Surah Al Ma'idah Tafseer
Tafseer of Al-Ma'idah : 6
Saheeh International
O you who have believed, when you rise to [perform] prayer, wash your faces and your forearms to the elbows and wipe over your heads and wash your feet to the ankles. And if you are in a state of janabah, then purify yourselves. But if you are ill or on a journey or one of you comes from the place of relieving himself or you have contacted women and do not find water, then seek clean earth and wipe over your faces and hands with it. Allah does not intend to make difficulty for you, but He intends to purify you and complete His favor upon you that you may be grateful.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
৬-৭ নং আয়াতের তাফসীর:
শানে নুযূল:
৫ম অথবা ৬ষ্ঠ হিজরীতে অনুষ্ঠিত গাযওয়াতুল মুরাইসি বা বানী মুসতালিক যুদ্ধে আয়িশাহ (রাঃ) এর গলার হার হারানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে উক্ত আয়াত নাযিল হয়।
আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমরা মদীনায় প্রবেশ করার উপক্রম ছিলাম তখন আমার গলার হারটি বায়দা নামক স্থানে পড়ে যায়। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয় বাহন বসালেন এবং নামলেন। পরে আমার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে যান। ইত্যবসরে আবূ বাকর (রাঃ) আমার কাছে এসে আমাকে শক্তভাবে আঘাত করলেন এবং বললেন: একটি হারের কারণে মানুষকে আটকে রেখেছ? তারপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সজাগ হলেন এবং ফজরের সালাতের সময় হল; কিন্তু পানি খুঁজে পাওয়া গেল না। তখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হল। সাহাবী উসাইদ বিন হুযাইর (রাঃ) বললেন: হে আবূ বাকরের পরিবার! আল্লাহ তা‘আলা মানুষের জন্য তোমাদেরকে কল্যাণময় বানিয়েছেন। (সহীহ বুখারী হা: ৩৩৪)
অত্র আয়াতে সালাত কবুল হবার পূর্বশর্ত ওযূর পদ্ধতি এবং ওযূর পানির অনুপস্থিতিতে তায়াম্মুমের বিধান ও পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াতে ওযূর ছয়টি ফরয উল্লেখ করা হয়েছে:
১. সমস্ত মুখমণ্ডল ধৌত করা। ২. উভয় হাত কুনই পর্যন্ত ধৌত করা। ৩. সম্পূর্ণ মাথা মাসেহ করা। ৪. উভয় পায়ের টাখনু পর্যন্ত ধৌত করা।
এছাড়াও দুটি ফরয রয়েছে; ৫. ধারাবাহিকতা রক্ষা করা এবং ৬. একটি অঙ্গ ধৌত করার পর দ্বিতীয় অঙ্গ ধৌত করতে দেরি না করা এবং এক অঙ্গ শুকিয়ে যাওয়ার পূর্বে অন্য অঙ্গ ধৌত করা।
এসব হল ওযূর ফরয। অসংখ্য সহীহ হাদীসে ওযূর পদ্ধতি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত।
(اِذَا قُمْتُمْ اِلَی الصَّلٰوةِ)
‘যখন তোমরা সালাতে দাড়াঁনোর ইচ্ছা করবে’ অর্থাৎ যখন সালাতে দাঁড়ানোর ইচ্ছা করবে তখন ওযূবিহীন থাকলে ওযূ কর। কেননা ওযূ ছাড়া সালাত কবূল হবে না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
لَا يَقْبَلُ اللَّهُ صَلَاةَ أَحَدِكُمْ إِذَا أَحْدَثَ حَتَّي يَتَوَضَّأَ
তোমাদের কারো ওযূ নষ্ট হয়ে গেলে ওযূ না করা পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা তার সালাত কবূল করবেন না। (সহীহ বুখারী হা: ৬৯৫৪) ওযূ করার সময় অবশ্যই ভালভাবে খেয়াল করতে হবে যে, ভালভাবে ওযূ হচ্ছে কি- না, প্রত্যেক অঙ্গ যথাযথভাবে ধৌত করা হচ্ছে কি- না। কারণ যারা ভালভাবে ওযূ করে না তাদের ধমক দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
وَيْلٌ لِلْأَعْقَابِ مِنْ النَّارِ مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلَاثًا
যারা ওযূ করার সময় ভালভাবে পায়ের গোড়ালী ধৌত করে না তাদের জন্য জাহান্নাম, এ কথাটি দুই অথবা তিনবার বললেন। (সহীহ বুখারী হা: ৬০)
এখান থেকে বুঝা যাচ্ছে এবং অধিকাংশ আলেম সমাজ বলেন, ওযূ করার সময় নিয়ত করা আবশ্যক। কারণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন
إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ
প্রত্যেক আমল (সঠিক হওয়া না হওয়া) নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। (সহীহ বুখারী হা: ০১)
(فَاغْسِلُوْا وُجُوْھَکُمْ)
‘তোমাদের চেহারা ধৌত কর’। চেহারার সীমারেখা হল- কপালের যেখান থেকে মাথার চুল শুরু হয়েছে সেখান থেকে দাড়ি গজানোর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত। আর প্রশস্ততায় এক কান হতে অন্য কান পর্যন্ত। চেহারা ধৌত করার সময় দাড়ি ধৌত ও খিলাল করা কর্তব্য তা যতই লম্বা হোক না কেন।
(وَاَیْدِیَکُمْ اِلَی الْمَرَافِقِ)
‘হাত কনুই পর্যন্ত ধুবে’ অর্থাৎ কনুইসহ উভয় হাত ধৌত করা ফরয। আরো বেশি ধৌত করা মুস্তাহাব। হাদীসে এসেছে: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: কিয়ামতের দিন আমার উম্মতকে তাদের ওযূর অঙ্গের শুভ্রতা দেখে ডাকা হবে। সুতরাং তোমাদের যে কেউ তার শুভ্রতা বৃদ্ধি করতে চায় সে যেন তা করে। (সহীহ বুখারী হা: ১৩৬)
(وَامْسَحُوْا بِرُؤُوْسِكُمْ)
‘তোমাদের মাথা মাসেহ কর’ এখানে মাথা সম্পূর্ণ মাসাহ করতে বলা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওযূর পদ্ধতির যে বিবরণ পাওয়া যায় তাতে সম্পূর্ণ মাথা মাসেহ করার কথা রয়েছে। “তারপর দু’হাত ভিজিয়ে মাথা মাসাহ করতেন। এ মাসাহের সময় তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাতের তালুসহ আঙ্গুল ভিজিয়ে নিয়ে উভয় হাত কপালের পার্শ্বে রেখে মাথার ওপর দিয়ে পিছনের দিকে চুলের শেষ পর্যন্ত নিয়ে যেতেন। আবার পিছন হতে উভয় হাত টেনে ঐ স্থানে পৌঁছাতেন যেখান হতে আরম্ভ করেছিলেন। (সহীহ বুখারী হা: ১৮৫) সুতরাং মাথার এক-চতুর্থাংশ মাসাহ করা সঠিক নয়, বরং সুন্নাতী নিয়ম হল পূর্ণ মাথা মাসাহ করা।
তারপর আল্লাহ তা‘আলা অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতা অর্জন করার নির্দেশ দিচ্ছেন।
(وَاِنْ کُنْتُمْ جُنُبًا)
‘তোমরা যদি অপবিত্র থাক’অপবিত্রতা বলতে স্বপ্নদোষ বা স্ত্রী সহবাস ও মহিলাদের মাসিক ও নিফাসজনিত অপবিত্রতা।
এ জাতীয় অপবিত্রতা হলে অথবা মহিলাদের মাসিক বা নিফাস বন্ধ হয়ে গেলে তখনই গোসল করে পবিত্রতা অর্জন করা জরুরী। পানি না পাওয়া গেলে তায়াম্মুম করতে হবে। যেমনটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। (আইসারুত তাফাসীর, ১/৫০৫) কেউ যদি এমন অসুস্থ হয় যে, পানি ব্যবহার করলে ক্ষতি হবে অথবা সফরে থাকে এবং পানি না পায় বা প্রস্রাব পায়খানা থেকে আগমন করে অথবা স্ত্রীর সাথে দৈহিক সম্পর্ক করে কিন্তু পানি না পায় তাহলে তায়াম্মুম করবে, এতে পবিত্র হয়ে যাবে। তায়াম্মুমের নিয়ম হল: বিসমিল্লাহ বলে উভয় হাত একবার পবিত্র মাটিতে মেরে মুখমণ্ডল ও উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসেহ করবে। আম্মার ইবনু ইয়াসার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি একদা উমার (রাঃ)-কে বললেন: আপনার কি মনে আছে যে, আমি ও আপনি সফরে ছিলাম এবং উভয়েই অপবিত্র হয়েছিলাম। কিন্তু আপনি সালাত আদায় করলেন না। আমি মাটিতে গড়াগড়ি করলাম ও সালাত আদায় করলাম। তারপর আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ বিষয়ে জানালাম। তিনি বললেন: এটিই তোমার জন্য যথেষ্ট ছিল- এ কথা বলে তিনি তার দু’হাতের তালু মাটিতে মারলেন এবং ফুঁ দিয়ে ঝাড়লেন। তারপর মুখমণ্ডল ও হাতদ্বয় মাসাহ করলেন। (সহীহ বুখারী হা: ৩৩৮) এ সম্পর্কে সূরা নিসার ৪৩ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
(لٰمَسْتُمُ النِّسَا۬ئَ)
‘অথবা তোমরা স্ত্রীর সঙ্গে মিলন কর’ - لَمسٌ এর শাব্দিক অর্থ হল স্পর্শ করা। এখানে অর্থ হল স্ত্রীর সাথে দৈহিক মিলন করা। অর্থাৎ কেউ স্ত্রীর সাথে দৈহিক মিলন করার পর পানি না পেলে তায়াম্মুম করে নেবে, এতে সে পবিত্র হয়ে যাবে এবং সালাত আদায় করতে পারবে।
(مَا یُرِیْدُ اللہُ لِیَجْعَلَ عَلَیْکُمْ مِّنْ حَرَجٍ)
‘আল্লাহ তোমাদেরকে কষ্ট দিতে চান না’অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা বিধি-বিধান দিয়ে মানুষের ওপর সঙ্কীর্ণতা সৃষ্টি করতে চান না বরং তিনি চান পবিত্র করতে ও তার নেয়ামতরাজি পূর্ণ করে দিতে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّيْنِ مِنْ حَرَجٍ)
“তিনি তোমাদের ওপর দীনের ব্যাপারে কোন সংর্কীণতা সৃষ্টি করেননি।”(সূরা হজ্জ ২২:৭৮)
হাদীসে এসেছে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
إِنَّ الدِّينَ يُسْرٌ وَلَنْ يُشَادَّ الدِّينَ أَحَدٌ إِلَّا غَلَبَهُ
দীন সহজ, কেউ দীনের ব্যাপারে কঠোরতা করলে দীন তার ওপর জয়ী হবে। (সহীহ বুখারী হা: ৩৯)
হাদীসে আরো এসেছে: নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: একজন মুসলিম বান্দা যখন ওযূ করার সময় তার চেহারা ধৌত করে তখন তার চেহারা থেকে সমস্ত গুনাহ বের হয়ে যায় যা তার চোখ দ্বারা করেছে। যখন হাত ধৌত করে তখন হাত দ্বারা যত গুনাহ করেছে তা বের হয়ে যায়। যখন পা ধৌত করে তখন পা দ্বারা যত গুনাহ হয়েছে সব বের হয়ে যায়, এমনকি সে পাপ থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র হয়ে যায়। (সহীহ মুসলিম হা: ৬০০)
তারপর আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত নেয়ামতের ও তাঁর সাথে কৃত অঙ্গীকারের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন: অঙ্গীকার গ্রহণ করার সময় বলেছ, আমরা শুনলাম ও মানলাম। অতএব অঙ্গীকার ভঙ্গ করাকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা অন্তরযামী।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. পবিত্রতা অর্জনের প্রয়োজনীয়তা, ওযূর পদ্ধতি ও বিকল্প পদ্ধতি তায়াম্মুম সম্পর্কে জানতে পারলাম।
২. পানির অনুপস্থিতিতে বড় অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতা অর্জনের বিকল্প পদ্ধতি হচ্ছে তায়াম্মুম।
৩. ওযূ ও তায়াম্মুমের ক্ষেত্রে নিয়ত করা আবশ্যক।
৪. ওযূর ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা আবশ্যক।
৫. বিনা পবিত্রতায় সালাত গ্রহণযোগ্য হবে না।
৬. ওযূ নষ্ট হয়ে গেলেই ওযূ করতে হবে এমন নয়, বরং সালাতের জন্য সালাতে দাঁড়ানোর পূর্বে ওযূ করতে হবে। তবে সর্বদা ওযূ অবস্থায় থাকতে পারলে উত্তম।
৭. ছোট ও বড় সকল অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতা অর্জনে তায়াম্মুমের পদ্ধতি একটিই, তাহল- মুখমণ্ডল ও উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করা।
৮. ওযূর ক্ষেত্রে সমস্ত মাথা মাসাহ করা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতি।
৯. আল্লাহ তা‘আলার নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা এবং কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করা ওয়াজিব।
১০. এসব বিধি বিধান দেয়ার হিকমত জানলাম, তাহল- আল্লাহ তা‘আলার নেয়ামতকে পূর্ণ করে দেয়া ও অপবিত্রতার কলুষতা থেকে পবিত্র করা।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings