Surah An Najm Tafseer
Tafseer of An-Najm : 2
Saheeh International
Your companion [Muhammad] has not strayed, nor has he erred,
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
নামকরণ ও প্রাসঙ্গিক কথা :
আন্ নাজ্ম শব্দের অর্থ তারকা, নক্ষত্র ইত্যাদি। অত্র সূরার শুরুতে ‘নাজ্ম’ শব্দটি উল্লেখ রয়েছে। এত্থেকেই এ নামে সূরার নামকরণ করা হয়েছে।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন : সূরা আন্ নাজ্ম মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। তবে এ আয়াতটি ব্যতীত
(الَّذِينَ يَجْتَنِبُونَ كَبَائِرَ الْإِثْمِ وَالْفَوَاحِشَ)
(সূরা নাজম ৫৩ : ৩২, ফাতহুল কাদীর, অত্র সূরার তাফসীর)
ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : তেলাওয়াতে সিজদাবিশিষ্ট সর্বপ্রথম অবতীর্ণ সূরা হল আন-নাজম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ সূরা তেলাওয়াত করে সিজদা দিলেন এবং সকল মানুষ সিজদ্ াদিল। তবে একজন লোক ব্যতীত, সে একমুষ্টি মাটি হাতে নিয়ে তাতে সিজদা দিলো। তারপর আমি তাকে দেখেছি সে কাফির অবস্থায় নিহত হয়েছে। সে হলো ‘উমাইয়াহ্ বিন খালফ। (সহীহ বুখারী হা. ১০৮০) ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূরা নাজম তেলাওয়াত করে সিজদা করলেন, সাথে মুসলিম, মুশরিক ও জিন-ইনসান সবাই সিজদা করল। (সহীহ বুখারী হা. ১০৭১)
জায়েদ বিন সাবেত (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট সূরা আন-নাজম পাঠ করলাম। কিন্তু তিনি সিজদা দিলেন না। (সহীহ বুখারী হা. ১০৭৩, সহীহ মুসলিম ১/৪০৬)
সূরার শুরুতে আল্লাহ তা‘আলা তারকার শপথ করে বলেছেন যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সত্যানুরাগী ও সত্যের অনুসারী, তিনি ওয়াহী ছাড়া নিজের থেকে কোন কথা বলেন না। তারপর জিবরীল (আঃ)-এর বৈশিষ্ট্য এবং ঊর্ধ্বাকাশে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে দেখেছেন তার বর্ণনা করা হয়েছে। অতঃপর মক্কার মুশরিকদেরকে তাদের তৈরি করা মা‘বূদ সম্পর্কে বলছেন যে, তাদের এসব মা‘বূদ তাদের বাপ-দাদাদের দেয়া নাম ছাড়া কিছুই না, তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা কোন ক্ষমতা দেননি। তারা এসব মা‘বূদের ইবাদত ধারণাপ্রসূত করে থাকে।
১-৪ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
هَوٰي “অস্তমিত হয়” এ অংশটুকুর তাফসীর করতে মুফাস্সিরগণ কয়েকটি মত পেশ করেছেন : মুজাহিদ (রহঃ) বলেন : এ থেকে উদ্দেশ্য সেই তারকা যা ফজর হওয়ার সাথে সাথে অস্তমিত হয়। ইবনু আব্বাস (রাঃ)-ও এ কথা বলেছেন। ইমাম ইবনু জারীর (রহঃ) এ মত পছন্দ করেছেন।
আল্লামা সা‘দী (রহঃ) এ মতকে সমর্থন করে বলেন : রাতের শেষে দিনের আগমনের সময় ঊর্ধ্ব দিগন্তে যে তারকা অস্তমিত হয় তাকেই বুঝানো হয়েছে। এটাই সঠিক কথা।
যহ্হাক (রহঃ) বলেন : যে তারকা উল্কাপিণ্ডস্বরূপ শয়তানকে নিক্ষেপ করা হয়।
এ সকল তারকার শপথ করে আল্লাহ তা‘আলা বলছেন : তোমাদের সাথী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পথভ্রষ্ট না এবং বিপদগামীও না। বরং সে সঠিক দীনের ওপর সুপ্রতিষ্ঠিত। অর্থাৎ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সত্য সম্পর্কে অজ্ঞ ছিলেন না এবং সত্য হতে বিমুখও হননি। বরং তিনি সত্যানুরাগী ও সত্যের অনুসারী । যেমন আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন :
(فَاسْتَمْسِكْ بِالَّذِيْٓ أُوْحِيَ إِلَيْكَ ج إِنَّكَ عَلٰي صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ)
“সুতরাং তোমার প্রতি যা ওয়াহী করা হয়েছে তা দৃঢ়ভাবে অবলম্বন কর। নিশ্চয়ই তুমি সরল পথেই রয়েছ।” (সূরা যুখরুফ ৪৩ : ৪৩)
صَاحِبُكُمْ (তোমাদের সঙ্গী) বলে এখানে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বুঝানো হয়েছে। কারণ নবুওয়াতের পূর্বে তিনি চল্লিশ বছর পর্যন্ত তোমাদের সঙ্গে কাটিয়েছেন।
তাঁর দিবা-রাত্রির কার্যকলাপ ও আচার-আচরণ তোমাদের সামনে বিদ্যমান। তাঁর চরিত্র ও নৈতিকতা তোমাদের জানা ও চেনা। এখন চল্লিশ বছর পর যখন তিনি নবুওয়াতের দাবী করেছেন, তখন একটু ভেবে দেখো যে, তিনি কি মিথ্যাবাদী হতে পারেন? অতএব বাস্তব এটাই যে, তিনি পথভ্রষ্ট না এবং বিপদগামীও না। এমনকি দীনের ব্যাপারে তিনি কোন মনগড়া কথা বলেন না। তাঁর কাছে যা ওয়াহী করা হয় তিনি কেবল তা-ই বলেন।
তাই নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দীনের ব্যাপারে যত কথা বলেছেন সব কথাই ওয়াহী মারফত বলেছেন। তবে এ ওয়াহী মাতলু না বরং গাইরে মাতলু।
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে যা শুনতাম তা লিখে নিতাম। অতঃপর কুরাইশরা আমাকে এ কাজ করতে নিষেধ করে বলল : তুমি তো রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে যা শুনছ তার সবই লিখে নিচ্ছ, অথচ তিনি তো একজন মানুষ। তিনি কখনো কখনো ক্রোধের বশবর্তী হয়ে কিছু বলে ফেলেন। আমি তখন লেখা হতে বিরত থাকলাম এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এটা উল্লেখ করলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন : তুমি আমার কথাগুলো লিখতে থাকো। আল্লাহ তা‘আলার শপথ! সত্য কথা ছাড়া আমার মুখ দিয়ে অন্য কোন কথা বের হয় না। (আবূ দাঊদ হা. ৩৬৪৬, সিলসিলা সহীহাহ্ হা. ১৫৩২)
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : আমি সত্য ছাড়া কিছু বলি না। কতক সাহাবী বললেন : হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যে আমাদের সাথে রসিকতা করেন? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : আমি সত্য ছাড়া কিছু বলি না। (তিরমিযী হা. ১৯৯০, হাসান সহীহ)
তাই কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ শরীয়তের মূল উৎস এবং একটি অপরটির পরিপূরক। সহীহ হাদীস ছাড়া কখনো শরীয়ত চলতে পারে না। যারা বলে- আমরা কুরআনে যা কিছু পেয়েছি তা-ই আমাদের জন্য যথেষ্ট; তারা পথভ্রষ্ট ছাড়া কিছুই নয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন :
أَلَا إِنِّي أُوتِيتُ الْقُرْآنَ وَمِثْلَهُ مَعَهُ
সাবধান! জেনে রেখ! আমি কুরআন ও অনুরূপ আরো পেয়েছি। (মুসনাদ আহমাদ হা. ১৭১৭, সহীহ)
(وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوٰي)
‘এবং সে প্রবৃত্তি হতেও কোন কথা বলে না’ এ আয়াত থেকে এটাও প্রমাণিত হয় যে, দীনের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইজতিহাদ করে কোন কথা বলতেন না। যা বলতেন ওয়াহীভিত্তিক বলতেন।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. তেলাওয়াতের সিজদা ওয়াজিব নয়, তার প্রমাণ পেলাম।
২. নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে দীন নিয়ে এসেছেন তা সত্য, তাতে কোন প্রকার ভ্রষ্টতা নেই।
৩. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওয়াহী ছাড়া দীনী বিষয়ে কোন কথা বলেননি।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings