Surah An Nisa Tafseer
Tafseer of An-Nisa : 49
Saheeh International
Have you not seen those who claim themselves to be pure? Rather, Allah purifies whom He wills, and injustice is not done to them, [even] as much as a thread [inside a date seed].
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
৪৯-৫২ নং আয়াতের তাফসীর:
এ বিষয়ে সকল মুফাসসিরে কিরাম একমত যে, এ আয়াত ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানদের ব্যাপারে নাযিল হয়। কিন্তু এখানে “নিজেদেরকে পবিত্র মনে করা”এর অর্থ কী এ নিয়ে কয়েকটি বর্ণনা রয়েছে। যেমন:
হাসান বসরী ও কাতাদাহ (রহঃ) বলেন: ইয়াহূদীরা যে নিজেদেরকে পবিত্র মনে করে এর অর্থ হল: তারা বলে, আমরা আল্লাহ তা‘আলার ছেলে এবং প্রিয়পাত্র। (সূরা মায়িদাহ ৫:১৮)
তারা আরো বলে: কেবল ইয়াহূদী ও খ্রিস্টান ব্যতীত অন্য কেউ জান্নাতে যাবে না। (সূরা বাকরাহ ২:১১১) যহহাক (রহঃ) বলেন: তারা বলে, আমাদের কোন পাপ নেই, আমরা ছোট শিশুর মত নিষ্পাপ। আরো বলা হয় যে, এ আয়াতগুলো যারা নিজেদের আত্মপ্রশংসা ও ক্রটিমুক্ত মনে করে থাকে তাদের তিরস্কারের জন্য নাযিল হয়েছে। মোটকথা তারা নিজেরাই নিজেদের গুনাহ থেকে পবিত্র মনে করত, আল্লাহ তা‘আলার প্রিয়পাত্র বলে দাবী করত এবং আত্মপ্রশংসা করত।
এ সম্পর্কে হাদীসে এসেছে, মিকদাদ (রাঃ) বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন আমরা যেন মুখোমুখি প্রশংসাকারীদের মুখে ধুলা ছিটিয়ে দেই। (সহীহ মুসলিম হা: ৩০০২)
অন্যত্র নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: তোমরা মানুষের প্রশংসা করা থেকে বিরত থাক, কারণ তা যবাই করা। (ইবনু মাযাহ হা: ৩৭৪৩, সহীহ)
একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জনৈক ব্যক্তিকে অন্যের প্রশংসা করতে শুনলেন। তিনি বললেন: তোমার ধ্বংস হোক, তুমি তোমার সাথীর গর্দান কেটে দিলে। তারপর বললেন: তোমাদের কেউ যদি তার সাথীর প্রশংসা করতেই তাহলে যেন বলে: আমি তাকে এরূপ মনে করি, আল্লাহ তা‘আলার চেয়ে কাউকে পবিত্র করছি না। (সহীহ বুখারী হা:২৬৬২)
সুতরাং যে গুণ কারো মাঝে নেই এমন গুণের প্রশংসা করা এবং নিজের আত্মপ্রশংসা করা নিন্দনীয়। তাই অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা এ সকল ইয়াহুদ ও খ্রিস্টানসহ যারা তাদের মত মিথ্যা দাবী করবে, দোষ-ক্রটি ও অপরাধ থাকা সত্ত্বেও তা থেকে মুক্ত মনে করবে তাদেরকে তিরস্কার করছেন। বরং আল্লাহ তা‘আলা যাকে ইচ্ছা তার ঈমান, সৎ আমল, উত্তম চরিত্রে চরিত্রবান, খারাপ আচরণ থেকে মুক্ত থাকার কারণে তাকে পবিত্র করেন।
সাধারাণতঃ অধিকাংশ মানুষ আত্মপ্রশংসা করে থাকে অহমিকা বা আত্মগর্ব করে, তাছাড়া শেষ পরিণতি সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত কেউ জানেন না।
فَتِيلٌ এর অর্থ: খেজুরের আঁটির ফাটলে অতি সূক্ষ্ম ও পাতলা সুতোর মত যে অংশ থাকে সেটাকে ফাতীল বলা হয়। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা সামান্যটুকুও জুলুম করবেন না।
(يَفْتَرُوْنَ عَلَي اللّٰهِ الْكَذِبَ)
‘তারা আল্লাহ সম্পর্কে কিরূপ মিথ্যা অপবাদ দেয়’ অর্থাৎ ইয়াহূদী ও খ্রিস্টান নিজেদেরকে পবিত্র মনে করে, তারা আল্লাহ তা‘আলার ছেলে ও প্রিয়পাত্র এবং তারা ছাড়া কেউ জান্নাতে যাবে না ইত্যাদি দাবী করে আল্লাহ তা‘আলার ওপর মিথ্যারোপ করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, এটাই তাদের মিথ্যুক হবার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَلَا تُزَكُّوْآ أَنْفُسَكُمْ ط هُوَ أَعْلَمُ بِمَنِ اتَّقٰي)
“অতএব তোমরা নিজেদেরকে খুব পবিত্র মনে কর না, তিনিই ভাল জানেন মুত্তাকী কে।” (সূরা নাজম ৫৩:৩২)
৫১ নং আয়াতের শানে নুযূল:
একদা হুআই বিন আখতাব ও কা‘ব বিন আশরাফ মক্কায় আগমন করল। মক্কাবাসী বলল: তোমরা আহলে কিতাব ও জ্ঞানী মানুষ। আমাদেরকে আমাদের ও মুহাম্মাদের অবস্থান সম্পর্কে সংবাদ দাও। তারা বলল: তোমাদের সাথে মুহ্ম্মাাদের সম্পর্ক কী? তারা বলল: আমরা রক্ত সম্পর্ক বজায় রাখি, হাজীদের পানি পান করাই ইত্যাদি, আর মুহাম্মাদ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে, কতকগুলো চোর হাজী তাঁর অনুসরণ করে। আমরা উত্তম, না মুহাম্মাদ উত্তম? তারা বলল: তোমরা উত্তম এবং সঠিক পথের ওপর প্রতিষ্ঠিত। তখন এ আয়াত নাযিল হয়।
অত্র আয়াতে ইয়াহূদীদের কথা বলা হচ্ছে। তাদেরকে আসমানী কিতাব দেয়া সত্ত্বেও তারা জিবত তথা গণক ও জাদুতে বিশ্বাস করত এবং তাগুত তথা শয়তান ও প্রত্যেক মিথ্যা মা‘বূদে বিশ্বাস করত। অথচ এগুলো অস্বীকার করতে তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।
এছাড়াও জিবত ও তাগুতের আরো অনেক অর্থ রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
ان العيافة والطرق والطيرة من الجبت
(রাঃ) নিশ্চয়ই পাখি উড়িয়ে, রেখা টেনে সুলক্ষণ ও কুলক্ষণ নির্ণয় করা জিবতের উপরে ঈমান আনার শামিল। (আবূ দাঊদ হা: ৩৯০৭)
সাহাবী আনাস (রাঃ) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া যার ইবাদত করা হয় সে সব প্রত্যেক ব্যক্তি ও জিনিস তাগুত। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِیْ کُلِّ اُمَّةٍ رَّسُوْلًا اَنِ اعْبُدُوا اللہَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوْتَ)
“আল্লাহর ‘ইবাদত করার ও তাগূতকে বর্জন করার নির্দেশ দেবার জন্য আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল পাঠিয়েছি।”(সূরা নাহল ১৬:৩৬)
ইমাম ইবনু কায়্যিম (রহঃ) বলেন: তাগুত অনেক, তার মধ্যে পাঁচটি হল প্রধান, যথা- (১) আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া যার ইবাদত করা হয় এবং ঐ ইবাদতে সে সন্তুষ্ট, (২) যে ব্যক্তি গায়েব জানে বলে দাবী করে, (৩) শয়তান, (৪) যে ব্যক্তি নিজের ইবাদত করার প্রতি মানুষদেরকে আহ্বান করে এবং (৫) আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্যের বিধান দিয়ে ফায়সালা করা। (শরহু উসূলুস সালাসাহ)
সুতরাং তাগুতসহ অন্যান্য শির্কী বিষয় বর্জন না করা পর্যন্ত কোন ব্যক্তি মু’মিন হতে পারবে না যেমন ইয়াহূদীরা হতে পারেনি। যারা তাগুত মিশ্রিত দীন মানার চেষ্টা করবে, তাগুতের প্রতি বিশ্বাস রাখবে তাদের ওপর আল্লাহ তা’আলার লা’নত।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আত্মপ্রশংসা করা এবং নিজেকে ক্রটিমুক্ত মনে করা বৈধ নয়।
২. আল্লাহ তা‘আলা যাকে ইচ্ছা ঊর্ধ্ব জগতে তাঁর পবিত্রতা ও প্রশংসা বর্ণনা করেন।
৩. আল্লাহ তা‘আলা কারো ওপর বিন্দু পরিমাণ জুলুম করেন না।
৪. জিবত ও তাগুতকে অস্বীকার করা ওয়াজিব।
৫. জিবত ও তাগুতকে বিশ্বাস করা শির্ক।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings