Surah An Nisa Tafseer
Tafseer of An-Nisa : 33
Saheeh International
And for all, We have made heirs to what is left by parents and relatives. And to those whom your oaths have bound [to you] - give them their share. Indeed Allah is ever, over all things, a Witness.
Ibn Kathir Full
Tafseer 'Ibn Kathir Full' (BN)
বহু মুফাসসির হতে বর্ণিত আছে যে, শব্দের ভাবার্থ হচ্ছে ‘উত্তরাধিকারী'। কারও কারও মতে এর ভাবার্থ হচ্ছে ‘আসাবা'। পিতৃব্য পুত্রদেরকেও ‘মাওলা বলা হয়। যেমন হযরত ফযল ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর নিম্নের কবিতায় রয়েছেঃ (আরবী) সুতরাং আয়াতের ভাবার্থ হল এই যে, হে জনগণ! তোমাদের মধ্য হতে প্রত্যেকের জন্যে আমি আসাবা বানিয়ে দিয়েছি যারা সে মালের উত্তরাধিকারী হবে যা তাদের পিতা-মাতা এবং আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে যাবে। আর যারা তোমাদের মুখের ভাই তাদেরকে তাদের উত্তরাধিকারের অংশ প্রদান কর। যেমন শপথের সময় তোমাদের মধ্যে অঙ্গীকার হয়েছিল।
এটা ছিল ইসলামের প্রাথমিক যুগের নির্দেশ। পরে এটা রহিত হয়ে যায় এবং নির্দেশ দেয়া হয় যে, যাদের সাথে অঙ্গীকার করা হয়েছে সে অঙ্গীকার ঠিক রাখতে হবে এবং তাদেরকে ভুলে যাওয়া চলবে না, কিন্তু তারা মীরাস পাবে না। সহীহ বুখারী শরীফে রয়েছে, হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, (আরবী) শব্দের ভাবার্থ হচ্ছে উত্তরাধিকারী। আর পরবর্তী বাক্যের ভাবার্থ হচ্ছে এই যে, মুহাজিরগণ যখন মদীনায় আগমন করেন তখন তথাকার প্রথা অনুযায়ী তাঁরা তাঁদের আনসার ভাইদের উত্তরাধিকারী হতেন এবং আনসারদের আত্মীয়-স্বজন তাঁদের উত্তরাধিকারী হতেন না। সুতরাং এ আয়াত দ্বারা উক্ত প্রথা রহিত হয়ে যায় এবং তাদেরকে বলা হয়-'তোমরা তোমাদের ভাইদেরকে সাহায্য কর, তাদের উপকার কর এবং তাদের মঙ্গল কামনা কর। কিন্তু তারা তোমাদের মীরাস পাবে না। হ্যা, তবে তোমরা তাদের জন্য অসিয়ত করে যাও।' ইসলামের পূর্বে প্রথা ছিল এই যে, দুই ব্যক্তি অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয়ে বলতো, আমি তোমার উত্তরাধিকারী।' এভাবে আরব গোত্রগুলো অঙ্গীকার ও চুক্তিতে আবদ্ধ হয়ে পড়তো।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ ‘অজ্ঞতার যুগের শপথ এবং অঙ্গীকার ও চুক্তিকে ইসলাম আরও দৃঢ় করেছে। কিন্তু এখন ইসলামে শপথ এবং এ প্রকারের আহাদ ও অঙ্গীকার নেই। ঐগুলোকে এ আয়াতটি রহিত করে দিয়েছে এবং ঘোষণা করেছে যে, চুক্তিতে আবদ্ধ ব্যক্তিদের তুলনায় আত্মীয়-স্বজনগণই আল্লাহর কিতাবের নির্দেশক্রমে বেশী উত্তম।
ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “ইসলামে শপথ নেই এবং অজ্ঞতা যুগের প্রত্যেক শপথর্কে ইসলাম আরও দৃঢ় করেছে। যদি আমাকে লাল রঙের উটও দেয়া হয় এবং ঐ শপথকে ভেঙ্গে দিতে বলা হয় যা দারুন নদওয়ায় করা হয়েছিল, তথাপি আমি তা পছন্দ করবো না।' হযরত ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমি বাল্যকালে মুতায়্যাবাইনের’ শপথের সময় আমার মাতুলদের সাথে ছিলাম। সুতরাং আমি লাল রঙের উট পেলেও সে শপথকে ভেঙ্গে দেয়া পছন্দ করবো না। সুতরাং এটা স্মরণ রাখার যোগ্য যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) কুরাইশ ও আনসারের মধ্যে যে সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন তা ছিল শুধুমাত্র প্রেম-প্রীতি সৃষ্টি করার জন্যে।
হযরত কায়েস ইবনে আ’সেম (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে কসম' সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ ‘অজ্ঞতার যুগে যে কসম ছিল তা তোমরা আঁকড়ে ধরে থাকবে, কিন্তু ইসলামে কসম নেই।'
হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ ইসলামে হলফ’ নেই, কিন্তু অজ্ঞতা যুগের হলফকে ইসলাম দৃঢ় করেছে।' মক্কা বিজয়ের দিনেও রাসূলুল্লাহ (সঃ) দাঁড়িয়ে স্বীয় ভাষণে এ কথাই ঘোষণা করেছিলেন।
হযরত দাউদ ইবনে হুসাইন (রঃ) বলেন, আমি হযরত উম্মে সা’দ বিনতে রুবায়ের (রাঃ) নিকট কুরআন কারীম পাঠ করতাম। আমার সাথে তাঁর পৌত্র মূসা ইবনে সা’দও (রঃ) পড়তেন। হযরত উম্মে সা'দ (রাঃ) পিতৃহীনা অবস্থায় হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর ক্রোড়ে লালিত পালিত হয়েছিলেন। আমি এ আয়াতের (আরবী) পাঠ করি। তখন শিক্ষিকা আমাকে বাধা দিয়ে বলেনঃ (আরবী) পড়। জেনে রেখ যে, এ আয়াতটি হযরত আবূ বকর (রাঃ) এবং তাঁর পুত্র হযরত আবদুর রহমান (রাঃ)-এর ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়।
হযরত আবদুর রহমান (রাঃ) প্রথমে ইসলাম গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। তাই হযরত আবু বকর (রাঃ) শপথ করে বলেনঃ “আমি তাকে উত্তরাধিকারী করবো না। অতঃপর যখন তিনি মুসলমানদের তরবারীর চাপে বাধ্য হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন তখন হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর প্রতি আল্লাহ তা'আলার নির্দেশ হয় যে, তিনি যেন স্বীয় পুত্র আবদুর রহমানকে উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত না করেন। কিন্তু এ উক্তিটি গারীব। প্রথমটিই সঠিক উক্তি।
মোটকথা, এ আয়াত এবং হাদীসসমূহ দ্বারা ঐ মনীষীদের উক্তি খণ্ডন করা হচ্ছে যারা শপথ ও অঙ্গীকারের উপর ভিিত্ত করে এখনও উত্তরাধিকার দেয়ার পক্ষপাতি। যেমন ইমাম আবূ হানীফা (রঃ) এবং তাঁর সহচরদের এ ধারণা রয়েছে। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রঃ) হতেও এরূপ একটি বর্ণনা রয়েছে। কিন্তু সঠিক মাযহাব হচ্ছে জমহুরের মাযহাব এবং ইমাম মালিক (রঃ), ইমাম শাফিঈ (রঃ) এবং ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রঃ)-এর প্রসিদ্ধ মাযহাবও সঠিকই বটে।
অতএব, উল্লিখিত আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে যে, প্রত্যেক ব্যক্তির উত্তরাধিকারী হচ্ছে তার আত্মীয়-স্বজন, অন্য কেউ নয়। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ অংশীদার উত্তরাধিকারীদেরকে তাদের অংশ মুতাবিক অংশ দিয়ে বাকী যা থাকবে তা আসাবাগণ পাবে। উত্তরাধিকারী হচ্ছে ওরাই যাদের বর্ণনা ফারায়েযের দু'টি আয়াতে রয়েছে। আর যাদের সঙ্গে তোমরা দৃঢ়চুক্তি ও অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয়েছে (অর্থাৎ এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে) তাদেরকে মীরাস প্রদান কর।' এর পরে যে হলফ হবে তা ক্রিয়াশীল মনে করা হবে না। আবার এও বলা হয়েছে যে, অঙ্গীকার ও শপথ এ আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বেই হোক বা পরেই তোক নির্দেশ একই যে, যাদের সাথে অঙ্গীকার করা হবে। তারা মীরাস পাবে না। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর উক্তি অনুসারে তাদের অংশ হচ্ছে সাহায্য সহানুভূতি, মঙ্গল কামনা এবং অসিয়ত-মীরাস নয়। তিনি বলেন, ‘জনগণ অঙ্গীকার ও চুক্তি করতো যে, তাদের মধ্যে যে প্রথমে মারা যাবে অপর জন তার ওয়ারিস হবে। সুতরাং আল্লাহ তা'আলা (আরবী) এ আয়াতটি অবতীর্ণ করে নির্দেশ দেন যে, তোমাদের আত্মীয়-স্বজন একে অপরের সাথে বেশী সম্পর্কযুক্ত, তবে তোমরা তোমাদের বন্ধুদের সাথে সদ্ব্যবহার কর। (৩৩:৬) অর্থাৎ তাদের জন্যে যদি এক তৃতীয়াংশ মাল অসিয়ত করে যাও তবে তা বৈধ। সুপরিচিত ও সুপ্রসিদ্ধ কাজও এটাই। পূর্ববর্তী আরো বহু মনীষী হতে বর্ণিত আছে যে, এ আয়াতটি (আরবী)-এ আয়াত দ্বারা রহিত হয়ে গেছে।
হযরত সাঈদ ইবনে যুবাইর (রঃ) বলেন যে, তাদেরকে তাদের অংশ দাও’ -এর ভাবার্থ হচ্ছে মীরাস। হযরত আবু বকর (রাঃ) একটি লোককে স্বীয় ‘মাওলা' বানিয়েছিলেন এবং তাকে উত্তরাধিকারী করেছিলেন। হযরত ইবনুল মুসাইয়াব (রঃ) বলেন যে, এ আয়াতটি ঐ লোকদের ব্যাপারে অবর্তীণ হয় নিজেদের পুত্রদের ছাড়া অন্যদেরকে নিজেদের পুত্র বানিয়ে নিতে এবং তাদেরকে তাদের সম্পত্তির প্রকৃত উত্তরাধিকারী বলে সাব্যস্ত করতো। তাই আল্লাহ তা'আলা তাদের অংশ অসিয়তের মাধ্যমে দিতে বলেছেন এবং মীরাস দিতে বলেছেন (আরবী) অর্থাৎ আত্মীয়-স্বজনদেরকে। আল্লাহ তা'আলা শুধু মুখের ও পালিত পুত্রদেরকে মীরাস দিতে নিষেধ করেছেন এবং খুব অপছন্দও করেছেন। তবে তাদেরকে অসিয়তের মাধ্যমে দিতে বলেছেন।
ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বলেন, আমার নিকট মনোনীত উক্তি হচ্ছে এই যে, তাদেরকে অংশ দাও’ -এর ভাবার্থ হচ্ছে-তাদেরকে সাহায্য সহানুভূতির অংশ দাও। কিন্তু এটা নয় যে, তাদেরকে তাদের মীরাসের অংশ দাও। এ অর্থ করলে আয়াতটিকে মানসুখ' বলার কোন কারণ থাকে না বা একথা বলারও প্রয়োজন হয় না যে, এ নির্দেশ পূর্বে ছিল এখন নেই। বরং আয়াত শুধু ঐ কথার নির্দেশ করেছে যে, তোমাদের মধ্যে একে অপরের সাহায্য সহানুভূতি করার যে অঙ্গীকার বা প্রতিশ্রুতি রয়েছে তা পূরণ কর। সুতরাং এ আয়াতটি ‘মুহকাম’ ও রহিতহীন। কিন্তু ইমাম সাহেবের এ উক্তির ব্যাপারে কিছু চিন্তার বিষয় রয়েছে। কেননা, এটা নিঃসন্দেহ যে, কতগুলো অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি শুধু সাহায্য সহানুভূতির উপরই হতো। কিন্তু এতেও সন্দেহ নেই যে, কতগুলো অঙ্গীকার মীরাসের উপরও হতো। যেমন পূর্ববর্তী বহু গুরুজন হতে বর্ণিত হয়েছে এবং যেমন হযরত ইবনে আববাস (রাঃ)-এর তাফসীরেও বর্ণিত হয়েছে। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, মুহাজিরগণ আনসারদের উত্তরাধিকারী হতেন এবং তাদের আত্মীয়গণ উত্তরাধিকারী হতেন না। অবশেষে এটা রহিত হয়ে যায়। তাহলে ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) একথা কিরূপে বলতে পারেন যে, এ আয়াতটি মুহকাম ও রহিতহীন? এ বিষয়ে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings