Surah An Nisa Tafseer
Tafseer of An-Nisa : 92
Saheeh International
And never is it for a believer to kill a believer except by mistake. And whoever kills a believer by mistake - then the freeing of a believing slave and a compensation payment presented to the deceased's family [is required] unless they give [up their right as] charity. But if the deceased was from a people at war with you and he was a believer - then [only] the freeing of a believing slave; and if he was from a people with whom you have a treaty - then a compensation payment presented to his family and the freeing of a believing slave. And whoever does not find [one or cannot afford to buy one] - then [instead], a fast for two months consecutively, [seeking] acceptance of repentance from Allah . And Allah is ever Knowing and Wise.
Ibn Kathir Full
Tafseer 'Ibn Kathir Full' (BN)
৯২-৯৩ নং আয়াতের তাফসীর:
ইরশাদ হচ্ছেঃ “কোন মুমিনের উচিত নয় যে, সে তার কোন মুমিন ভাইকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে মুসলমান সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ তা'আলা ছাড়া কেউ মা'বুদ নেই এবং আমি তাঁর রাসূল, তার রক্ত হালাল নয়, কিন্তু তিনটির মধ্যে যে কোন একটি কারণে (হত্যা করা বৈধ)। (১) কাউকে হত্যা করা, (২) বিবাহিত অবস্থায় ব্যভিচার করা এবং (৩) ধর্ম ত্যাগ করে দল হতে বিচ্ছিন্ন হওয়া। এ তিনটি কাজ কারও দ্বারা সংঘটিত হলে প্রজাদের মধ্যে কারও তাকে হত্যা করার অধিকার নেই বরং এটা হচ্ছে ইমাম বা তাঁর প্রতিনিধির অধিকার। এরপরে (আরবী) রয়েছে এবং এটা হচ্ছে (আরবী) যেমন নিম্নের কবিতায় রয়েছেঃ (আরবী) এ আয়াতের শান-ই-নকূলে একটি উক্তি এই বর্ণিত আছে যে, এটা আবু জেহেলের বৈপিত্রেয় ভাই আইয়াশ ইবনে আবু রাবীআর (রাঃ) ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। তাঁর মাতার নাম আসমা বিনতে মুখরামা। তিনি একটি লোককে হত্যা করেছিলেন। লোকটির নাম ছিল হাস ইবনে ইয়াযীদ আল গামেদী।
ঘটনা এই যে, হযরত আইয়াশ (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন বলে তাঁর ভাই আবু জেহেলের সঙ্গে হাস ইবনে ইয়াযীদ যোগ দিয়ে তাকে শাস্তি প্রদান করে। ফলে তিনি মনে সংকল্প করেন যে, সুযোগ পেলেই হাস ইবনে ইয়াযীদকে হত্যা করবেন। কিছু দিন পর হাও মুসলমান হয়ে যায় এবং হিজরতও করে। হযরত আইয়াশ (রাঃ) কিন্তু এ খবর জানতেন না। মক্কা বিজয়ের দিন সে তার চোখে পড়ে যায় এবং এখনও সে কুফরীর উপরই রয়েছে এই মনে করে হঠাৎ তার উপর আক্রমণ করতঃ তাকে হত্যা করে ফেলেন। তখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়।
অন্য উক্তি এই যে, এ আয়াজটি হযরত আবু দারদা (রাঃ)-এর ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। ঘটনা এই যে, তিনি একজন কাফিরের উপর তরবারী উঠিয়েছেন এমন সময় সে ঈমানের কালেমা পাঠ করে। কিন্তু হযরত আবু দারদা (রাঃ) তার উপর তরবারী বসিয়েই দেন এবং লোকটি নিহত হয়। রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সামনে ঘটনাটি বর্ণিত হলে হযরত আবূ দারদা (রাঃ) বলেন, সে প্রাণ বাঁচানোর জন্যে কালেমা পড়েছিল। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “তুমি কি তার অন্তর ফেড়ে দেখেছিলে?' এ ঘটনাটি বিশুদ্ধ হাদীসেও রয়েছে কিন্তু সেখনে অন্য সাহাবীর নাম আছে।
অতঃপর ভ্রমবশতঃ হত্যার বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যে, কোন মুসলমান যদি অপর কোন মুসলমানকে ভ্রমবশতঃ হত্যা করে তবে দু'টো জিনিস ওয়াজিব হবে। প্রথম হচ্ছে একটি দাসকে মুক্ত করা এবং দ্বিতীয় হচ্ছে নিহত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনকে হত্যা-বিনিময় প্রদান করা। ঐ দাসের ব্যাপারে আবার শর্ত এই যে, তাকে হতে হবে মুমিন। কাফির দাসকে মুক্ত করলে তা যথেষ্ট হবে না এবং ছোট নাবালক দাসও যথেষ্ট হবে না যে পর্যন্ত সে স্বেচ্ছায় ঈমান আনয়নের মত বয়স প্রাপ্ত না হবে।
ইমাম ইবনে জারীর (রঃ)-এর মনোনীত উক্তি এই যে, ঐ ছেলের বাপ-মা দু’জনই যদি মুসলমান হয় তবে যথেষ্ট হবে, নচেৎ হবে না। জমহূরের মাযহাব এই যে, মুসলমান হওয়া শর্ত, ছোট বা বড় হওয়ার কোন শর্ত নেই।
মুসনাদ-ই-আহমাদে রয়েছে যে, একজন আনসারী (রা) কৃষ্ণবর্ণের একটি দাসী নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর দরবারে হাযির হয়ে বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! একটি মুসলমান দাস বা দাসী মুক্ত করার দায়িত্ব আমার উপর রয়েছে। যদি এ দাসীটিকে আপনি মুসলমান মনে করেন তবে আমি তাকে মুক্ত করে দেবো’। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন ঐ দাসীটিকে জিজ্ঞেস করেনঃ “তুমি কি সাক্ষ্য দিচ্ছ যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই?' সে বলেঃ হ্যা।' তিনি বলেনঃ তুমি কি এ সাক্ষ্যও দিচ্ছ যে, আমি আল্লাহর রাসূল?' সে বলে, “হ্যা।' তিনি বলেনঃ মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের উপর তোমার বিশ্বাস আছে কি? সে বলে, “হ্যা। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন আনসারীকে বলেনঃ ‘তাকে আযাদ করে দাও।' এ হাদীসের ইসনাদ বিশুদ্ধ এবং ঐ সাহাবী কে ছিলেন তা গুপ্ত থাকা সনদের পক্ষে ক্ষতিকর নয়।
এ বর্ণনাটি হাদীসের অরিও বহু পুস্তকে নিম্নরূপে বর্ণিত রয়েছেঃ রাসূলুল্লাহ (সঃ) দাসীটিকে জিজ্ঞেস করেনঃ ‘আল্লাহ কোথায় আছেন? সে বলে, ‘আকাশে।' তিনি বলেনঃ “আমি কে? সে বলে, “আপনি আল্লাহ রাসূল (সঃ)'। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন সাহাবীকে বলেনঃ ‘তাকে আযাদ করে দাও, সে মুমিন। তাহলে ভ্রমবশতঃ হত্যার কারণে এক তো গোলাম আযাদ করা ওয়াজিব ও দ্বিতীয় হচ্ছে রক্তপণ আদায় করা ওয়াজিব যা নিহত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনকে সমর্পণ করতে হবে। এটাই হচ্ছে তার হত্যার বিনিময়। এ রক্তপণ হচ্ছে একশটি উট এবং এগুলো হবে পাঁচ প্রকারের। (১) বয়স প্রথম বছর পেরিয়ে দ্বিতীয় বছরে পড়েছে এরূপ বিশটি উষ্ট্ৰী। (২) এ বয়সেরই বিশটি উষ্ট্র। (৩) দ্বিতীয় বছর পেরিয়ে তৃতীয় বছরে পড়েছে এরূপ বিশটি উষ্ট্ৰী। (৪) তৃতীয় বছর পেরিয়ে চতুর্থ বছরে পড়েছে এরূপ বিশটি উষ্ট্রী। (৫) চতুর্থ বছর পেরিয়ে পঞ্চম বছরে পড়েছে এরূপ বিশটি উষ্ট্রী। এটাই হচ্ছে ভ্রমে হত্যার বিনিময় যা। রাসূলুল্লাহ (সঃ) ফায়সালা করেছেন। (সুনান ও মুসনাদ-ই-আহমাদ)
এ হাদীসটি হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে মাওকুফ রূপেও বর্ণিত আছে। হযরত আলী (রাঃ) এবং একটি জামাআত হতেও এটাই নকল করা হয়েছে। এও বলা হয়েছে যে, এ রক্তপণ চার প্রকারেও বন্টন করা হয়েছে। এ রক্তপণে হত্যাকারীর ‘আকেলার’ উপর ওয়াজিব হবে। অর্থাৎ তার প্রকৃত উত্তরাধিকারীদের পরের নিকটতম আত্মীয়দের উপর ওয়াজিব হবে। ইমাম শাফিঈ (রঃ) বলেনঃ এ বিষয়ে আমি কোন বিপরীত মতপোষণকারী পাইনি যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) রক্তপণের ফায়সালা এ লোকদের উপর করেছেন। এটা-ই-খাসসাহ হতে অধিক। ইমাম শাফিঈ (রঃ) যে হাদীসগুলোর দিকে ইঙ্গিত করেছেন ঐগুলো অনেক রয়েছে।
সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের মধ্যে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হুযাইল গোত্রের দু’টি মহিলা পরস্পর বিবাদে লিপ্ত হয়। একজন অপরজনকে একটি পাথর মেরে দেয়। সে গর্ভবতী ছিল। সন্তানও নষ্ট হয়ে যায় এবং সেও মারা যায়। ঘটনাটি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সামনে বর্ণিত হলে তিনি ফায়সালা দেন যে, এ শিশুর রক্তপণ হচ্ছে একটি প্রাণ, দাস বা দাসী এবং ঐ নিহত মহিলার রক্তপণ ওয়াজিব হবে হত্যাকারিণীর প্রকৃত উত্তরাধিকারীদের পরবর্তী আত্মীয়দের উপর। এর দ্বারা এও জানা গেল যে, যে ইচ্ছাপূর্বক হত্যা ভুল বশতঃ হয়ে যায়, রক্তপণ হিসেবে তার হুকুম শুধু ভুল বশতঃ হত্যার মতই। কিন্তু ঐ অবস্থায় বন্টন হবে তিনের উপর। কেননা, সেখানে ইচ্ছাপূর্বক হত্যার সঙ্গেও সামঞ্জস্য রয়েছে।
সহীহ বুখারী শরীফে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ (রাঃ)-কে একটি সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দিয়ে খুযাইমা গোত্রের নিকট প্রেরণ করেন। তিনি তথায় গিয়ে তাদেরকে ইসলামের দিকে আহ্বান করেন। তারা ইসলাম গ্রহণ করলো বটে কিন্তু অজ্ঞতা বশতঃ (আরবী) অর্থাৎ আমরা ইসলাম গ্রহণ করলাম’-এ কথার পরিবর্তে (আরবী) অর্থাৎ আমরা বেদ্বীন হয়ে গেলাম এ কথা বললো। হযরত খালিদ (রাঃ) তাদেরকে হত্যা করতে আরম্ভ করেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট এ সংবাদ পৌছলে তিনি মহান আল্লাহর দরবারে হাত উঠিয়ে আরয করেনঃ “হে আল্লাহ! আমি খালিদ (রাঃ)-এর এ কার্যে আপনার নিকট অসন্তোষ প্রকাশ করছি এবং নিজেকে মুক্ত বলে ঘোষণা করছি।'
অতঃপর তিনি হযরত আলী (রাঃ)-কে খুযাইমা গোত্রের নিকট পাঠিয়ে দেন এবং তাদের নিহতদের রক্তপণ এবং আর্থিক সমস্ত ক্ষতিপূরণ আদায় করেন। এর দ্বারা জানা যাচ্ছে যে, ইমাম বা তাঁর প্রতিনিধির ভুলের বোঝা বায়তুলমালকেই বহন করতে হবে।
অতঃপর আল্লাহ তা'আলা বলেন-‘রক্তপণ ওয়াজিব বটে, কিন্তু যদি নিহত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজন স্বেচ্ছায় রক্তপণ ক্ষমা করে দেয় তবে তা করার অধিকার তাদের রয়েছে। তারা ওটা সাদকা হিসেবে ক্ষমা করে দিতে পারে। এরপর ঘোষণা করা হচ্ছে- নিহত ব্যক্তি যদি মুসলমান হয় কিন্তু তার আত্মীয়-স্বজন। অমুসলিম রাষ্ট্রের কাফির হয় তবে হত্যাকারীর দায়িত্বে রক্তপণ নেই। ঐ অবস্থায় তাকে শুধু গোলাম আযাদ করতে হবে। আর যদি নিহত ব্যক্তির অলী ও উত্তরাধিকারী এমন সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হয়, যাদের সঙ্গে তোমাদের সন্ধি ও চুক্তি রয়েছে, তবে রক্তপণ আদায় করতে হবে। আর যদি নিহত ব্যক্তি কাফির হয় তবে কারও মতে পূর্ণ রক্তপণ দিতে হবে, কারও মতে অধিক দিতে হবে এবং কারও মতে এক তৃতীয়াংশ দিতে হবে। এর বিস্তারিত বিবরণ আহকামের পুস্তকগুলোতে দ্রষ্টব্য। হত্যাকারীকে একজন মুমিন গোলাম আযাদ করতে হবে। দারিদ্রতা বশতঃ যদি কোন ব্যক্তি তাতে সক্ষম না হয় তবে তাকে ক্রমাগত দু'মাস রোযা রাখতে হবে। রোগ, হায়েয, নিফাস ইত্যাদির মত কোন শরীয়ত সম্মত ওযর ছাড়াই মধ্যে কোন একদিন যদি রোযা ছেড়ে দেয় তবে আবার নতুনভাবে রোযা শুরু করতে হবে। সফরের ব্যাপারে দুটি উক্তি রয়েছে। প্রথম উক্তি এই যে, এটাও একটি শরীয়ত সমর্থিত ওযর। দ্বিতীয় উক্তি এই যে, এটা একটি শরীয়ত সমর্থিত ওযর নয়।
এরপরে বলা হচ্ছে- ভ্রমবশতঃ হত্যার তাওবার উপায় এই যে, গোলাম আযাদ করতে না পারলে ক্রমাগত দুমাস রোযা রাখতে হবে। যদি রোযা রাখতেও সক্ষম না হয় তবে ষাটটি মিসকীনকে খানা খেতে দেয়া তার উপর ওয়াজিব কি-না এ ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। একটি উক্তি এই যে, রোযা রাখতে না পারলে ৬০টি মিসকীনকে খানা খেতে দিতে হবে। যেমন যিহারের কাফফারায় রয়েছে। সেখানে স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। কিন্তু এখানে স্পষ্টভাবে বর্ণনা না করার কারণ এই যে, এটা হচ্ছে ভীতি প্রদর্শনের স্থান। সুতরাং সহজ পন্থা যদি বলে দেয়া হতো তবে আতংক ও সন্ত্রাস এতটা প্রকাশ পেতো না। দ্বিতীয় উক্তি এই যে, রোযার পরে আর কিছুই নেই। যদি থাকতো তবে সাথে সাথেই বর্ণনা করে দেয়া হতো। প্রয়োজনের সময় হতে বর্ণনাকে পিছিয়ে দেয়া ঠিক নয়। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, বিজ্ঞানময়’ -এর তাফসীর ইতিপূর্বে কয়েক জায়গায় বর্ণিত হয়েছে।
ভ্রমবশতঃ হত্যার বর্ণনার পর এখন ইচ্ছাপূর্বক হত্যার বর্ণনা দেয়া হচ্ছে। এর কঠিন ভীতিযুক্ত শাস্তির কথা বলা হচ্ছে। এটা এমন একটা পাপ যাকে শিকের সঙ্গে মিলিয়ে দেয়া হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ ‘মুমিন তারাই যারা আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে মা’বৃদরূপে খাড়া করে না এবং তারা কোন ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে না।' (২৫:৬৮)
অন্য জায়গায় ঘোষিত হচ্ছেঃ (আরবী) (৬:১৫১) এখানেও আল্লাহ তা'আলা হারামকৃত কার্যাবলীর বর্ণনা দিতে গিয়ে শির্ক ও হত্যার বর্ণনা দিয়েছেন। এ বিষয়ে আরও বহু আয়াত ও হাদীস রয়েছে।
সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের মধ্যে হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম রক্তের ফায়সালা করা হবে। সুনান-ই-আবি দাউদে হযরত উবাদা ইবনে সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ মুমিন পুণ্যে ও মঙ্গলে বেড়ে চলে যে পর্যন্ত না সে অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করে। যখন সে এটা করে তখন সে ধ্বংস হয়ে যায়। অন্য হাদীসে রয়েছে যে, আল্লাহ আ'আলার নিকট সারা জগতের পতন একজন মুসলমানের হত্যা অপেক্ষা হালকা।
অন্য হাদীসে রয়েছে যে, যদি সারা ভূপৃষ্ঠের ও আকাশের অধিবাসী একজন মুসলমানকে হত্যার কাজে একত্রিত হয় তবে আল্লাহ সকলকেই উল্টো মুখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। আর একটি হাদীসে রয়েছে যে, যে ব্যক্তি কোন মুসলমানকে হত্যার ব্যাপারে অর্ধেক কথা দিয়েও সাহায্য করে, সে কিয়ামতের দিন ঐ অবস্থায় উঠবে যে, তার কপালে লিখা থাকবেঃ এ ব্যক্তি আল্লাহর করুণা হতে বঞ্চিত।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর উক্তি তো এই যে, যে ব্যক্তি মুমিনকে ইচ্ছাপূর্বক হত্যা করে তার তাওবা কবুলই হয় না। কুফাবাসী এ মাসআলায় মতভেদ করলে হযরত ইবনে যুবাইর (রঃ) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) -কে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেন। তখন তিনি বলেন (২৫:৬৮) -এটা শেষ আয়াত যাকে অন্য কোন আয়াত রহিত করেনি। তিনি আরও বলেনঃ (আরবী) -এ আয়াতটি মুশরিকদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়।
অতএব যখন কোন লোক ইসলামের অবস্থায় শরীয়ত সমর্থিত কারণ ছাড়াই কোন মুসলমানকে হত্যা করে তার শাস্তি জাহান্নাম এবং তার তাওবা গ্রহণীয় হবে না। হযরত মুজাহিদ (রঃ) যখন হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর এ বর্ণনাটি শ্রবণ করেন তখন বলেন, কিন্তু যে অনুতপ্ত হয়। হযরত সালেম ইবনে আবুল জাদ (রঃ) বলেন, হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) যখন অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন সে সময় একদা আমরা তাঁর নিকটে বসেছিলাম। এমন সময় একটি লোক এসে তাকে উচ্চৈঃস্বরে ডাক দিয়ে বলে, “যে ব্যক্তি কোন মুমিনকে জেনে শুনে হত্যা করে তার সম্বন্ধে আপনি কি বলেন? তিনি বলেন, তার শাস্তি জাহান্নাম যার মধ্যে সে সদা অবস্থান করবে। আল্লাহ তাআলা তার উপর রাগান্বিত, তার উপর তার অভিসম্পাত রয়েছে এবং তার জন্যে রয়েছে ভীষণ শাস্তি।' লোকটি পুনরায় জিজ্ঞেস করে, যদি সে তাওবা করতঃ ভাল কাজ করে এবং হিদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়?' তিনি বলেন, তার মা তার জন্যে ক্রন্দন করুক, তার তাওবা ও সুপথ প্রাপ্তি কোথায়? যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তার শপথ! আমি তোমাদের নবী (সঃ) হতে শুনেছি ও তার মা তার জন্যে কাঁদুক, যে কোন মুমিনকে জেনে শুনে হত্যা করেছে সে নিহত ব্যক্তি কিয়ামতের দিন তাকে স্বীয় ডান বা বাম হস্তে ধরে নিয়ে রহমানের আরশের সামনে আনবে এবং ডান হাতে বা বাম হাতে স্বীয় মস্তক ধারণ করবে। তার শিরায় শিরায় রক্ত টগবগ করবে এবং সে আল্লাহ তা'আলাকে বলবে হে আল্লাহ! সে আমাকে কেন হত্যা করেছিল তা তাকে জিজ্ঞেস করুন। যে আল্লাহর হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! এ আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়র পর রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর মৃত্যু পর্যন্ত একে রহিতকারী কোন আয়াত অবতীর্ণ হয়নি।
অন্য বর্ণনায় এটুকু বেশীও রয়েছেঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ)- এর ইন্তেকালের পর কোন অহী অবতীর্ণ হবে না।' হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত (রাঃ), হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ), হযরত আবু সালমা ইবনে আবদুর রহমান (রাঃ), হযরত উবাইদুল্লাহ ইবনে উমায়ের (রঃ), হযরত কাতাদাহ্ (রঃ) এবং হযরত যহহাকও (রঃ) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর মতের সঙ্গে রয়েছেন।
তাফসীর-ই-ইবনে মিরদুওয়াই-এর মধ্যে রয়েছে যে, কিয়ামতের দিন নিহত ব্যক্তি স্বীয় হত্যাকারীকে ধরে আল্লাহ তা'আলার সামনে নিয়ে আসবে এবং অন্য হাতে স্বীয় মস্তক ধারণ করবে, অতঃপর বলবেঃ “ হে আমার প্রভু! সে আমাকে কেন হত্যা করেছিল তা তাকে জিজ্ঞেস করুন। তখন হত্যাকারী বলবে, আমি তাকে হত্যা করেছিলাম যেন আপনার মর্য য়। তখন আল্লাহ তা'আলা বলবেনঃ “নিশ্চয়ই ওটা আমার জন্যে।
অন্য একজন নিহত ব্যক্তি তার হত্যাকারীকে ধরে নিয়ে আসবে এবং বলবেঃ “হে আমার প্রভু! এ লোকটি কেন আমাকে হত্যা করেছিল তা তাকে জিজ্ঞেস করুন।' হত্যাকারী তখন বলবে, আমি তাকে হত্যা করেছিলাম যেন অমুকের সম্মান বৃদ্ধি পায়। তখন আল্লাহ তা'আলা বলবেনঃ ‘ওটা তার জন্যে নয়। তুমি তার পাপের বোঝা নিয়ে ফিরে যাও।' অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে, সত্তর বছরে সে ঐ গর্তের তলদেশে পৌছবে।
মুসনাদ-ই-আহমাদে হযরত মুআবিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ “খুব সম্ভব আল্লাহ তা'আলা প্রত্যেক পাপ মার্জনা করবেন, কিন্তু শুধু ঐ ব্যক্তিকে (ক্ষমা করবেন না) যে কুফরীর অবস্থায় মারা যায়, অথবা ঐ ব্যক্তিকে (মার্জনা করবেন না) যে কোন মুমিনকে ইচ্ছাপূর্বক হত্যা করে ।
তাফসীর-ই-ইবনে মিরদুওয়াই-এর মধ্যে ইবনে যাকারিয়া (রঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি উম্মু দারদা (রাঃ) হতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি আবু দারদা (রাঃ) হতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ “খুব সম্ভব আল্লাহ্ তা'আলা সমস্ত পাপ মার্জনা করবেন, কিন্তু (মার্জনা করবেন না) যে মুশরিক হয়ে মরেছে বা যে কোন মুমিনকে ইচ্ছাপূর্বক হত্যা করেছে।” এ হাদীসটি দুর্বল। হযরত মু'আবিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসটিই রক্ষিত।
তাফসীর-ই-ইবনে মিরদুওয়াই-এর মধ্যে হযরত ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি কোন মুমিনকে ইচ্ছাপূর্বক হত্যা করে, সে মহাসম্মানিত আল্লাহর সঙ্গে কুফরী করে।' এ হাদীসটি মুনকার এবং এর ইসনাদেও বহু সমালোচনা রয়েছে।
মুসনাদ-ই-আত্মাদে রয়েছে, হযরত হুমায়েদ (রঃ) বলেন, আমার নিকট হযরত আবুল আলিয়া আগমন করেন। সে সময় আমার নিকট আমার এক বন্ধুও ছিলেন। তিনি আমাদেরকে বলেন, “তোমরা দু'জন আমার অপেক্ষা বয়সে ছোট এবং আমার চেয়ে তোমাদের হাদীসও বেশী মনে রয়েছে, চল আমরা বাশার ইবনে আসেম (রঃ)-এর নিকট গমন করি। আমরা তথায় পৌছলে হযরত আবুল আলিয়া (রঃ) হযরত বাশার (রঃ)-কে বলেনঃ ‘এদেরকেও ঐ হাদীসটি শুনিয়ে দিন। তিনি তখন হাদীসটি শুনাতে আরম্ভ করেন। হযরত উকবা ইবনে মালিক লাইসী (রাঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একটি ছোট সেনাদল প্রেরণ করেন। তারা একটি গোত্রের উপর আক্রমণ চালায়। গোত্রের লোকগুলো পালিয়ে যায়। তাদের সাথে অন্য একটি লোকও পালিয়ে যাচ্ছিল। মুসলিম সৈন্যদের একজন তার পশ্চাদ্ধাবন করে এবং খোলা তরবারী নিয়ে তার নিকট পৌছে যায়। তখন লোকটি বলে, 'আমি তো মুসলমান। মুসলিম সৈন্যটি তার কথার উপর কোনই গুরুত্ব না দিয়ে তাকে হতা করে ফেলে। এ সংবাদ শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হন এবং কঠোর উক্তি করেন। হত্যাকারীও এ সংবাদ পেয়ে যায়। একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) ভাষণ দিচ্ছিলেন। এমন সময় ঐ হত্যাকারী বলে, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! লোকটি তো এ কথা শুধু প্রাণ রক্ষার উদ্দেশ্যেই বলেছিল। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তার দিক হতে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেন এবং ভাষণ দিতেই থাকেন। লোকটি দ্বিতীয়বার ঐ কথাই বলে। কিন্তু এবারেও রাসূলুল্লাহ (সঃ) মুখ ফিরিয়ে নেন। সে ধৈর্য ধারণ করতে না পেরে তৃতীয়বার বলে, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! লোকটি তো শুধু প্রাণ বাঁচানোর উদ্দেশ্যেই এ কথা বলেছিল। এবার রাসূলুল্লাহ (সঃ) তার প্রতি মননাযোগী হন এবং তার চেহারায় অসন্তোষের লক্ষণ প্রকাশ পায়, তিনি বলেনঃ 'নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা মুমিনের হত্যাকারীর উপর অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এ কথা তিনি তিনবার বলেন। এ বর্ণনাটি সুনান-ই-নাসাঈর মধ্যেও রয়েছে।
অতএব একটি মাযহাব তো হলো এই যে, জেনে শুনে হত্যাকারীর তাওবা গ্রহণীয় নয়। দ্বিতীয় মাযহাব এই যে, তাওবা তার ও আল্লাহ তা'আলার মাঝে রয়েছে। পূর্ববর্তী ও পরবর্তী জমহরের মাযহাব এটাই যে, সে যদি তাওবা করে, আল্লাহ তা'আলার দিকে প্রত্যাবর্তিত হয়, বিনয় প্রকাশ করে এবং সৎকার্যাবলী সম্পাদন করতে থাকে তবে আল্লাহ তাআলা তার তাওবা গ্রহণ করবেন এবং নিহত ব্যক্তিকে স্বীয় পক্ষ হতে বিনিময় প্রদান করতঃ সন্তুষ্ট করবেন। আল্লাহ তা'আলা : (আরবী) হতে (আরবী) (২৫:৬৮-৬৯) পর্যন্ত আয়াত গুলোর মধ্যে যা বলেছেন তা হচ্ছে (আরবী) এবং (আরবী) -এর মধ্যে রহিতকরণের সম্ভাবনাই নেই। আর ঐ আয়াতটি মুশরিকদের জন্যে এবং এ আয়াতকে মুমিনের জন্যে নির্দিষ্ট করা প্রকাশ্যের বিপরীত এবং কোন দলীলের মুখাপেক্ষী। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা সবচেয়ে ভাল জানেন।
আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ হে আমার ঐ বান্দারা যারা নিজেদের জীবনের উপর বাড়াবাড়ি করেছো, তোমরা আমার করুণা হতে নিরাশ হয়ো না।' (৩৯:৫৩) এ আয়াতটি সাধারণ, সুতরাং কুফরী, শিরুক, নিফাক, হত্যা ইত্যাদি সমস্ত পাপই এর অন্তর্ভুক্ত। এসব পাপকার্যে লিপ্ত হবার পর যে ব্যক্তি আল্লাহ তা'আলার দিকে প্রত্যাবর্তিত হয় এবং তাওবা করে, আল্লাহ তা'আলা তাকে ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবী) (৪:৪৮)-এ আয়াত দ্বারা জানা যাচ্ছে যে, আল্লাহ তা'আলা শিরুক ছাড়া অন্যান্য সমস্ত পাপ ইচ্ছে করলে ক্ষমা করে দেবেন। এটা তাঁর একটা বড় অনুকম্পা যে, তিনি এ সূরার মধ্যেই এখন আমরা যে আয়াতের তাফসীর করছি এর পূর্বে একবার স্বীয় সাধারণ ক্ষমার আয়াত বর্ণনা করেছেন। এ আয়াতের পরই অনুরূপভাবে স্বীয় সাধারণ ক্ষমার কথা পুনরায় ঘোষণা করেছেন যেন আশা দৃঢ় হয়।
এখানে সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের ঐ হাদীসটিও উল্লেখযোগ্য যাতে রয়েছে যে, বানী ইসরাঈলের মধ্যে একজন লোক একশোটি লোককে হত্যা করেছিল। অতঃপর সে একজন আলেমকে জিজ্ঞেস করে, “আমার তাওবা গৃহীত হবে কি? তিনি উত্তরে বলেন, তোমার মধ্যে ও তোমার তাওবার মধ্যে কে প্রতিবন্ধক হবে?' অতঃপর তিনি তাকে পুণ্যময় শহরে গিয়ে আল্লাহ তা'আলার ইবাদত করতে বলেন। অতএব সে ঐ শহরে হিজরতের উদ্দেশ্যে বের হয়। পথে সে মৃত্যু মুখে পতিত হয় এবং রহমতের ফেরেশতা এসে তাকে নিয়ে যান। এ হাদীসটিকে পূর্ণভাবে কয়েক জায়গায় বর্ণনা করা হয়েছে। বানী ইসরাঈলের মধ্যেই যখন ক্ষমার এ ব্যবস্থা রয়েছে তখন আমাদের মধ্যে তো সে ক্ষমার ব্যবস্থা বহুগুণে বেশী থাকা উচিত। কেননা, বানী ইসরাঈল এমন বহু অন্যায় কাজে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল যা থেকে আল্লাহ পাক আমাদেরকে মুক্ত রেখেছেন। আর তিনি বিশ্ব শান্তির দূত ও নবীদের নেতা হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-কে পাঠিয়ে এমন ধর্ম তিনি আমাদেরকে দান করেছেন যা আকাশেও শান্তিদায়ক এবং পৃথিবীতেও শান্তিদায়ক। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে সরল ও পরিষ্কার ধর্ম। কাজেই এখানে হত্যাকারীর তাওবার দরজা বন্ধ হবে কেন?
তাহলে এখানে হত্যাকারীর যে শাস্তির বর্ণনা দেয়া হয়েছে তার ভাবার্থ এই যে, তার শাস্তি হচ্ছে এই যদি আল্লাহ তা'আলা শাস্তি দেন। যেমন আবু হুরাইরা (রাঃ) এবং পূর্বযুগীয় মনীষীদের একটি দল একথাই বলেন। এমনকি এ অর্থবোধক একটি হাদীসও তাফসীর-ই-ইবনে মিরদুওয়াই-এর মধ্যে রয়েছে। কিন্তু সনদ হিসেবে হাদীসটি বিশুদ্ধ নয়। অনুরূপভাবে প্রত্যেক শাস্তির ভয় প্রদর্শনের ভাবার্থ এই যে, ওর পিছনে যদি কোন সৎ আমল না থাকে তবে সে পাপের শাস্তি ওটাই হবে যে শাস্তির ভয় প্রদর্শন করা হয়েছে ।
শাস্তির ভয় প্রদর্শনের ব্যাপারে আমাদের নিকট সঠিক ও উত্তম পন্থা এটাই। সত্য সম্বন্ধে আল্লাহ তা'আলাই ভাল জানেন। আর হত্যাকারীর জাহান্নামী হওয়ার ব্যাপারেও এটা প্রযোজ্য যে, সে চিরদিন জাহান্নামে থাকবে না। তার জাহান্নামী হওয়া হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর উক্তি অনুসারে তাওবা গৃহীত না হওয়ার কারণেই হোক বা জমহূরের উক্তি অনুযায়ী ওর পিছনে কোন সন্ধার্য থাকার কারণেই হোক।
এখানে (আরবী) শব্দের ভাবার্থ হচ্ছে বহুদিন অবস্থান-চিরদিন অবস্থান নয়। যেমন হাদীস-ই-মুতাওয়াতির দ্বারা সাব্যস্ত আছে যে, জাহান্নাম থেকে ঐ ব্যক্তিও বের হবে যার অন্তরে সরিষার ছোট দানা পরিমাণও ঈমান রয়েছে। উপরে যে একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে যাতে বলা হয়েছেঃ “খুব সম্ভব আল্লাহ তা'আলা প্রত্যেক পাপই ক্ষমা করে দেবেন, কিন্তু (ক্ষমা করবেন না) যে কাফির হয়ে যাবে বা যে ব্যক্তি কোন মুমিনকে জেনে শুনে হত্যা করবে।” এ হাদীসে (আরবী) শব্দটি হচ্ছে (আরবী) বা আশা উদ্দীপক। তাহলে এ দু' অবস্থায় (কুফরী ও মুমিন হত্যা) যদিও আশা উঠে যায়, কিন্তু সংঘটন অর্থাৎ এরূপ ঘটে যাওয়া এ দুটোর মধ্যে একটিতে উঠে যায় না এবং সেটা হচ্ছে হত্যা। কেননা, শির্ক ও কুফরীর ক্ষমা না হওয়া তো কুরআন মাজীদের শব্দ দ্বারাই সাব্যস্ত হয়েছে। আর যে হাদীসগুলোর মধ্যে বর্ণিত হয়েছে যে, হত্যাকারী নিহত ব্যক্তিকে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার নিকট ধরে আনবে সেগুলোও সম্পূর্ণরূপে সঠিক। এতে মানুষের অধিকার রয়েছে বলে তাওবা দ্বারা এ পাপ ক্ষমা হতে পারে না। বরং মানুষের হক তো তাওবার অবস্থাতেও হকদারকে পৌছিয়ে দিতে হবে। এতে যেমন হত্যা রয়েছে দ্রুপ চুরি, জবরদখল, অপবাদ এবং অনান্য হককুল ইবাদও রয়েছে। এগুলো তাওবা দ্বারা ক্ষমা না হওয়া ইজমা দ্বারা প্রমাণিত। এ অবস্থায় তাওবার বিশুদ্ধতার জন্যে শর্ত হলো প্রাপকদের প্রাপ্যগুলো আদায় করে দেয়া। আর আদায় করা যখন অসম্ভব তখন কিয়ামতের দিন দাবীদারগণ দাবী অবশ্যই করবে। কিন্তু দাবী করলেই যে শাস্তি ঘটেই যাবে এটা জরুরী নয়। এও সম্ভব যে, হত্যাকারীর সমস্ত ভাল কাজের পুণ্য নিহত ব্যক্তিকে দেয়া হবে বা আংশিক পূণ্য দেয়া হবে এবং তাকে দেয়ার পরেও হয়তো হত্যাকারীর নিকট কিছু পণ্য থেকেও যাবে, আর ওর বিনিময়ে হয়তো আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন। আবার এটাও অসম্ভব নয় যে, আল্লাহ তা'আলা স্বীয় পক্ষ হতে নিহত ব্যক্তিকে হর, প্রাসাদ, উচ্চ মর্যাদা এবং জান্নাত দিয়ে তার দাবী পূরণ করবেন এবং ওরই বিনিময়ে হয়তো সে তার হন্তাকে খুশী মনে ক্ষমা করে দেবে, ফলে আল্লাহ তাআলাও তাকে মাফ করবেন। এ বিষয়ে আল্লাহ তা'আলা সবচেয়ে ভাল জানেন। ইচ্ছাপূর্বক হত্যাকারীর জন্যে কিছু ইহলৌকিক নির্দেশ রয়েছে এবং কিছু পারলৌকিক নির্দেশ রয়েছে।
ইহজগতে তার উপর আল্লাহ তা'আলা নিহত ব্যক্তির অভিভাবককে প্রভুত্ব দান করেছেন। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ যে ব্যক্তির অন্যায়ভাবে নিহত হয়েছে, আমি তার অভিভাবককে প্রভুত্ব দান করেছি।' (১৭:৩৩) তার অধিকার রয়েছে যে, প্রতিশোধ নিতে পারে অর্থাৎ হত্যাকারীকেও হত্যা করাতে পারে কিংবা ক্ষমা করতে পারে, রক্তপণও আদায় করতে পারে। এর রক্তপণও খুব কঠিন। এটা তিন ভাগে বিভক্ত। (১) ত্রিশটি দিতে হবে ঐ উট যেগুলোর বয়স তিন বছর পার হয়ে চতুর্থ বছরে। পড়েছে। (২) ত্রিশটি দিতে হবে ঐ উট যেগুলো পঞ্চম বছরে পড়েছে। (৩) চল্লিশটি দিতে হবে গর্ভবতী উষ্ট্রী। এগুলো আহকামের পুস্তকসমূহে সাব্যস্ত রয়েছে। সজ্ঞানে হত্যাকারীর উপর গোলাম আযাদ করা বা একাধিক্রমে দু'মাস রোযা রাখা অথবা ষাটটি মিসকীনকে খানা খাওয়ানোর ব্যবস্থা রয়েছে কি-না সে ব্যাপারে ইমামগণের মতভেদ রয়েছে।
ইমাম শাফিঈ (রঃ) ও তাঁর সহচরগণের ও আলেমদের একটি দলের উক্তি এই যে, ভ্রমবশতঃ হত্যায় যখন এ ব্যবস্থা রয়েছে তখন ইচ্ছাপূর্বক হত্যায় থাকাতে আরও যুক্তিযুক্ত। ঐগুলোর উপর উত্তর হিসেবে শরীয়ত অসম্মত, মিথ্যা শপথের কাফফারা পেশ করা হয়েছে এবং তাঁরা ইচ্ছাপূর্বক ছেড়ে দেয়া নামাযের কাযাকে তার ওযর বানিয়েছেন, যেমন ভুলের সময় তার উপর ইজমা রয়েছে।
ইমাম আহমাদ (রঃ)-এর সহচরগণ এবং অন্যান্যগণ বলেন যে, ইচ্ছাপূর্বক হত্যা কাফফারা হতে অনেক বড়। এজন্যেই তাতে কাফফারা নেই। অনুরূপভাবে মিথ্যা শপথ এবং ঐ দু’ অবস্থায়ও ইচ্ছাপূর্বক ছেড়ে দেয়া নামাযের মধ্যে পার্থক্য করণের তাঁদের কোন পথ নেই। কেননা, তারা ইচ্ছাপূর্বক ছেড়ে দেয়া নামাযের কাযা ওয়াজিব হওয়ার সমর্থক। পূর্বদলের একটি দলীল মুসনাদ-ই-আহমাদে বর্ণিত নিম্নের হাদীসটিও বটেঃ হযরত গারীফ ইবনে আইয়াশ আদদায়লামী (রঃ) বলেন, আমরা হযরত ওয়াসিলা ইবনে আসকা। (রাঃ)-এর নিকট এসে বলি, আমাদেরকে এমন একটি হাদীস শুনিয়ে দিন যাতে কোন কম বেশী থাকবে না।' একথা শুনে তিনি খুব অসন্তুষ্ট হন এবং বলেন-‘তোমরা যখন কুরআন কারীম নিয়ে পাঠ কর তখন তাতে কম বেশী কর না কি?' তখন আমরা বলি, আমাদের উদ্দেশ্য এই যে, যা আপনি স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সঃ) হতে শুনেছেন। তিনি তখন বলেন, আমরা আমাদের এমন একটি লোকের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট গিয়েছিলাম যে লোকটি হত্যার কারণে নিজেকে জাহান্নামী করে নিয়েছিল। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “তার পক্ষ হতে একটি দাসকৈ মুক্ত কর। তার এক একটি অঙ্গের বিনিময়ে আল্লাহ ঐ লোকটির এক একটি অঙ্গ জাহান্নাম হতে মুক্ত করবেন।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings