Surah Al Ma'idah Tafseer

Surah
Juz
Page
1
Al-Fatihah
The Opener
001
2
Al-Baqarah
The Cow
002
3
Ali 'Imran
Family of Imran
003
4
An-Nisa
The Women
004
5
Al-Ma'idah
The Table Spread
005
6
Al-An'am
The Cattle
006
7
Al-A'raf
The Heights
007
8
Al-Anfal
The Spoils of War
008
9
At-Tawbah
The Repentance
009
10
Yunus
Jonah
010
11
Hud
Hud
011
12
Yusuf
Joseph
012
13
Ar-Ra'd
The Thunder
013
14
Ibrahim
Abraham
014
15
Al-Hijr
The Rocky Tract
015
16
An-Nahl
The Bee
016
17
Al-Isra
The Night Journey
017
18
Al-Kahf
The Cave
018
19
Maryam
Mary
019
20
Taha
Ta-Ha
020
21
Al-Anbya
The Prophets
021
22
Al-Hajj
The Pilgrimage
022
23
Al-Mu'minun
The Believers
023
24
An-Nur
The Light
024
25
Al-Furqan
The Criterion
025
26
Ash-Shu'ara
The Poets
026
27
An-Naml
The Ant
027
28
Al-Qasas
The Stories
028
29
Al-'Ankabut
The Spider
029
30
Ar-Rum
The Romans
030
31
Luqman
Luqman
031
32
As-Sajdah
The Prostration
032
33
Al-Ahzab
The Combined Forces
033
34
Saba
Sheba
034
35
Fatir
Originator
035
36
Ya-Sin
Ya Sin
036
37
As-Saffat
Those who set the Ranks
037
38
Sad
The Letter "Saad"
038
39
Az-Zumar
The Troops
039
40
Ghafir
The Forgiver
040
41
Fussilat
Explained in Detail
041
42
Ash-Shuraa
The Consultation
042
43
Az-Zukhruf
The Ornaments of Gold
043
44
Ad-Dukhan
The Smoke
044
45
Al-Jathiyah
The Crouching
045
46
Al-Ahqaf
The Wind-Curved Sandhills
046
47
Muhammad
Muhammad
047
48
Al-Fath
The Victory
048
49
Al-Hujurat
The Rooms
049
50
Qaf
The Letter "Qaf"
050
51
Adh-Dhariyat
The Winnowing Winds
051
52
At-Tur
The Mount
052
53
An-Najm
The Star
053
54
Al-Qamar
The Moon
054
55
Ar-Rahman
The Beneficent
055
56
Al-Waqi'ah
The Inevitable
056
57
Al-Hadid
The Iron
057
58
Al-Mujadila
The Pleading Woman
058
59
Al-Hashr
The Exile
059
60
Al-Mumtahanah
She that is to be examined
060
61
As-Saf
The Ranks
061
62
Al-Jumu'ah
The Congregation, Friday
062
63
Al-Munafiqun
The Hypocrites
063
64
At-Taghabun
The Mutual Disillusion
064
65
At-Talaq
The Divorce
065
66
At-Tahrim
The Prohibition
066
67
Al-Mulk
The Sovereignty
067
68
Al-Qalam
The Pen
068
69
Al-Haqqah
The Reality
069
70
Al-Ma'arij
The Ascending Stairways
070
71
Nuh
Noah
071
72
Al-Jinn
The Jinn
072
73
Al-Muzzammil
The Enshrouded One
073
74
Al-Muddaththir
The Cloaked One
074
75
Al-Qiyamah
The Resurrection
075
76
Al-Insan
The Man
076
77
Al-Mursalat
The Emissaries
077
78
An-Naba
The Tidings
078
79
An-Nazi'at
Those who drag forth
079
80
Abasa
He Frowned
080
81
At-Takwir
The Overthrowing
081
82
Al-Infitar
The Cleaving
082
83
Al-Mutaffifin
The Defrauding
083
84
Al-Inshiqaq
The Sundering
084
85
Al-Buruj
The Mansions of the Stars
085
86
At-Tariq
The Nightcommer
086
87
Al-A'la
The Most High
087
88
Al-Ghashiyah
The Overwhelming
088
89
Al-Fajr
The Dawn
089
90
Al-Balad
The City
090
91
Ash-Shams
The Sun
091
92
Al-Layl
The Night
092
93
Ad-Duhaa
The Morning Hours
093
94
Ash-Sharh
The Relief
094
95
At-Tin
The Fig
095
96
Al-'Alaq
The Clot
096
97
Al-Qadr
The Power
097
98
Al-Bayyinah
The Clear Proof
098
99
Az-Zalzalah
The Earthquake
099
100
Al-'Adiyat
The Courser
100
101
Al-Qari'ah
The Calamity
101
102
At-Takathur
The Rivalry in world increase
102
103
Al-'Asr
The Declining Day
103
104
Al-Humazah
The Traducer
104
105
Al-Fil
The Elephant
105
106
Quraysh
Quraysh
106
107
Al-Ma'un
The Small kindnesses
107
108
Al-Kawthar
The Abundance
108
109
Al-Kafirun
The Disbelievers
109
110
An-Nasr
The Divine Support
110
111
Al-Masad
The Palm Fiber
111
112
Al-Ikhlas
The Sincerity
112
113
Al-Falaq
The Daybreak
113
114
An-Nas
Mankind
114

Al-Ma'idah : 33

5:33
إِنَّمَاجَزَٰٓؤُا۟ٱلَّذِينَيُحَارِبُونَٱللَّهَوَرَسُولَهُۥوَيَسْعَوْنَفِىٱلْأَرْضِفَسَادًاأَنيُقَتَّلُوٓا۟أَوْيُصَلَّبُوٓا۟أَوْتُقَطَّعَأَيْدِيهِمْوَأَرْجُلُهُممِّنْخِلَٰفٍأَوْيُنفَوْا۟مِنَٱلْأَرْضِذَٰلِكَلَهُمْخِزْىٌفِىٱلدُّنْيَاوَلَهُمْفِىٱلْءَاخِرَةِعَذَابٌعَظِيمٌ ٣٣

Saheeh International

Indeed, the penalty for those who wage war against Allah and His Messenger and strive upon earth [to cause] corruption is none but that they be killed or crucified or that their hands and feet be cut off from opposite sides or that they be exiled from the land. That is for them a disgrace in this world; and for them in the Hereafter is a great punishment,

Tafseer 'Ibn Kathir Full' (BN)

৩২-৩৪ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ আদমের এ ছেলের অন্যায়ভাবে তার ভাইকে হত্যার কারণে আমি বানী ইসরাঈলকে পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছি, তাদের কিতাবে লিখে দিয়েছি এবং তাদের শরঈ হুকুম করে দিয়েছি যে, যে ব্যক্তি কাউকে বিনা কারণে হত্যা করে ফেললো, না সে নিহত ব্যক্তি কাউকে হত্যা করেছিল, না সে ভূ-পৃষ্ঠে অশান্তি ছড়িয়ে দিয়েছিল, তাহলে সে যেন দুনিয়ার সমস্ত লোককেই হত্যা করে ফেললো। কেননা, আল্লাহর কাছে সমস্ত সৃষ্টজীব সমান। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি কোন নির্দোষ লোককে হত্যা করা থেকে বিরত থাকলো, ওটাকে হারাম জানলো, তবে সে যেন সমস্ত মানুষের প্রাণ বাঁচালো। কেননা, সমস্ত মানুষ এভাবে শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে থাকবে। আমীরুল মুমিনীন হযরত উসমান (রাঃ)-কে যখন বিদ্রোহীরা ঘিরে ফেলে, তখন হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) তাঁর কাছে গিয়ে বলেনঃ “হে আমীরুল মুমিনীন। আমি আপনার পক্ষ হয়ে আপনার বিরুদ্ধাচরণকারীদের বিরুদ্ধে লড়তে এসেছি। আপনি লক্ষ্য করুন যে, পানি এখন মাথার উপরে উঠে গেছে। সুতরাং এখন তাদের সাথে যুদ্ধ করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।” এ কথা শুনে হযরত উসমান (রাঃ) বলেনঃ “তুমি কি সমস্ত লোককে হত্যা করার প্রতি উত্তেজিত হয়েছে যাদের মধ্যে আমিও একজন?” হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) উত্তরে বললেনঃ “না, না।” তখন তিনি বললেনঃ “জেনে রেখো যে, তুমি যদি একজন লোককেই হত্যা কর তবে যেন তুমি সমস্ত লোককেই হত্যা করলে। যাও, ফিরে যাও আমি চাই যে, আল্লাহ তোমাকে পুরস্কৃত করুন, পাপকার্যে লিপ্ত না করুন।” এ কথা শুনে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) ফিরে গেলেন, যুদ্ধ করলেন না। ভাবার্থ এই যে, হত্যা হচ্ছে পৃথিবীর ধ্বংসের কারণ। হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইর (রাঃ) বলেন যে, যে ব্যক্তি কোন মুসলমানকে হত্যা করা বৈধ মনে করে সে সমস্ত লোকের ঘাতক। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি কোন মুসলমানকে হত্যা করা থেকে বিরত থাকে সে যেন সমস্ত লোকেরই প্রাণ রক্ষা করে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, নবীকে এবং ন্যায়পরায়ণ মুসলমান বাদশাহকে হত্যাকারীর উপর সারা বিশ্বের মানুষের হত্যার পাপ বর্তিত হয়। আর নবী এবং ন্যায়পরায়ণ ইমামের বাহুকে মজবুত করা বিশ্ববাসীর জীবন রক্ষা করার শামিল। (তাফসীরে ইবনে জারীর)

অন্য বর্ণনায় রয়েছে যে, কেউ কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করলেই সে জাহান্নামী হয়ে যায়। সে যেন সমস্ত মানুষকেই হত্যা করলো। হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, কোন মুমিনকে কোন শরঈ কারণ ছাড়াই হত্যাকারী জাহান্নামী, আল্লাহর দুশমন, অভিশপ্ত এবং শাস্তির যোগ্য হয়ে যায়। সুতরাং সে যদি সমস্ত লোককেও হত্যা করতো তবে এর চেয়ে বড় শাস্তি আর কি হতো? যে ব্যক্তি হত্যা করা থেকে বিরত থাকলো, তার পক্ষ থেকে যেন সবারই জীবন রক্ষা পেলো। আব্দুর রহমান বলেন যে, এক হত্যার বদলেই তার খুন হালাল হয়ে গেলো। এটা নয় যে, কয়েকটি হত্যার পর সে কিসাসের যোগ্য হবে। আর যে তাকে জীবিত রাখবে অর্থাৎ নিহত ব্যক্তির অভিভাবক হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দেবে, সে যেন লোকদেরকে জীবিত রাখলো। আবার এই ভাবার্থও বর্ণনা করা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি মানুষের জীবন বাঁচাবে, যেমন ডুবন্ত মানুষকে উঠিয়ে নেবে, আগুনে পড়ে যাচ্ছে এমন লোককে আগুন থেকে রক্ষা করবে এবং কাউকে ধ্বংসের মুখ থেকে বাঁচিয়ে নেবে ইত্যাদি। উদ্দেশ্য হচ্ছে-মানুষকে অন্যায় খুন থেকে বিরত রাখা, তাদেরকে মানুষের কল্যাণ কামনা, শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা। হযরত হাসান বসরী (রঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলোঃ “বানী ইসরাঈল যেমন এ হুকুমের আওতাভুক্ত ছিল তদ্রুপ আমরাও কি এ হুকুমেরই আওতাভুক্ত?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “হ্যা, আল্লাহর শপথ! বানী ইসরাঈলের রক্ত আল্লাহর নিকট আমাদের রক্ত অপেক্ষা কোনক্রমেই মর্যাদাপূর্ণ নয়।” সুতরাং একটি লোককে বিনা কারণে হত্যা করা সকলকে হত্যা করার শামিল এবং একটি লোকের জীবন রক্ষা করার পুণ্য সমস্ত লোকের জীবন রক্ষা করার পুণ্যের সমান। ইমাম আহমাদ (রঃ) বলেন যে, একদা হযরত হামযা ইবনে আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট এসে বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমাকে এমন কাজ বাতলিয়ে দিন যা আমার জীবনকে সুখময় করে।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “হে হামযা (রাঃ)! কারও জীবন রক্ষা করা আপনার নিকট পছন্দনীয় কাজ, না কাউকে মেরে ফেলা পছন্দনীয় কাজ?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “কারও জীবন রক্ষা করাই আমার নিকট পছন্দনীয় কাজ।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “তাহলে আপনি এ কাজেই লেগে থাকুন।”

মহান আল্লাহ বলেনঃ বানী ইসরাঈলের কাছে আমার বহু রাসূলও স্পষ্ট প্রমাণসমূহ নিয়ে আগমন করেছিল, তবু এর পরেও তাদের মধ্য হতে অনেকেই ভূ-পৃষ্ঠে সীমালংঘনকারী রয়ে গেছে। যেমন ইয়াহুদী বানূ কুরাইযা ও বানূ নাযীর আউস ও খাযরাজ গোত্রদ্বয়ের সাথে মিলিত হয়ে একে অপরের সাথে যুদ্ধ করতো এবং নিহত ব্যক্তির মুক্তিপণ আদায় করতো। তাদেরকে বুঝাবার উদ্দেশ্যে আয়াত নাযিল করা হয়- তোমাদের নিকট এই অঙ্গীকার নেয়া হয়েছিল যে, তোমরা তোমাদের লোকদেরকে হত্যা করবে না এবং তাদেরকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেবে না। কিন্তু এই মজবুত আহাদ ও অঙ্গীকার সত্ত্বেও তোমরা তার উল্টো করেছে। যদিও মুক্তিপণ আদায় করেছে, কিন্তু তাদেরকে দেশ হতে বের করে দেয়াও তো হারাম ছিল। এর কি অর্থ হতে পারে যে, তোমরা কোন কোন হুকুম মানবে এবং কোন কোনটা মানবে না? এরূপ লোকদের শস্তি তো এটাই যে, তারা দুনিয়াতে লাঞ্ছিত ও অপমানিত হবে এবং পরকালে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে। আল্লাহ তোমাদের কাজকর্ম থেকে উদাসীন নন।

(আরবী) এ আয়াতে (আরবী) শব্দের অর্থ হচ্ছে বিরুদ্ধাচরণ করা এবং হুকুমের বিপরীত করা। এর ভাবার্থ হচ্ছে কুফরী করা, ডাকাতি করা, ব্যভিচার করা এবং ভূ-পৃষ্ঠে বিভিন্ন প্রকারের অশান্তি সৃষ্টি করা। এমনকি পূর্ববর্তী অনেক মনীষী, যাঁদের মধ্যে হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়াবও (রঃ) রয়েছেন, বলেন যে, রৌপ্যমুদ্রা ও স্বর্ণমুদ্রা অধিকার করে নেয়াও হচ্ছে ভূ-পৃষ্ঠে ফাসাদ সৃষ্টি করার শামিল। আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে বলেছেনঃ যখন কাউকে কোন কাজের অলী বানিয়ে দেয়া হয় তখন সে ফাসাদ ও অশান্তি ছড়িয়ে দেয় এবং চাষাবাদের ভূমি ও মানবজাতিকে ধ্বংস করে ফেলে, আর আল্লাহ ফাসাদকে ভালবাসেন না। এ আয়াতটি মশরিকদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছিল। কেননা, এতে এটাও আছে যে, যখন এরূপ লোক এ কাজগুলো করার পর মুসলমানদের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পূর্বেই তাওবা করে নেয় তবে তার কোন জবাবদিহি নেই। পক্ষান্তরে যদি কোন মুসলমান এমন কাজ করে এবং পলায়ন করে কাফিরদের নিকট চলে যায় তবে শরঈ হদ থেকে মুক্ত হবে না। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এ আয়াতটি মুশরিকদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। অতঃপর তাদের মধ্যে কেউ যদি মুসলমানদের হাতে পড়ে যাওয়ার পূর্বে তাওবা করে নেয় তবে তার কৃতকর্মের দরুন যে হুকুম তার উপর সাব্যস্ত হয়ে গেছে তা টলতে পারে না। হযরত উবাই (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, আহলে কিতাবের একটা দলের সঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু তারা তা ভঙ্গ করে এবং গণ্ডগোল সৃষ্টি করে। তখন আল্লাহ তা'আলা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে স্বাধীনতা দেন যে, তিনি ইচ্ছে করলে তাদেরকে হত্যা করতে পারেন, আবার ইচ্ছে করলে তাদের একদিকের হাত ও অপরদিকের পা কেটে ফেলতে পারেন। হযরত সা'দ (রাঃ) বলেন যে, আয়াতটি হারূরিয়া খারেজীদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। সঠিক কথা এই যে, যে কেউই এ কাজ করবে তারই ব্যাপারে এ হুকুম প্রযোজ্য হবে। যেহেতু সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, উক্কাল গোত্রের কতগুলো লোক আল্লাহর রাসূল (সঃ)-এর নিকট আগমন করে এবং তাঁর কাছে ইসলামের বায়আত গ্রহণ করে। অতঃপর মদীনার আবহাওয়া তাদের স্বাস্থ্যের প্রতিকূল হয় এবং তাদের পেট মোটা হয়ে যায়। তারা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে এর অভিযোগ পেশ করে। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদেরকে বললেনঃ “তোমরা চাইলে আমাদের রাখালের সাথে চলে যাও, তথায় উটের প্রস্রাব ও দুধ পান করবে। তারা বললোঃ “হ্যা (আমরা যেতে চাই।)” সুতরাং তারা বেরিয়ে পড়লো। অতঃপর তাদের রোগ সেরে গেলো। তখন তারা রাখালকে মেরে ফেললো এবং উটগুলো হাঁকিয়ে নিয়ে চলে গেল। রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে এ সংবাদ পৌছলে তিনি সাহাবায়ে কিরামকে তাদের পশ্চাদ্ধাবন করে তাদেরকে ধরে আনার নির্দেশ দেন। অতএব তাদেরকে পাকড়াও করে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সামনে পেশ করা হয়। তখন তাদের হাত-পা কেটে ফেলা হয় এবং চোখে গরম শলাকা ভরে দেয়া হয়। অতঃপর তাদেরকে রৌদ্রে ফেলে রাখা হয় ফলে তারা ধড়ফড় করে মৃত্যুবরণ করে। সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, ঐ লোকগুলো উক্কাল গোত্রের ছিল কিংবা উরাইনা গোত্রের ছিল। তারা পানি চেয়েছিল, কিন্তু তাদেরকে পানি দেয়া হয়নি। তারা চুরিও করেছিল, হত্যাও করেছিল, ঈমান আনয়নের পর কুফরীও করেছিল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর সাথে যুদ্ধ করেছিল এবং তারা রাখালের চোখে গরম শলাকাও ভরে দিয়েছিল। সেই সময় মদীনার আবহাওয়া ভাল ছিল না। তারা বারসাম' নামক রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদের পিছনে ২০ জন ঘোড় সওয়ার আনসারীকে পাঠিয়েছিলেন। একজন পদব্রজে চলছিলেন, যিনি পদচিহ্ন দেখে দেখে পথ দেখিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। মৃত্যুর সময় তারা পিপাসায় এতো কাতর হয়ে পড়েছিলো যে, মাটি চাটতে শুরু করেছিলো! তাদের ব্যাপারেই এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। একদা হাজ্জাজ হযরত আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেনঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ) কাউকে সবচেয়ে বড় ও কঠিন যে শাস্তি দিয়েছিলেন তা বর্ণনা করুন।” তখন হযরত আনাস (রাঃ) এ ঘটনাটি বর্ণনা করেন। তাতে এ কথাও রয়েছে যে, ঐ লোকগুলো বাহরাইন থেকে এসেছিল। রোগের কারণে তাদের রং হলদে বর্ণ ধারণ করেছিল। আর পেট বড় হয়ে গিয়েছিল। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদেরকে বলেছিলেনঃ “তোমরা সাদকার উটের নিকট গমন কর এবং ওগুলোর দুধ ও প্রস্রাব পান কর।” হযরত আনাস (রাঃ) বলেনঃ “তারপর আমি দেখলাম যে, হাজ্জাজ এ রিওয়ায়াতকে নিজের অত্যাচারের দলীল বানিয়ে নিলো। আমি তখন খুবই লজ্জিত হলাম যে, আমি তার কাছে এ হাদীসটি কেন বর্ণনা করলাম।” অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, তাদের মধ্যে চারজন লোক ছিল উরাইনা গোত্রের এবং তিনজন ছিল ইকাল গোত্রের। এরা যখন সুস্থ হয়ে উঠলো তখন ধর্মত্যাগী হয়ে গেলো। আর একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, তারা রাস্তাও বন্ধ করে দিয়েছিল এবং ব্যভিচারীও ছিল। তারা যখন আগমন করে তখন দারিদ্রের কারণে তাদের পরনে কাপড় পর্যন্ত ছিল না। তারা হত্যা ও লুঠ করে নিজেদের শহরের দিকে যাচ্ছিল। হযরত জারীর (রাঃ) বলেনঃ তারা তাদের কওমের কাছে প্রায় পৌছেই গিয়েছিল এমতাবস্থায় আমরা তাদেরকে ধরে ফেলি। তারা পানি চাচ্ছিল, আর রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলছিলেনঃ “এখন তো পানির পরিবর্তে জাহান্নামের আগুন পাবে।” এ বর্ণনায় এটাও বলা হয়েছে যে, তাদের চোখে শলাকা ভরে দেয়াকে আল্লাহ তা'আলা অপছন্দ করেন। এ হাদীসটি দুর্বল ও গারীব। কিন্তু এর দ্বারা এটা জানা গেল যে, ঐ ধর্মত্যাগীদের বিরুদ্ধে যে সৈন্যদল পাঠানো হয়ছিল তাঁদের সর্দার ছিলেন হযরত জারীর (রাঃ)। এ বর্ণনার এ অংশটি একেবারই বর্জনীয় যে, তাদের চোখে শলাকা ভরে দেয়াকে আল্লাহ তা'আলা অপছন্দ করেন। কেননা, সহীহ মুসলিমে এটা বিদ্যমান আছে যে, তারা রাখালের সাথে ঐ ব্যবহার করেছিল। সুতরাং ওটা ছিল তাদের কিসাস বা প্রতিশোধ গ্রহণ। আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।

আর একটি বর্ণনায় আছে যে, ঐলোকগুলো বানূ ফারাহ গোত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ ঘটনার পর রাসূলুল্লাহ (সঃ) এ শাস্তি আর কাউকেও দেননি। অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর ইয়াসার নামক এক ক্রীতদাস ছিল। সে অত্যন্ত নামাযী ছিল বলে তিনি তাকে আযাদ করে দিয়েছিলেন। অতঃপর স্বীয় উটের পালে তাকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। সে ঐ উটগুলো দেখা শোনা করতো। তাকেই ঐ ধর্মত্যাগীরা হত্যা করে ফেলেছিল এবং তার চোখে কাটা গেড়ে দিয়ে উটগুলো নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল। যে সেনাবাহিনী তাদেরকে গ্রেফতার করে এনেছিলেন তাদের মধ্যে একজন শক্তিশালী যুবক ছিলেন হযরত কুরম্ ইবনে ফাহরী (রাঃ)। হাফিয আবু বকর মিরদুওয়াই (রঃ) এ বর্ণনার সমস্ত তরীকা বা পন্থাকে একত্রিত করেছেন। আল্লাহ পাক তাকে উত্তম পুরস্কার প্রদান করুন। আবু হামযাহ ইবনে আবদুল করীম (রঃ) উটের প্রস্রাবের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হলে তিনি ঐ ধর্মত্যাগীদের কাহিনী বর্ণনা করেন। তাতে এ কথাও আছে যে, ঐ লোকগুলো কপটতার সাথে ঈমান এনেছিল এবং রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট মদীনার প্রতিকূল আবহাওয়ার অভিযোগ করেছিল। রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন তাদের প্রতারণা, হত্যা, লুণ্ঠন ও ধর্মত্যাগের বিষয় জানতে পারেন তখন তিনি ঘোষণা দেন যে, আল্লাহর সৈন্যগণ যেন তাদের পশ্চাদ্ধাবনে বেরিয়ে পড়ে। এ ঘোষণা শোনা মাত্রই সাহাবীগণ কেউ কারও জন্যে অপেক্ষা না করেই তাদের পিছনে বেরিয়ে পড়েন। তাদেকে পাঠিয়ে দেয়ার পর স্বয়ং নবী করীম (সঃ) রওয়ানা হয়ে যান। ঐ বিদ্রোহী ও ডাকাতের দল তাদের নিরাপদ জায়গায় প্রায় পৌছেই গেছে, এমন সময় সাহাবায়ে কিরাম তাদেরকে ঘিরে ফেলেন। তাদের মধ্যে যে কয়েকজন গ্রেফতার হয় তাদেরকে তারা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সামনে পেশ করেন। ঐ সময় এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। তাদেরকে দেশান্তরিত করা ছিল এই যে, তাদেরকে ইসলামী হুকুমতের সীমানা থেকে বের করে দিয়ে শিক্ষামূলক শাস্তি দেয়া হয়েছিল। এর পর নবী করীম (সঃ) আর কোন দিনই কোন লোকের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দেহচ্যুত করেননি, বরং তিনি তা থেকে নিষেধ করেন। জন্তুর সাথেও এরূপ ব্যবহার নিষিদ্ধ। কেউ কেউ বলেন, হত্যার পর তাদেরকে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। আবার কেউ কেউ বলেন যে, ওরা বানূ সালীম গোত্রের লোক ছিল। কোন কোন মনীষী বলেন যে, আল্লাহর রাসূল (সঃ) তাদেরকে যে শাস্তি দিয়েছিলেন তা আল্লাহ তা'আলার পছন্দ হয়নি এবং এ আয়াত দ্বারা ওটা মানসূখ। বা রহিত করে দেয়া হয়েছে। তাদের মতে এ আয়াতে যেন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে এ শাস্তি দেয়া থেকে নিষেধ করা হয়েছে। যেমন (আরবী) -এ আয়াতটি। কারও কারও মতে রাসূলুল্লাহ (সঃ) “মুসলা" অর্থাৎ নাক, কান কেটে নিতে যে নিষেধ করেছেন তা দ্বারা এ শাস্তি মানসূখ হয়ে গেছে। কিন্তু এতে চিন্তা ভাবনার অবকাশ রয়েছে। তারপর এটাও জিজ্ঞাস্য বিষয় যে, মানসূখকারীর বিলম্বের দলীল কি? কেউ কেউ বলেন যে, এটা হচ্ছে ইসলামের হদ স্থিরীকরণের পূর্বেকার ঘটনা। কিন্তু এটাও মোটেই ঠিক নয়, বরং স্থিরীকরণের পরের ঘটনা বলে মনে হচ্ছে। কেননা, এ হাদীসের একজন বর্ণনাকারী হচ্ছেন হযরত জারীর ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ)। আর তিনি সূরা মায়িদাহ্ অবতীর্ণ হওয়ার পর ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। আবার কেউ কেউ বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদের চোখে গরম শলাকা ভরে দেয়ার ইচ্ছা করেছিলেন। কিন্তু যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়ে গেল তখন তিনি তা থেকে বিরত থাকলেন। কিন্তু এটাও সঠিক কথা নয়। কেননা, সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে এ শব্দ রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদের চোখে গরম শলাকা ভরে দিয়েছিলেন। মুহাম্মাদ ইবনে আজলান বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদেরকে যে কঠিন শাস্তি দিয়েছিলেন তা যে উচিত ছিল না এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ পাক এ আয়াতগুলো অবতীর্ণ করেন। যাতে উচিত শাস্তির কথা বর্ণনা করা হয়েছে আর তা হচ্ছে হাত-পা বিপরীতভাবে কেটে নেয়া এবং দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়া। আর দেখা যাচ্ছে যে, এরপর আর কোনদিন কারও চোখে গরম শলাকা ভরে দেয়া হয়েছে বলে কোন প্রমাণ নেই। কিন্তু ইমাম আওযায়ী (রঃ) বলেন যে, তারা যা করেছিল তারই প্রতিফল তারা পেয়েছিল। এখন যে আয়াত নাযিল হলো তাতে এরূপ লোকদের জন্যে একটা বিশেষ হুকুম বর্ণনা করা হলো এবং তাতে চোখে গরম শলাকা ভরে দেয়ার হুকুম দেয়া হলো না। এ আয়াত দ্বারা জমহুর উলামা এ দলীল গ্রহণ করেছেন যে, পথ বন্ধ করে দিয়ে যুদ্ধ করা এবং শহরে যুদ্ধ করা দুটোই সমান। কেননা, আয়াতে (আরবী) শব্দগুলো রয়েছে। মালিক, আলঈ এবং শাফিঈর (আল্লাহ তাদের প্রতি সদয় হোন) এটাই মাযহাব যে, বিদ্রোহীরা শহরের ভেতরেই এসব হাঙ্গামা সৃষ্টি করুক বা শহরের বাইরেই করুক, তাদের শাস্তি এটাই। এমনকি ইমাম মালিক (রঃ) তো এতদূর পর্যন্ত বলেন যে, কোন লোক অপর কোন লোককে তার বাড়ীতে এ ধরনের প্রতারণা করে হত্যা করলে তাকে ধরে আনা হবে এবং তার কাছে যেসব মাল ও আসবাবপত্র রয়েছে সবগুলোই ছিনিয়ে নেয়া হবে। আর সাথে সাথে তাকে হত্যা করে ফেলা হবে। সমসাময়িক ইমামই এ কাজ করবেন, নিহত ব্যক্তির অভিভাবকেরা নয়। এমনকি যদি তারা (অভিভাবকেরা) তাকে ক্ষমা করে দিতে চায় তবুও তাদেরকে এ অধিকার দেয়া হবে না। কিন্তু ইমাম আবু হানীফা (রঃ)-এর মাযহাব এটা নয়। তিনি বলেন, যে ঐ সময় মেনে নেয়া হবে যখন কেউ শহরের বাইরে এরূপ হাঙ্গামা সৃষ্টি করবে। কেননা, শহরে তো সাহায্য পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু শহরের বাইরে এর কোনই সম্ভাবনা নেই। এ বিদ্রোহীদের যে শাস্তির বর্ণনা দেয়া হয়েছে সে সম্পর্কে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, যে ব্যক্তি মুসলমানদের উপর তরবারী উঠাবে এবং পথকে বিপজ্জনক করে তুলবে, তাকে মুসলমানদের ইমাম উল্লিখিত তিনটি শাস্তির যে কোন একটি দিতে পারেন। আরও অনেকেরই এটাই উক্তি। আর অন্যান্য আয়াতের হুকুমের মধ্যেও এ ধরনের অধিকার বিদ্যমান রয়েছে। যেমন হজ্বের ইহরামের অবস্থায় কেউ শিকার করলে তাকে সেই শিকারের সমপর্যায়ের জন্তু কুরবানী করতে হয় বা মিসকীনদেরকে খানা খাওয়াতে হয় কিংবা সেই বরাবর রোযা রাখতে হয়। অনুরূপভাবে রোগ বা মাথার অসুখের কারণে কেউ ইহরামের অবস্থায় মাথা মুণ্ডন করালে তার ক্ষতিপূরণ হিসেবে তাকে রোযা, সাদকা বা কুরবানী করতে হয়। তদ্রপ কসমের কাফফারায় মধ্যমভাবে দশজন মিসকীনকে খানা খাওয়ানোর বা তাদেরকে কাপড় পরানোর অথবা একটি গোলাম আযাদ করণের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। তাহলে যেমন এখানে এ অবস্থাগুলোর মধ্য হতে যে কোন একটি পছন্দ করে নেয়ার অধিকার রয়েছে, ঠিক তেমনই বিদ্রোহী ধর্মত্যাগীদের শাস্তিও হচ্ছে হত্যা অথবা বিপরীতভাবে হাত-পা কেটে নেয়া কিংবা দেশ হতে বিতাড়িত করা। আর জমহরের উক্তি এই যে, এ আয়াতুটি কয়েক অবস্থার সাথে জড়িত। যখন ডাকাত হত্যা ও লুঠপাট উভয় অপরাধে অপরাধী হবে তখন সে শূলেও হত্যার যোগ্য হবে। আর যদি শুধু হত্যার দোষে দোষী হয় তবে হত্যার বদলে শুধু হত্যাই করা হবে। যদি শুধু মাল নেয় তবে উল্টোভাবে হাত-পা কেটে নিতে হবে অর্থাৎ এক দিকের হাত ও অপর দিকের পা- এভাবে কেটে নিতে হবে। আর যদি পথকে ভীতিপূর্ণ করে তোলে এবং জনগণের মধ্যে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে, এছাড়া অন্য কোন পাপে লিপ্ত না হয় তবে শুধু তাকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিতে হবে। অধিকাংশ মনীষী ও ইমামদের মাযহাব এটাই। তারপর মনীষীদের মধ্যে এ ব্যাপারেও মতভেদ রয়েছে যে, তাকে শুধু শূলের উপর লটকিয়ে দিয়েই কি ছেড়ে দেয়া হবে, যাতে সে ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত অবস্থায় মারা যাবে? না বর্শা ইত্যাদি দ্বারা হত্যা করা হবে, যাতে মানুষ তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে? না তিন দিন পর্যন্ত শূলেই রাখা হবে, তারপর নামিয়ে নেয়া হবে? না এমনিই ছেড়ে দেয়া হবে? কিন্তু এটা তাফসীরের স্থান নয়। যে, আমরা ছোটখাটো মতভেদ নিয়েই পড়ে থাকব এবং প্রত্যেকেরই দলীল পেশ করব। হ্যা, তবে একটি হাদীসে শাস্তির কিছু বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। ওর সনদ যদি সহীহ হয় তাহলে তা এই যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন ঐ বিদ্রোহী ও ধর্মত্যাগীদের সম্পর্কে জিবরাঈল (আঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন তখন তিনি বললেনঃ “যারা মাল চুরি করবে এবং পথকে বিপজ্জনক করে তুলবে তাদের হাত চুরির বদলে কেটে নেয়া হবে, যে হত্যা করবে তাকে হত্যা করে দেয়া হবে। আর যে হত্যা করবে, পথকে বিপজ্জনক করে তুলবে এবং ব্যভিচার করবে তাকে শূলের উপর চড়িয়ে দিবে।”

(আরবী) অথবা ভূ-পৃষ্ঠ হতে বের করে দেয়া হবে। অর্থাৎ তাদেরকে অনুসন্ধান করে তাদের উপর হদ কায়েম করা হবে অথবা দারুল ইসলাম থেকে বের করে দেয়া হবে, যেন তারা অন্য কোথায়ও চলে যায়। কিংবা এক শহর থেকে অন্য কোন শহরে এবং সেই শহর থেকে আর এক শহরে পাঠিয়ে দেয়া হবে। অথবা ইসলামী রাষ্ট্র থেকে সম্পূর্ণরূপেই বের করে দেয়া হবে। শা'বী (রঃ) তো শুধু বের করেই দিতেন। আর আতা’ খোরাসানী (রঃ) বলেন যে, এক সেনাবাহিনী থেকে অন্য সেনাবাহিনীর মধ্যে পৌছিয়ে দেয়া হবে। এমনিভাবে তাকে কয়েক বছর পর্যন্ত যেখানে সেখানে ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়ানো হবে। কিন্তু তাকে দারুল ইসলাম থেকে বের করা হবে না। ইমাম আবু হানীফা (রঃ) এবং তাঁর সহচরগণ বলেন যে, তাকে জেলখানায় পাঠিয়ে দেয়া হবে। ইবনে জারীর (রঃ)-এর পছন্দনীয় কথা এই যে, তাকে তার নিজের শহর থেকে বের করে দিয়ে অন্য কোন শহরের জেলখানায় ভরে দেয়া হবে।

(আরবী) আয়াতের এ সব লোকের পক্ষপাতিত্ব করছে যারা বলেন যে, এ আয়াতটি মুশরিকদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে এবং মুসলমানদের ব্যাপারে রয়েছে ঐ বিশুদ্ধ হাদীসটি যাতে আছে যে, বর্ণনাকারী হযরত উবাদা ইবনে সামিত (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদের নিকট থেকে ঐ অঙ্গীকারই গ্রহণ করেন যা তিনি স্ত্রীলোকদের নিকট থেকে গ্রহণ করেছিলেন। তা হচ্ছে-আমরা যেন চুরি না করি, ব্যভিচারে লিপ্ত না হই, নিজেদের সন্তানদেরকে হত্যা না করি এবং একে অপরের নাফরমানী না করি। (অর্থাৎ কেউ যেন কারও উপর মিথ্যা অপবাদ না দেয়) যারা এ অঙ্গীকার পূর্ণ করবে তাদের পুরস্কার রয়েছে আল্লাহর দায়িত্বে। আর যারা এগুলোর মধ্যে কোন একটি পাপকার্যে লিপ্ত হবে এবং ওর শাস্তিও প্রাপ্ত হবে তবে সেটাই তার সেই পাপের প্রায়শ্চিত্ত হয়ে যাবে। আর যদি আল্লাহ সেটা গোপন করেন তবে তার সে বিষয়ের দায়িত্ব তারই উপর থাকবে। তিনি ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তি দেবেন এবং ইচ্ছা করলে ক্ষমা করে দেবেন। হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি কোন পাপকাজ করলো, অতঃপর তাকে শাস্তি দেয়া হলো, তাহলে আল্লাহ যে তাকে পুনরায় শাস্তি দেবেন এ থেকে তাঁর আদল ও ইনসাফ বহু ঊর্ধ্বে। আর যে ব্যক্তি কোন পাপ করলো, অতঃপর আল্লাহ তা ঢেকে নিলেন এবং ক্ষমা করে দিলেন, তবে আল্লাহর করুণা এর বহু ঊর্ধ্বে যে, তিনি তাঁর বান্দার কোন পাপ ক্ষমা করে দেয়ার পর আবার ওর শাস্তি ফিরিয়ে আনবেন। (এটা ইমাম আহমাদ (রঃ), তিরমিযী (রঃ) এবং ইবনে মাজাহ (রঃ) বর্ণনা করেছেন) তবে এ শাস্তিপ্রাপ্তির পর যদি তাওবা ছাড়াই মারা যায় তবে পরকালের শাস্তি বাকী থেকে যাবে, যার সঠিক কল্পনা করাও এখন অসম্ভব। হ্যা, তবে যদি তাওবা নসীব হয় তাহলে অন্য কথা। তারপর তাওবাকারীদের সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তার প্রকাশ ঐ অবস্থায় তো স্পষ্ট যে, এ আয়াতকে মুশরিকদের ব্যাপারে অবতীর্ণ মেনে নেয়া হবে। কিন্তু যে মুসলমান বিদ্রোহী হবে এবং সে অধিকারে আসার পূর্বেই যদি তাওবা করে নেয় তবে তার উপর হত্যা, শূল এবং পা কেটে নেয়া তো প্রযোজ্য হবেই না, এমনকি তার হাতও কাটা যাবে কি না এ ব্যাপারে আলেমদের দুটি উক্তি রয়েছে। আয়াতের বাহ্যিক শব্দ দ্বারা এটা জানা যাচ্ছে যে, সমস্ত শাস্তিই তার উপর থেকে উঠে যাবে। সাহাবীদের আমলও এরই উপর রয়েছে। যেমন জারিয়া ইবনে বদর তাইমী বসরী যমীনে ফাসাদ বা হাঙ্গামা সৃষ্টি করেছিল এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। এ ব্যাপারে কয়েকজন কুরাইশী হযরত আলী (রাঃ)-এর নিকট সুপারিশ করেন, যাদের মধ্যে হযরত হাসান ইবনে আলী (রাঃ), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) এবং হযরত আবদুল্লাহ ইবনে জাফরও (রাঃ) ছিলেন। কিন্তু তিনি তাঁকে নিরাপত্তা দান করতে অস্বীকার করেন। জারিয়া ইবনে বদর তখন সাঈদ ইবনে কায়েস (রাঃ)-এর নিকট আগমন করে। তিনি তাকে নিজের বাড়ীতে রেখে হযরত আলী (রাঃ)-এর নিকট গমন করেন এবং তাঁকে বলেনঃ আচ্ছা বলুন তো, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং যমীনে ফাসাদ সৃষ্টির চেষ্টা করে, অতঃপর তিনি এ আয়াতগুলো (আরবী) পর্যন্ত পাঠ করেন। তখন হযরত আলী (রাঃ) বলেনঃ “এরূপ ব্যক্তির জন্যে তো আমি নিরাপত্তা দান করবো।” হযরত সাঈদ (রাঃ) তখন বলেনঃ “সে হচ্ছে জারিয়া ইবনে বদর।” এরপর জারিয়া তার প্রশংসায় কবিতাও রচনা করেন।

ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, মুরাদ গোত্রের একটি লোক কুফার মসজিদে কোন এক ফরয নামাযের পরে হযরত আবু মূসা আশআরী (রাঃ)-এর নিকট আগমন করে। সে সময় তিনি কুফার শাসনকর্তা ছিলেন। লোকটি এসে তাকে বলেঃ “হে আমীরে কুফা! আমি মুরাদ গোত্রের অমুকের পুত্র অমুক। আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর বিরুদ্ধে লড়েছি এবং ভূ-পৃষ্ঠে ফাসাদ সৃষ্টির চেষ্টা করেছি। কিন্তু আপনারা আমার উপর ক্ষমতা লাভ করার পূর্বেই তাওবা করেছি। আমি এখন আপনার আশ্রয়স্থলে দাড়িয়েছি।” একথা শুনে হযরত আব মুসা আশআরী দাড়িয়ে গিয়ে বলেনঃ “হে লোক সকল! এ তাওবার পরে তোমাদের কেউ যেন এর সাথে কোন প্রকারের দুর্ব্যবহার না করে। যদি সে তার তাওবায় সত্যবাদী হয় তবে তো ভাল কথা, আর যদি সে মিথ্যাবাদী হয় তবে তার পাপই তাকে ধ্বংস করবে।” লোকটি কিছুকাল পর্যন্ত তো ঠিকভাবেই থাকলো। তারপর সে পুনরায় মুরতাদ বা ধর্মত্যাগী হয়ে গেল। আল্লাহ তা'আলাও তাকে তার পাপের কারণে ধ্বংস করে দিলেন এবং তাকে হত্যা করা হলো।

ইবনে জারীর (রাঃ) আরও বর্ণনা করেছেন যে, আলী আসাদী নামক একটি লোক মানুষের পথকে বিপজ্জনক করে তোলে। সে মানুষকে হত্যা করে এবং তাদের মালধন লুঠপাট করতে থাকে। বাদশাহ, সেনাবাহিনী এবং জনসাধারণ সদা তাকে গ্রেফতার করার চেষ্টায় থাকে, কিন্তু অকৃতকার্য হয়। একদা সে জঙ্গলে অবস্থান করছিল এমন সময় একটি লোককে কুরআন পাঠ করতে শুনলো। লোকটি সেই সময় (আরবী) (৩৯:৫৩)-এ আয়াটি পাঠ করছিল। এটা শুনে সে থমকে দাঁড়ালো এবং তাকে বললোঃ “হে আল্লাহর বান্দা! এ আয়াতটি পুনরায় আমাকে পাঠ করে শুনাও। লোকটি আবার তা পাঠ করলো। তখন আলী স্বীয় তরবারীখানা খাপে রেখে দিল। তৎক্ষণাৎ সে বিশুদ্ধ মনে তাওবা করলো এবং ফজরের নামাযের পূর্বেই মদীনায় পৌছে গেল। তার পর গোসল করলো এবং মসজিদে নববীতে (সঃ) প্রবেশ করে জামাআতে ফজরের নামায আদায় করলো। নামায শেষে লোকেরা হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ)-এর পাশে বসে পড়লো। সেও তখন তাদেরই মধ্যে একধারে বসে গেল। ফর্সা হয়ে গেলে লোকেরা তাকে দেখে চিনে ফেললো এবং তাকে গ্রেফতার করতে উদ্যত হলো। সে বললোঃ “দেখুন, আমার উপর আপনাদের ক্ষমতা লাভ হওয়ার পূর্বেই আমি তাওবা করেছি এবং তাওবা করার পর আপনাদের নিকট হাযির হয়েছি। সুতরাং এখন আমার উপর আপনাদের বল প্রয়োগের কোন পথ নেই।” তখন হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বললেনঃ “লোকটি সত্য কথাই বলেছে।” অতঃপর তিনি তার হাত ধরে মারওয়ান ইবনে হাকামের নিকট নিয়ে গেলেন। সে সময় তিনি মুআবিয়া (রাঃ)-এর পক্ষ থেকে মদীনার শাসনকর্তা ছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনি তাঁকে বললেনঃ “এ হচ্ছে আলী আসাদী, সে তাওবা করেছে সুতরাং এর উপর আপনি কোন বল প্রয়োগ করতে পারেন না।" ফলে কেউই তার সাথে কোন প্রকার দুর্ব্যবহার করলেন না। মুজাহিদের একটি দল যখন রোমকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্যে রওয়ানা হলেন, তাঁদের সাথে এ আলী আসাদীও গেল। তাদের নৌকা সমুদ্রে চলছিল। তাদের সামনে রোমকদের কতগুলো নৌকা এসে পড়লো। তাদেরকে সমুচিত শিক্ষা দেয়ার জন্যে সে নিজেদের নৌকা থেকে লাফিয়ে পড়ে তাদের নৌকায় গিয়ে উঠলো। তারা তার তরবারীর চমক সহ্য করতে না পেরে পালে টান দিল। আলীও তাদের পশ্চাদ্ধাবন করলো। নৌকার ভারসাম্য নষ্ট হলো। ফলে নৌকা ডুবে গেলো এবং রোমকদের সবাই ডুবে মরলো। তাদের সাথে হযরত আলী আসাদীও (রাঃ) ডুবে গিয়ে শাহাদত বরণ করলো।

Quran Mazid
go_to_top
Quran Mazid
Surah
Juz
Page
1
Al-Fatihah
The Opener
001
2
Al-Baqarah
The Cow
002
3
Ali 'Imran
Family of Imran
003
4
An-Nisa
The Women
004
5
Al-Ma'idah
The Table Spread
005
6
Al-An'am
The Cattle
006
7
Al-A'raf
The Heights
007
8
Al-Anfal
The Spoils of War
008
9
At-Tawbah
The Repentance
009
10
Yunus
Jonah
010
11
Hud
Hud
011
12
Yusuf
Joseph
012
13
Ar-Ra'd
The Thunder
013
14
Ibrahim
Abraham
014
15
Al-Hijr
The Rocky Tract
015
16
An-Nahl
The Bee
016
17
Al-Isra
The Night Journey
017
18
Al-Kahf
The Cave
018
19
Maryam
Mary
019
20
Taha
Ta-Ha
020
21
Al-Anbya
The Prophets
021
22
Al-Hajj
The Pilgrimage
022
23
Al-Mu'minun
The Believers
023
24
An-Nur
The Light
024
25
Al-Furqan
The Criterion
025
26
Ash-Shu'ara
The Poets
026
27
An-Naml
The Ant
027
28
Al-Qasas
The Stories
028
29
Al-'Ankabut
The Spider
029
30
Ar-Rum
The Romans
030
31
Luqman
Luqman
031
32
As-Sajdah
The Prostration
032
33
Al-Ahzab
The Combined Forces
033
34
Saba
Sheba
034
35
Fatir
Originator
035
36
Ya-Sin
Ya Sin
036
37
As-Saffat
Those who set the Ranks
037
38
Sad
The Letter "Saad"
038
39
Az-Zumar
The Troops
039
40
Ghafir
The Forgiver
040
41
Fussilat
Explained in Detail
041
42
Ash-Shuraa
The Consultation
042
43
Az-Zukhruf
The Ornaments of Gold
043
44
Ad-Dukhan
The Smoke
044
45
Al-Jathiyah
The Crouching
045
46
Al-Ahqaf
The Wind-Curved Sandhills
046
47
Muhammad
Muhammad
047
48
Al-Fath
The Victory
048
49
Al-Hujurat
The Rooms
049
50
Qaf
The Letter "Qaf"
050
51
Adh-Dhariyat
The Winnowing Winds
051
52
At-Tur
The Mount
052
53
An-Najm
The Star
053
54
Al-Qamar
The Moon
054
55
Ar-Rahman
The Beneficent
055
56
Al-Waqi'ah
The Inevitable
056
57
Al-Hadid
The Iron
057
58
Al-Mujadila
The Pleading Woman
058
59
Al-Hashr
The Exile
059
60
Al-Mumtahanah
She that is to be examined
060
61
As-Saf
The Ranks
061
62
Al-Jumu'ah
The Congregation, Friday
062
63
Al-Munafiqun
The Hypocrites
063
64
At-Taghabun
The Mutual Disillusion
064
65
At-Talaq
The Divorce
065
66
At-Tahrim
The Prohibition
066
67
Al-Mulk
The Sovereignty
067
68
Al-Qalam
The Pen
068
69
Al-Haqqah
The Reality
069
70
Al-Ma'arij
The Ascending Stairways
070
71
Nuh
Noah
071
72
Al-Jinn
The Jinn
072
73
Al-Muzzammil
The Enshrouded One
073
74
Al-Muddaththir
The Cloaked One
074
75
Al-Qiyamah
The Resurrection
075
76
Al-Insan
The Man
076
77
Al-Mursalat
The Emissaries
077
78
An-Naba
The Tidings
078
79
An-Nazi'at
Those who drag forth
079
80
Abasa
He Frowned
080
81
At-Takwir
The Overthrowing
081
82
Al-Infitar
The Cleaving
082
83
Al-Mutaffifin
The Defrauding
083
84
Al-Inshiqaq
The Sundering
084
85
Al-Buruj
The Mansions of the Stars
085
86
At-Tariq
The Nightcommer
086
87
Al-A'la
The Most High
087
88
Al-Ghashiyah
The Overwhelming
088
89
Al-Fajr
The Dawn
089
90
Al-Balad
The City
090
91
Ash-Shams
The Sun
091
92
Al-Layl
The Night
092
93
Ad-Duhaa
The Morning Hours
093
94
Ash-Sharh
The Relief
094
95
At-Tin
The Fig
095
96
Al-'Alaq
The Clot
096
97
Al-Qadr
The Power
097
98
Al-Bayyinah
The Clear Proof
098
99
Az-Zalzalah
The Earthquake
099
100
Al-'Adiyat
The Courser
100
101
Al-Qari'ah
The Calamity
101
102
At-Takathur
The Rivalry in world increase
102
103
Al-'Asr
The Declining Day
103
104
Al-Humazah
The Traducer
104
105
Al-Fil
The Elephant
105
106
Quraysh
Quraysh
106
107
Al-Ma'un
The Small kindnesses
107
108
Al-Kawthar
The Abundance
108
109
Al-Kafirun
The Disbelievers
109
110
An-Nasr
The Divine Support
110
111
Al-Masad
The Palm Fiber
111
112
Al-Ikhlas
The Sincerity
112
113
Al-Falaq
The Daybreak
113
114
An-Nas
Mankind
114
Settings