Surah An Najm Tafseer
Tafseer of An-Najm : 14
Saheeh International
At the Lote Tree of the Utmost Boundary -
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
৫-১৮ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
এ আয়াতগুলোতে জিবরীল (আঃ)-এর বর্ণনা ও তাঁকে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বচক্ষে আসল আকৃতিতে দুবার দর্শনের কথা বলা হয়েছে।
(شَدِيْدُ الْقُوٰي)
অর্থাৎ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট ওয়াহী নিয়ে আগমন করেছেন জিবরীল (আঃ) যিনি বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণভাবে খুবই শক্তিশালী তিনি আল্লাহ তা‘আলার আদেশ বাস্তবায়নে এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট ওয়াহী যথাযথভাবে পৌঁছে দিতে সক্ষম। শয়তান তাঁর থেকে কিছু ওয়াহী ছিনিয়ে নেবে বা কিছু প্রবেশ করিয়ে দেবে তার প্রতিরোধকারী। (তাফসীর সা‘দী, অত্র আয়াতের তাফসীর)
ذُوْ مِرَّةٍ অর্থাৎ
ذو قوة وخلق حسن وجمال ظاهر وباطن
অর্থাৎ তিনি শক্তিশালী এবং বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীনভাবে উত্তম চরিত্র ও সৌন্দর্যের অধিকারী।
فَاسْتَوٰي অর্থাৎ জিবরীল (আঃ) স্থির হয়েছিল بالافق الاعلي বা ঊর্ধ্বাকাশে যেখানে কোন শয়তান কথা চুরি করার জন্য পৌঁছতে পারে না।
(ثُمَّ دَنَا فَتَدَلّٰي)
তারপর জিবরীল (আঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটবর্তী হলেন, এত নিকটবর্তী যেন উভয়ের মাঝে দু’ধনুক বা তার চেয়ে আরো কম ব্যবধান। এ সময় জিবরীলকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার আসল আকৃতিতে দেখেছিলেন।
তারপর আল্লাহ তা‘আলা যা ওয়াহী করার জিবরীলের মাধ্যমে তা ওয়াহী করলেন।
(مَا كَذَبَ الْفُؤَادُ مَا رَاٰي)
অর্থাৎ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিবরীল (আঃ)-কে তাঁর আসল আকৃতিতে দেখেন যে, তাঁর ছয়শত ডানা রয়েছে। তাঁর প্রসারিত ডানা পূর্ব ও পশ্চিমের (আকাশ ও পৃথিবীর) মধ্যবর্তী স্থানকে ঘিরে রেখেছিল। এ দর্শনকে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অন্তর মিথ্যা মনে করেনি। বরং আল্লাহ তা‘আলার এ বিশাল ক্ষমতাকে স্বীকার করে নিয়েছেন।
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিবরীলকে আসল আকৃতিতে দেখেছিলেন। তাঁর ছয়শত ডানা আছে। প্রত্যেক ডানা যেন ঊর্ধ্ব আকাশ ঢেকে নিয়েছে। তাঁর ডানা থেকে পান্না ও মণিমুক্ত ঝরে পড়ছিল। (সহীহ, আহমাদ হা. ৩৭৪৮)
(وَلَقَدْ رَاٰهُ نَزْلَةً أُخْرٰي)
এটা হলো রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জিবরীল (আঃ)-কে তাঁর আসল আকৃতিতে দ্বিতীয়বার দর্শন। আর তা ছিল “সিদরাতুল মুনতাহা”র নিকট যা সপ্তম আকাশের ওপরে। আর এটাই শেষ সীমানা, এর ওপরে কোন ফেরেশতা যেতে পারে না। এখানেই রয়েছে “জান্নাতুল মা’ওয়া”। এ জান্নাতকে জান্নাতুল মা’ওয়া বলার কারণ হলো এখানে আদম ও হাওয়া (আঃ) বসবাস করেছিলেন। আর কেউ বলেছেন : জান্নাতী আত্মাসমূহ এখানে এসে জমা হয়। (ফাতহুল কাদীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তা‘আলাকে দেখতে পাননি। বিশিষ্ট তাবেয়ী মাসরূক (রহঃ) ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর নিকট এসে বললেন : হে উম্মুল মু’মিনীন! মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি তাঁর প্রতিপালক কে দেখেছেন? তিনি জবাবে বললেন : সুবহানাল্লাহ! তোমার কথা শুনে আমার পশম দাঁড়িয়ে গেছে; তুমি কোথায় রয়েছ? যে তোমাকে তিনটি কথা বলবে সে মিথ্যা বলবে। (১) যে তোমাকে বলবে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তা‘আলাকে দেখেছে সে মিথ্যা বলবে। তারপর তিনি এ আয়াত পাঠ করলেন :
(لَا تُدْرِكُهُ الْأَبْصَارُ ز وَهُوَ يُدْرِكُ الْأَبْصَارَ ج وَهُوَ اللَّطِيْفُ الْخَبِيْرُ)
“কোন দৃষ্টি তাঁকে বেষ্টন করতে পারবে না কিন্তু তিনি সকল দৃষ্টিসমূহ বেষ্টন করে আছেন এবং তিনিই সূক্ষ্মদর্শী, সব জাননেওয়ালা।” (সূরা আনআম ৬ : ১০৩)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন :
(وَمَا كَانَ لِبَشَرٍ أَنْ يُّكَلِّمَهُ اللّٰهُ إِلَّا وَحْيًا أَوْ مِنْ وَّرَا۬ءِ حِجَابٍ أَوْ يُرْسِلَ رَسُوْلًا فَيُوْحِيَ بِإِذْنِه۪ مَا يَشَا۬ءُ ط إِنَّه۫ عَلِيٌّ حَكِيْمٌ)
“মানুষের জন্য অসম্ভব যে, আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেন ওয়াহীর মাধ্যম ছাড়া, অথবা পর্দার অন্তরাল ব্যতিরেকে অথবা এমন দূত প্রেরণ ছাড়া, যে দূূত তাঁর অনুমতিক্রমে তিনি যা চান তা ব্যক্ত করে, তিনি সমুন্নত, প্রজ্ঞাময়।” (সূরা শুরা : ৪২ : ৫১)
(২) যে তোমাকে সংবাদ দেবে যে, সে আগামী দিনের খবর জানে তাহলে সে মিথ্যা বলবে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(إِنَّ اللّٰهَ عِنْدَه۫ عِلْمُ السَّاعَةِ ج وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ ج وَيَعْلَمُ مَا فِي الْأَرْحَامِ ط وَمَا تَدْرِيْ نَفْسٌ مَّاذَا تَكْسِبُ غَدًا ط وَمَا تَدْرِيْ نَفْسٌ ۭبِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوْتُ ط إِنَّ اللّٰهَ عَلِيْمٌ خَبِيْرٌ)
“নিশ্চয় আল্লাহরই কাছে রয়েছে কিয়ামত সম্পর্কে জ্ঞান এবং তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন, আর তিনিই জানেন যা কিছু আছে গর্ভাধারে। কেউ জানে না আগামীকল্য সে কী আয় করবে এবং কেউ জানে না কোন্ স্থানে সে মৃত্যুবরণ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু জানেন, সব খবর রাখেন।” (সূরা লুকমান ৩১ : ৩৪)
(৩) যে বলবে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শরীয়তের কোন কিছু গোপন করেছেন তাহলে সে মিথ্যা বলবে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(يٰٓأَيُّهَا الرَّسُوْلُ بَلِّغْ مَآ أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَّبِّكَ ط وَإِنْ لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَه۫ ط وَاللّٰهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ ط إِنَّ اللّٰهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكٰفِرِيْنَ)
“হে রাসূল! তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রচার কর; যদি না কর তবে তুমি তাঁর রিসালাত প্রচার করলে না। আল্লাহ তোমাকে মানুষ হতে রক্ষা করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফির সম্প্রদায়কে সৎ পথে পরিচালিত করেন না।” (সূরা মায়িদাহ ৫ : ৬৭)
আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম : আপনি আপনার প্রতিপালককে দেখেছেন? তিনি বললেন : তা হল নূর, কিভাবে আমি দেখব? (সহীহ মুসলিম)
(إِذْ يَغْشَي السِّدْرَةَ مَا يَغْشٰي)
এখানে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মি‘রাজের রাতে “সিদরাতুল মুন্তাহা”র যে দৃশ্য দেখেছিলেন তার বিবরণ দেয়া হচ্ছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : সিদরা তথা বরই (কুল) গাছকে ফেরেশতারা কাকের মত ঢেকে আছে, আল্লাহ তা‘আলার নূর দ্বারা আচ্ছাদিত এবং অনেক রং তাকে ঢেকে আছে, আমি জানি না তা কিী? মুজাহিদ বলেন : সিদরার ডালগুলো মণি-মুক্তা ও জাবারজাদের। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সে গাছ দেখেছেন এবং আল্লাহ তা‘আলাকে অন্তর দ্বারা দেখেছেন।
ইবনু জায়েদ বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করা হল- কোন্ জিনিস দ্বারা সিদরা তথা বরই গাছকে ঢাকা দেখেছেন? রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : ঐ গাছ সোনার ফড়িং দ্বারা আচ্ছাদিত এবং প্রত্যেক ডালে একজন করে ফেরেশতাকে দাঁড়িয়ে আল্লাহ তা‘আলার তাসবীহ পাঠ করতে দেখেছিলাম। (ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
এ গাছের নিকটেই আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তিনটি জিনিস প্রদান করেন-
(১) পাঁচ ওয়াক্ত সালাত
(২) সূরা আল বাকারার শেষের আয়াতগুলো।
(৩) সে মুসলিমের ক্ষমার প্রতিশ্র“তি যে র্শিকে লিপ্ত হবে না। (সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান, সিদরাতুল মুনতাহা অনুচ্ছেদ)
(مَا زَاغَ الْبَصَرُ وَمَا طَغٰي)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন : রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ডানে-বামে যাননি এবং সীমানা অতিক্রমও করেননি যা তাঁর জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছিল।
এটা হলো আনুগত্যের বৈশিষ্ট্য। তিনি তাই করেছেন যা আদেশপ্রাপ্ত হয়েছেন আর তা-ই দেয়া হয়েছে যা চেয়েছেন। (ইবনু কাসীর- অত্র আয়াতের তাফসীর)
(لَقَدْ رَاٰي مِنْ اٰيٰتِ رَبِّهِ الْكُبْرٰي)
অর্থাৎ জান্নাত, জাহান্নাম ও অন্যান্য নিদর্শন যা তিনি মি‘রাজের রাতে দেখেছিলেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(لِنُرِيَكَ مِنْ اٰيٰتِنَا الْكُبْرٰي)
“যাতে আমি তোমাকে আমার বড় বড় কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি।” (সূরা ত্বহা- ২০ : ২৩)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. জিবরীল (আঃ)-এর বর্ণনা পেলাম।
২. জিবরীল (আঃ)-কে তাঁর আসল আকৃতিতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’বার দেখেছেন কিন্তু আল্লাহ তা‘আলাকে দেখতে পাননি।
৩. সিদরাতুল মুনতাহার পরিচয় জানলাম।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings