Surah An Nisa Tafseer
Tafseer of An-Nisa : 9
Saheeh International
And let those [executors and guardians] fear [injustice] as if they [themselves] had left weak offspring behind and feared for them. So let them fear Allah and speak words of appropriate justice.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
৭ হতে ১০ নং আয়াতের তাফসীর:
ইসলাম-পূর্বযুগে আরব ও অনারব জাতিসমূহের মধ্যে প্রভাবশালী ও ক্ষমতাসীনদের অন্যতম একটি জুলুম ছিল যে, তারা দুর্বল শ্রেণি, মহিলা, ইয়াতীম ও ছোট বাচ্চাদেরকে ওয়ারিশ দিত না। প্রথমত: তাদের কোন উত্তরাধিকার স্বীকারই করত না, দ্বিতীয়তঃ অধিকার স্বীকার করা হলেও পুরুষদের থেকে তা আদায় করে নিতে পারত না। আরবদের নিয়মই ছিল- যারা অশ্বারোহণ করে এবং যুদ্ধে শত্র“র মোকাবেলা করতে সক্ষম, কেবল তারাই সমস্ত মালের অধিকারী হবে।
ইসলাম সর্বপ্রথম নারী-পুরুষ, ইয়াতীম, ছোট-বড় ও দুর্বল নির্বিশেষে সকলের ন্যায্য অধিকার প্রদান করে। এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলে দিলেন, পুুরুষের মত মহিলা ও ছোট ছেলে-মেয়েরাও তাদের পিতা-মাতার এবং আত্মীয়দের সম্পদের উত্তরাধিকারী হবে। সে সম্পদ কম হোক আর বেশি হোক। কম সম্পদ তুচ্ছ মনে করে মহিলা বা ছোটদেরকেও উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না, আর বেশি সম্পদের লোভ সামলাতে না পেরে তাদেরকে বঞ্চিত করা যাবে না। সুতরাং নারী-পুরুষ সকলেই উত্তরাধিকার থেকে বণ্টননীতি অনুযায়ী সম্পদ পাবে।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে এমন একটি ঘটনা ঘটেছে, তা হল- আউস বিন সাবেত (রাঃ) স্ত্রী, দু’কন্যা ও একটি নাবালেগ পুত্র রেখে মারা যান। পূর্বের নীতি অনুযায়ী তার দুই চাচাত ভাই এসে তার সম্পত্তি দখল করে নেয় এবং সন্তান ও স্ত্রীকে বঞ্চিত করে। আউসের স্ত্রী নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে অভিযোগ জানালেন যে, তার চাচাত ভায়েরা সমস্ত সম্পদ দখল করে নিয়েছে। আমাকে ও আমার সন্তানকে বঞ্চিত করেছে, অথচ সম্পদ ছাড়া তাদেরকে বিবাহ দেয়া যাবে না। তখন পর্যন্ত উত্তরাধিকার সম্পর্কে কোন আয়াত অবতীর্ণ হয়নি। ফলে তিনি উত্তর দিতে বিলম্ব করলেন এবং পরে আয়াত নাযিল হলে জানিয়ে দিলেন যে, সমস্ত সম্পদের এক অষ্টমাংশ স্ত্রী পাবে, অবশিষ্ট সম্পদ কন্যার দ্বিগুণ ছেলেকে দেবে। আর চাচাত ভাই সন্তানদের তুলনায় নিকটবর্তী ছিল না তাই তারা বঞ্চিত হল।
(وَإِذَا حَضَرَ الْقِسْمَةَ)
‘আর যখন তা বণ্টনের সময়ে’ কেউ কেউ এ আয়াতকে মীরাসের আয়াত দ্বারা রহিত বলে গণ্য করেছেন। সঠিক কথা হল, তা রহিত হয়নি। বরং এতে রয়েছে অতি গুরুত্বপূর্ণ এক নৈতিক কর্তব্যের ওপর তাকীদ। তা হল, সাহায্যের অধিকারী আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে যারা মীরাসের অংশীদার নয়, তাদেরকে বণ্টনের সময় কিছু দিয়ে দাও। আর তাদের সাথে কথা বল স্নেহ ও ভালবাসা জড়িত কণ্ঠে, ধন-সম্পদ আসতে দেখে কারূণ ও ফিরআউন হয়ে যেও না।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: লোকেদের ধারণা উক্ত আয়াতটি মানসূখ হয়ে গেছে; কিন্তু আল্লাহ তা‘আলার কসম! আয়াতটি মানসূখ হয়নি; বরং লোকেরা এর ওপর আমল করতে অনীহা প্রকাশ করছে। আত্মীয় দু’ ধরণের: (এক) এমন আত্মীয় যারা ওয়ারিশ হয় এবং তারা উপস্থিতদের কিছু দেবে। (দুই) এমন আত্মীয় যারা ওয়ারিশ নয়, তারা উপস্থিতদের সঙ্গে সদালাপ করবে এবং বলবে তোমাদের কিছু দেয়ার ব্যাপারে আমাদের কোন অধিকার নেই। (সহীহ বুখারী হা: ২৭৫৯, সহীহ মুসলিম হা: ৫৮)
(وَلْيَخْشَ الَّذِيْنَ لَوْ تَرَكُوْا)
‘আর যারা নিজেদের পশ্চাতে নিজেদের অসমর্থ সন্তানদেরকে ছেড়ে যাবে...’ এখানে কাকে সম্বোধন করা হয়েছে এ নিয়ে কয়েকটি মতামত পাওয়া যায়।
১. কেউ বলেন: যাদেরকে অসীয়ত করা হয় তাদেরকে বুঝানো হয়েছে। যে ব্যক্তি মুমূর্ষু অবস্থায় অসীয়ত করে তাকে নির্দেশ দেবে যাতে ন্যায়সঙ্গতভাবে অসিয়ত করে। কোন অবস্থাতেই যেন এক তৃতীয়াংশের বেশি অসীয়ত না করে।
২. কেউ বলেন: এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল ইয়াতীম, ছোট বাচ্চা, দুর্বল শ্রেণিদের অভিভাবক ইত্যাদি। তারা এ সকল ইয়াতীম দুর্বলদের জন্য সদা কল্যাণকর কাজে সচেষ্ট হবে।
যেন তারা তাদের সম্পদ ব্যয় করে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতের কল্যাণের জন্য কাজ করে। যেমন নিজেদের সন্তানের সর্বদা কল্যাণ কামনা করে। (তাফসীর সা‘দী: পৃঃ ১৪৬)
(إِنَّمَا يَأْكُلُوْنَ فِيْ بُطُوْنِهِمْ نَارًا)
‘তারা তো নিজেদের পেটে কেবল আগুনই ভক্ষণ করে’ অর্থাৎ যখন বিনা কারণে ইয়াতীমদের সম্পদ খাবে তখন যেন জাহান্নামের আগুনই খেলো, কিয়ামাতের দিন তা তাদের পেটে উত্তপ্ত করা হবে।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্বক অপরাধ থেকে বেঁচে থাক। ১. আল্লাহ তা‘আলার সাথে শরীক করা, ২. জাদু করা, ৩. অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা করা, ৪. সুদ খাওয়া, ৫. ইয়াতীমের মাল খাওয়া, ৬. যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে আসা, ৭. সতী-সাধ্বী মুসলিম নারীকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া। (সহীহ বুখারী হা: ২৫৬৩)
সুতরাং উত্তরাধিকারের নির্ধারিত অংশ আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে মীমাংসিত, তা উপেক্ষা করে চলার কোন সুযোগ নেই। বরং আল্লাহ তা‘আলার এ বিধানের মধ্যে সকলের কল্যাণ নিহিত।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ইসলাম সর্বপ্রথম সুষ্ঠু উত্তরাধিকার ব্যবস্থা চালু করেছে।
২. উত্তরাধিকার বণ্টনের সময় যে সকল আত্মীয় অংশ পায় না, তাদের কিছু দেয়া মুস্তাহাব।
৩. মুমূর্ষু ব্যক্তিকে সৎ দিক-নির্দেশনা দেয়া উচিত।
৪. অন্যায়ভাবে ইয়াতিমের সম্পদ খেলে কী শাস্তি হবে তা জানতে পারলাম।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings