Surah Al Ma'idah Tafseer
Tafseer of Al-Ma'idah : 117
Saheeh International
I said not to them except what You commanded me - to worship Allah, my Lord and your Lord. And I was a witness over them as long as I was among them; but when You took me up, You were the Observer over them, and You are, over all things, Witness.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
১১৬-১১৮ নং আয়াতের তাফসীর:
আয়াতে উল্লিখিত প্রশ্ন আল্লাহ তা‘আলা ঈসা (আঃ)-কে কিয়ামত দিবসে করবেন। পৃথিবীর বুকে যত ব্যক্তিকেন্দ্রিক শির্ক করা হয়েছে এবং যাদেরকে মা‘বূদ বানিয়ে নেয়া হয়েছে আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন কাউকে ছাড়বেন না; কড়ায়-গণ্ডায় হিসাব নেবেন, কী জন্য তাদেরকে মানুষ মা‘বূদ বানিয়ে নিয়েছে এমনকি নাবীদেরকেও, তার প্রমাণ এই আয়াত।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: কিয়ামতের দিন নাবীগণ ও তাদের উম্মাতদেরকে ডেকে আনা হবে। অতঃপর ঈসা (আঃ)-কে ডাকা হবে, তারপর তাকে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নেয়ামতের কথা স্মরণ করে দেবেন, ঈসা (আঃ) আল্লাহ তা‘আলার নেয়ামতের কথা স্বীকার করবেন। তারপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেন:
(أَأَنْتَ قُلْتَ لِلنَّاسِ اتَّخِذُوْنِيْ وَأُمِّيَ إِلٰهَيْنِ مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ)
“তুমি কি লোকেদেরকে বলেছিলে যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া আমাকে ও আমার জননীকে দুই ইলাহরূপে গ্রহণ কর?” (সূরা মায়িদাহ ৫:১১৬) তখন ঈসা (আঃ) বলবেন: আমি আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, যার অধিকারী আমি নই এবং যে গুণ আমার মাঝে নেই সে দিকে মানুষকে আহ্বান করব এটা কক্ষনো আমার জন্য শোভা পায় না। আমি যদি বলে থাকি তাহলে আপনি নিশ্চয়ই তা জানেন। এ কথা বলে তিনি তা অস্বীকার করবেন। তখন খ্রিস্টানদেরকে নিয়ে আসা হবে। অতঃপর জিজ্ঞাসা করা হবে। তারা বলবে হ্যাঁ, তিনি আমাদেরকে এরূপ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এ কথা শুনে ঈসা (আঃ)-এর মাথা ও দেহের লোম (ভয়ে) খাড়া হয়ে যাবে। ফেরেশতাগণ তখন তাঁর মাথা ও শরীরের চুল ধরে থাকবেন। আর এ খ্রিস্টানদেরকে আল্লাহ তা‘আলার সামনে এক হাজার বছর পর্যন্ত জোড় পায়ে বসিয়ে রাখা হবে। অবশেষে তাদের বিরুদ্ধে দলীল প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে এবং সত্য তাদের সামনে প্রকাশিত হয়ে যাবে। আর তাদের জন্য ক্রুশ ওঠানো হবে। অতঃপর তাদেরকে জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। (তিরমিযী হা: ৩০৬২, সহীহ)
ঈসা (আঃ) আল্লাহ তা‘আলার প্রশ্নে যে শিষ্টাচারপূর্ণ জবাব দেবেন তা অত্র আয়াতে উল্লেখ করেছেন। অতএব যারা ঈসা (আঃ) ও তাঁর মাকে আল্লাহ তা‘আলার সন্তান ও স্ত্রী বানিয়ে নিয়েছে কিয়ামতের দিন তাদের কোন জবাব থাকবে না।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে বলেন: হে মানব সকল! কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে খালি মাথা, উলঙ্গ দেহ এবং জুতাবিহীন পায়ে ওঠানো হবে, যেমন তোমরা তোমাদের জন্মের দিন ছিলে। সর্ব প্রথম ঈবরাহীম (আঃ)-কে পোশাক পরানো হবে। এরপর আমার উম্মাতের মধ্য হতে কতক লোককে নিয়ে আসা হবে যাদেরকে জাহান্নামের নিদর্শন হিসেবে বাম দিকে রাখা হবে। তখন আমি বলবো এরা তো আমার উম্মাত। সেই সময় বলা হবে, তুমি জান না এরা তোমার ইনতেকালের পর দীনের মধ্যে কী কী নতুন বিষয় তৈরি করে ছিল। তখন আমি সৎ বান্দা ঈসা (আঃ)-এর মত বলব:
(وَكُنْتُ عَلَيْهِمْ شَهِيْدًا...... الْحَكِيْمُ)
‘যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম ততদিন আমি তাদের কার্যকলাপের সাক্ষী ছিলাম, কিন্তু যখন তুমি আমাকে তুলে নিলে তখন তুমিই তো ছিলে তাদের কার্যকলাপের তত্ত্বাবধায়ক এবং তুমি সর্ববিষয়ে সাক্ষী।’ (সহীহ বুখারী হা: ৪৬২৫, সহীহ মুসলিম হা: ২৮৬০)
(فَلَمَّا تَوَفَّيْتَنِيْ)
“কিন্তু যখন তুমি আমাকে তুলে নিলে” অর্থাৎ আমাকে তুলে নেয়ার পর তাদের কর্মের ব্যাপারে আমার কোন জ্ঞান ছিল না। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে নাবীরা গায়েব জানতেন না। যতটুকু আল্লাহ তা‘আলা তাদের জানিয়েছেন ততটুকু ব্যতীত। ঈসা (আঃ)-কে উঠিয়ে নেয়ার পর যেমন খ্রিস্টানরা ধর্মের বিকৃতি করেছে তেমনি নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মৃত্যুর পর সাহাবীদের স্বর্ণযুগ অতীত হবার পর এ উম্মাতের এক শ্রেণির মানুষ ধর্মের বিকৃতি ঘটাবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: কিয়মাতের দিন আমার দিকে আমার উম্মতের একটি দল আসার চেষ্টা করবে। কিন্তু ফেরেশতারা তাদের বাধা দেবে। আমি বলব: এরা আমার উম্মত তাদের আসতে দাও। কিন্তু ফেরেশতারা বলবে: আপনি জানেন না তারা আপনার মৃত্যুর পর আপনার দীনের মধ্যে কী কী বিদআত চালু করেছিল। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন এ কথা শুনবেন তখন তিনি সে কথাই বলবেন, যা আল্লাহ তা‘আলার নেক বান্দা ঈসা (আঃ) বলেছেন:
(وَكُنْتُ عَلَيْهِمْ شَهِيْدًا مَّا دُمْتُ فِيْهِمْ ج فَلَمَّا تَوَفَّيْتَنِيْ كُنْتَ أَنْتَ الرَّقِيْبَ عَلَيْهِمْ)
“অর্থাৎ যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম ততদিন আমি তাদের কার্যকলাপের সাক্ষী ছিলাম। কিন্তু যখন তুমি আমাকে তুলে নিলে তখন তুমিই তো ছিলে তাদের কার্যকলাপের পর্যবেক্ষক।”(সহীহ বুখারী হা: ৪৭৪০, ২৮৬০)
(إِنْ تُعَذِّبْهُمْ فَإِنَّهُمْ عِبَادُكَ)
‘তুমি যদি তাদেরকে শাস্তি দাও তবে তারা তো তোমারই বান্দা’আল্লাহ তা‘আলা কাউকে শাস্তি দিলে এটা তার ন্যাপরায়ণতা, তিনি কাউকে জুলুম ও অন্যায় করে শাস্তি দেবেন না, আর কাউকে ক্ষমা করে দিলে বা জান্নাত দিলে এটা তার প্রতি আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ। ঈসা (আঃ)-কে জিজ্ঞাসাবাদের পর যখন একশ্রেণির মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া হবে তখন দয়ার বশবতী হয়ে এ কথা বলবেন।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমাদেরকে হাশরের মাঠে একত্রিত করা হবে। এক প্রকার মানুষকে বাম দিকে অর্থাৎ জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া হবে, তখন আমি সৎ বান্দা ঈসা (আঃ)-এর মত এ কথা বলব: ‘‘তুমি যদি তাদেরকে শাস্তি দাও তবে তারা তো তোমারই বান্দা, আর যদি তাদেরকে ক্ষমা কর তবে তুমি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’(সহীহ বুখারী হা: ৪৬২৬, সহীহ মুসলিম হা: ২৮৬)
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক রাতে এ আয়াত তেলাওয়াত করছিলেন, তেলাওয়াত করতে করতে তাঁর এমন অবস্থা সৃষ্টি হয় যে, তিনি এ আয়াত বারবার তেলাওয়াত করতেই থাকেন। এমনকি ফজর হয়ে যায়। সকাল হলে এক সাহাবী জিজ্ঞাসা করলেন: আপনি এ আয়াত দ্বারা রুকু সিজদা করে রাত অতিক্রম করে দিলেন? তিনি বললেন: আমি আমার প্রভুর কাছে আমার উম্মাতের জন্য শাফায়াতের আবেদন করেছি, আশা করি তিনি তা আমাকে দেবেন, কেউ শির্ক না করলে তা পাবে ইনশা আল্লাহ। (মুসনাদ আহমাদ হা: ২১৩২৮, নাসায়ী হা: ১০১০, সহীহ)
আমর বিন আস হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: একদা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইবরাহীম (আঃ)-এর সে-কথা স্মরণ করলেন যা তিনি আল্লাহ তা‘আলার কাছে বলেছিলেন:
(رَبِّ إِنَّهُنَّ أَضْلَلْنَ كَثِيْرًا مِّنَ النَّاسِ ج فَمَنْ تَبِعَنِيْ فَإِنَّه۫ مِنِّيْ ج وَمَنْ عَصَانِيْ فَإِنَّكَ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ)
‘হে আমার প্রতিপালক! এ সকল প্রতিমা তো বহু মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে। সুতরাং যে আমার অনুসরণ করবে সে আমার দলভুক্ত, আর যে আমার অবাধ্য হবে তুমি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা ইবরাহীম ১৪:৩৬) এবং ঈসা (আঃ)-এর এ কথা স্বরণ করলেন। তখন তিনি দু’হাত তুলে আল্লাহ তা‘আলার কাছে বললেন: হে আল্লাহ, আমার উম্মত! এ কথা বলে তিনি কেঁদে ফেললেন। আল্লাহ তা‘আলা বললেন: হে জিবরীল (আঃ)! তুমি মুহাম্মাদের কাছে যাও এবং তাকে জিজ্ঞাসা কর, তিনি কেন কাঁদছেন? (মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কেন কাঁদছেন এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা ভাল জানেন) জিবরীল (আঃ) আসলেন এবং জিজ্ঞাসা করলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানিয়ে দিলেন। আল্লাহ তা‘আলা বললেন: হে জিবরীল! তুমি মুহাম্মাদের কাছে যাও এবং বল:
إِنَّا سَنُرْضِيكَ فِيْ أُمَّتِكَ وَلاَ نَسُوءُكَ
তোমার উম্মতের ব্যাপারে আমি তোমাকে সন্তুষ্ট করব, কষ্ট দিব না। (সহীহ মুসলিম হা: ৫২০)
এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলার সামনে বান্দাদের অক্ষমতা ও অসহায়ত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। আল্লাহ তা‘আলার ক্ষমতা ও বড়ত্বের কথা বলা হয়েছে। তিনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন, তাঁকে প্রশ্ন করার কেউ নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(لَا يُسْأَلُ عَمَّا يَفْعَلُ وَهُمْ يُسْأَلُوْنَ)
“তিনি যা করেন সে বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা যাবে না; বরং তাদেরকেই প্রশ্ন করা হবে।” (সূরা আম্বিয়াহ ২১:২৩) সুতরাং আমাদের উচিত একক মা‘বূদ আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করব, নাবীদের নিয়ে বাড়াবাড়ি করব না এবং দীনের মাঝে বিকৃতি ঘটাব না, তাহলেই পরিত্রাণের আশা করতে পারি।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কিয়ামতের দিন প্রত্যেক বাতিল মা‘বূদকে আল্লাহ তা‘আলার নিকট জবাব দিতে হবে।
২. নাবীগণ গায়েব জানতেন না, তবে আল্লাহ তা‘আলা ওয়াহীর মাধ্যমে তাদেরকে যতটুকু জানাতেন কেবল সেটুকু জানতেন।
৩. যারা নাবীগণের রেখে যাওয়া দীন কম-বেশি করে বিকৃত করেছে তারা কিয়ামতের দিন সফলকাম হতে পারবে না।
৪. উম্মতদের প্রতি নাবীগণ দয়াবান হয়ে থাকেন।
৫. কেউ মুশরিক অবস্থায় মারা না গেলে সে জান্নাতে যাবে, যদিও তাকে পাপের শাস্তি ভোগ করতে হয়।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings