Surah Al Ma'idah Tafseer
Tafseer of Al-Ma'idah : 44
Saheeh International
Indeed, We sent down the Torah, in which was guidance and light. The prophets who submitted [to Allah ] judged by it for the Jews, as did the rabbis and scholars by that with which they were entrusted of the Scripture of Allah, and they were witnesses thereto. So do not fear the people but fear Me, and do not exchange My verses for a small price. And whoever does not judge by what Allah has revealed - then it is those who are the disbelievers.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
৪১-৪৪ নং আয়াতের তাফসীর:
শানে নুযূল:
৪১-৪৪ নং আয়াত পর্যন্ত অবতীর্ণ হবার কারণ হিসেবে দুটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়:
(১) বিবাহিত ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী ইয়াহূদীর ঘটনা। একদিকে তারা ধর্মগ্রন্থের মধ্যে বহু পরিবর্তন সাধন করেছিল। অন্যদিকে অনেক বিধান অমান্য করে চলত। তার অন্যতম একটি হল রজমের বিধান। তাদের মধ্যে বিবাহিত নারী পুরুষ ব্যভিচার করলে মনগড়া বিধান দিয়ে ফায়সালা দিত। রজম করত না। তারা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে জিজ্ঞাসা করত, উদ্দেশ্য ছিল যদি তাদের মনপুত মত ফায়সালা হয় তাহলে মানবে অন্যথায় মানবে না।
আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: ইয়াহূদীগণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আগমন করল। তারা তাদের দু’জন ব্যভিচারীর কথা উল্লেখ করল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা তাওরাতে রজমের বিষয়ে কিছু পেয়েছ? তারা বলল: ব্যভিচারের শাস্তি হিসেবে চাবুক মারা ও লাঞ্ছিত করার কথা আছে। (এ কথা শুনে) আবদুল্লাহ বিন সালাম বললেন, তোমরা মিথ্যা বলছ। তাওরাতে রজমের কথা আছে। তারা তাওরাত নিয়ে আসল এবং খুলে পাঠ করতে লাগল। তাদের একজন রজমের আয়াতের ওপর হাত রাখল, আর পূর্বাপর অংশ পাঠ করল। আবদুল্লাহ বিন সালাম বললেন, তোমার হাত উঠাও, তার হাত উঠাল। দেখা গেল সেখানে রজমের আয়াত রয়েছে। তারা বলল: সত্য বলেছেন হে মুহাম্মাদ! সেখানে রজমের আয়াত রয়েছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে রজম করার (পাথর মেরে হত্যার) নির্দেশ দিলেন। (সহীহ বুখারী হা: ৩৬৩৫)
(২) ইয়াহূদীদের এক গোত্র অপর গোত্র অপেক্ষা বেশি মর্যাদাসম্পন্ন মনে করত। আর এ কারণেই এক গোত্রের লোক খুন হলে অপর গোত্রের নিকট একশত ওসাক রক্তপণ দাবী করত। আর অন্য গোত্রের কেউ খুন হলে পঞ্চাশ ওসাক রক্তপণ নির্ধারণ করত। যখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায় আগমন করলেন, তখন যাদের পঞ্চাশ ওসাক রক্তপণ নির্ধারণ করা হত তারা খুশি হল যে, এবার তাদেরও একশত ওসাক রক্তপণ নির্ধারণ করা হবে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে লড়াই শুরু হবার উপক্রম হল। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। (মুসনাদ আহমাদ১/২৪৬,সহীহ) প্রথমটিই বেশি প্রাধান্যযোগ্য।
কাফির ও মুশরিকদের ঈমান গ্রহণ না করা এবং সঠিক পথ অবলম্বন না করার ফলে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুবই অস্থিরতা ও আক্ষেপের শিকার হয়েছিলেন, সে জন্য আল্লাহ তা‘আলা নিজে নাবীকে সান্ত্বনা দিয়ে অধিক চিন্তা না করার নির্দেশ দিয়েছেন। যাতে এ ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত হন যে, এ লোকেদের ব্যাপারে তিনি আল্লাহ তা‘আলার কাছে জিজ্ঞাসিত হবেন না।
سَمَّاعُوْنَ
শব্দের অর্থ হল: অধিক শ্রবণকারী। এর দুটি অর্থ হতে পারে:
১. গুপ্তচর হিসেবে শ্রবণ করা।
২. অন্যের কথা মান্য ও গ্রহণ করার জন্য শ্রবণ করা।
কেউ প্রথমটি আবার কেউ দ্বিতীয় অর্থটি গ্রহণ করেছেন।
أسلموا ক্রিয়াপদটি نبيين (নাবীগণ) এর বিশেষণ। সকল নাবীগণই ইসলাম ধর্মের অনুসারী ছিলেন, যার দিকে নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাওয়াত দিয়েছেন। অর্থাৎ সকল নাবীদের ধর্ম এক ও অভিন্ন। আর ইসলাম ধর্মের মূল ভিত্তি হল তাওহীদ। প্রত্যেক নাবী স্বজাতিকে তাওহীদের দিকে আহ্বান করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَآ أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَّسُوْلٍ إِلَّا نُوْحِيْٓ إِلَيْهِ أَنَّه۫ لَآ إِلٰهَ إِلَّآ أَنَا فَاعْبُدُوْنِ)
“আমি তোমার পূর্বে যখন কোন রাসূল প্রেরণ করেছি তার প্রতি এ ওয়াহী করেছি, ‘আমি ব্যতীত অন্য কোন সত্যিকার মা‘বূদ নেই; সুতরাং আমারই ইবাদত কর।’ (সূরা আম্বিয়াহ ২১:২৫)
(اَلَّذَيْنَ هَادُوْا)
আয়াতের এ অংশের সম্পর্ক يحكم (ফায়সালা দেবেন) ক্রিয়ার সাথে। অর্থাৎ যারা ইয়াহূদী তাদের ব্যাপারেও ফায়সালা দিতেন।
(وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ ....هُمُ الْكَافِرُوْنَ)
‘যারা আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন সে অনুসারে মীমাংসা করে না তারাই কাফির’এ আয়াতের ব্যাপারে মুফাসসিদের বিভিন্ন মতামত পাওয়া যায়। এ বিধান কি মুসলিমদের ব্যাপারে না কাফিরদের ব্যাপারে? তাবেয়ী শা‘বী (রহঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: এ বিধান মুসলিমদের ব্যাপারে। তাওস থেকেও এরূপ বর্ণনা রয়েছে।
কিন্তু কুফরী দ্বারা উদ্দেশ্য হল, এমন কুফরী যা ইসলাম থেকে বের করে দেয় না। শা‘বী (রহঃ) থেকে অন্য বর্ণনায় পাওয়া যায়, এ বিধান ইয়াহূদীদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন:
ليس الكفر الذي تذهبون إليه
এ কুফরীর দ্বারা সে কুফরী না যা তোমরা মনে কর। (ইবনু আবী হাতিম বর্ণনা করেছেন, ইমাম হাকিম বলেছেন: বর্ণনাটি বুখারী, মুসলিমের শর্তানুপাতে)
কোন কোন আলেম বলেছেন: কুরআন প্রমাণ করে এ আয়াত ইয়াহূদীদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। কেননা পূর্বে আল্লাহ তা‘আলা ইয়াহূদীদের কথা উল্লেখ করেছেন যারা আল্লাহ তা‘আলার কালাম বিকৃত করেছে। আবার পরের আয়াতে তাদের কথাই উল্লেখ রয়েছে। এ মত পোষণ করেছেন বারা বিন আযেব, হুযাইফা বিন ইয়ামান, ইবনু আব্বাস (রাঃ), ইকরিমা ও হাসান বসরী (রহঃ)-সহ অনেকে।
ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেন:
(وَمَنْ لَّمْ یَحْکُمْ بِمَآ اَنْزَلَ اللہُ فَاُولٰ۬ئِکَ ھُمُ الْکٰفِرُوْنَ ، الظَالِمُوْنَ وَ الفَاسِقُون)
কাফিরদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। সহীহ মুসলিমে বারা বিন আযেব থেকে প্রমাণ রয়েছে। এ হিসেবে কোন মুসলিম কাবীরা গুনাহর কারণে কাফির হয় না।
আবার কেউ বলেছেন: এখানে কিছু কথা উহ্য রয়েছে যার অর্থ হল: যদি কেউ কুরআনকে প্রত্যাখ্যান ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাণীকে অস্বীকার করতঃ আল্লাহ তা‘আলার নাযিলকৃত বিধান দ্বারা ফায়সালা না করে তাহলে সে কাফির। এ কথা ইবনু আব্বাস ও মুজাহিদও বলেছেন।
ইবনু মাসউদ (রাঃ) ও হাসান বসরী (রহঃ) বলেছেন: আয়াতটি মুসলিম, ইয়াহূদ ও কাফির সকলের জন্য ব্যাপক। যারাই আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত বিধান ছাড়া অন্য বিধান দ্বারা ফায়সালা করা বৈধ মনে করবে এবং সে অনুপাতে বিশ্বাস রাখবে তারাই কাফির।
এসব আলোচনার পর ইমাম শানক্বিতী (রহঃ) বলেন: জেনে রাখুন, এ আলোচ্য বিষয়ে সঠিক কথা হল- কুফর, জুলুম ও ফিসক (পাপাচার) প্রত্যেকটি শব্দ শরীয়তে অবাধ্য কাজ করা অর্থে ব্যবহার হয়, আবার ইসলাম থেকে বের করে দেয় এমন কুফরী কাজ করার অর্থেও ব্যবহার হয়। যদি এমন বিধান দ্বারা ফায়সালা করে যা রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ ও আল্লাহ তা‘আলার বিধানকে বাতিল করে দেয় তাহলে কুফর, জুলুম ও ফিসক (পাপাচার) প্রত্যেকটি ইসলাম থেকে বের করে দেয় এমন গুনাহর অর্থে ব্যবহার হবে। আর যদি তার বিশ্বাস থাকে সে হারাম কাজে লিপ্ত এবং অন্যায় করছে তাহলে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে না, শুধু অপরাধী বলে গণ্য হবে। (তাফসীর আযওয়াউল বায়ান ২/৭১)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. চিন্তা আসতে পারে এমন কর্ম থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে চিন্তা মুক্ত থাকা মুস্তাহাব।
২. মিথ্যা বলা ও শ্রবণ করা হারাম।
৩. আল্লাহ কথা বিকৃত করা এবং ফাসাদ সৃষ্টি করার জন্য অন্য কিছুর সাথে সাদৃশ্য দেয়া হারাম।
৪. মুসলিম বিচারকগণ কর্তৃক আহলে কিতাবদের বিবাদের বিচার করা ইচ্ছাধীন।
৫. ন্যায় বিচার করা ওয়াজিব। যদিও অমুসলিমদের মাঝে হয়।
৬. আল্লাহ তা‘আলার বিধান অস্বীকার করতঃ বা হেয় প্রতিপন্ন করতঃ অথবা তার সমপর্যায় মনে করে মানব রচিত বিধান দ্বারা ফায়সালা করা কুফরী কাজ।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings