Surah Al Ma'idah Tafseer
Tafseer of Al-Ma'idah : 2
Saheeh International
O you who have believed, do not violate the rites of Allah or [the sanctity of] the sacred month or [neglect the marking of] the sacrificial animals and garlanding [them] or [violate the safety of] those coming to the Sacred House seeking bounty from their Lord and [His] approval. But when you come out of ihram, then [you may] hunt. And do not let the hatred of a people for having obstructed you from al-Masjid al-Haram lead you to transgress. And cooperate in righteousness and piety, but do not cooperate in sin and aggression. And fear Allah ; indeed, Allah is severe in penalty.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
নামকরণ ও অবতীর্ণের সময়কাল:
الْمَائِدَةُ (আল মায়িদাহ) শব্দের অর্থ: দস্তরখানা, খাদ্য ইত্যাদি। অত্র সূরার ১১৪ নং আয়াতে আল মায়িদাহ (الْمَائِدَةُ) শব্দটি থেকে সূরার নামকরণ করা হয়েছে। তাছাড়া এ সূরাতে খাদ্য হিসেবে কোন্ প্রাণী ও বস্তু খাওয়া হালাল বা হারাম সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
সূরা আল-মায়িদাহ সম্পূর্ণ মদীনায় অবতীর্ণ হয়। মদীনায় অবতীর্ণ হওয়া সূরাসমূহের মধ্যে এটি শেষ দিকের সূরা। এমনকি কেউ কেউ এটাকে কুরআনের সর্বশেষ অবতীর্ণ সূরা বলেও আখ্যায়িত করেছেন। (আল মাবাহিস ফী উলুমুল কুরআন, মান্নাউল কাত্তান পৃঃ ৬৬)।
শানে নুযূল ও ফযীলত:
আবদুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাহনের ওপর আরোহী অবস্থায় সূরা মায়িদাহ অবতীর্ণ হয়। তখন বাহন তাঁকে বহন করতে অক্ষম হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাহন হতে নেমে পড়লেন। (মুসনাদ আহমাদ হা: ৬৬৪৩, সনদ হাসান, ইবনে কাসীর ৩/৫)
যুবাইর বিন নুফাইর (রাঃ) বলেন: একদা আমি হজ্জ আদায়ের জন্য গমন করি। অতঃপর আমি আয়িশাহ (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাত করার জন্য তার কাছে প্রবেশ করি। তখন আয়িশাহ (রাঃ) বললেন: হে যুবাইর! তুমি কি সূরা মায়িদাহ তেলাওয়াত কর? উত্তরে বললাম: হ্যাঁ। তখন বললেন: এটা সর্বশেষ অবতীর্ণ সূরা। সুতরাং এতে যা কিছু হালাল হিসেবে পাও তা হালাল হিসেবে গ্রহণ কর আর যা হারাম হিসেবে পাও তা হারাম হিসেবেই গ্রহণ কর। (হাকিম: ২/৩১১, ইমাম হাকিম বলেন: এ হাদীসটি বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুপাতে কিন্তু তারা নিয়ে আসেননি)
রূহুল মা‘আনী গ্রন্থকার- আতিয়্যা বিন কায়েস থেকে এর সমর্থনে একটি বর্ণনা নিয়ে এসেছেন:
المائدة من آخر القرآن نزولا فأحلوا حلالها وحرموا حرامها
সূরা আল-মায়িদাহ কুরআনের সর্বশেষ অবতীর্ণ সূরাসমূহের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং এর হালালগুলোকে হালাল হিসেবে ও হারামগুলোকে হারাম হিসেবে গ্রহণ করে নাও। (আহকামূল কুরআন ৪/১৬১)
সূরা আল-মায়িদাহ সূরা নিসার মত বিধি-বিধান সম্বলিত একটি গুরুত্বপূর্ণ সূরা। এ কারণেই রূহুল মা‘আনীর গ্রন্থকার বলেন: বিষয়বস্তুর দিক দিয়ে যেমন সূরা আল-বাক্বারাহ ও সূরা আলি-ইমরান এক ও অভিন্ন তেমনি সূরা নিসা ও সূরা মায়িদাহ বিষয়বস্তুর দিক দিয়ে এক ও অভিন্ন; কেননা এ দু’টি সূরায় প্রধানত বিভিন্ন বিধি-বিধান বিস্তারিত আলোচিত হয়েছে এবং মৌলিক বিধান প্রসঙ্গক্রমে বর্ণিত হয়েছে।
এ সূরায় যে সকল জীব-জন্তু খাওয়া হালাল ও যেগুলো হারাম, শত্রু“ হলেও তার প্রতি ন্যায় বিচার করা, ভাল কাজে সহযোগিতা করা ও অন্যায় কাজে সহযোগিতা না করা, ওযূ ও তায়াম্মুমের পদ্ধতি, বানী ইসরাঈলের প্রতি আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ, ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানদের আল্লাহ তা‘আলার প্রিয়পাত্র হওয়ার দাবী, চোরের বিধান, ইসলামদ্রোহীদের বিধান, কুরআন ও সুন্নাহ ছাড়া অন্য বিধান দ্বারা বিচার-ফায়সালা করার হুকুম, দীনের কোন বিধান নিয়ে ঠাট্টা না করে বরং তার প্রতি আনুগত্য করা এবং যারা ত্রিত্ববাদে বিশ্বাসী তাদের বিধানসহ আরো অনেক মাসআলাহ বর্ণনা করা হয়েছে।
১-২ নং আয়াতের তাফসীর:
অত্র সূরার প্রথমেই আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে সম্বোধন করে অঙ্গীকার পূর্ণ করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। عقود শব্দটি عقد এর বহুবচন। অর্থ হল عهد বা চুক্তি, অঙ্গীকার, ইত্যাদি।
ইমাম জাসসাস (রহঃ) বলেন: দু’জন ব্যক্তি যদি ভবিষ্যতে কোন কাজ করা অথবা না করার ওপর একমত হয় তবে তাকেই عقد , عهد ও معاهدة বলে। আমরা যাকে চুক্তি বলি।
ইবুন আব্বাস (রাঃ) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে যা কিছু হালাল, হারাম, ফরয ও সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন সবই এ অঙ্গীকারের অন্তভুর্ক্ত। অতএব তা ভঙ্গ ও খেলাফ কর না। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা কঠিনভাবে হুশিয়ার করে বলেন:
(وَالَّذِيْنَ يَنْقُضُوْنَ عَهْدَ اللّٰهِ مِنْۭ بَعْدِ مِيْثَاقِه۪ وَيَقْطَعُوْنَ مَآ أَمَرَ اللّٰهُ بِه۪ٓ أَنْ يُّوْصَلَ وَيُفْسِدُوْنَ فِي الْأَرْضِ ج أُولٰ۬ئِكَ لَهُمُ اللَّعْنَةُ وَلَهُمْ سُوْءُ الدَّارِ)
“যারা আল্লাহর সাথে দৃঢ় অঙ্গীকারে আবদ্ধ হবার পর সেটা ভঙ্গ করে, যে সম্পর্ক অক্ষুণœ রাখতে আল্লাহ আদেশ করেছেন তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায় তাদের জন্য লা‘নত এবং তাদের জন্য আছে মন্দ আবাস।”(সূরা রা‘দ ১৩:২৫)
যহহাক (রহঃ)
(أَوْفُوْا بِالْعُقُوْدِ)
‘তোমরা অঙ্গীকারসমূহ পূর্ণ কর’এর ব্যাখ্যায় বলেন: আল্লাহ তা‘আলা যেসব বিষয় বৈধ ও অবৈধ করেছেন এবং তার কিতাব ও নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর বিশ্বাস সংক্রান্ত আবশ্যকীয় যে কাজগুলো করার ওয়াদা নিয়েছেন عقود দ্বারা সেগুলো বুঝানো হয়েছে। এছাড়াও এ সম্পর্কে অনেক বর্ণনা পাওয়া যায়। (ইবনে কাসীর, ৩/৯)
আল্লাহ তা‘আলা ও বান্দার মাঝে যে অঙ্গীকার- বান্দা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করবে, তাঁর সকল হক আদায় করবে; রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর উম্মাতের মাঝে যে অঙ্গীকার- উম্মাতেরা রাসূলের আনুগত্য করবে; সন্তান তার পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের পরস্পরের মাঝে যে অঙ্গীকার- তারা পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে এবং তাদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবে। এছাড়াও মানুষ তার অন্যান্য সঙ্গী সাথীদের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ জীবনের বৈষয়িক বিষয়ে যত অঙ্গীকার করে সব এতে শামিল। (তাফসীর সা‘দী, অত্র আয়াতের তাফসীর)
এ কারণেই ইমাম রাগেব (রহঃ) বলেন: যত প্রকার চুক্তি রয়েছে, সবই এর অন্তর্ভুক্ত। অতঃপর তিনি বলেন: প্রধানত চুক্তি তিন প্রকার: (১) আল্লাহ তা‘আলার সাথে মানুষের অঙ্গীকার, যেমন ঈমান ও ইবাদতের অঙ্গীকার অথবা হালাল-হারাম মেনে চলার অঙ্গীকার। (২) নিজের সাথে মানুষের অঙ্গীকার। (৩) মানুষের সাথে মানুষের সম্পাদিত চুক্তি, বিবাহ, ব্যবসায়, লেন-দেন ইত্যাদি।
(بَهِيْمَةُ الْأَنْعَامِ)
‘চতুষ্পদ জন্তু’ নর ও মাদী মিলে চতুষ্পদ জন্তু আট প্রকার। সূরা আন‘আমের ১৪৩ ও ১৪৪ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো হলো: গরু, উট, ছাগল, মেষ এদের নর ও মাদী। এ ছাড়াও আরো অনেক প্রাণী রয়েছে যা খাওয়া হালাল। এক্ষেত্রে সূত্র হল: কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ যা হারাম করেছে তা হারাম, বাকি সব হালাল। কতক সাহাবী এ আয়াত দ্বারা মাদী পশু জবাই করার পর গর্ভে ভ্রুণ পাওয়া গেলে তা হালাল বলেছেন। এ সম্পর্কে সাহাবী আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমরা বললাম; হে আল্লাহর রাসূল! আমরা উটনী ও গাভী অথবা ছাগল জবাই করি আর তাদের পেটে ভ্রুণ পাই, আমরা কি ফেলে দেব, না খাব? তিনি বললেন: তোমাদের ইচ্ছা হলে খাও; কেননা তার মাকে জবাই করাই হল তাকে জবাই করা। (আবূ দাঊদ হা: ২৮২৭, তিরমিযী হা: ৩১৯৯, সহীহ)
(إِلَّا مَا يُتْلٰي عَلَيْكُمْ)
‘যা তোমাদের নিকট বর্ণিত হয়েছে তা ব্যতীত’ অর্থাৎ যা তেলাওয়াত করে শুনানো হবে তা ব্যতীত সব হালাল। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: অর্থাৎ মৃত প্রাণী, রক্ত, শূকরের গোশত। কাতাদাহ বলেন: রক্ত ও যে পশু যবাই করার সময় আল্লাহ তা‘আলার নাম নেয়া হয় না। এ অংশটুকুর তাফসীর ৩ নং আয়াতে উল্লেখ করা হবে ইনশা-আল্লাহ।
(غَيْرَ مُحِلِّي الصَّيْدِ)
‘তবে ইহরাম অবস্থায় শিকার করা অবৈধ’অর্থাৎ হজ্জের ইহরাম অবস্থায় এসব প্রাণী শিকার করা বা হত্যা করা হারাম। তবে ইহরাম অবস্থাতেও যেসব প্রাণী হত্যা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা ব্যতীত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: পাঁচটি প্রাণী মুহরিম ব্যক্তি হত্যা করলে কোন অপরাধ হবে না। কাক, চিল, ইঁদুর, বিচ্চু ও কালো কুকুর। (সহীহ বুখারী হা: ৩৩১৫)
(إِنَّ اللّٰهَ يَحْكُمُ مَا يُرِيْدُ)
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ যা ইচ্ছা হুকুম করেন।’অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা যে কোন বিধান দেয়ার ক্ষমতা রাখেন। তিনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন, তাঁর ইচ্ছার কোন প্রতিরোধকারী নেই এবং কারো কাছে তাঁর জবাবদিহিও করতে হয় না। তবে তাঁর সকল আদেশ-নিষেধ সত্য ও ন্যায়সঙ্গত এবং সৃষ্টির জন্য কল্যাণকর ও উপকারী।
(شَعَا۬ئِرَ اللّٰهِ) ‘আল্লাহর নিদর্শন’ শব্দটি شعيرة এর বহুবচন। অর্থ হল চিহ্ন, নিদর্শন। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: এখানে আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শন বলতে হাজ্জের নিদর্শনাবলীকে বুঝানো হয়েছে। মুজাহিদ বলেন: এর দ্বারা সাফা ও মারওয়াকে বুঝানো হয়েছে।
মোটকথা হল, এর দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে নিষিদ্ধ ও সম্মানীত সকল বস্তু শামিল যা আল্লাহ তা‘আলা পালন করার ও সম্মান করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং লংঘন করতে নিষেধ করেছেন। (তাফসীরে সা‘দী, অত্র আয়াতের তাফসীর)
الشَّهْرَ الْحَرَامَ
‘হারাম মাস’অর্থাৎ হারাম মাসের সম্মান নষ্ট করতে নিষেধ করা হয়েছে। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(يَسْأَلُوْنَكَ عَنِ الشَّهْرِ الْحَرَامِ قِتَالٍ فِيْهِ ط قُلْ قِتَالٌ فِيْهِ كَبِيْرٌ)
“তারা আপনাকে নিষিদ্ধ মাসে যুদ্ধ করা সম্পর্কে প্রশ্ন করে; আপনি বলুন, তাতে যুদ্ধ করা বড় অপরাধ।”(সূরা বাকারাহ ২:২১৭)
হারাম মাসসমূহ হল: যুলকাদা, যুলহাজ্জ, মুহাররম ও রজব। (সহীহ বুখারী হা: ৩১৯৭)
(وَلَا الْهَدْيَ وَلَا الْقَلَا۬ئِدَ)
‘কুরবানীর জন্য কা‘বায় প্রেরিত পশু, গলায় পরিহিত চিহ্নবিশিষ্ট পশু’হাদী ঐ পশুকে বলা হয়, যা কুরবানী দেয়ার জন্য হাজীগণ সঙ্গে করে হারামে নিয়ে আসেন।
قلائد শব্দটি قلادة এর বহুবচন। যার অর্থ গলায় ঝুলানো হয় এমন হার, মালা ও সুতা। এখানে হজ্জ ও উমরায় কুরবানীর জন্য নিয়ে আসা পশুকে বুঝানো হয়েছে, যাদের গলায় আলামত বা চিহ্ন স্বরূপ জুতা বা ফিতা বেধে দেয়া হয়। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, ঐ সমস্ত পশুকে কেউ যেন ছিনতাই না করে এবং মাসজিদুল হারাম পর্যন্ত পৌঁছার ব্যাপারে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে।
এসব হাদী ও চিহ্নিত পশুকে হালাল মনে করে তার ওপর আক্রমণ বা হস্তক্ষেপ করো না; বরং তাদের সম্মান রক্ষা করবে, এসব নিদর্শনকে সম্মান দেখানো তাক্বওয়ার পরিচায়ক।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(ذٰلِكَ وَمَنْ يُّعَظِّمْ شَعَا۬ئِرَ اللّٰهِ فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَي الْقُلُوْبِ)
“এটা আল্লাহর বিধান এবং কেউ আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে সম্মান করলে নিশ্চয়ই এটা তার হৃদয়ের তাক্বওয়ার পরিচয়।”(সূরা হজ্জ ২২:৩২)
(وَلَآ اٰ۬مِّیْنَ الْبَیْتَ الْحَرَامَ ........وَرِضْوَانًاﺚ)
‘নিজ প্রতিপালকের অনুগ্রহ ও সন্তোষ লাভের আশায় পবিত্র গৃহ অভিমুখে যাত্রী’ অর্থাৎ যারা হজ্জ করার জন্য কাবা ঘরের উদ্দেশ্যে রওনা করেছে তাদের সাথে যুদ্ধ করা বৈধ মনে কর না, যাদের উদ্দেশ্য আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জন করা এবং জীবনোপকরণ স্বরূপ তাঁর অনুগ্রহ অনুসন্ধান করা।
কোন কোন মুফাসসিরের নিকট এ বিধান ঐ সময়ের জন্য ছিল, যখন মুসলিম ও মুশরিকগণ একত্রে হজ্জ ও উমরা আদায় করত। কিন্তু যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হল:
(أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْآ إِنَّمَا الْمُشْرِكُوْنَ نَجَسٌ فَلَا يَقْرَبُوا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ بَعْدَ عَامِهِمْ هٰذَا)
“হে মু’মিনগণ! নিশ্চয়ই মুশরিকরা অপবিত্র; সুতরাং এ বৎসরের পর তারা যেন মাসজিদুল হারামের নিকট না আসে।”(সূরা তাওবাহ ৯:২৮)
তখন থেকে মুশরিকদের জন্য মাসজিদে হারামে প্রবেশ করা হারাম হয়ে গেল। আবার কেউ বলেছেন: এ আয়াতের বিধান রহিত নয় বরং এ হুকুম মুসলিমদের জন্য প্রযোজ্য। (ফাতহুল কাদীর, ২/২)
(وَإِذَا حَلَلْتُمْ فَاصْطَادُوْا)
‘যখন তোমরা ইহরামমুক্ত হবে তখন শিকার করতে পার।’ অর্থাৎ যখন ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যাবে তখন শিকার কর। এখানে (فاصطادوا শিকার কর) ক্রিয়া আদেশসূচক হলেও মূলত আদেশ করা উদ্দেশ্য নয়, বরং শিকার করার অনুমতি বা বৈধতা প্রদান করা যেমন শিকার করা বৈধ ছিল ইহরামের পূর্বে। অর্থাৎ ইহরাম থেকে হালাল হবার পর শিকার করা কোন অপরাধ নয় যেমন ইহরামের পূর্বে শিকার করা অপরাধ ছিল না।
(وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَاٰنُ قَوْمٍ)
‘কোন সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদেরকে যেন কখনই সীমালঙ্ঘনে প্ররোচিত না করে।’অর্থাৎ কোন জাতির সাথে শত্র“তা, ক্রোধ ও তোমাদের ওপর সীমালংঘন ইত্যাদির কারণে তোমরাও তাদের ওপর সীমালংঘন করবে এটা যেন না হয়। যেমন ষষ্ঠ হিজরীতে মক্কার মুশরিকরা তোমাদেরকে উমরা থেকে বারণ করতে মাসজিদে হারামে পৌঁছতে বাধা দিয়েছিল। সুতরাং এখন তোমরা তাদের ওপর জুলুম করবে বা সীমালঙ্ঘন করবে তা যেন না হয়।
(....وَتَعَاوَنُوْا عَلَي الْبِرِّ)
‘সৎকর্ম ও তাক্বওয়ার কাজে তোমরা পরস্পর সহযোগিতা কর’অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে সৎকাজে পরস্পর সহযোগিতা করার ও অসৎ কাজে সহযোগিতা না করার নির্দেশ প্রদান করেছেন।
যে ব্যক্তি সৎ কাজ করে আর যে সহযোগিতা করে উভয় প্রতিদানের দিক দিয়ে সমান। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
مَنْ دَلَّ عَلَي خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِ فَاعِلِهِ
সৎ কাজে দিকনির্দেশনাদানকারী প্রতিদানের দিক দিয়ে সৎ কাজ সম্পাদনকারীর মত। (আবূ দাঊদ হা: ৫১২৯, তিরমিযী হা: ২৬৭০, হাসান)
অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যে ব্যক্তি মানুষকে সৎ পথে আহ্বান করে আর ঐ সৎ পথ যত ব্যক্তি অনুসরণ করবে, কিয়ামতের দিন পর্যন্ত সে ব্যক্তি তাদের সমান নেকী পাবে। তাতে তাদের নেকীর কোন কমতি হবে না। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি মানুষকে অসৎ পথে আহ্বান করে আর তার আহ্বানে ঐ অসৎ পথে যত ব্যক্তি চলবে, কিয়ামতের দিন পর্যন্ত সে ব্যক্তি তাদের সমান গুনাহগার হবে। তাতেও তাদের পাপের কোন কমতি হবে না। (সহীহ মুসলিম হা: ৪৬০৯, তিরমিযী হা: ২৬৭৪)
সর্বোপরি আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে তাক্বওয়ার নির্দেশ প্রদান করে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, তোমরা যা কিছু করছ সব কিছুর তিনি তরিৎ হিসাব নেবেন। সুতরাং কোনক্রমেই অন্যের প্রতি জুলুম করো না এবং মানুষকে খারাপ কাজে সহযোগিতা করো না।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ তা‘আলা ও মানুষের মাঝে পরস্পর অঙ্গীকার ও চুক্তি পূর্ণ করা ওয়াজিব।
২. আল্লাহ তা‘আলা কিছু চতুষ্পদ জন্তু হালাল করে দিয়েছেন, তবে তা আল্লাহ তা‘আলার নামে ও তাঁর উদ্দেশ্যে জবাই করতে হবে।
৩. ইহরাম অবস্থায় শিকার করা হারাম। তবে ইহরামের পরে বৈধ।
৪. আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শনাবলীর সম্মান করা ওয়াজিব।
৫. সীমালঙ্ঘন করা হারাম, এমনকি কাফিরদের সাথেও।
৬. সৎ কাজে পরস্পর সহযোগিতা করা ওয়াজিব। আর অসৎ কাজে সহযোগিতা হারাম।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings