বন্ধুরূপে গ্রহণ কর না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্য থেকে যে কেউ তাদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে সে তাদেরই একজন গণ্য হবে।” (সূরা মায়িদা ৫ : ৫১)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন :
(يٰٓأَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَتَّخِذُوا الَّذِيْنَ اتَّخَذُوْا دِيْنَكُمْ هُزُوًا وَّلَعِبًا مِّنَ الَّذِيْنَ أُوْتُوا الْكِتٰبَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَالْكُفَّارَ أَوْلِيَا۬ءَ ج وَاتَّقُوا اللّٰهَ إِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ)
“হে মু’মিনগণ! তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে যারা তোমাদের দীনকে হাসি-তামাশা ও ক্রীড়ার বস্তুরূপে গ্রহণ করে তাদেরকে ও কাফিরদেরকে তোমরা বন্ধুরূপে গ্রহণ কর না এবং যদি তোমরা মু’মিন হও তবে আল্লাহকে ভয় কর।” (সূরা মায়িদা ৫ : ৫৭)
মু’মিনদের বন্ধু হবে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, তাঁর রাসূল ও মু’মিনগণ। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللّٰهُ وَرَسُوْلُه۫ وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوا الَّذِيْنَ يُقِيْمُوْنَ الصَّلوٰةَ وَيُؤْتُوْنَ الزَّكوٰةَ وَهُمْ رٰكِعُوْنَ)
“নিশ্চয়ই তোমাদের বন্ধু আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মু’মিনগণ- যারা বিনত হয়ে সালাত আদায় করে ও যাকাত দেয়।” (সূরা মায়িদা ৫ : ৫৫)
কোন মুসলিম ব্যক্তি যদি এরূপ মুসলিম সমাজের গোপন তথ্য কাফির বা শত্রুদের কাছে সরবরাহ করে বা গোয়েন্দাগিরি করে তাহলে তাকে হত্যা করা হবে, না শাস্তি দেওয়া হবে-এ নিয়ে কিছু মতামত পরিলক্ষিত হয়। সঠিক কথা হল যদি তার এটা অভ্যাস হয়ে যায় তাহলে তাকে হত্যা করা হবে। কারণ এর দ্বারা মুসলিমদের ক্ষতি হয় এবং জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করা হয় (কুরতুবী)।
(وَقَدْ كَفَرُوْا بِمَا جَا۬ءَكُمْ)
অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে যে সত্য দীন ইসলাম প্রদান করেছেন তা তারা অস্বীকার করেছে এবং ঈমান আনার কারণে তোমাদেরকে ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মক্কা থেকে বের করে দিয়েছে। তারপরেও কি তোমরা তাদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করবে?
(إِنْ كُنْتُمْ خَرَجْتُمْ جِهَادًا)
অর্থাৎ যদি তোমরা সত্যিকারার্থে আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য জিহাদ করে থাক তাহলে তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না।
(تُسِرُّوْنَ إِلَيْهِمْ بِالْمَوَدَّةِ)
অর্থাৎ তোমরা জান যে, আল্লাহ তা‘আলা প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব কিছু জানেন তার পরেও কিভাবে তাদের কাছে গোপনে বন্ধুত্বের বার্তা পাঠাও। তারপর আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদের প্রতি তাদের চরম শত্রুতার কথা বলেছেন, যদি তারা কোনক্রমে তোমাদের ওপর কর্তৃত্ব লাভ করতে পারে তাহলে তারা তোমাদের চরম শত্রু হবে এবং হাত ও জিহবা দ্বারা তোমাদের ক্ষতি সাধন করবে। বর্তমানে আমরা তার জ্বলন্ত প্রমাণ পাচ্ছি। কাফিরদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করে নেয়ার ফলে মুসলিমরা আজ তাদের হাতে নির্যাতিত, লাঞ্ছিত ও অপমানিত। আমাদের এ বেড়াজাল থেকে বের হয়ে আসা উচিত।
(إِنْ يَّثْقَفُوْكُمْ)
অর্থাৎ তারা যদি তোমাদেরকে তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারে তাহলে তারা তোমাদের শত্রুতে পরিণত হবে এবং হাত-মুখ দ্বারা তোমাদের ক্ষতি সাধন করার জন্য চড়াও হবে।
(لَنْ تَنْفَعَكُمْ أَرْحَامُكُمْ)
অর্থাৎ আত্মীয়-স্বজন সন্তানাদী যদি প্রকৃত মু’মিন না হয় তাহলে কিয়ামত দিবসে তারা কোন উপকার করতে পারবে না। এমনকি নাবীদের আত্মীয়-স্বজন ও স্ত্রী-সন্তান মু’মিন না হলে নাবীরা তাদের কোন উপকার করতে পারবে না। আনাস (রাঃ) বলেন : জনৈক ব্যক্তি বলল : হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমার বাবা কোথায়? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : তোমার বাবা জাহান্নামে। লোকটি (বিষন্ন মনে) ফিরে যেতে উদ্যত হলে তিনি তাকে ডেকে বললেন :
ان ابي واباك في النار
আমার বাবা ও তোমার বাবা উভয়ে জাহান্নামে। (সহীহ মুসলিম হা. ৫২১. আবূ দাঊদ হা. ৪৭১৮)
সুতরাং একজন মু’মিন কখনো কাফির-মুশরিকদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেনা এমনকি যদি কাফির তার আত্মীয়-স্বজনও হয় তাহলেও তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে।
আয়াত হতে শিজণীয় বিষয় :
১. ইসলামের ক্ষতি করে মুসলিমদের পক্ষে এমন কোন কাজ করা উচিত নয়।
২. মু’মিনরা কেবলমাত্র মু’মিনদের ছাড়া অন্য কোন কাফির-মুশরিক ও যারা দীন নিয়ে বিদ্রƒপ করে তাদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করতে পারে না।
৩. বদরী সাহাবীদের মর্যাদা জানলাম।
৪. কাফিররা সর্বদা মুসলিমদের ক্ষতি করার সুযোগ খোঁজে। সুযোগ পেলেই হাত ও মুখ দ্বারা ক্ষতি করবে।
৫. সন্তান-সন্ততি ও আত্মীয়-স্বজন মু’মিন না হলে আখিরাতে কোন উপকারে আসবে না।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings