Surah Al Ma'idah Tafseer
Tafseer of Al-Ma'idah : 65
Saheeh International
And if only the People of the Scripture had believed and feared Allah, We would have removed from them their misdeeds and admitted them to Gardens of Pleasure.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
৬৪-৬৬ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা‘আলার ব্যাপারে ইয়াহূদীদের যেসব ঘৃণিত আক্বীদাহ রয়েছে তার মধ্যে এটি অন্যতম।
সূরা বাকারার ২৪৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে:
(مَنْ ذَا الَّذِيْ يُقْرِضُ اللّٰهَ قَرْضًا حَسَنًا)
“কে আছে যে আল্লাহকে করযে হাসানা দেবে?” যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলাকে উত্তম ঋণ দেবে আল্লাহ তা‘আলা তা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেবেন। তখন ইয়াহূদীরা বলতে লাগল, আল্লাহ তা‘আলা তো ফকীর হয়ে গেছেন। লোকেদের কাছ থেকে ঋণ চাচ্ছেন। যেমন তাদের কথা আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِنَّ اللّٰهَ فَقِيْرٌ وَّنَحْنُ أَغْنِيَا۬ءُ)
“আল্লাহ দরিদ্র আর আমরা ধনবান।”(আলি-ইমরান ৪:১৮১)
তাদের সে কথাই আল্লাহ তা‘আলা আবার এখানে উল্লেখ করছেন: তারা বলে যে, আল্লাহ তা‘আলার হাত সংকীর্ণ হয়ে গেছে। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা কৃপণ, তিনি ব্যয় করেন না।
আল্লাহ তা‘আলা তাদের প্রতিবাদ করে বলছেন: আল্লাহ তা‘আলা কৃপণ নন, আল্লাহ তা‘আলা ব্যয় করতে কুণ্ঠাবোধ করেন না; বরং তারাই ব্যয় করতে কুণ্ঠাবোধ করে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(أَمْ لَهُمْ نَصِيْبٌ مِّنَ الْمُلْكِ فَإِذًا لَّا يُؤْتُوْنَ النَّاسَ نَقِيْرًا)
“তাদের কি রাজত্বে কোন অংশ আছে? যদি তাদের কোন অংশ থাকত তাহলে তারা লোকেদের তিল পরিমাণও দিত না।”(সূরা নিসা ৪:৫৩)
বরং আল্লাহ তা‘আলার উভয় হাত প্রশস্ত, তিনি ব্যয় করতে কুণ্ঠাবোধ করেন না, যেমন ইচ্ছা তেমন ব্যয় করেন। তিনি আরো বলেন:
(وَاٰتٰكُمْ مِّنْ كُلِّ مَا سَأَلْتُمُوْهُ ط وَإِنْ تَعُدُّوْا نِعْمَتَ اللّٰهِ لَا تُحْصُوْهَا ط إِنَّ الْإِنْسَانَ لَظَلُوْمٌ كَفَّارٌ)
“এবং তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন তোমরা তাঁর নিকট যা চেয়েছ, তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করলে তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। মানুষ অবশ্যই অতি মাত্রায় জালিম, অকৃতজ্ঞ।”(সূরা ইবরাহীম ১৪:৩৪)
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন; রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আল্লাহ তা‘আলার ডান হাত পরিপূর্ণ। তিনি দিবা-রাত্রি ব্যয় করেন, তাঁর ভাণ্ডার কোন রকম হ্রাস পায় না, লক্ষ্য কর যখন থেকে তিনি আকাশ-জমিন সৃষ্টি করেছেন তখন থেকে অদ্যাবধি ব্যয় করে আসছেন কিন্তু তার ধনভাণ্ডারে কোন ঘাটতি হয় না। (সহীহ বুখারী হা: ৭৪১৯, সহীহ মুসলিম হা: ৯৯৩)
আল্লাহ তা‘আলা তাদের কঠোর প্রতিবাদ করে নিজের সঠিক পরিচয় তুলে ধরলেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(بَلْ یَدٰھُ مَبْسُوْطَتٰنِ)
“বরং আল্লাহর উভয় হাতই প্রসারিত” এ আয়াতে যেমন ইয়াহূদীদের প্রতিবাদ করা হচ্ছে তেমনি আল্লাহ তা‘আলার একটি অন্যতম সিফাত বা গুণ সাব্যস্ত হচ্ছে। তা হল আল্লাহ তা‘আলার হাত রয়েছে এবং তা দু’টি। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের বিশ্বাস হল: আল্লাহ তা‘আলার হাত রয়েছে। তবে এর ধরন-গঠন কিরূপ তা আমরা জানি না এবং কোন মাখলুকের হাতের সাথে সাদৃশ্য স্থাপন করি না। আল্লাহ তা‘আলার হাতের কোন অপব্যাখ্যা, বিকৃতি ও অস্বীকৃতি করি না, বরং মহান আল্লাহ তা‘আলার জন্য যেরূপ হলে শোভা পায় সেরূপই তাঁর দু’টি হাত রয়েছে বলেই আমরা বিশ্বাস করি।
(وَلَيَزِيْدَنَّ كَثِيْرًا مِّنْهُمْ)
‘তা তাদের অনেকের ধর্মদ্রোহিতা ও কুফরী বৃদ্ধি করবেই’অর্থাৎ কুরআন কাফিরদের অবাধ্যতা ও কুফরীই বৃদ্ধি করে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قُلْ هُوَ لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا هُدًي وَّشِفَا۬ءٌ ط وَالَّذِيْنَ لَا يُؤْمِنُوْنَ فِيْٓ اٰذَانِهِمْ وَقْرٌ وَّهُوَ عَلَيْهِمْ عَمًي)
“বল: মু’মিনদের জন্য এটা পথ-নির্দেশ ও ব্যাধির প্রতিকার; কিন্তু যারা অবিশ্বাসী তাদের কর্ণে রয়েছে বধিরতা এবং কুরআন হবে তাদের জন্য অন্ধত্ব”(সূরা হা-মীম সিজদাহ ৪১:৪৪)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْاٰنِ مَا هُوَ شِفَا۬ءٌ وَّرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ لا وَلَا يَزِيْدُ الظَّالِمِيْنَ إِلَّا خَسَارًا)
“আমি কুরআনে এমন আয়াত অবতীর্ণ করি, যা মু’মিনদের জন্য আরোগ্য ও রহমত, কিন্তু সেটা জালিমদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে।”(সূরা ইসরা ১৭:৮২)
আর কিয়ামত অবধি আল্লাহ তা‘আলা তাদের মাঝে শত্র“তা বদ্ধমূল করে দিয়েছেন। ফলে কোন যুদ্ধের পরিকল্পনা করলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেন।
(وَلَوْ أَنَّهُمْ أَقَامُوا التَّوْرٰةَ...)
‘তারা যদি তাওরাত, ইঞ্জীল ও তাদের প্রতিপালকের নিকট হতে তাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রতিষ্ঠিত করত’ অর্থাৎ যদি ইয়াহূদী ও খ্রীস্টানরা তাওরাত ও ইঞ্জীলের ওপর আমল করত নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর যে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে তার প্রতিও আমল করত, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে আকাশ এবং জমিন থেকে রিযিক দিতেন। এ সুযোগ আল্লাহ তা‘আলা সবাইকে দিয়েছিলেন। যেমন নূহ (আঃ) তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন:
(فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوْا رَبَّكُمْ قف إِنَّه۫ كَانَ غَفَّارًا - يُّرْسِلِ السَّمَا۬ءَ عَلَيْكُمْ مِّدْرَارًا - وَّيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَّبَنِيْنَ وَيَجْعَلْ لَّكُمْ جَنّٰتٍ وَّيَجْعَلْ لَّكُمْ أَنْهٰرًا)
“আমি বলেছি: তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, তিনি তো অতিশয় ক্ষমাশীল; তিনি তোমাদের জন্য আকাশ হতে প্রচুর বৃষ্টি দান করবেন, তিনি তোমাদেরকে সমৃদ্ধ করবেন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে এবং তোমাদের জন্য বাগানসমূহ সৃষ্টি করবেন ও প্রবাহিত করবেন নদী-নালা।”(সূরা নূহ ৭১:১০-১২)
হূদ (আঃ) তার সম্প্রদায়কে বললেন:
(وَيٰقَوْمِ اسْتَغْفِرُوْا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوْبُوْآ إِلَيْهِ يُرْسِلِ السَّمَا۬ءَ عَلَيْكُمْ مِّدْرَارًا وَّيَزِدْكُمْ قُوَّةً إِلٰي قُوَّتِكُمْ)
‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর অনুশোচনা করে তাঁর দিকেই ফিরে আস। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বারি বর্ষাবেন। তিনি তোমাদেরকে আরও শক্তি দিয়ে তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করবেন।’(সূরা হূদ ১১:৫২)
মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর উম্মাতকে বললেন:
(وَّأَنِ اسْتَغْفِرُوْا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوْبُوْآ إِلَيْهِ يُمَتِّعْكُمْ مَّتَاعًا حَسَنًا إِلٰٓي أَجَلٍ مُّسَمًّي)
“তবে, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর ও অনুশোচনা করে তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, তিনি তোমাদেরকে এক নির্দিষ্টকালের জন্য উত্তম জীবন উপভোগ করতে দেবেন।”(সূরা হূদ ১১:৩)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرٰٓي اٰمَنُوْا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكٰتٍ مِّنَ السَّمَا۬ءِ وَالْأَرْضِ)
“যদি সে সকল জনপদের অধিবাসীগণ ঈমান আনত ও তাক্বওয়া অবলম্বন করত তবে আমি তাদের জন্য আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর কল্যাণসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম।”(সূরা আ‘রাফ ৭:৯৬)
তাই আল্লাহ তা‘আলার দিকে ফিরে গেলে, সৎ আমল করলে আল্লাহ তা‘আলা রিযিকের ভাণ্ডার খুলে দেবেন। আমাদের সে পথেই ফিরে আসা উচিত।
(مِنْهُمْ أُمَّةٌ مُّقْتَصِدَةٌ)
‘তাদের মধ্যে একদল রয়েছে যারা মধ্যমপন্থী’আল্লাহ তা‘আলা আহলে কিতাবদেরকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন। একদল মধ্যম পন্থী; যেমন আবদুল্লাহ বিন সালামসহ আট-নয় জন সাহাবী যারা মদীনায় ইয়াহূদীদের মধ্য হতে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। আর বাকি অধিকাংশরাই খারাপ প্রকৃতির মানুষ।
উম্মাতে মুহাম্মাদীকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَمِنْهُمْ ظٰلِمٌ لِّنَفْسِه۪ ج وَمِنْهُمْ مُّقْتَصِدٌ ج وَمِنْهُمْ سَابِقٌۭ بِالْخَيْرٰتِ بِإِذْنِ اللّٰهِ ط ذٰلِكَ هُوَ الْفَضْلُ الْكَبِيْرُ)
“তবে তাদের মধ্যে কেউ কেউ নিজের প্রতি অত্যাচারী, তাদের কেউ কেউ মধ্যমপন্থা অবলম্বনকারী এবং তাদের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহর ইচ্ছায় নেক কাজে অগ্রবর্তী। এটাই বড় সাফল্য।”(সূরা ফাতির ৩৫:৩২)
তবে এ তিন শ্রেণির সবাইকে আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতের প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন:
(جَنّٰتُ عَدْنٍ يَّدْخُلُوْنَهَا يُحَلَّوْنَ فِيْهَا مِنْ أَسَاوِرَ مِنْ ذَهَبٍ وَّلُؤْلُؤًا ج وَلِبَاسُهُمْ فِيْهَا حَرِيْرٌ )
“তারা প্রবেশ করবে অনন্তকাল অবস্থানোপযোগী জান্নাতে, তথায় তাদেরকে পরানো হবে স্বর্ণের বালা ও মুক্তা এবং সেখানে তাদের পোশাক হবে রেশমের।”(সূরা ফাতির ৩৫:৩৩)
৪র্থ একটি দলের কথা বলেছেন যারা কাফির। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَهُمْ نَارُ جَهَنَّمَ ج لَا يُقْضٰي عَلَيْهِمْ فَيَمُوْتُوْا)
“আর যার কুফরী করেছে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। তাদেরকে মৃত্যুর আদেশও দেয়া হবে না যে, তারা মরে যাবে।”(সূরা ফাতির ৩৫:৩৬) (আযআউল বায়ান ২/৭৯)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ তা‘আলার দু’টি হাত রয়েছে, তবে তাঁর হাতদ্বয় কেমন তা আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন।
২. ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানদের মাঝে পরস্পর শত্র“তা বিদ্যমান।
৩. যারাই তাক্বওয়া অবলম্বন ও সৎ আমল করবে তাদের জন্য রয়েছে অপরিমেয় রিযিক।
৪. উম্মাতে মুহাম্মাদীকে চার ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। যার তিন ভাগই জান্নাতী।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings