Surah Al Ma'idah Tafseer
Tafseer of Al-Ma'idah : 6
Saheeh International
O you who have believed, when you rise to [perform] prayer, wash your faces and your forearms to the elbows and wipe over your heads and wash your feet to the ankles. And if you are in a state of janabah, then purify yourselves. But if you are ill or on a journey or one of you comes from the place of relieving himself or you have contacted women and do not find water, then seek clean earth and wipe over your faces and hands with it. Allah does not intend to make difficulty for you, but He intends to purify you and complete His favor upon you that you may be grateful.
Ibn Kathir Full
Tafseer 'Ibn Kathir Full' (BN)
অধিকাংশ মুফাসির বলেছেন যে, মানুষের যখন অযু থাকবে না সে সময়। তার জন্যে অযুর নির্দেশ প্রযোজ্য হবে। একটি দল বলেন যে, যখন তোমরা দণ্ডায়মান হও অর্থ হচ্ছে-যখন তোমরা ঘুম থেকে জাগরিত হও। এ দু'টি উক্তির ভাবার্থ প্রায় একই। অন্যান্য মনীষীরা বলেন যে, আয়াত তো সাধারণ, সুতরাং তা নিজের সাধারণত্বের উপরই থাকবে। কিন্তু যার অযু থাকবে না তার জন্যে অযুর নির্দেশ ওয়াজিব হিসেবে প্রযোজ্য হবে। আর যার অযু থাকবে তার জন্যে অযুর নির্দেশ হবে মুস্তাহাব হিসেবে। একটি দলের ধারণা এই যে, ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায় প্রত্যেক নামাযের জন্যে অযুর নির্দেশ ছিল। কিন্তু পরে তা মানসূখ বা রহিত হয়ে গেছে। মুসনাদে আহমাদ প্রভৃতির মধ্যে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) প্রত্যেক নামাযের জন্যে নতুনভাবে অযু করতেন। মক্কা বিজয়ের দিন তিনি অযু করে মোজার উপর মাসেহ্ করেছিলেন এবং ঐ একই অযুতে কয়েক ওয়াক্ত নামায আদায় করেছিলেন। এটা দেখে হযরত উমার (রাঃ) বলেছিলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আজ আপনি এমন কাজ করলেন যা ইতিপূর্বে কখনও করেননি। তখন তিনি বলেনঃ “হ্যাঁ, আমি ভুলে এরূপ করিনি, ববং জেনে শুনে ইচ্ছে করেই করেছি।” সুনানে ইবনে মাজা ইত্যাদির মধ্যে রয়েছে যে, হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) এক অযুতে কয়েক ওয়াক্ত নামায পড়তেন। তবে প্রস্রাব করলে বা অযু ভেঙ্গে গেলে নতুনভাবে অযু করতেন এবং অযুরই অবশিষ্ট পানি দ্বারা মোজার উপর মাসেহ করতেন। এটা দেখে হযরত ফযল ইবনে বাশীর (রাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ এটা কি আপনি নিজের মতানুযায়ী করেন? তিনি উত্তরে বলেনঃ না, আমি নবী (সঃ)-কে এরূপ করত দেখেছি। মুসনাদে আহমাদ প্রভৃতি গ্রন্থে রয়েছে যে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) প্রত্যেক নামাযের জন্যে নতুনভাবে অযু করতেন, অযু নষ্ট হোক বা না হোক। এটা দেখে তাঁর পুত্র হযরত উবাইদুল্লাহ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয় এর সনদ কি? উত্তরে তিনি বলেন যে, তার কাছে হযরত আসমা বিনতে ইয়াযীদ বর্ণনা করেছেন এবং তাঁর কাছে বর্ণনা করেছেন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে হানযালা, যিনি এমন লোকের পুত্র ছিলেন যাকে ফেরেশতাগণ গোসল দিয়েছিলেন। বর্ণনাটি এই যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে প্রত্যেক নামাযের জন্যে নতুনভাবে অযু করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। অযু থাক বা নষ্ট হয়ে যাক। কিন্তু এটা তার জন্যে কষ্টকর হলে প্রত্যেক নামাযে অযু করার পবিরর্তে মিসওয়াক করার নির্দেশ দেয়া হয়। হ্যাঁ, তবে অযু ভেঙ্গে গেলে নামাযের জন্যে নতুনভাবে অযু করা জরুরী। এটাকে সামনে রেখে হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর খেয়াল হয় যে, তার তো শক্তি রয়েছে, এজন্যে তিনি প্রত্যেক নামাযের জন্যে অযু করতেন। মৃত্যু পর্যন্ত তার সেই অবস্থাই থাকে। এর একজন বর্ণনাকারী হচ্ছেন হযরত মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক (রাঃ)। কিন্তু যেহেতু তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন সেহেতু দলীস' এর ভয়ও দূর হয়ে গেল। তবে ইবনে আসাকিরের বর্ণনায় এ শব্দগুলো নেই। আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।
হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ)-এর এই কাজ এবং তাঁর এতে সদা লেগে থাকা। এটাই প্রমাণ করে যে, এটা অবশ্যই মুস্তাহাব এবং জমহূরের এটাই মাযহাব। তাফসীরে ইবনে জারীরে রয়েছে যে, খলীফাগণ প্রত্যেক নামাযের জন্যে অযু করতেন। হযরত আলী (রাঃ) প্রত্যেক নামাযের জন্যে অযু করতেন এবং দলীল হিসেবে এ আয়াতটি পাঠ করতেন। একদা তিনি যোহরের নামায আদায় করে জনসমাবেশে উপস্থিত হন। অতঃপর তার নিকট পানি আনা হলে তিনি মুখ ও হাত ধৌত করেন এবং মাথা ও পা মাসেহ করেন। এরপর বলেনঃ “এটা হচ্ছে ঐ ব্যক্তির অযু যার অযু রয়েছে। একবার তিনি হালকাভাবে অযু করে একথাই বলেছিলেন। হযরত উমার ফারূক (রাঃ) হতেও এরূপই বর্ণিত আছে। সুনানে আবি দাউদ তায়ালেসীর মধ্যে হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়াব (রঃ)-এর উক্তি রয়েছে যে, অযু থাকা অবস্থায় অযু করা বাড়াবাড়ি। তবে প্রথমতঃ সনদের দিক দিয়ে এ উক্তিটি খুবই দুর্বল। দ্বিতীয়তঃ এটা ঐ ব্যক্তির জন্যে প্রযোজ্য যে একে ওয়াজিব মনে করে। আর যে ব্যক্তি একে মুস্তাহাব মনে" করে পালন করে সে তো হাদীসের উপরই আমলকারী। সহীহ বুখারী, সুনান প্রভৃতি গ্রন্থে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) প্রত্যেক নামাযের জন্যে নতুনভাবে অযু করতেন। একজন আনসারী এ কথা শুনে হযরত আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেনঃ আপনারা কি করতেন? তিনি উত্তরে বললেনঃ “আমরা অযু নষ্ট না হওয়া পর্যন্ত একই অযুতে কয়েক ওয়াক্ত নামায আদায় করতাম।” তাফসীরে ইবনে জারীরের মধ্যে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নির্দেশ বর্ণিত আছে যে, যে ব্যক্তি অযু থাকতে অযু করে তার জন্যে দশটি পুণ্য লিখা হয়। জামেউত তিরমিযী ইত্যাদি হাদীস গ্রন্থের মধ্যেও এ বর্ণনা রয়েছে এবং ইমাম তিরমিযী (রঃ) একে দুর্বল বলেছেন। একটি দল বলেন, আয়াতের উদ্দেশ্য শুধু এটাই যে, অন্য কোন কাজের সময় অযু করা ওয়াজিব নয়, শুধুমাত্র নামাযের জন্যেই অযু ওয়াজিব। এ নির্দেশ এ জন্যেই যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) অযু ভেঙ্গে যাওয়ার পর নতুনভাবে অযু না করা পর্যন্ত কোন কাজ করতেন না। এটাই ছিল তাঁর নীতি। হাদীসে ইবনে আবি হাতিম প্রভৃতির মধ্যে একটি দুর্বল বর্ণনা রয়েছে, বর্ণনাকারী বলেনঃ যখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) প্রস্রাবের ইচ্ছে করতেন তখন আমরা তাঁকে কিছু বললে তিনি উত্তর দিতেন না এবং সালাম দিলে সালামের জবাবও দিতেন না। অবশেষে রুখসাতের এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। সুনানে আবি দাউদের মধ্যে রয়েছে, বর্ণনাকারী বলেনঃ একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) পায়খানা হতে বের হন এবং তাঁর সামনে খাদ্য হাযির করা হয়। আমরা তাঁকে বললাম-আপনার নির্দেশ
হলে অযুর পানি নিয়ে আসি। তখন তিনি বললেনঃ “যখন আমি নামাযের মধ্যে দাঁড়াই তখনই শুধু আমার প্রতি অযুর নির্দেশ রয়েছে।” ইমাম তিরমিযী (রঃ) একে হাসান বলেছেন। অন্য একটি রিওয়ায়াতে রয়েছে, নবী (সঃ) বলেনঃ “আমাকে এমন খুব কম নামাযই পড়তে হয় যাতে আমি অযু করে থাকি।” যখন তোমরা নামাযের জন্যে দাড়াও তখন অযু করে নাও' -আয়াতের এ শব্দগুলো দ্বারা উলামায়ে কিরামের একটি দল দলীল গ্রহণ করেছেন যে, অযুতে নিয়ত ওয়াজিব। কালামুল্লাহর ভাবার্থ হচ্ছে তোমরা নামাযের জন্যে অযু করে নাও। যেমন আরবের লোকেরা বলে থাকে, যখন তোমরা আমীরকে দেখ তখন দাঁড়িয়ে যাও অর্থাৎ আমীরের জন্যে দাঁড়িয়ে যাও। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে- “আমলের পরিণাম নিয়তের উপর নির্ভরশীল এবং প্রত্যেক মানুষের জন্যে শুধু ওটাই রয়েছে যার সে নিয়ত করেছে। অযুতে মুখমণ্ডল ধৌত করার পূর্বে বিসমিল্লাহ বলা মুস্তাহাব। কেননা, একটি খুবই বিশুদ্ধ হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি অযুতে বিসমিল্লাহ বললো না তার অযু হলো না।” এটাও স্মরণীয় বিষয় যে, অযুর পানির বরতনে হাত প্রবেশ করানোর পূর্বে হাত ধুয়ে নেয়া মুস্তাহাব। আর যখন কেউ ঘুম থেকে জেগে উঠবে তার জন্যে তো এ ব্যাপারে খুবই তাগীদ রয়েছে। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যখন তোমাদের কেউ ঘুম থেকে জেগে উঠবে তখন যেন সে তার হাত তিনবার ধুয়ে নেয়ার পূর্বে বরতনে প্রবেশ না করায়, কেননা তোমাদের কেউই জানেনা যে, রাত্রে তার হাতটি কোথায় ছিল।” মুখমণ্ডলের সীমা দৈর্ঘে সাধারণতঃ মাথার চুল গজাবার যেটা জায়গা সেখান থেকে নিয়ে দাড়ির হাড় ও থুতনি পর্যন্ত এবং প্রস্থে এক কান থেকে নিয়ে অপর কান পর্যন্ত। কপালের দু’দিকে চুল গজিয়ে ওঠার জায়গাটা মাথার অন্তর্ভুক্ত কি না এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। আর দাড়ির লটকে থাকা চুল ধৌত করা মুখমণ্ডল ধৌত করার ফরযিয়াতের অন্তর্ভুক্ত কি না এ ব্যাপার দু'টি উক্তি রয়েছে। এক তো এই যে, ওর উপর পানি বইয়ে দেয়া ওয়াজিব। কেননা, মুখমণ্ডল সামনে করার সময় ওটাও সামনে হয়ে থাকে। একটি হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একটি লোককে দাড়ি ঢেকে রাখা অবস্থায় দেখে বলেনঃ “ওটা খুলে ফেল, কেননা ওটা মুখমণ্ডলেরই অন্তর্ভুক্ত।” হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেনঃ আরবাসীদেরও অভ্যাস এই যে, ছেলেদের যখন দাড়ি গজিয়ে ওঠে তখন তারা বলে (অর্থাৎ
তার চেহারা প্রকাশ পেয়েছে)। সুতরাং বুঝা গেল যে, আরববাসী দাড়িকেও মুখের অন্তর্ভুক্ত মনে করে থাকে। দাড়ি ঘন হলে ওটা খিলাল করাও মুস্তাহাব। হযরত উসমান (রাঃ)-এর অযুর বর্ণনা দিতে গিয়ে বর্ণনাকারী বলেন যে, তিনি মুখমণ্ডল ধৌত করার সময় তিনবার দাড়ি খিলাল করেছেন এবং বলেছেনঃ “তোমরা আমাকে যেভাবে অযু করতে দেখলে ঠিক সেভাবেই আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে অযু করতে দেখেছি।” (জামেউত তিরমিযী ইত্যাদি) এ রিওয়ায়াতকে ইমাম বুখারী (রঃ) ও ইমাম তিরমিযী (রঃ) হাসান বলেছেন। সুনানে আবি দাউদে হযরত হাসান ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) অযু করার সময় এক অঞ্জলী পানি নিয়ে থুতনির নীচে দিতেন এবং দাড়ি মুবারক খিলাল করতেন ও বলতেনঃ “আমাকে আমার মহিমান্বিত প্রভু এভাবেই নির্দেশ দিয়েছেন।” ইমাম বায়হাকী (রঃ) বলেন যে, দাড়ি খিলাল করা হযরত আম্মার (রাঃ), হযরত আয়েশা (রাঃ) ও হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে এবং একে ছেড়ে দেয়ার রুখসত হযরত ইবনে উমার (রাঃ), হযরত হাসান ইবনে আলী (রাঃ), হযরত নাখঈ (রঃ) এবং তাবেঈগণের একটি জামআত হতে বর্ণিত রয়েছে। সিহাহ ইত্যাদিতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন অযু করতে বসতেন তখন তিনি কুলি করতেন এবং নাকে পানি দিতেন। এ দু'টো কাজ অযু ও গোসলে ওয়াজিব কি মুস্তাহাব এ ব্যাপারে ইমামদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রঃ)-এর মাযহাবে এটা ওয়াজিব। কিন্তু ইমাম শাফিঈ (রঃ) ও ইমাম মালিক (রঃ) এটাকে মুস্তাহাব বলেছেন। তাদের দলীল হচ্ছে সুনানের ঐ সহীহ হাদীসটি যাতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাড়াতাড়ি নামায আদায়কারী লোকটিকে বলেছিলেনঃ “তুমি সেভাবে অযু কর যেভাবে আল্লাহ তোমাকে নির্দেশ দিয়েছেন।” ইমাম আবু হানীফা (রঃ)-এর মাযহাব এই যে, এই দু'টো কাজ গোসলে ওয়াজিব, অযুতে ওয়াজিব নয়। ইমাম আহমাদ (রঃ) হতে একটি রিওয়ায়াতে বর্ণিত আছে যে, নাকে পানি দেয়া ওয়াজিব কিন্তু কুলি করা মুস্তাহাব। কেননা, সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি অযু করবে সে যেন নাকে পানি দেয়। অন্য বর্ণনায় রয়েছে- “তোমাদের কেউ যখন অযু করবে তখন সে যেন তার নাকের দু’টি ছিদ্রে পানি প্রবেশ করিয়ে দেয়, তারপরে যেন নাক ঝাড়ে।” অর্থাৎ যেন নাকের ছিদ্রে ভালভাবে পানি প্রবেশ করিয়ে দিয়ে উত্তম রূপে নাক পরিষ্কার করে।
ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রঃ) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি অযু করতে বসে মুখমণ্ডল ধৌত করলেন। এরপর এক অঞ্জলি পানি নিয়ে তা দ্বারা কুলি করলেন ও নাক পরিষ্কার করলেন। তারপর এক অঞ্জলি পানি নিয়ে ডান হাত ধুলেন। এরপর আর এক অঞ্জলি পানি নিয়ে বাম হাত ধুলেন। তারপর মাথা মাসেহ করলেন। এরপর এক অঞ্জলি পানি নিয়ে তা ডান পায়ে ঢেলে দিলেন এবং পা ধৌত করলেন। অতঃপর আর এক অঞ্জলি পানি নিয়ে বাম পা ধুয়ে ফেললেন। এরপর বললেনঃ “এভাবেই আমি আল্লাহর রাসূল (সঃ)-কে অযু করতে দেখেছি।" (আরবী) -এর অর্থ হচ্ছেঅর্থাৎ কনুইসহ। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমরা তোমাদের মালসহ তাদের (ইয়াতীমদের) মাল ভক্ষণ করো না, নিশ্চয়ই এটা গুরুতর পাপ। দ্রুপ এখানেও অর্থ হবে তোমরা হাতকে কনুই পর্যন্ত নয় বরং কনুইসহ ধৌত কর। ইমাম দারেকুতনী (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) অযু করার সময় স্বীয় কনুইদ্বয়ের উপর পানি বইয়ে দিতেন। কিন্তু এ হাদীসের দু’জন বর্ণনাকারীর সমালোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।
অযু কারীর জন্যে এটা উত্তম যে, সে যেন অযুতে কনুই-এর সাথে বাহুকেও ধুয়ে নেয়। কেননা, সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন আমার উম্মত অযুর চিহ্নের কারণে উজ্জ্বল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিশিষ্ট অবস্থায় আগমন করবে। সুতরাং তোমাদের কারও সম্ভব হলে সে যেন তার ঔজ্জ্বল্যের দূরত্ব বাড়িয়ে নেয়।” সহীহ মুসলিমে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, আমি আমার বন্ধু (সঃ)-কে বলতে শুনেছি- মুমিনকে ঐ স্থান পর্যন্ত অলংকার পরানো হবে যে স্থান পর্যন্ত তার অযুর পানি পৌছবে।
(আরবী) -এর মধ্যে (আরবী) অক্ষরটি (আরবী) বা মিলিয়ে দেয়ার জন্যে হওয়াই সুস্পষ্ট। কিন্তু এটা (আরবী) বা কিছু অংশের জন্যে হওয়ার মধ্যে চিন্তা ভাবনা করার অবকাশ রয়েছে। কোন কোন মূলনীতি বিশারদ বলেন যে, যেহেতু আয়াত হচ্ছে সংক্ষিপ্ত সেহেতু সুন্নাহ এর ব্যাখ্যা যা দিয়েছে সেটাই কর্তব্য এবং সেদিকেই ফিরে যেতে হবে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সায়েদ ইবনে ‘আসিম (রাঃ) নামক সাহাবীকে একটি লোক বলেনঃ আপনি অযু করে আমাদেরকে দেখিয়ে দিন। তখন তিনি পানি চাইলেন এবং হাত দু'টি দু'বার করে ধুলেন, তারপর তিনবার কুলি করলেন এবং নাকে পানি দিলেন। এরপর চেহারা ধৌত করলেন। তারপর কনুইসহ হাত দু’টি দু’বার ধুলেন। অতঃপর দু’হাত দিয়ে মাথা মাসেহ করলেন, মাথার প্রথম অংশ থেকে শুরু করে গ্রীবা পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। তারপর সেখান থেকে এখন পর্যন্ত ফিরিয়ে আনলেন। তারপর পা দু’টি ধৌত করলেন। (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর অযুর নিয়ম হযরত আলী (রাঃ) হতেও এ রকমই বর্ণিত আছে। সুনানে আবি দাউদে হযরত মুআবিয়া (রাঃ) এবং হযরত মিকদাদ (রাঃ) হতেও এরূপই বর্ণিত রয়েছে। এ হাদীসগুলো হচ্ছে সম্পূর্ণ মাথা মাসেহ করা ফরয হওয়ার দলীল। হযরত ইমাম মালিক (রঃ) এবং হযরত আহমাদ (রঃ)-এর এটাই মাযহাব। আর এটাই মাযহাব ঐ সব গুরুজনেরও যারা আয়াতকে সংক্ষিপ্ত বলে মেনে থাকেন এবং হাদীসকে এর ব্যাখ্যাকারী মনে করে থাকেন। হানাফীদের ধারণা এই যে, মাথার এক চতুর্থাংশ মাসেই করা ফরয যা হচ্ছে মাথার প্রথম অংশ। আমাদের সাথী বলেন যে, ফরয শুধু ঐ টুকু যার উপর মাসেহর প্রয়োগ হয়ে থাকে। তার কোন সীমা নির্ধারিত নেই। মাথার কতক চুলের উপর মাসেহ হলেও ফরয আদায় হয়ে যাবে। এ দু'দলের দলীল হচ্ছে হযরত মুগীরা ইবনে শু’বা (রাঃ) বর্ণিত হাদীসটি। তিনি বলেনঃ (একবার সফরে) রাসূলুল্লাহ (সঃ) পেছনে রয়ে যান এবং আমিও তার সাথে পেছনে থেকে যাই। যখন তিনি প্রাকৃতিক প্রয়োজন পুরো করে ফেলেন তখন আমার নিকট পানি চান। আমি লোটা (পানি পাত্র) নিয়ে আসি। তিনি হাতের কজি দু’টি ধুলেন। তারপর মুখমণ্ডল ধৌত করলেন। এরপর কজি হতে কাপড় সরিয়ে ফেললেন এবং কপালের সাথে মিলে থাকা চুল ও পাগড়ির উপর মাসেহ করলেন। (সহীহ মুসলিম) ইমাম আহমাদ (রঃ) এবং তাঁর সঙ্গীগণ এর উত্তর দেন যে, তিনি মাথার প্রথম অংশের উপর মাসেহ করে অবশিষ্ট মাসেই পাগড়ির উপর পুরো করেন। এর বহু দৃষ্টান্ত হাদীসে রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বরাবরই পাগড়ির উপর ও মাথার উপর মাসেহ করতেন। সুতরাং এটাই উত্তম এবং এটা কোনক্রমেই প্রমাণ করে না যে, মাথার কিছু অংশের উপর বা শুধুমাত্র কপালের চুলের উপর মাসেহ করতে হবে, আর এর পূর্ণতা পাগড়ির উপর হবে না। আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।
আবার মাথার উপর মাসেহ তিনবার হবে কি একবারই হবে এ ব্যাপারেও মতানৈক্য রয়েছে। ইমাম শাফিঈ (রঃ)-এর মতে মাসেহ তিনবার করতে হবে। কিন্তু ইমাম আহমাদ (রঃ) ও তাঁর অনুসারীদের মতে মাসেহ একবারই করতে হবে। তাদের দলীল এই যে, হযরত উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) অযু করতে বসে দু'হাতের উপর তিনবার পানি ঢালেন ও হাত দুটি তিনবার ধৌত করেন, তারপর কুলি করেন ও নাকে পানি দেন। তারপর তিনবার মুখমণ্ডল ধৌত করেন। এরপর তিনবার হাত দু’টি কনুই পর্যন্ত ধৌত করেন, প্রথমে ডান হাত এবং পরে বাম হাত। তারপর মাথা মাসেহ করেন। এরপর তিনবার করে পা দু’টি ধৌত করেন। অতঃপর তিনি বলেনঃ “যে ব্যক্তি আমার এ অযুর মত অযু করে শুদ্ধ অন্তরে দু'রাকআত নামায আদায় করে, তার পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যায়।” (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসিলম) সুনানে আবি দাউদের মধ্যে এ রিওয়ায়াতেই মাথা মাসেহ করার সাথে সাথে এ শব্দও রয়েছে যে, তিনি মাথা একবার মাসেহ করেন। হযরত আলী (রাঃ) থেকেও এরূপই বর্ণিত আছে। আর যারা মাথা মাসেহকেও তিনবার করার কথা বলেন তাঁরা ঐ হাদীস থেকে দলীল নিয়েছেন যাতে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) তিনবার করে অযুর অঙ্গগুলো ধুয়েছিলেন। হযরত উসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি অযু করেন। তারপর এরূপই রিওয়ায়াত রয়েছে এবং তাতে কুলি করা ও নাকে পানি দেয়ার উল্লেখ নেই। আর তাতে আছে যে, অতঃপর তিনি তিনবার মাথা মাসেহ করেন এবং তিনবার স্বীয় পা দু’টি ধৌত করেন। অতঃপর বলেনঃ “আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে এভাবেই অযু করতে দেখেছি।” তিনি আরও বলেনঃ “যে ব্যক্তি এরূপভাবে অযু করে, তার জন্যে এটাই যথেষ্ট। কিন্তু হাদীস গ্রন্থে যে হাদীসগুলো হযরত উসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে সেগুলো দ্বারা মাথা মাসেহ একবার করাই সাব্যস্ত হচ্ছে।
(আরবী) -এর কে (আরবী) -এর উপর (আরবী) করে (আরবী) পড়া হয়েছে এবং এভাবে ধৌত করার দিকে ফিরোনো হয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এরূপভাবেই পাঠ করতেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে। মাসউদ (রাঃ) এটাই করতেন। হযরত উরওয়া (রঃ), হযরত আতা’ (রঃ), হযরত ইকরামা (রঃ), হযরত হাসান (রঃ), হযরত মুজাহিদ (রঃ), হযরত ইবরাহীম (রঃ), হযরত যহহাক (রঃ), হযরত সুদ্দী (রঃ), হযরত মুকাতিল ইবনে হাইয়ান (রঃ), হযরত যুহরী (রঃ) এবং হযরত ইবরাহীম তাইমীরও (রঃ) এটাই উক্তি। আর সুস্পষ্ট কথা এটাই যে, পা ধুতেই হবে। পূর্ববর্তী গুরুজনদেরও এটাই নির্দেশ যে, পা ধুতেই হবে। এখান থেকেই জমহুর এই দলীল গ্রহণ করেছেন যে, অযুতে তরতীব ওয়াজিব। একমাত্র ইমাম আবূ হানীফা (রঃ) এর বিপরীত মত পোষণ করেন। তিনি অযুতে তরতীব বা ক্রমান্বয়ে করাকে শর্ত মনে করতেন না। তাঁর মতে যদি কেউ প্রথমে পা ধুয়ে নেয়, এরপর মাথা মাসেহ করে, তারপর হাত ধৌত করে, অতঃপর মুখমণ্ডল ধৌত করে তবুও জায়েয হবে। কেননা, আয়াতে এ অঙ্গগুলোকে ধৌত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। (আরবী) -এর (আরবী) কখনও তরতীবের উপর হয় না। জমহুর এর কয়েকটি জবাব দিয়েছেন। একটি এই যে, অক্ষরটি তরতীবের উপর (আরবী) করে। আয়াতের শব্দগুলোতে নামায আদায়কারীকে মুখমণ্ডল ধৌত করার নির্দেশ (আরবী) শব্দ দ্বারা হচ্ছে। তাহলে কমপক্ষে মুখমণ্ডলকে প্রথম ধৌত করা তো শব্দগুলো দ্বারাই সাব্যস্ত হচ্ছে। এখন এর পরের অঙ্গগুলোতে তরতীব ইজমা দ্বারা সাব্যস্ত হচ্ছে। এটা বিবেক বিরুদ্ধও নয়। অতঃপর (আরবী) অক্ষরটি যা (আরবী) বা অনুসরণের জন্যে আসে এবং যা (আরবী) বা ক্রমান্বয়ের দাবীদার, যখন। একটির উপর এসেছে তখন একটির তরতীব মেনে নিয়ে অন্যটির তরতীব কেউ অস্বীকার করে না, বরং হয়তো বা সবকটির তরতীব স্বীকারকারী হয়, নয় তো কোন একটিরও তরতীব স্বীকারকারী হয় না। সুতরাং এ আয়াতটি নিশ্চিতরূপে তাঁদের উপর দলীল হচ্ছে যারা মোটেই তরতীব স্বীকার করেন না। দ্বিতীয় উত্তর এই যে, (আরবী) অক্ষরটি তরতীবের উপর (আরবী) করে না এটাও আমরা স্বীকার করি না। বরং ওটা তৱতীবের উপর (আরবী) করে। যেমন ব্যাকরণবিদগণের একটি দলের এবং ফিকাহশাস্ত্রবিদদের কারও কারও মাযহাব এটাই। তাছাড়া এ বিষয়টিও চিন্তা ভাবনার যোগ্য যে, আভিধানিক অর্থে এটা তরতীবের উপর করে না (আরবী) এটা যদি মেনে নেয়াও হয়, তথাপি শরীয়তের অর্থে যে জিনিসগুলোতে তরতীব হতে পারে সেগুলোতে এর (আরবী) তরতীবের উপর হয়ে থাকে। সহীহ মুসলিমে একটি হাদীস রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করে সাফার দরজা হতে বের হন, তখন (আরবী) (২:১৫৮)-এ আয়াতটি পাঠ করেন এবং বলেনঃ “আমি সেখান থেকেই শুরু করবো যার বর্ণনা আল্লাহ তা'আলা প্রথম দিয়েছেন।” সুতরাং তিনি সাফা থেকে দৌড় শুরু করেন। সুনানে নাসাঈতে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর এ নির্দেশও বর্ণিত আছে- “তোমরা সেখান থেকেই শুরু কর যেখান থেকে আল্লাহ শুরু করেছেন।” এর ইসনাদও বিশুদ্ধ এবং এতে আমর বা নির্দেশ রয়েছে। অতএব জানা গেল যে, যার বর্ণনা পূর্বে হয়েছে তাকে পূর্বে করা এবং যার বর্ণনা পরে হয়েছে তাকে পরে করা ওয়াজিব। সুতরাং সুস্পষ্টরূপে সাব্যস্ত হয়ে গেল যে, এরূপ স্থলে শরীয়তের দিক দিয়ে তরতীব উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।
তৃতীয় দল উত্তরে বলেন যে, হাত কনুইসহ ধৌত করার হুকুম এবং পা ধৌত করার হুকুমের মধ্যভাগে মাথা মাসেহ করার হুকুম বর্ণনা করা এ কথারই স্পষ্ট দলীল যে, তরতীবকে বাকী রাখাই হচ্ছে উদ্দেশ্য। নতুবা নামে কালাম বা কথার ছন্দ উলট পালট করা হতো না। এর প্রথম উত্তর এটাও যে, সুনানে আবি দাউদ ইত্যাদির মধ্যে সহীহ সনদে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) অযুর অঙ্গগুলো একবার একবার করে ধৌত করেন। অতঃপর বলেনঃ “এটাই হচ্ছে অযু যা ছাড়া আল্লাহ নামায কবুল করেন না। এখন অবস্থা হলো দু’টি, হয় ঐ অযুতে তরতীব ছিল, নয় তো ছিল না। যদি বলা হয় যে, নবী (সঃ)-এর ঐ অযু তরতীবসহ ছিল অর্থাৎ পর্যায়ক্রমে একটি অঙ্গের পর আর এক অঙ্গ ছিল তাহলে বুঝতে হবে যে, যে অযুতে আগা পিছা হবে এবং সঠিকভাবে তরতীব থাকবে না সেই অযুতে নামায গ্রহণীয় হবে না। তাহলে জানতে হবে যে, অযুতে তরতীব ওয়াজীব ও ফরয। আর যদি মেনে নেয়া হয় যে, ঐ অযুতে তরবীত ছিল না, বরং এলোমেলো ছিল, যেমন পা ধুয়েছিলেন, তারপর কুলি করেছিলেন, এর পর মাসেহ করেছিলেন, তারপর মুখ ধুয়েছিলেন ইত্যাদি, তাহলে তরতীব না করাই ওয়াজিব হয়ে যাবে! অথচ এরূপ মত পোষণকারী উম্মতের মধ্যে একজনও নেই। অতএব, সাব্যস্ত হয়ে গেল যে, অযুতে তরতীব ফরয। আয়াতের এ অংশের একটি কিরআত ওয়া আরজুলিকুম অর্থাৎ কে যের দিয়েও রয়েছে। আর এটা থেকেই শী'আ সম্প্রদায় এ দলীল গ্রহণ করেছে। যে, পায়ের উপর মাসেহ্ করা ওয়াজিব। কেননা, তাদের নিকট এর (আরবী) বা সংযোগ (আরবী)-এর উপর হয়েছে। পূর্ববর্তী কোন কোন গুরুজন হতেও এরূপ উক্তি বর্ণিত আছে। যার ফলে পা মাসেহ করার কল্পনা জেগে ওঠে। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন-মূসা ইবনে আনাস জনসমাবেশে হযরত আনাস (রাঃ)-কে বলেন যে, হাজ্জায আহ্ওয়ায নামক স্থানে ভাষণ দিতে গিয়ে তাহারাত ও অযুর আহকামের ব্যাপারে বলেছেনঃ “তোমরা মুখমণ্ডল ও হাত ধৌত কর, মাথা মাসেহ্ কর এবং পা ধুয়ে ফেল। সাধারণতঃ পায়েই ধূলা ময়লা লেগে যায়। সুত্রং পায়ের তলা, উপরিভাগ ও গোড়ালিকে উত্তমরূপে ধৌত কর।” তখন হযরত আনাস (রাঃ) উত্তরে বলেনঃ আল্লাহ তা'আলা সত্যবাদী এবং হাজ্জায মিথ্যাবাদী। আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবী) হযরত আনাস (রাঃ)-এর অভ্যাস ছিল যে, যখন তিনি পায়ের মাসেহ করতেন তখন পা সম্পূর্ণরূপে ভিজিয়ে দিতেন। অথচ তার থেকেই বর্ণিত আছে যে, কুরআন কারীমে পায়ের উপর মাসেহ করার হুকুম রয়েছে। হাঁ, তবে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সুন্নাত হচ্ছে পা ধৌত করা। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, অযুতে দু'টো অঙ্গ ধুতে হয় এবং দু'টো অঙ্গ মাসেহ করতে হয়। হযরত কাতাদাহ (রাঃ) হতেও এটাই বর্ণিত আছে। ইবনে আবি হাতিম (রঃ) হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, আয়াতটিতে পায়ের উপর মাসেহ করার বর্ণনা রয়েছে। ইবনে উমার (রাঃ), আলকামাহ। (রঃ), আবু জাফর (রঃ), মুহাম্মাদ ইবনে আলী (রঃ) এবং এক রিওয়ায়াতে হযরত হাসান (রঃ) ও হযরত জাবির ইবনে যায়েদ (রঃ) এবং আর এক রিওয়ায়াতে হযরত মুজাহিদ (রঃ) হতেও এরূপই বর্ণিত আছে। হযরত ইকরামা (রাঃ) পায়ের উপর মাসেহ করতেন। শাবী (রঃ) বলেন যে, হযরত জিবরাঈল (আঃ)-এর মাধ্যমে মাসেহর হুকম নাযিল হয়েছে। তার থেকে এটাও বর্ণিত আছে- “তোমরা কি দেখছো না যে, যে অঙ্গগুলোর উপর বোয়ার নির্দেশ ছিল, ঐগুলোর উপর তো তায়াম্মুমের সময় মাসেহ করার হুকুম রয়েছে। আর যেগুলোর উপর মাসেহ করার হুকুম ছিল, তায়াম্মুমের সময় ওগুলো ছেড়ে দেয়া হয়েছে।” হযরত আমির (রাঃ)-কে কেউ বললেনঃ “লোকেরা বলছেন যে, হযরত জিবরাঈল (আঃ) পা ধোয়ার হুকুম নিয়ে এসেছেন।" হযরত আমির (রাঃ) একথা শুনে বললেনঃ “হযরত জিবরাঈল (আঃ) মাসেহ করার হুকুম নিয়ে নাযিল হয়েছিলেন। সুতরাং এসব আছার সম্পূর্ণরূপেই গারীব এবং ঐ বিষয়ের উপর মাহমুল যে, এখানে মাসেহর ভাবার্থ হচ্ছে ঐ গুরুজনদের হালকাভাবে ধৌতকরণ। কেননা, সুন্নাত দ্বারা এটা পরিষ্কারভাবে সাব্যস্ত আছে যে, পা ধৌত করা ওয়াজিব। স্মরণ রাখতে হবে যে, যেরের কিরআতটি হয় তো ভাষাগত বৈশিষ্ট্য ও সৌষ্ঠবের জন্যেই হবে। যেমন আরবদের কথায় আছে (আরবী) এবং আল্লাহ পাকের কালামে রয়েছে (আরবী) (৭৬:২১) আরবদের ভাষায় এটা প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। এ কারণে উভয় শব্দকে একই দিয়ে দেয়া হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটা দেখা যায়। হযরত ইমাম শাফিঈ (রঃ) এর একটি কারণ এও বর্ণনা করেছেন যে, এ হুকুম ঐ সময় প্রযোজ্য হবে যখন পায়ে মোজা থাকবে। কেউ কেউ বলেন যে, এখানে মাসেহর অর্থ হচ্ছে হালকাভাবে ধৌত করা, যেমন কতক রিওয়ায়াতে সুন্নাত দ্বারা এটা সাব্যস্ত হয়েছে। মোটকথা পা ধোয়া ফরয, এটা ছাড়া অযুই হবে না, আয়াতেও এটাই আছে এবং হাদীসেও তাই আছে। যেগুলো আমরা পেশ করছি। ইনশাআল্লাহ।
হাদীসে বায়হাকীতে রয়েছে, একদা হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (রাঃ) যোহরের নামায আদায় করার পর বসে থাকেন এবং আসর পর্যন্ত জনগণের কাজ কামে লিপ্ত থাকেন। তারপর পানি আনিয়ে নেন এবং অঞ্জলি দ্বারা মুখমণ্ডল, হস্তদ্বয়, মাথা ও পদদ্বয় মাসেহ করেন এবং অবশিষ্ট পানি দাড়িয়ে পান করে নেন। অতঃপর বলেনঃ “লোকেরা দাঁড়িয়ে পানি পান করাকে অপছন্দনীয় মনে করে। অথচ আমি যা করলাম তাই রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে করতে দেখেছি।”এরপর তিনি বলেনঃ “এটা হচ্ছে ঐ ব্যক্তির অযু যার অযু রয়েছে।” (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম) শী'আদের মধ্যে যারা পায়ের মাসেহ মোজার মাসেহর মত বলেছেন তারা অবশ্যই ভুল করেছেন এবং জনগণকে ভ্রান্তির মধ্যে নিক্ষেপ করেছেন। তদ্রুপ তারাও ভুল করেছেন যারা মাসেহ করা ও ধৌত করা দুটোকেই জায়েয বলেছেন। আবার যারা ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) সম্পর্কে এ ধারণা পোষণ করেছেন যে, তিনি হাদীসসমূহের উপর ভিত্তি করে পা ধোয়া এবং আয়াতে কুরআনীর উপর ভিত্তি করে পায়ের উপর মাসেহ করাকে ফরয বলেছেন তাঁদের তাহকীক বা বিশ্লেষণও ঠিক নয়। তাফসীরে ইবনে জারীর আমাদের নিকট বিদ্যমান রয়েছে। তার কথার ব্যাখ্যা এই যে, পা দু’টিকে রগড়ানো ওয়াজিব। কিন্তু অন্য অঙ্গগুলোর ব্যপারে এটা ওয়াজিব নয়। কেননা, পা দ্বারা মাটিতে চলাফেরা করতে হয়। কাজেই পায়ে ময়লা মাটি ভরে যায়। তাই পা ধোয়া জরুরী, যাতে পায়ে কিছু লেগে থাকলে ধোয়ার ফলে তা দূর হয়ে যায়। কিন্তু এ রগড়ানোর জন্যে তিনি মাসেহ শব্দটি প্রয়োগ করেছেন। আর এতেই কতক লোকের মনে সন্দেহ জেগে ওঠে এবং তারা বুঝে নেন যে, তিনি ধৌত করা ও মাসেহ করাকে এভাবে জমা করে দিয়েছেন। অথচ প্রকৃতপক্ষে এর কোন অর্থই হয় না। মাসেহ তো ধৌত করারই অন্তর্ভুক্ত, তা আগেই তোক বা পরেই হোক। সুতরাং আসলে ইমাম সাহেবের ইচ্ছা ওটাই যা আমি উল্লেখ করলাম। আর একে না বুঝে অধিকাংশ ফেকাহ শাস্ত্রবিদ ওটা মুশকিল জেনেছেন। আমি খুব চিন্তা ভাবনা করলে আমার কাছে এটা একেবারে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, ইমাম সাহেব উভয় কিরআতকে একত্রিত করারই পন্থা খুঁজছিলেন। সুতরাং তিনি যেরের কিরআত অর্থাৎ মাসেহকে তো মাহমুল করেছেন , বা ভালভাবে রগড়িয়ে পরিষ্কার করার উপর আর যবরের কিরআত তো বা ধৌত করার উপর আছেই। সুতরাং তিনি ধৌত করা ও রগড়ানো উভয়কেই ওয়াজিব বলেছেন, যাতে যের ও যবর উভয় কিরআতের উপর একই সাথে আমল হয়ে যায়। এখন পা ধৌত করা জরুরী হওয়া সম্পর্কে যে হাদীসগুলো এসেছে। সেগুলোর বর্ণনা দেয়া হচ্ছে-
আমীরুল মুমিনীন হযরত উসমান ইবনে আফফান (রাঃ), আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (রাঃ) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ), হযরত মুআবিয়া (রাঃ) এবং হযরত মিকদাদ ইবনে মাদীকারব (রাঃ)-এর বর্ণনাগুলো ইতিপূর্বে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) অযু করার সময় স্বীয় পদদ্বয় একবার, দু’বার বা তিনবার ধুয়েছেন। হযরত আমর ইবনে শুআইব (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) অযু করেছেন এবং স্বীয় পা দু'টি ধুয়েছেন। তারপর বলেছেনঃ “এটা হচ্ছে অযু, যা ব্যতীত আল্লাহ তাআলা নামায কবূল করেন না।”
সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, এক সফরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদের পিছনে রয়ে গিয়েছিলেন। যখন তিনি আগমন করেন তখন আমরা তাড়াতাড়ি অযু করছিলাম। আমরা তাড়াহুড়া করে আমাদের পাগুলো স্পর্শ করা শুরু করে দেই। সেই সময় তিনি খুবই উচ্চৈঃস্বরে বললেনঃ “অযু পুরোপুরিভাবে সম্পন্ন কর। আগুনে পায়ের গোড়ালির অমঙ্গল রয়েছে। অন্য একটি হাদীসে আছে-“আগুনে পায়ের গোড়ালির ও পায়ের তলার অমঙ্গল রয়েছে। (এ হাদীসটি ইমাম বায়হাকী (রঃ) ও ইমাম হাকিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন) আর একটি হাদীসে রয়েছেঃ “আগুনের কারণে পায়ের গিটের অমঙ্গল রয়েছে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ)-এর মুসনাদে রয়েছে) ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রঃ) হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, একটি লোকের পায়ের এক দিরহাম পরিমাণ জায়গা শুষ্ক দেখে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আগুনের কারণে পায়ের গোড়ালির জন্যে অমঙ্গল রয়েছে।” ইবনে জারীর (রঃ) হযরত আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এক সম্প্রদায়কে নামায পড়তে দেখেন যাদের একজনের পায়ের গোড়ালির এক দিরহাম পরিমাণ জায়গায় বা নখ পরিমাণ জায়গায় পানি পৌছেনি, তখন তিনি বলেনঃ “আগুনের কারণে গোড়ালির জন্যে অমঙ্গল রয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন যে, এরপর মসজিদে ইতর দ্র এমন কেউ থাকতো না যে ঘুরে ফিরে নিজের গোড়ালির দিকে চেয়ে দেখতো না। অন্য বর্ণনায় রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এমন একটি লোককে নামায পড়তে দেখেন যার পায়ের গোড়ালির এক দিরহাম পরিমাণ চামড়া শুষ্ক ছিল। এ দেখে তিনি উক্ত রূপ মন্তব্য করেন। তখন অবস্থা এই দাঁড়ালো যে, কারও যদি সামান্য পরিমাণ জায়গা শুষ্ক থেকে যেতো তবে সে পুনরায় শুরু থেকে অযু করতো। সুতরাং এই হাদীসসমূহ দ্বারা এটা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, পা ধৌত করা ফরয। যদি মাসেহ করা ফরয হতো তবে সামান্য পরিমাণ জায়গা শুষ্ক থাকায় আল্লাহর নবী (সঃ) জাহান্নামের আগুনের ভয় প্রদর্শন করতেন না। কেননা, মাসেহর সময় পায়ের সব জায়গায় হাত পৌছানোই হয় না, বরং মোজার উপর যেভাবে মাসেহ করা হয় সেভাবেই পায়ের উপর মাসেহ করা হয়। এ কথাটাই ইবনে জারীর (রঃ), শী'আদের মোকাবিলায় পেশ করেছেন। ইমাম মুসলিম (রঃ) তাঁর সহীহ গ্রন্থে হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একটি লোককে অযু করতে দেখতে পান যার পায়ে নখ পরিমাণ জায়গায় পানি পৌছেনি, বরং শুষ্ক রয়ে গিয়েছিল। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বলেনঃ “তুমি ফিরে যাও এবং ভালভাবে অযু করে এসো।” ইমাম বায়হাকীও (রঃ) এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রঃ) হযরত খালিদ ইবনে মি’দান (রঃ)-এর মাধ্যমে নবী (সঃ)-এর কোন একজন স্ত্রী হতে বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সঃ) এমন একজন। লোককে দেখতে পান যার পায়ের গোড়ালির উপরিভাগের এক দিরহাম পরিমাণ জায়গা শুষ্ক রয়ে গিয়েছিল, সেখানে পানি পৌছেনি। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে পুনরায় অযু করার নির্দেশ দেন। ইমাম আবু দাউদ (রঃ) এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি (আরবী) বা নামায শব্দটি অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন। এ ইসনাদটি উত্তম, মজবুত ও বিশুদ্ধ। আল্লাহই ভাল জানেন।
হযরত উসমান (রাঃ) হতে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর অযুর যে নিয়ম বর্ণিত হয়েছে তাতে এও রয়েছে যে, তিনি অঙ্গুলিগুলোর খিলালও করেছিলেন। সুনান গ্রন্থগুলোতে রয়েছে যে, হযরত সাবরা (রাঃ) রাসূল্লাহ (সঃ)-কে অযু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ “অযু পূর্ণভাবে ও উত্তমরূপে কর, অঙ্গুলিগুলোর মধ্যে খিলাল কর এবং নাকে উত্তমরূপে পানি দাও। তবে যদি রোযার অবস্থায় থাক তাহলে অন্য কথা।”
ইমাম আহমাদ (রঃ) হযরত আবু উমামা (রাঃ) হতে, তিনি হযরত আমর ইবনে আবসা’ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি (আমর ইবনে আবসা') বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (স)! আমাকে অযু সম্পর্কে সংবাদ দিন! তিনি বললেনঃ “যে ব্যক্তি অযুর পানি নিয়ে কুলি করে ও নাকে পানি দেয়, পানির সাথে সাথে ও নাক ঝাড়ার সাথে সাথে তার মুখ ও নাকের ছিদ্র হতে পাপরাশি ঝরে পড়ে। তারপর আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী যখন সে মুখমণ্ডল ধৌত করে তখন দাড়ির ধার ও দাড়ির চুল হতে পানি ঝরে পড়ার সাথে সাথে তার মুখের পাপরাশি ঝরে পড়ে। অতঃপর যখন সে কনুইসহ হাত দু'টি ধৌত করে তখন তার অঙ্গুলির দিক থেকে পাপরাশি ঝরে পড়ে। এর পর যখন সে মাথা মাসেহ্ করে তখন তার চুলের ধার দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে তার মাথার পাপরাশি ঝরে পড়ে। তারপর যখন সে আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী পা দু’টি গোড়ালিসহ ধৌত করে তখন পায়ের অঙ্গুলি দিয়ে পানি টপ টপ করে পড়ার সাথে সাথেই তার পায়ের পাপরাশি দূর হয়ে যায়। অতঃপর যখন সে দাঁড়িয়ে আল্লাহর যথাযোগ্য প্রশংসা ও গুণ বর্ণান করতঃ দু’রাকআত নামায আদায় করে তখন সে পাপ থেকে এমনভাবে পবিত্র হয়ে যায় যে, যেন সে আজকেই জন্মগ্রহণ করলো।” এটা শুনে হযরত আবু উমামা (রাঃ) হযরত আমর ইবনে আবসা (রাঃ)-কে বললেনঃ আপনি কি বলছেন তা খুব চিন্তা করে দেখুন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) হতে আপনি এরূপই শুনেছেন তো? এ সব কিছুই কি মানুষ একই স্থানে লাভ করে থাকে। হযরত আমর (রাঃ) উত্তরে বললেনঃ “দেখুন আবু উমামা! আমি বুড়িয়ে গেছি। আমার অস্থিগুলো দুর্বল হয়ে পড়েছে। আমার মৃত্যু নিকটবর্তী হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় আল্লাহর রাসূল (সঃ)-এর উপর মিথ্যা আরোপ করায় আমার লাভ কি? একবার নয়, দু’বার নয়, তিনবার নয়, আমি এটা আল্লাহর রাসূল (সঃ)-এর মুখে সাতবার বরং তার চেয়েও অধিকবার শুনেছি।” এ হাদীসের ইসনাদ সম্পূর্ণরূপেই বিশুদ্ধ। সহীহ মুসলিমের অন্য সনদযুক্ত হাদীসে রয়েছেঃ “তারপর সে স্বীয় পদদ্বয় ধৌত করে যেমনভাবে ধৌত করতে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং জানা গেলো যে, কুরআন কারীমের হুকুম হচ্ছে পা ধুয়ে নেয়। আবু ইসহাক সাবীঈ হযরত হারিসের মাধ্যমে হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেনঃ “স্বীয় পদদ্বয় গোড়ালির উপর পর্যন্ত ধৌত কর যেমন তোমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর দ্বারা এটাও জানা গেল যে, যে রিওয়ায়াতে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর স্বীয় পদদ্বয় জুতার মধ্যেই ভিজিয়ে নেয়া হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। ওর ভাবার্থ হচ্ছে জুতার মধ্যে হালকাভাবে ধুয়ে নেয়া। আর চটি জুতা পায়ে থাকলে এভাবে পা ধোয়া যেতে পারে। মোটকথা এ হাদীসও পা ধোয়ার দলীল। অবশ্য এর দ্বারা সংশয়ে পতিত লোকদের খণ্ডন হয়ে থাকে যারা সীমা ছাড়িয়ে যায়। এমনিভাবে অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এক সম্প্রদায়ের ময়লা ও খড়কুটা ফেলার জায়গায় দাড়িয়ে প্রস্রাব করেন। তারপর পানি চেয়ে নিয়ে অযু করেন এবং স্বীয় স্যাণ্ডেলের উপর মাসেহ করেন। কিন্তু এ হাদীসটি অন্য সনদেও বর্ণিত আছে এবং তাতে রয়েছে যে, তিনি স্বীয় মোজার উপর মাসেহ করেন। এগুলো এভাবে একত্রিত করা যেতে পারে যে, তাঁর পায়ে মোজা ছিল এবং মোজার উপর স্যাণ্ডেল ছিল। ঐ দু'টোর উপর তিনি মাসেহ করেছিলেন। এ হাদীসেরও ভাবার্থ এটাই হবে। মুসনাদে আহমাদে আউস ইবনে আবি আউস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ “আমি দেখতে ছিলাম এ অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সঃ) অযু করেন এবং স্বীয় স্যান্ডেলের উপর মাসেহ করেন। তারপর নামাযের জন্যে দণ্ডায়মান হন।” এ রিওয়ায়াতটি অন্য সনদেও বর্ণিত আছে এবং তাতে তার খড়কুটোর উপর দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা, তারপর অযু করা এবং স্যাণ্ডেলদ্বয় ও পদদ্বয়ের উপর মাসেহ করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) হাদীসটি এনেছেন, অতঃপর বলেছেনঃ “এটা মাহমুল হচ্ছে ওর উপর যে, ঐ সময় তার প্রথম অযু ছিল।" কোন মুসলমান এটা কিরূপে মেনে নিতে পারে যে, আল্লাহর ফরয ও তাঁর নবী (সঃ)-এর সুন্নাতের মধ্যে বৈপরীত্ব দেখা দেবে। আল্লাহ এক কথা বলবেন এবং নবী (সঃ) অন্য কিছু করবেন। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর চিরস্থায়ী কাজ হিসেবে অযুতে পা ধৌতকরণ দ্বারা এর ফরয হওয়া সাব্যস্ত হচ্ছে। আর আয়াতের সহীহ মতলবও এটাই। যার কান পর্যন্ত এ দলীলগুলো পৌঁছে যাবে, তার উপর আল্লাহর হুজ্জত পূর্ণ হয়ে যাবে। যবরের কিরআত দ্বারা পা ধৌত করা এবং যেরের কিরআতও এরই উপর মাহমুল হওয়ার ফলে ওটা যে ফরয তা অকাট্যভাবে সাব্যস্ত হয়ে গেল। এ ব্যাপারে পূর্ববর্তী কোন কোন মনীষী তো একথাও বলেছেন যে, এ আয়াত দ্বারা মোজার উপর মাসেহ মানসূখ বা রহিত হয়ে গেছে। যদিও হযরত আলী (রাঃ) হতেও এরূপ একটি রিওয়ায়াত বর্ণিত আছে, কিন্তু ওর ইসনাদ বিশুদ্ধ নয়, বরং স্বয়ং তাঁর থেকেই বিশুদ্ধতার সাথে এর বিপরীত সাব্যস্ত হয়েছে। আর যাঁরই কথা এটা হোক না কেন, তার এ ধারণাই ঠিক নয়। কেননা, এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পরেও রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর মোজার উপর মাসেহ করা সাব্যস্ত আছে। মুসনাদে আহমাদে হযরত জারীর ইবনে আবদুল্লাহ বাজালী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ “সূরায়ে মায়িদাহ্ অবতীর্ণ হওয়ার পরই আমি মুসলমান হই। আমার ইসলাম গ্রহণের পরে আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে মোজার উপর মাসেহ করতে দেখেছি।”
সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে হযরত হাম্মাম (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন যে, হযরত জারীর (রাঃ) প্রস্রাব করেন, তারপর অযু করেন এবং মোজার উপর মাসেহ করেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হলোঃ আপনি এরূপ করে থাকেন? তিনি উত্তরে বললেনঃ “হ্যাঁ, আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে এরূপই করতে দেখেছি।” হাদীসের বর্ণনাকারী হযরত ইবরাহীম (রঃ) বলেন যে, জনগণের কাছে এ হাদীসটি খুবই ভাল লাগতো। কেননা, হযরত জারীরের ইসলাম গ্রহণই সূরায়ে মায়িদাহ্ অবতীর্ণ হওয়ার পরের ঘটনা ছিল। আহকামের বড় বড় কিতাবগুলোতে ধারাবাহিকতার সাথে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কথা ও কাজের দ্বারা মোজার উপর মাসেহ সাব্যস্ত রয়েছে। এখন মাসেহর জন্যে মুদ্দত বা সময়ের দৈর্ঘ্য আছে কি নেই তা আলোচনার জায়গা এটা নয়। আহকামের কিতাবগুলোতে এর বিস্তারিত বিবরণ বিদ্যমান রয়েছে। রাফেযীগণ এতেও মতভেদ সৃষ্টি করেছে। তাদের কাছে এর কোন দলীল প্রমাণ নেই, আছে শুধু অজ্ঞতা ও ভ্রান্তি। স্বয়ং হযরত আলী (রাঃ)-এর বর্ণনায় সহীহ মুসলিমে এটা সাব্যস্ত হয়েছে। কিন্তু রাফেযীরা তা মানে না। যেমন হযরত আলী (রাঃ)-এর রিওয়ায়াত দ্বারা সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের নিকাহে মুতআর নিষিদ্ধতা সাব্যস্ত হয়েছে, তথাপি শী'আরা ওটাকে বৈধ বলেছে। ঠিক দ্রুপ এ আয়াতে কারীমা পদদ্বয় ধৌত করার উপর স্পষ্টভাবে পথ নির্দেশ করছে এবং এই কাজটিই রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর ধারাবাহিক হাদীসসমূহ দ্বারা সাব্যস্ত হচ্ছে, তথাপি শী'আ সম্প্রদায় এর বিরোধিতা করছে। প্রকৃতপক্ষে এ মাসায়েলের ব্যাপারে তাদের হাত দলীল-প্রমাণ হতে সম্পূর্ণ শূন্য। আল্লাহর জন্যই সমস্ত প্রশংসা। অনুরূপভাবে এ লোকগুলো পায়ের গিঠদ্বয়ের ব্যাপারেও আয়াতের ও পূর্ববর্তী গুরুজনদের বিরোধিতা করেছে। তারা বলে যে ওটা পায়ের পিঠের উপর রয়েছে। সুতরাং তাদের নিকট প্রত্যেক পায়ে একটি মাত্র গিঁঠ রয়েছে। আর জমহুরের নিকট গিঠের ঐ হাড়গুলো যা পায়ের গোছা ও পায়ের মধ্যভাগে রয়েছে ঐগুলো হচ্ছে (আরবী)। ইমাম শাফিঈ (রঃ)-এর ফরমান এই যে, যে (আরবী) -এর আলোচনা এখানে হয়েছে ওটা গিঁঠের ঐ হাড় দু’টি যা দু'দিকেই প্রকাশমান রয়েছে, তা একই পায়ে দু'টি গিঁঠ। এটা জনগণের মধ্যেও সুপরিচিত। আর হাদীসের পথ নির্দেশও এর উপরই। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, হযরত উসমান (রাঃ) অযু করার সময় ডান পা (আরবী) বা গিঁঠ দু’টিসহ ধৌত করেন। তারপর বাম পাটিও এভাবেই ধৌত করেন। সহীহ ইবনে খুযাইমা এবং সুনানে আবি দাউদের মধ্যে রয়েছে, বর্ণনাকারী নোমান ইবনে বাশীর (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদের দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলেনঃ “আল্লাহর শপথ! হয় তোমরা তোমাদের সারিগুলো সোজা করে নাও, নয়তো আল্লাহ তা'আলা তোমাদের অন্তরে বক্রতা সৃষ্টি করে দেবেন।” হাদীসের বর্ণনাকারী নো’মান ইবনে বাশীর (রাঃ) বলেনঃ তখন থেকে এই অবস্থা দাঁড়ালো যে, প্রতিটি লোক তার পার্শ্ববর্তী লোকের গিঠের সাথে গিঠ, জানুর সাথে জানু এবং কাধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে রাখতো। এ বর্ণনা দ্বারা পরিষ্কারভাবে জানা গেল যে, (আরবী) ঐ হাড়ের নাম নয় যা পায়ের পিঠের দিকে রয়েছে। কেননা, পাশাপাশি দাঁড়ানো দু’টি লোকের পক্ষে ওটা মিলানো সম্ভব নয়। বরং ওটা ঐ দু'টি উথিত হওয়া হাড় যা পায়ের গোছার শেষ ভাগে রয়েছে। আহলে সুন্নাতের মাযহাব এটাই। ইবনে আবি হাতিম (রঃ) ইয়াহইয়া ইবনে হারিস তাইমী (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেনঃ “যায়েদের যে শীআ সঙ্গীটিকে হত্যা করা হয়েছিল তাকে আমি দেখেছি। তার গিঁঠটি পায়ের পিঠের উপর পেয়েছি। এটা ছিল তার কুদরতী শাস্তি, যা তার মৃত্যুর পরে প্রকাশ করা হয়েছে এবং সত্যের বিরোধিতা ও সত্য গোপন করার প্রতিফল দেয়া হয়েছে।”
এরপর তায়াম্মুমের নিয়মের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে। এর পূর্ণ তাফসীর সূরায়ে নিসায় হয়ে গেছে। সুতরাং এখানে আর পুনরাবৃত্তির প্রয়োজন নেই। আয়াতে তায়াম্মুমের শানে নকূলও সেখানে বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু হাদীস শাস্ত্রে আমীরুল মুমিনীন ইমাম বুখারী (রঃ) এ আয়াত সম্পর্কে একটি বিশেষ হাদীস বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি নিম্নে দেয়া হলোঃ
উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমার গলার হারটি বায়দা নামক স্থানে পড়ে যায়। আমরা মদীনায় প্রবেশকারী ছিলাম। রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় সওয়ারীটি থামিয়ে দেন এবং আমার কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েন। ইত্যবসরে আমার পিতা হযরত আবু বকর (রাঃ) আমার নিকট আগমন করেন এবং আমাকে তিরস্কারের সূরে বলেনঃ “তুমি হার হারিয়ে দিয়ে লোকদেরকে থামিয়ে দিয়েছো?” এ কথা বলে তিনি আমাকে প্রহার করতে শুরু করেন যার ফলে আমার কষ্টবোধ হয়। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে মনে করে আমি নড়াচড়া করা হতে বিরত থাকি। অবশেষে রাসূলুল্লাহ (সঃ) জেগে ওঠেন এবং ইতিমধ্যে ফজরের নামাযের সময় হয়ে যায়। সুতরাং তিনি পানি খোঁজ করেন। কিন্তু পানি পাওয়া গেল না। সেই সময় এ পূর্ণ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। তখন হযরত উসাইদ ইবনে হুযাইর (রাঃ) বলে ওঠেনঃ “হে আবু বকর (রাঃ)-এর বংশধর, আল্লাহ জনগণের জন্যে তোমাদেরকে কল্যাণময় বানিয়ে দিয়েছেন। তোমরা তাদের জন্যে পুরোপুরি কল্যাণময় হয়ে গেলে।” (সুইউতী (রঃ) বলেনঃ হাদীসটি এটাই প্রমাণ করছে যে, আয়াতটি নাযিল হওয়ার পূর্বেই তাদের উপর অযু ওয়াজিব ছিল। এ কারণেই পানিশূন্য জায়গায় অবতরণ করাকে তারা খুবই বড় করে দেখেছিলেন। তাঁদের কেউ কেউ এ মত পোষণ করেন যে, আয়াতের প্রথম অংশ অযু ফরয হওয়ার ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছিল। তারপর বাকী অংশ তায়াম্মুমের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। তবে প্রথমটি বেশী ঠিক, কেননা মক্কায় নামায ফরয হওয়ার সাথে সাথে অযুও ফরয করা হয়। আর এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয় মদীনায়)
এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ আল্লাহ তোমাদেরকে কোন প্রকারের সংকীর্ণতা ও অসুবিধায় ফেলতে চান না। এজন্যেই তিনি দ্বীনকে সহজ ও হালকা করে দিয়েছেন, কঠিন ও মুশকিল করেননি। হুকুমতো ছিল এই যে, তোমরা পানি দ্বারা অযু করবে। কিন্তু যদি পানি পাওয়া না যায় কিংবা তোমরা রোগাক্রান্ত হয়ে পড় তবে তোমাদেকে তায়াম্মুম করার অনুমতি দেয়া হলো। বাকী হুকুমের জন্যে আহকামের কিতাবগুলো দ্রষ্টব্য।
ইরশাদ হচ্ছে-বরং আল্লাহ তোমাদেরকে পবিত্র করতে এবং তোমাদের উপর স্বীয় নিয়ামত পরিপূর্ণ করতে চান, যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। অর্থাৎ তার প্রশস্ত আহকাম, কোমলতা, দয়া, সহজকরণ এবং অবকাশ দানের প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অযুর পরে আল্লাহর রাসূল (সঃ) একটি দু'আ শিক্ষা দিয়েছেন, তা যেন এ আয়াতেরই আওতাভুক্ত রয়েছে। মুসনাদে আহমাদ, সুনান। এবং সহীহ মুসলিমে হযরত উকবা ইবনে আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ আমরা পালাক্রমে উট চরাতাম। আমি আমার পালার দিন রাত্রে ইশার সময় আগমন করে দেখলাম যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) দাড়িয়ে জনগণকে কিছু বলতে রয়েছেন। আমি যখন পৌছে গেলাম তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট থেকে শুনতে পেলামঃ “যে মুসলমান ভালভাবে অযু করে আন্তরিকতার সাথে দু'রাকআত নামায পড়বে তার জন্যে জান্নাত ওয়াজিব।” এ কথা শুনে আমি বললাম, বাঃ বাঃ! এটা তো খুবই ভাল কথা। আমার এ কথা শুনে আমার সামনে উপবিষ্ট একজন সাথী বললেনঃ “এর পূর্বে রাসূলুল্লাহ (সঃ) যে কথাটি বলেছিলেন তা এর চেয়েও অধিক উত্তম।” আমি খুব গভীরভাবে লক্ষ্য করে বুঝলাম যে, তিনি হচ্ছেন হযরত উমার ফারূক (রাঃ)। আমাকে তিনি বললেন, তুমি তো এখনই আসলে। তোমার আসার পূর্বে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছিলেনঃ যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অযু করার পর বলে- (আরবী) আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মা'বুদ নেই এবং আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সঃ) তাঁর বান্দা ও রাসূল। তার জন্যে জান্নাতের আটটি দরজা-ই খুলে যায়, সে যেটা দিয়ে ইচ্ছা জান্নাতে প্রবেশ করবে। হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যখন কোন মুসলমান বা মুমিন অযু করতে বসে, অতঃপর তার মুখমণ্ডল ধৌত করে, তখন পানির সাথে সাথে বা পানির শেষ ফোটার সাথে সাথে তার চক্ষুদ্বয়ের সমুদয় পাপ ঝরে পড়ে। অনুরূপভাবে হাত ধোয়ার সময় হাতের সমুদয় পাপ এবং এভাবেই পা ধোয়ার সময় পায়ের সমুদয় পাপ পানির সাথে সাথে বা পানির শেষ ফোটার সাথে সাথে ঝরে পড়ে। অবশেষে সে পাপসমূহ থেকে সম্পূর্ণ রূপে পবিত্র হয়ে যায়।” ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কোন ব্যক্তি "অযু করার সময় যখন হাত দুটি ধৌত করে তখন হাত হতে পাপরাশি বিদূরিত হয়ে যায়। যখন মুখমণ্ডল ধৌত করে তখন মুখমণ্ডল হতে পাপসমূহ দূর হয়ে যায়। যখন মাথা মাসেহ করে তখন মাথার গুনাহ দূরীভূত হয়। যখন পা ধুয়ে নেয় তখন পা হতে পাপরাশি ঝরে পড়ে।” অন্য সনদে মাসেহ করার কথা উল্লেখ করা হয়নি। তাফসীরে ইবনে জারীরে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অযু করে নামাযের জন্যে দণ্ডায়মান হয়, তার কান হতে, চোখ হতে, হাত হতে এবং পা হতে সমস্ত গুনাহ ঝড়ে পড়ে।” সহীহ মুসলিমে হযরত আবু মালিক আশআরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “অযু হচ্ছে অর্ধেক ঈমান। আল-হামদুলিল্লাহ' বলার কারণে পুণ্যের পাল্লা পরিপূর্ণ হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ’ ও ‘আল্লাহু আকবার’ আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যবর্তী স্থানকে পূর্ণ করে ফেলে। রোযা হচ্ছে ঢাল স্বরূপ, ধৈর্য হচ্ছে জ্যোতি স্বরূপ এবং সাদকা হচ্ছে দলীল স্বরূপ। কুরআন তোমার স্বপক্ষে অথবা বিপক্ষে সাক্ষ্য দেবে। প্রত্যেক লোক সকালে উঠেই স্বীয় প্রাণকে ক্রয়-বিক্রয় করে থাকে। অতঃপর সে ওকে মুক্ত করে দেয় অথবা ধ্বংস করে ফেলে।” সহীহ মুসলিমে হযরত ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “হারাম মালের সাদকা আল্লাহ কবুল করেন না এবং অযু ছাড়া নামাযও কবুল করেন না।”
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings