Surah Qaf Tafseer
Tafseer of Qaf : 1
Saheeh International
Qaf. By the honored Qur'an...
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
নামকরণ ও আলোচ্য বিষয় :
সূরা ক্বাফ সম্পূর্ণ মক্কায় অবতীর্ণ হয়। ইবনু আব্বাস ও কাতাদাহ (রাঃ) বলেন : তবে একটি আয়াত ব্যতীত, তাহল-
(وَلَقَدْ خَلَقْنَا السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِيْ سِتَّةِ أَيَّامٍ ق وَّمَا مَسَّنَا مِنْ لُّغُوْبٍ)।
অত্র সূরার প্রথম আয়াতে উল্লেখিত ‘ক্বাফ’ বর্ণটি থেকেই উক্ত নামে সূরার নামকরণ করা হয়েছে।
এ সূরাটি “ত্বিওয়ালে মুফাস্সাল”-এর প্রথম সূরা। সূরা ক্বাফ থেকে সূরা আন-নাযিআত পর্যন্ত সূরাগুলোকে طوال المفصل বলা হয়। আবার কেউ কেউ সূরা আল হুজুরাত থেকেও গণনা করেছেন। তবে প্রথমটি সঠিক। (ইবনু কাসীর ও ফাতহুল কাদীর, অত্র সূরা তাফসীরের শুরু)
কুত্ববাহ্ ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন : নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের প্রথম রাক‘আতে এ সূরা তিলাওয়াত করতেন। (সহীহ মুসলিম হা. ৪৫৮)
ওয়াকিদ আল লাইসী (রাঃ) বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদের সালাতে সূরা ক্বাফ ও সূরা আল ক্বামার তিলাওয়াত করতেন। (সহীহ মুসলিম হা. ৮৯১, আত্ তিরমিযী হা. ৫৩৪)
উম্মু হিশাম বিনতু হারেসাহ্ (রাঃ) বলেন : আমি সূরা ক্বাফ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুখ থেকে শিখেছি। তিনি প্রত্যেক জুমু‘আয় মিম্বারে দাঁড়িয়ে মানুষের সামনে এ সূরা পাঠ করতেন। (সহীহ মুসলিম, আবূ দাঊদ হা. ১০১২)
হাফিয ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন : বড় ধরনের সমাবেশে (যেমন ঈদ, জুমু‘আহ্) এ সূরা পাঠ করার উদ্দেশ্য হলো এতে মানব সৃষ্টির সূচনা, পুনরুত্থান, আখিরাত, কিয়ামত, হিসাব, জান্নাত, জাহান্নাম ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে তা জানানোর জন্য। আল্লাহ অধিক জানেন। (ইবনু কাসীর)
১-৫ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
قٓ (ক্বাফ) এ জাতীয় “হুরূফুল মুক্বাত্বআত” বা বিচ্ছিন্ন অক্ষরসমূহ সম্পর্কে সূরা বাক্বারার শুরুতে আলোচনা করা হয়েছে। এর অর্থ ও প্রকৃত উদ্দেশ্য আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন।
ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন : সমস্ত পৃথিবীকে বেষ্টন করে আছে এমন একটি পাহাড়ের নাম হল ক্বাফ। সম্ভবত এটা বানী ইসরাঈলের বর্ণিত কল্পকাহিনী। (আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন)
অতঃপর আল্লাহ সম্মানিত কুরআনের শপথ করেছেন। الْمَجِيْدُ শব্দের অর্থ সম্মানিত, অর্থাৎ কুরআন এমন একটি সম্মানিত কিতাব যা অর্থ ও শব্দগত দিক থেকে সকল আসমানী কিতাব থেকে সুউচ্চ ও মর্যাদাসম্পন্ন, বরকতময় ও গুণে পরিপূর্ণ। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনের শপথ করলেন, কারণ আল্লাহ তা‘আলা যা ইচ্ছা তার নামে শপথ করতে পারেন, তবে মানুষ আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারো নামে শপথ করতে পারে না। কুরআন নিয়ে মহান আল্লাহর এ শপথের জবাব উহ্য রয়েছে, তা হলো- لَتُبْعَثُنَّ (তোমরা অবশ্যই কিয়ামাতের দিন পুনরুত্থিত হবে)। আবার কেউ কেউ বলেছেন, এর জবাব হলো পরবর্তী আলোচ্য বিষয় যাতে নবুওয়াত ও পুনরুত্থানের কথাকে সুসাব্যস্ত করা হয়েছে।
(جَا۬ءَهُمْ مُنْذِرٌ مِنْهُمْ)
‘তাদের মধ্য হতে একজন সতর্ককারী আবির্ভূত হয়েছে’ অর্থাৎ তৎকালীন মক্কার কাফিররা এতে আশ্চর্যবোধ করত যে, তাদের মধ্য হতেই একজন ব্যক্তিকে রিসালাত প্রদান করা হয়েছে। তাদের বিশ্বাস যে, কোন ফেরেশতাকে নাবী হিসেবে পাঠানো হবে অথবা নাবীর সাথে কোন ফেরেশতাকে পাঠানো হবে।
যেমন তারা আশ্চর্য হয়ে বলত :
(وَقَالُوْا مَالِ ھٰذَا الرَّسُوْلِ یَاْکُلُ الطَّعَامَ وَیَمْشِیْ فِی الْاَسْوَاقِﺚ لَوْلَآ اُنْزِلَ اِلَیْھِ مَلَکٌ فَیَکُوْنَ مَعَھ۫ نَذِیْرًا)
“তারা বলে : ‘এ কেমন রাসূল’ যে আহার করে এবং হাটে-বাজারে চলাফেরা করে; তার কাছে কোন ফেরেশতা কেন অবতীর্ণ করা হল না, যে তার সঙ্গে থাকত সতর্ককারীরূপে?’ (আল ফুরকান ২৫ :৭)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(اَکَانَ لِلنَّاسِ عَجَبًا اَنْ اَوْحَیْنَآ اِلٰی رَجُلٍ مِّنْھُمْ اَنْ اَنْذِرِ النَّاسَ وَبَشِّرِ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْٓا اَنَّ لَھُمْ قَدَمَ صِدْقٍ عِنْدَ رَبِّھِمْﺛ قَالَ الْکٰفِرُوْنَ اِنَّ ھٰذَا لَسٰحِرٌ مُّبِیْنٌ)
‘মানুষের জন্য এটা কি আশ্চর্যের বিষয় যে, আমি তাদেরই একজনের নিকট ওয়াহী প্রেরণ করেছি এ মর্মে যে, তুমি মানুষকে সতর্ক কর এবং মু’মিনদেরকে সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট আছে উচ্চ মর্যাদা! কাফিররা বলে, ‘এ তো এক সুস্পষ্ট জাদুকর!’ (সূরা ইউনুস ১০ :২)
অর্থাৎ এতে আশ্চর্যের কিছুই নেই। রাসূল যদি মানুষ না হয়ে ফেরেশতা হতেন তাহলে মাটির মানুষের সমস্যা নূরের তৈরি ফেরেশতাগণ বুঝতে সক্ষম হত না। অতএব রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মত পিতার ঔরসে মায়ের গর্ভে রক্ত মাংসে সৃষ্টি মাটির মানুষ, তিনি কোন ফেরেশতাও নন বা নূরের তৈরিও নন। যেখানে মক্কার কাফিররা জানত রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মত একজন মানুষ, তাকে নবুআত দেয়া হয়েছে এবং এতে তারা আশ্চর্যও বোধ করেছে যে- নাবীদের খাবার, বাজার ইত্যাদির প্রয়োজন হয় নাকি? সেখানে আমাদের সমাজে একশ্রেণির মুসলিম বিশ্বাস করে নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাকি নূরের তৈরি। এক্ষেত্রে মক্কার মুশরিকদের চেয়ে এদের আকীদাহর অবস্থা কত নিম্নমানের!
কাফিররা আশ্চর্য হয়ে আরো বলে, আমরা মারা যাওয়ার পর মাটি হয়ে যাব, নিঃশেষ হয়ে যাব এর পরেও কি আবার আমাদেরকে জীবিত করা হবে, এরূপ গঠনাকৃতি দেয়া হবে? এটা তো কল্পনাতীত কথা, এরূপ সংঘটিত হওয়া অসম্ভব। যেমন তাদের কথা আল্লাহ তা‘আলা তুলে ধরে বলেন :
(وَقَالُوا أَإِذَا ضَلَلْنَا فِي الْأَرْضِ أَإِنَّا لَفِي خَلْقٍ جَدِيدٍ بَلْ هُمْ بِلِقَا۬ءِ رَبِّهِمْ كَافِرُونَ)
“আর তারা বলে, আমরা যখন মাটিতে মিশে শেষ হয়ে যাব, তখন কি আবার আমাদেরকে নতুন করে সৃষ্টি করা হবে? বস্তুতঃ তারা তাদের প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাতকে অস্বীকার করে।” কাফিররা পুনরুত্থানকে অসম্ভব ও কল্পনাতীত মনে করে এরূপ কথা কুরআনে বহু স্থানে উল্লেখ রয়েছে। তাদের এসব কল্পনাতীত চিন্তার জবাবে
মহান আল্লাহ বলছেন :
(قَدْ عَلِمْنَا مَا تَنْقُصُ الْأَرْضُ مِنْهُمْ ج وَعِنْدَنَا كِتٰبٌ حَفِيْظٌ)
“আমি তো জানি মাটি তাদের কতটুকু ক্ষয় করে এবং আমার নিকট আছে সংরক্ষিত এক কিতাব।” (সূরা কাফ ৫০ :৪) সূরা তাগাবুনের ৭ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা এ ব্যাপারে নিজ সত্ত্বার শপথ করে বলেছেন : অবশ্যই পুনরুত্থান করানো হবে।
অর্থাৎ মাটি তাদের মাংসস্ত হাড় জীর্ণ করে খেয়ে ফেলুক, শরীর আলাদা আলাদা হয়ে যাক, আর যা কিছু হোক না কেন সব আল্লাহ তা‘আলা জানেন। সব কিছু লাওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ রয়েছে। এমন নয় যে কেউ টুকরো টুকরো হয়ে গেল বা আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেল তাকে আল্লাহ তা‘আলা ধরতে পারবেন না।
বানী ইসরাঈলের জনৈক ব্যক্তি মারা যাওয়ার পূর্বে তার সন্তানদেরকে অসিয়ত করেছিল যে, আমি মারা গেলে আমার মৃতদেহ পুড়িয়ে ছাই বানিয়ে উড়িয়ে দেবে। আল্লাহর শপথ, আল্লাহ আমাকে পাকড়াও করতে পারলে এমন শাস্তি দেবেন যা কাউকে দেয়া হয়নি। মারা যাওয়ার পর অসিয়ত অনুযায়ী সন্তানেরা তাই করল। আল্লাহ তা‘আলা জমিনকে নির্দেশ দিলেন মৃতদেহের ছাই একত্রিত করতে। জমিন তাই করল, আল্লাহ তা‘আলা তাকে জীবিত করে জিজ্ঞাসা করলেন তুমি কেন এরূপ করেছ? সে বলল : আপনার ভয়ে, তখন আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দেন। (সহীহ বুখারী হা. ৩৪৮১)
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) বলেন : চিন্তা করুন! সূরাটি কত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করছে যে, দুনিয়াতে মানুষকে যে শরীর দেয়া হয়েছে সে শরীরেই তাকে পুনরুত্থিত করা হবে। এমন নয় যে, আল্লাহ তা‘আলা মানুষের দুনিয়ার শরীর পরিবর্তন করে নতুন শরীর প্রদান করবেন। এরূপ বিশ্বাস করা পুনরুত্থানকে অস্বীকার করার শামিল। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন :
(وَهُوَ الَّذِي يَبْدَأُ الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيدُهُ وَهُوَ أَهْوَنُ عَلَيْهِ)
“তিনিই সে সত্ত্বা যিনি সৃষ্টি সূচনা করেছেন আবার তিনিই তা ফিরিয়ে নিয়ে আসবেন। আর এটা তাঁর জন্য খুবই সহজ।” (সূরা রুম ৩০ :২৭)
সুতরাং কিয়ামতের দিন সব কিছু আল্লাহ তা‘আলা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম। মূলত কাফিররা সত্যকে তথা কুরআন, ইসলাম ও মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অস্বীকার করেছে। যার কারণে তারা সংশয়ে নিপতিত।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. কুরআনের মর্যাদা সম্পর্কে জানলাম।
২. নাবী-রাসূলদেরকে মানব জাতি থেকে প্রেরণ করা হয়েছে। তারা মাটির মানুষ নূরের তৈরি নয়।
৩. পুনরুত্থানের প্রতি বিশ্বাস রাখা ঈমানের অন্যতম একটি রুকন। তার প্রতি বিশ্বাস না থাকলে মু’মিন হওয়া যাবে না।
৪. মানুষকে কবরস্থ করা হোক, আর যা কিছু করা হোক না কেন তার পুনরুত্থান হবেই।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings