Surah Al Qamar Tafseer
Tafseer of Al-Qamar : 4
Saheeh International
And there has already come to them of information that in which there is deterrence -
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
নামকরণ ও আলোচ্য বিষয় :
الْقَمَرُ ‘ক্বামার’ শব্দের অর্থ চন্দ্র, চাঁদ। সূরার প্রথম আয়াতে الْقَمَرُ শব্দটি উল্লেখ আছে, এখান থেকেই এ সূরার নামকরণ করা হয়েছে। পূর্বের সূরায় শেষের দিকে
(اَزِفَتِ الْاٰزِفَةُ)
বলা হয়েছে, যাতে কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। আলোচ্য সূরাকে এ বিষয়বস্তু দ্বারাই অর্থাৎ
(اِقْتَرَبَتِ السَّاعَةُ)
‘কিয়ামত নিকটবর্তী হয়েছে’ বলে শুরু করা হয়েছে। এরপর কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার একটি দলীল আনা হয়েছে। কেননা চন্দ্র বিদীর্ণ হওয়া কিয়ামতের অন্যতম একটি আলামত। কিয়ামতের বিপুল সংখ্যক আলামতের মধ্যে সর্ববৃহৎ আলামত হচ্ছে শেষ নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আগমন। হাদীসে এসেছে নাবী বলেন : আমার আগমন ও কিয়ামত সংঘটিত হওয়া হাতের দুই আঙ্গুলের ন্যায় অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। (সহীহ বুখারী হা. ৫৩০১)
১-৫ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
শানে নুযুল :
ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মক্কা থেকে বের করে দেয়ার পূর্বে মক্কায় চাঁদকে দু’খণ্ডে বিভক্ত অবস্থায় দেখেছি। মক্কাবাসী বলছিল : চাঁদকে জাদুগ্রস্থ করা হয়েছে তখন
(اِقْتَرَبَتِ السَّاعَةُ وَانْشَقَّ الْقَمَرُ)
আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (সহীহ বুখারী হা. ৩৬৩৬)
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : মক্কাবাসী নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট একটি (নবুওয়াতের প্রমাণস্বরূপ) নিদর্শন চাইল। ফলে মক্কায় দু’বার চাঁদ বিদীর্ণ হয়। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। (সহীহ মুসলিম হা. ২৮০২, সহীহ বুখারী হা. ৪৭৬৭, তিরমিযী হা. ৩৬৩৭)
প্রথম আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামত অতি নিকটবর্তী সে সম্পর্কে সংবাদ দিয়েছেন।
এ সম্পর্কে অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(أَتٰٓي أَمْرُ اللّٰهِ فَلَا تَسْتَعْجِلُوْهُ ط سُبْحٰنَه۫ وَتَعَالٰي عَمَّا يُشْرِكُوْنَ)
“আল্লাহর আদেশ আসবেই; সুতরাং এর জন্য তাড়াহুড়া কর না। তিনি মহিমান্বিত এবং তারা যাকে শরীক করে তিনি তার ঊর্ধ্বে।” (সূরা আন্ নাহ্ল ১৬ : ১) অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(اِقْتَرَبَ لِلنَّاسِ حِسَابُهُمْ وَهُمْ فِيْ غَفْلَةٍ مُّعْرِضُوْنَ)
“মানুষের হিসাব-নিকাশের সময় আসন্ন, কিন্তু তারা উদাসীনতায় মুখ ফিরিয়ে রয়েছে।” (সূরা আম্বিয়া- ২১ : ১)
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন : একদা আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদের সামনে ভাষণ দান করেন। ঐ সময় সূর্য অস্তমিত হতে অতি অল্প সময় বাকী ছিল। ভাষণে তিনি বলেন : যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ! অতীত যুগের তুলনায় দুনিয়ার হায়াতও এ পরিমাণ বাকী আছে যে পরিমান সময় এ দিনের বাকী আছে গত হয়ে যাওয়া সময়ের তুলনায়। আর আমি সূর্যের সামান্য অংশই দেখতে পাচ্ছি। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ ১০/ ৩১১, বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য)
ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : একদা ‘আসরের পর যখন সূর্য ডুবুডুবু অবস্থা, এমন সময় আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে বসেছিলাম। তখন তিনি বললেন : অতীত যুগের লোকদের বয়সের তুলনায় তোমাদের বয়স ততটুকু যতটুকু সময় বাকী আছে এ দিনের। (আহমাদ ২/১১৫, ১১৬, সহীহ)
(وَانْشَقَّ الْقَمَرُ)
‘চন্দ্র বিদীর্ণ হয়ে গেছে’ চন্দ্র বিদীর্ণ হওয়ার ঘটনা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবদ্দশায় হয়েছিল। এটি সে মু‘জিযাহ, যা মক্কাবাসীদের দাবী অনুযায়ী দেখানো হয়েছিল। চাঁদ দু’টুকরো হয়ে গিয়েছিল। এমনকি লোকেরা তার (দুখণ্ড চাঁদের) মাঝ দিয়ে হিরা পাহাড়কে দেখতে পায়। অর্থাৎ চাঁদের এক টুকরো পাহাড়ের একদিকে এবং দ্বিতীয় টুকরো পাহাড়ের অপর দিকে চলে যায়। (সহীহ বুখারী হা. ৪৮৬৪, সহীহ মুসলিম হা. ২৮০০)
ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে চন্দ্র বিদীর্ণ হয়ে দুই খন্ড হয়ে গেল। সবাই এ ঘটনা অবলোকন করল এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা ঈমান আনবে? তারা বলল : হ্যাঁ, তখন চন্দ্রোজ্জল রাত ছিল। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বললেন : তোমরা সাক্ষী থেক। (সহীহ বুখারী হা. ৪৮৬৫)
(وَإِنْ يَّرَوْا اٰيَةً يُّعْرِضُوْا)
‘তারা কোন নিদর্শন দেখলে মুখ ফিরিয়ে নেয়’ অর্থাৎ মক্কার কুরাইশরা কোন নিদর্শন দেখে ঈমান না এনে উল্টো ঈমান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিত। এর প্রমাণ তারা চন্দ্র বিদীর্ণ হওয়া প্রত্যক্ষ করেছে অথচ ঈমানে আনেনি বরং আরো দূরে চলে গেছে। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন : মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে একত্রিত হয়ে বলল : তুমি যদি সত্যবাদী হও তাহলে চন্দ্র বিদীর্ণ করে দ্বিখন্ড কর। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে বললেন : আমি যদি এরূপ করতে পারি তাহলে কি তোমরা ঈমান আনবে? অতঃপর তারা ঈমান আনার অঙ্গীকার করলে তিনি তাঁর রবের কাছে এ মু’জিযাহ প্রার্থনা করলেন। ফলে চন্দ্র বিদীর্ণ হল, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুশরিকদেরকে আহ্বান করে বললেন : হে অমুক সাক্ষী থেক, হে অমুক সাক্ষী থেক। (দুররুল মানসূর ৭/৬৭১) এ সম্পর্কে সূরা আল আন‘আম-এর ৭ নম্বর আয়াতে আরো আলোচনা হয়েছে।
(سِحْرٌ مُّسْتَمِرٌّ)
‘বড় জাদু’ শব্দটি চলমান, দীর্ঘস্থায়ী। কিন্তু আরবি ভাষায় কোন সময় চলে যাওয়া, নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার অর্থে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ মুশরিকরা বলত, চন্দ্র বিদীর্ণ করা এমন একটা জাদু যা অচিরেই চলে যাবে। আরেকটি অর্থ হল : শক্ত ও কঠোর হওয়া। আবূল আলীয়া ও যহহাক এ তাফসীর করেছেন। অর্থাৎ এটা একটি বড় ও শক্ত জাদু। মক্কাবাসী যখন চাক্ষুষ দেখা অস্বীকার করতে পারল না তখন তারা এটা জাদু ও শক্ত জাদু বলে উড়িয়ে দিল।
(وَكُلُّ أَمْرٍ مُّسْتَقِرٌّ) - مُّسْتَقِرٌّ
অর্থ স্থির হওয়া, অর্থাৎ প্রত্যেক আমলকারীর আমল স্থির হয়ে আছে। কাতাদাহ্ (রহঃ) বলেন : এর অর্থ হলো : কল্যাণ ভাল লোকদের সাথে আর অকল্যাণ খারাপ লোকদের সাথে বিদ্যমান থাকবে। আর মুজাহিদ (রহঃ) বলেন : কিয়ামতের দিন প্রত্যেক কাজ স্থিতিশীল হবে।
الأنباء ‘সংবাদ’ বলতে পূর্ববর্তী ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিদের সংবাদকে বুঝানো হয়েছে।
مُزْدَجَرٌ অর্থাৎ পূর্ববর্তী ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিদের মাঝে উপদেশ ও শিক্ষা রয়েছে। কেউ যদি তাদের থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে শিরক ও পাপ থেকে বাঁচতে চায়, তাহলে সে বাঁচতে পারবে।
কিয়ামতের দিন যখন আমলনামা প্রকাশ করা হবে তখন ভাল মন্দ প্রত্যেক বিষয় তার হকদার ব্যক্তি পেয়ে যাবে। (তাফসীর মুয়াসসার)
(حِكْمَةٌ ۭبَالِغَةٌ)
অর্থাৎ এমন বাণী যা ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষাকারী।
(فَمَا تُغْنِ النُّذُرُ)
‘তবে সতর্ক বাণীসমূহ তাদের কোন কাজে আসেনি’ অর্থাৎ যার জন্য আল্লাহ তা‘আলা দুর্ভাগ্য লিখে দিয়েছেন এবং যার অন্তরে মোহর মেরে দিয়েছেন নাবীদের ভীতি প্রদর্শন কি তার উপকারে আসতে পারে? আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
( قُلْ فَلِلہِ الْحُجَّةُ الْبَالِغَةُﺆ فَلَوْ شَا۬ئَ لَھَدٰٿکُمْ اَجْمَعِیْنَ)
“বল : ‘চূড়ান্ত প্রমাণ তো আল্লাহরই; তিনি যদি ইচ্ছা করতেন তবে তোমাদের সকলকে অবশ্যই সৎপথে পরিচালিত করতেন।” (সূরা আন‘আম ৬ : ১৪৯) সুতরাং যারা পূর্ববর্তী জাতির এসব ধ্বংসলীলা দেখেও ঈমান আনবে না, আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করে চলবে না তাদের জন্য সুসংবাদ নয় বরং তারা নিজেরাই নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. কিয়ামত অতি নিকটে, সুতরাং জ্ঞানী সেই ব্যক্তি যে কিয়ামতের কঠিন মুহূর্ত থেকে বাঁচার জন্য সৎ আমল করে।
২. কিয়ামতের কয়েকটি আলামত জানতে পারলাম যা অতীত হয়ে গেছে। যেমন শেষ নাবীর আগমন, চাঁদ বিদীর্ণ হওয়া ইত্যাদি।
৩. প্রবৃত্তির অনুসারীরা নিন্দার পাত্র, এ কারণে তাদেরকে শাস্তি ভোগ করতে হবে।
৪. পূর্ববর্তী জাতিসমূহের ঘটনা বর্ণনা করার মাধ্যমে আমাদের সতর্ক করা হচ্ছে।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings