Surah At Tur Tafseer
Tafseer of At-Tur : 3
Saheeh International
In parchment spread open
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
নামকরণ ও ফযীলত :
الطُّوْرِ তূর সে পাহাড় যেখানে মূসা (আঃ) মহান আল্লাহ তা‘আলা সাথে বাক্যালাপ করেছিলেন। এ পাহাড়টিকে “তূরে সাইনা”-ও বলা হয়। এ طور শব্দ থেকেই সূরার নাম ‘তূর’ রাখা হয়েছে।
যুবাইর ইবনু মুত‘ঈম (রাঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে মাগরিবের সালাতে সূরা ‘তূর’ পড়তে শুনেছি। তাঁর চেয়ে উত্তম সুর বা উত্তম কিরাআতে আর কারো কাছে শুনিনি। (সহীহ বুখারী হা. ৪৮৫৩)
উম্মে সালামাহ্ (রাঃ) বলেন : আমার অসুস্থতার কথা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জানালাম। তিনি বললেন : তুমি আরোহী হয়ে মানুষের পেছনে তাওয়াফ করো। আমি সেভাবেই তাওয়াফ করলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাইতুল্লাহর পাশে সালাতে
(وَالطُّوْرِ- وَكِتَابٍ مَّسْطُورٍ)
পড়ছিলেন। (সহীহ বুখারী হা. ৪৮৫৩)
১-১৬ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
وَالطُّورِ পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে যে, ‘তূর’ সে পাহাড় যেখানে মূসা (আঃ) আল্লাহ তা‘আলার সাথে বাক্যালাপ করেছিলেন। (আযওয়াউল বায়ান, অত্র আয়াতের তাফসীর) এ পাহাড়ের শপথ করেছেন তার সম্মান ও মর্যাদা এবং তাতে যে সকল নিদর্শন রয়েছে তার দিকে লক্ষ্য রেখে।
হাফিয ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন : ‘তূর’ বলা হয় এমন পাহাড়কে যেখানে গাছপালা জন্মায়। যেমন মূসা (আঃ) আল্লাহ তা‘আলা সাথে যে পাহাড়ে দাঁড়িয়ে বাক্যালাপ করেছিলেন এবং যেখান হতে ‘ঈসা (আঃ)-কে পাঠিয়েছিলেন। আর যে পাহাড়ে কোন প্রকার গাছপালা জন্মায় না তাকে “তূর” বলা হয় না; তাকে “জাবাল” বলা হয়। (ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
(وَكِتَابٍ مَّسْطُوْرٍ)
‘শপথ কিতাবের, যা লিখিত আছে’ مَسْطُورٍ অর্থ হলো : লিপিবদ্ধ, লিখিত বস্তু। কেউ বলেছেন- এটা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো লাওহে মাহফূজ। কেউ বলেছেন : কুরআন মাজীদ, কেউ বলেছেন : মানুষের আমলনামা যা ফেরেশতাগণ লিখে থাকে।
(رَقٍّ مَّنْشُوْرٍ) ‘খোলা পত্রে’ অর্থ : পাতলা চামড়া যার ওপর লেখা হয়। منشور অর্থ : উন্মুক্ত, বিস্তৃত এ আয়াতের সম্পর্ক পূর্বের আয়াতের সাথে।
(وَالْبَيْتِ الْمَعْمُوْرِ)
‘শপথ বায়তুল মা’মূরের’ বাইতুল মা‘মুর হলো সপ্ত আকাশের ওপর অবস্থিত সে ‘ইবাদতখানা যেখানে ফেরেশতারা ‘ইবাদত করেন। এ ‘ইবাদতখানা ফেরেশতাগণের দ্বারা এমনভাবে পরিপূর্ণ হয়ে থাকে যে, প্রত্যহ এতে সত্তর হাজার করে ফেরেশতা ‘ইবাদতের জন্য প্রবেশ করেন। যাদের কিয়ামত পর্যন্ত পুনরায় প্রবেশের পালা আসবে না। যেমন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মি‘রাজের হাদীসে বলেন (সপ্তম আকাশ অতিক্রম করার পর) :
অতঃপর আমাকে বাইতুল মা‘মূরে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে প্রত্যহ সত্তর হাজার ফেরেশতা ‘ইবাদতের উদ্দেশ্যে প্রবেশ করে থাকেন। কিয়ামত পর্যন্ত তাদের পুনরায় আসার পালা আসবে না। (সহীহ বুখারী হা. ৩২০৭, সহীহ মুসলিম হা. ৪৩৪)
অর্থাৎ ফেরেশতারা সেখানে ‘ইবাদত ও তাওয়াফ করে, যেমন দুনিয়াবাসী কা‘বা ঘর তাওয়াফ করে। সেটা আকাশবাসীদের জন্য কাবা। এজন্য ইবরাহীম (আঃ) বাইতুল মা‘মূরে পিঠ লাগিয়ে বসে আছেন, কারণ তিনি দুনিয়ার কাবা তৈরি করেছেন। (ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
(وَالسَّقْفِ الْمَرْفُوعِ)
‘শপথ সমুন্নত আকাশের’ এ থেকে আকাশকে বুঝানো হয়েছে যা পৃথিবীর জন্য ছাদস্বরূপ। পবিত্র কুরআনে এটাকে “সুরক্ষিত ছাদ” বলা হয়েছে।
(وَجَعَلْنَا السَّمَا۬ءَ سَقْفًا مَّحْفُوْظًا ج وَّهُمْ عَنْ اٰيٰتِهَا مُعْرِضُوْنَ)
“এবং আকাশকে করেছি সুরক্ষিত ছাদ; কিন্তু তারা আকাশস্থিত নিদর্শনাবলী হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়।” (সূরা আম্বিয়া- ২১ :৩২)
(وَالْبَحْرِ الْمَسْجُورِ)
‘এবং শপথ উদ্বেলিত সমুদ্রের’ আলিমগণ এখানে দু’ধরনের তাফসীর করেছেন।
(১) مسجور অর্থাৎ সমুদ্রকে আগুন হিসেবে প্রজ্জ্বলিত করা। কেননা সমুদ্রকে কিয়ামতের দিন আগুন দ্বারা প্রজ্জ্বলিত করা হবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
( فِي الْحَمِيْمِ ৫لا ثُمَّ فِي النَّارِ يُسْجَرُوْنَ)
“ফুটন্ত পানিতে, অতঃপর তাদেরকে দগ্ধ করা হবে অগ্নিতে।” (সূরা আল মু’মিন ৪০ :৭২)
(২) مسجور অর্থ مملوء বা পরিপূর্ণ। কেননা সমুদ্র পানি দ্বারা পরিপূর্ণ। مسجور-এর উভয় অর্থের কথা এ আয়াতে রয়েছে।
(وَإِذَا الْبِحَارُ سُجِّرَتْ)
“এবং সমুদ্রগুলোকে যখন উদ্বেলিত করা হবে।” (সূরা আত্ তাকভীর ৮১ :৬)
এ সব মাখলুকের শপথ করার পর আল্লাহ তা‘আলা বলছেন : নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালকের শাস্তি আসবেই। এর কোন প্রতিরোধকারী নেই।
(تَمُوْرُ السَّمَا۬ءُ) -- مور
অর্থ হলো : আন্দোলন, অস্থিরতা। অর্থাৎ কিয়ামতের দিন আকাশের সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার মধ্যে যে বিশৃঙ্খলা এবং মহাশূন্যে ভ্রাম্যমান তারকারাজি ঝরে ও খসে পড়ার কারণে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হবে, সেটাকেই বুঝানো হয়েছে। ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন : চরমভাবে নড়াচড়া করবে।
(وَتَسِيْرُ الْجِبَالُ)
অর্থাৎ পাহাড়গুলো দ্রুত চলবে, ফলে তা ধূলিকণার মতো পাতলা হয়ে যাবে।
সে কঠিন দিনে তাদের জন্য দুর্ভোগ যারা মিথ্যুক, যারা দুনিয়াতে বাতিলের সাথে ছিল আর ধর্মকে ঠাট্টা-বিদ্রƒপের বস্তু হিসেবে গ্রহণ করে ছিল।
(يُدَعُّوْنَ إِلَي نَارِ) শব্দের অর্থ হলো : শক্তি ব্যবহার করে জোরপূর্বক হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া। যেমন আল্লাহ তা‘আলার এ বাণী :
(فَذٰلِكَ الَّذِيْ يَدُعُّ الْيَتِيْمَ)
“এ তো হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যে (নিরীহ) এতীমকে গলা ধাক্কা দেয়।” (সূরা আল মা‘ঊন ১০৭ :৩)
উক্ত আয়াত দু’টি বিষয় শামিল করেছে-
(১) কাফিরদেরকে সেদিন শক্তি ব্যবহার করে জোরপূর্বক জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া হবে।
আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার কারণে এটা তাদের পরিণাম।
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন :
(وَأَمَّا الَّذِيْنَ فَسَقُوْا فَمَأْوٰهُمُ النَّارُ ط كُلَّمَآ أَرَادُوْآ أَنْ يَّخْرُجُوْا مِنْهَآ أُعِيْدُوْا فِيْهَا وَقِيْلَ لَهُمْ ذُوْقُوْا عَذَابَ النَّارِ الَّذِيْ كُنْتُمْ بِه۪ تُكَذِّبُوْنَ)
“আর যারা পাপ কাজ করেছে তাদের বাসস্থান হবে জাহান্নাম। যখনই তারা সেখান থেকে বের হতে চাইবে, তখনই তাদেরকে সেথায় ফিরিয়ে দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, আগুনের স্বাদ গ্রহণ (শাস্তি ভোগ) কর যা তোমরা মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে।” অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(اِنْطَلِقُوْٓا اِلٰی مَا کُنْتُمْ بِھ۪ تُکَذِّبُوْنَﭬاِنْطَلِقُوْٓا اِلٰی ظِلٍّ ذِیْ ثَلٰثِ شُعَبٍﭭ لَّا ظَلِیْلٍ وَّلَا یُغْنِیْ مِنَ اللَّھَبِﭮاِنَّھَا تَرْمِیْ بِشَرَرٍ کَالْقَصْرِﭯکَاَنَّھ۫ جِمٰلَتٌ صُفْرٌ)
‘‘তোমরা চল তারই দিকে যাকে মিথ্যা মনে করতে। ==
চল সে ছায়ার দিকে যার তিনটি শাখা রয়েছে, যে ছায়া শীতল নয় এবং যা অগ্নিশিখা হতে রক্ষাও করে না, নিশ্চয়ই তা নিক্ষেপ করবে প্রাসাদতুল্য স্ফুলিঙ্গ। যা (দেখে মনে হবে) হলুদ বর্ণের উট।” (সূরা মুরসালাত ৭৭ :২৯-৩৩)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. আল্লাহ তা‘আলা যে কোন মাখলুকের শপথ করতে পারেন, কিন্তু বান্দা কেবল আল্লাহ তা‘আলা নাম ছাড়া অন্য নামে শপথ করতে পারবে না।
২. মিথ্যুকদের জন্য কিয়ামতের দিন দুর্ভোগ।
৩. যেমন কর্ম তেমন ফল।
৪. কিয়ামতের পূর্বে আকাশ ও জমিনের কঠিন অবস্থা সম্পর্কে জানলাম।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings