Surah An Nisa Tafseer
Tafseer of An-Nisa : 20
Saheeh International
But if you want to replace one wife with another and you have given one of them a great amount [in gifts], do not take [back] from it anything. Would you take it in injustice and manifest sin?
Ibn Kathir Full
Tafseer 'Ibn Kathir Full' (BN)
১৯-২২ নং আয়াতের তাফসীর:
সহীহ বুখারীর মধ্যে রয়েছে, হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, কোন লোক মারা গেলে তার উত্তরাধিকারীকে তার স্ত্রীর পূর্ণ দাবীদার মনে করা হতো। সে ইচ্ছে করলে তাকে নিজেই বিয়ে করে নিতো, ইচ্ছে করলে অন্যের সাথে বিয়ে দিয়ে দিতো, আবার ইচ্ছে করলে তাকে বিয়ে করতেই দিতো না। ঐ স্ত্রীলোকটির আত্মীয়-স্বজন অপেক্ষা এ লোকটিকেই তার বেশী হকদার মনে করা হতো। অজ্ঞতা যুগের এ জঘন্য প্রথার বিরুদ্ধে এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়।
অন্য বর্ণনায় রয়েছে যে, মানুষ ঐ স্ত্রীলোকটিকে বাধ্য করতো যে, সে যেন মোহরের দাবী পরিত্যাগ করে কিংবা সে যেন আর বিয়েই করে। এও বর্ণিত আছে যে, কোন স্ত্রীর স্বামী মারা গেলে একটি লোক এসে ঐ স্ত্রীর উপর একখানা কাপড় নিক্ষেপ করতো এবং ঐ লোকটিকেই ঐ স্ত্রীলোকটির দাবীদার মনে করা হতো। এটাও বর্ণিত আছে যে, ঐ স্ত্রীলোকটি সুন্দরী হলে ঐ কাপড় নিক্ষেপকারী ব্যক্তি তাকে বিয়ে করে নিতে এবং বিশ্রী হলে মৃত্যু পর্যন্ত তাকে বিধবা অবস্থাতেই রেখে দিতো। অতঃপর সে তার উত্তরাধকারী হয়ে যেতো। এও বর্ণিত আছে যে, ঐ মৃত ব্যক্তির অন্তরঙ্গ বন্ধু ঐ স্ত্রীর উপর কাপড় নিক্ষেপ করতো। অতঃপর ঐ স্ত্রী তাকে কিছু মুক্তিপণ বা বিনিময় প্রদান করলে সে তাকে বিয়ে করার অনুমতি দিতো, নচেৎ সে আজীবন বিধবাই থেকে যেতো।
হযরত যায়েদ ইবনে আসলাম (রঃ) বলেন, মদীনাবাসীদের প্রথা ছিল এই যে, কোন লোক মারা গেলে যে ব্যক্তি তার মালের উত্তরাধিকারী হতে সে তার স্ত্রীরও উত্তরাধিকারী হতো। তারা স্ত্রীলোকদের সাথে অত্যন্ত জঘন্য ব্যবহার করতো। এমনকি তালাক প্রদানের সময়েও তাদের সাথে শর্ত করতো যে, তারা নিজেদের ইচ্ছেমত তাদের বিয়ে দেবে। এ প্রকারের বন্দীত্ব হতে মুক্ত হওয়ার এ পন্থা বের করা হয়েছিল যে, ঐ নারীগণ ঐ পুরুষ লোকদেরকে মুক্তিপণ স্বরূপ কিছু প্রদান করতো। আল্লাহ তা'আলা মুমিনদের জন্যে এটা নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করেন।
তাফসীর-ই-ইবনে মিরদুওয়াই-এর মধ্যে রয়েছে যে, আবু কায়েস ইবনে। আসলাত মারা গেলে তার পুত্র অজ্ঞতা যুগের প্রথা অনুযায়ী তার স্ত্রীকে বিয়ে করার ইচ্ছে প্রকাশ করে। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। হযরত আতা (রঃ) বলেন যে, অজ্ঞতার যুগে মানুষ মৃত ব্যক্তির স্ত্রীকে কোন একটি শিশুর রক্ষণাবেক্ষণ কাজে লাগিয়ে দিতো। হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, যখন কোন লোক মারা যেতো তখন তার পুত্রকেই তার স্ত্রীর বেশী হকদার মনে করা হতো। সে ইচ্ছে করলে নিজেই তার বিমাতাকে বিয়ে করতো বা ইচ্ছেমত ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র কিংবা অন্য কারও সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দিতো।
হযরত ইকরামা (রঃ)-এর বর্ণনায় রয়েছে যে, আবু কায়েসের ঐ স্ত্রীর নাম ছিল উম্মে কাবীশাহ (রাঃ)। তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে ঐ সংবাদ প্রদান করে বলেন, এ লোকগুলো না আমাকে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে গণ্য করে আমার স্বামীর মীরাস প্রদান করছে, না আমাকে ছেড়ে দিচ্ছে যে আমি অন্য কারও সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারি। সে সময় এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, কাপড় নিক্ষেপের পূর্বেই যদি মৃত ব্যক্তির স্ত্রী পালিয়ে গিয়ে তার পিত্রালয়ে চলে যেতো তবে সে মুক্তি পেয়ে যেতো।
হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, যার নিকট কোন পিতৃহীনা বালিকা থাকতো তাকে সে আটক রাখতো এ আশায় যে, তার স্ত্রী মারা গেলে সে তাকে বিয়ে করবে কিংবা তার পুত্রের সাথে তার বিয়ে দিয়ে দেবে। এসব কথার দ্বারা জানা যাচ্ছে যে, এ আয়াত দ্বারা এসব কুপ্রথাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং স্ত্রীলোকদেরকে এসব বিপদ হতে রক্ষা করা হয়েছে।
অতঃপর আল্লাহ তা'আলা বলেন- ‘স্ত্রীদের বাসস্থানকে সংকীর্ণ করতঃ তাদেরকে কষ্ট দিয়ে বাধ্য করো না যে, তারা যেন সমস্ত মোহর বা মোহরের কিয়দংশ ছেড়ে দেয় বা তাদের অবশ্য প্রাপ্য কোন হক পরিত্যাগ করে। কেননা, তাদেরকে শাসন গর্জন করে এই কাজে বাধ্য করা হচ্ছে।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, এর ভাবার্থ এই যে, স্ত্রী পছন্দ হচ্ছে না, তার সাথে মনোমালিন্য হচ্ছে, কাজেই তাকে ছেড়ে দিতে চায়। কিন্তু ছেড়ে দিলে মোহর ইত্যাদি সমস্ত হক পুরোপুরি দিতে হবে। এর থেকে বাঁচবার জন্যে স্ত্রীকে কষ্ট দিচ্ছে এবং তার জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে, যেন সে নিজেই বাধ্য হয়ে সমস্ত প্রাপ্য ছেড়ে দিয়ে চলে যায়।
আল্লাহ পাক মুসলমানদেরকে এসব জঘন্য প্রথা হতে বিরত রাখেন। ইবনে। সালমানী (রঃ) বলেন, এ আয়াত দু'টির মধ্যে প্রথম আয়াতটি অজ্ঞতা যুগের প্রথাকে উঠিয়ে দেয়ার জন্যে এবং দ্বিতীয় আয়াতটি ইসলামী রীতির সংশোধনের জন্যে অবতীর্ণ হয়। ইবনে মুবারকও (রঃ) এটাই বলেন।
এরপর বলা হচ্ছে-“কিন্তু যদি তাদের দ্বারা প্রকাশ্য অশ্লীলতা প্রকাশ পায়। সাহাবী ও তাবেঈগণের অধিকাংশ তাফসীরকারকের মতে প্রকাশ্য অশ্লীলতার ভাবার্থ হচ্ছে ব্যভিচার। অর্থাৎ সে সময় তাদের নিকট হতে মোহর ফিরিয়ে নেয়া বৈধ। সে সময় তাদের জীবনকে সঙ্কটময় করে তোলা উচিত, যেন তারা খোলা করে নিতে বাধ্য হয়ে পড়ে। যেমন সূরা-ই-বাকারার মধ্যে রয়েছে- “তোমাদের জন্যে বৈধ নয় যে, তাদেরকে প্রদত্ত মোহর হতে তোমরা কিছু গ্রহণ কর, কিন্তু শুধু সেই সময় পার যখন তাদের উভয়ের আল্লাহর সীমা ঠিক রাখতে না পারার ভয় হবে।' কারও কারও মতে (আরবী)-এর ভাবার্থ হচ্ছে স্বামীর বিরুদ্ধাচরণ করা, তার অবাধ্য হওয়া, তার সাথে রূঢ় ব্যবহার করা, তার হক পুরোপুরি আদায় না করা ইত্যাদি।
ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বলেন যে, আয়াতের শব্দগুলো সাধারণ, এর মধ্যে ব্যভিচারও রয়েছে এবং এ আচরণও রয়েছে। অর্থাৎ এ সর্বাবস্থায় স্বামীর জন্যে স্ত্রীর জীবন সংকটপূর্ণ করে তোলা বৈধ, যেন সে তার সমস্ত প্রাপ্য বা আংশিক প্রাপ্য ছেড়ে দেয় ও পরে তাকে পৃথক করে দেয়। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ)-এর একথা খুবই যুক্তিযুক্ত। ইতিপূর্বে এটাও বর্ণিত হয়েছে যে, এ পর্যন্ত এ আয়াতের অবতীর্ণ হওয়ার কারণ হচ্ছে অজ্ঞতা যুগের ঐ কুপ্রথাগুলো যা হতে আল্লাহ পাক মুসলমানদেরকে নিষেধ করেছেন। এর দ্বারা জানা যাচ্ছে যে, এ পূর্ণ বর্ণনা ইসলাম দ্বারা অজ্ঞতা যুগের প্রথাগুলোকে সরিয়ে দেয়ার জন্যেই দেয়া হয়েছে।
ইবনে যায়েদ (রঃ) বলেন, মক্কার কুরাইশদের মধ্যে এ প্রথা চালু ছিল যে, কোন লোক কোন ভদ্র মহিলাকে বিয়ে করতো। অতঃপর তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হলে স্বামী স্ত্রীকে তালাক প্রদান করতো। কিন্তু এ শর্ত করতো যে, স্ত্রী তার অনুমতি ছাড়া অন্য জায়গায় বিয়ে করতে পারবে না। ঐকথার উপর সাক্ষী নির্ধারণ করতে এবং চুক্তিপত্র লিখে নেয়া হতো। তখন কোন জায়গা হতে বিয়ের গয়গাম এলে স্ত্রী যদি সে বিয়েতে সম্মত হতো তবে তার পূর্ব স্বামী বলতো, তুমি যদি আমাকে এত টাকা দাও তবে তোমাকে বিয়ের অনুমতি প্রদান করবো। স্ত্রী সম্মত হলে তো ভালই, নচেৎ তাকে দ্বিতীয় বিয়ে করতে দেয়া হতো না। ওর নিষিদ্ধ ঘোষণায় এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। মুজাহিদ (রঃ)-এর কথামত, এ নির্দেশ এবং সূরা-ই-বাকারার আয়াতের নির্দেশ একই।
এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেন-“তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সদ্ভাবে অবস্থান কর, তাদের সাথে ন্ত্র ব্যবহার কর। সাধ্যানুযায়ী নিজের অবস্থাও ভাল রাখ। তোমরা যেমন চাও যে, তোমাদের স্ত্রীরা উত্তম সাজে সুসজ্জিতা থাকুক, দ্রুপ তোমরাও তাদের মনস্তুষ্টির জন্য নিজেদেরকে সুন্দর সাজে সজ্জিত রাখ। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছে- (আরবী) অর্থাৎ ‘সদ্ভাবে যেমন তোমাদের অধিকার তাদের উপর রয়েছে তেমনই তাদের অধিকারও তোমাদের উপর রয়েছে।' (২৪২২৮) রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি যে তার স্ত্রীর সাথে সর্বোত্তম ব্যবহারকারী হয়। আমি আমার সহধর্মিণীদের সাথে খুবই উত্তম ব্যবহার করে থাকি।
রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় পত্নীদের সাথে অত্যন্ত নম্র ব্যবহার করতেন, তাঁদের সাথে হাসি মুখে কথা বলতেন, তাদেরকে সদা খুশী রাখতেন, মনোমুগ্ধকর কথা বলতেন, তাঁদের অন্তর তিনি স্বীয় মুষ্টির মধ্যে রাখতেন, তাঁদের জন্যে উত্তম খাওয়া পরার ব্যবস্থা করতেন, প্রশান্ত মনে তাদের উপর খরচ করতেন এবং মাঝে মাঝে তিনি এমন কথাও বলতেন যে, তাঁরা হেসে উঠতেন। এমনও ঘটেছে যে, তিনি উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রঃ)-এর সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা করেছেন। সে দৌড়ে হযরত আয়েশা (রাঃ) আগে বেড়ে যান। কিছু দিন পর আবার দৌড় প্রতিযোগিতা হলে হযরত আয়েশা (রাঃ) পিছনে পড়ে যান। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “শোধ বোধ হয়ে গেল। এর দ্বারাও তার উদ্দেশ্য ছিল হযরত আয়েশা (রাঃ)-কে সন্তুষ্ট রাখা।
যে পত্নীর ঘরে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর রাত্রি যাপনের পালা পড়তো তথায় তার সমস্ত সহধর্মিণীগণ একত্রিত হতেন। তারা দীর্ঘক্ষণ বসে থাকতেন, আলাপ আলোচনা হতো এবং মাঝে মাঝে এমনও হতো যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁদের সাথে রাত্রের খাবার খেতেন। অতঃপর তারা নিজ নিজ ঘরে চলে যেতেন এবং তিনি তথায়ই রাত্রি যাপন করতেন। স্বীয় সহধর্মিণীর সাথে একই চাদরে শয়ন করতেন, জামা খুলে ফেলতেন, শুধু লুঙ্গি পরে থাকতেন। ইশার নামাযের পর ঘরে গিয়ে কিছুক্ষণ একথা সেকথা বলতেন যেন সহধর্মিণীদের মন খুশী হয়। মোটকথা তিনি স্ত্রীদেরকে অত্যন্ত ভালবাসার সাথে রাখতেন। সুতরাং মুসলমানদেরও স্ত্রীদের সাথে প্রেম-প্রীতি বজায় রাখা উচিত। আল্লাহ তাআলা বলেন-“আমার নবী (সঃ)-এর অনুসরণেই তোমাদের মঙ্গল রয়েছে। এর বিস্তারিত আহকাম বৰ্ণনার জায়গা তাফসীর নয় বরং ওর জন্য ঐ বিষয়েরই গ্রন্থরাজি রয়েছে।
অতঃপর আল্লাহ পাক বলেনঃ “মন না চাইলেও স্ত্রীদের বাসস্থানের সুবন্দোবস্ত করার মধ্যেই এ সম্ভাবনা রয়েছে যে, ওর মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলা বড় রকমের মঙ্গল দান করেন। হয় তো তাদের উদরে সৎ সন্তান জন্মগ্রহণ করবে এবং তাদের দ্বারা আল্লাহ পাক উত্তম সৌভাগ্যের অধিকারী করবেন।” বিশুদ্ধ হাদীসে বর্ণিত রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “মুমিন পুরুষ যেন মুমিন স্ত্রীকে পৃথক করে না দেয়। যদি সে তার একটি আধটি কথায় অসন্তুষ্টও হয় তবে সে স্ত্রী তার কোন ব্যবহার দ্বারা সন্তুষ্টও করবে।”
এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেন-“তোমাদের কেউ যদি স্বীয় স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ইচ্ছে করে এবং তার স্থানে অন্যকে স্ত্রীরূপে গ্রহণ করতে চায় তবে সে যেন তার স্ত্রীকে প্রদত্ত মোহর হতে কিছুই ফিরিয়ে না নেয়, যদিও তাকে প্রচুর মাল প্রদান করে থাকে। সূরা আলে ইমরানের মধ্যে। শব্দের তাফসীর বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং এখানে পুনরাবৃত্তির কোন আবশ্যকতা নেই। এর দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, স্ত্রীকে মোহর হিসেবে প্রচুর মাল প্রদান করাও বৈধ। হযরত উমার (রাঃ) প্রথমে প্রচুর মোহর হতে নিষেধ করেছিলেন। অতঃপর তিনি তাঁর সে কথা ফিরিয়ে নেন।
যেমন মুসনাদ-ই-আহমাদে রয়েছে যে, তিনি বলেছিলেনঃ “তোমরা মোহর নির্ধারণের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না। যদি এটা পার্থিব ব্যাপারে কোন ভাল জিনিস হতো বা আল্লাহ তা'আলার নিকট মুত্তাকী পরিচয়ের কাজ হতো তবে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-ই সর্ব প্রথম ওর উপর আমল করতেন। তিনি তো তার কোন স্ত্রীর বা কন্যার মোহর বারো আওকিয়্যার (প্রায় একশ পঁচিশ টাকা) বেশী করেননি। মানুষ অতিরিক্ত মোহর বেঁধে বিপদে পড়ে থাকে, শেষ পর্যন্ত তার স্ত্রী তার উপর বোঝা স্বরূপ হয়ে যায় এবং তার অন্তরে তার প্রতি শত্রুতার সৃষ্টি হয়। সে তখন স্ত্রীকে বলে, তুমি আমার স্কন্ধে মোশক ঝুলিয়ে দিয়েছ।
এ হাদীসটি বিভিন্ন গ্রন্থে বিভিন্ন শব্দে বর্ণিত আছে। একটি বর্ণনায় রয়েছে। যে, হযরত উমার (রাঃ) নবী (সঃ)-এর মিম্বরের উপর দাঁড়িয়ে বলেন, “হে জনমণ্ডলী! তোমরা লম্বা চওড়া মোহর বাধতে আরম্ভ করলে কেন? রাসূলুল্লাহ (সঃ) ও তাঁর সহচরবর্গ তো চারশ দিরহামের (প্রায় একশ টাকা) বেশী মোহর করেননি। এটা যদি অধিক মুত্তাকী হওয়া এবং দানশীলতার কাজ হতো তবে তোমরা ওর দিকে অগ্রগামী হতে না। সাবধান! আজ হতে আমি যেন শুনতে না পাই যে কেউ চারশ দিরহামের বেশী মোহর নির্ধারণ করেছ।' এ কথা বলে নীচে নেমে আসেন তখন একজন কুরাইশ রমণী সম্মুখে এসে তাকে বলেনঃ “হে আমীরুল মুমিনীন! আপনি কি জনগণকে চারশ দিরহামের বেশী মোহর নির্ধারণ করতে নিষেধ করেছেন? তিনি বলেনঃ হ্যা। তখন স্ত্রীলোকটি বলেন, আল্লাহ তা'আলা যে কালাম অবতীর্ণ করেছেন তা কি আপনি শুনেননি?' তিনি বলেন, ‘ঐ কালাম কি? স্ত্রীলোকটি বলেন, “শুনুন, আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ এবং তোমরা তাদের কাউকে বিপুল ধনরাশি দিয়ে থাক’। হযরত উমার (রাঃ) তখন বলেনঃ “হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন। উমার (রাঃ) হতে তো প্রত্যেকেই বেশী জানে।' অতঃপর তিনি ফিরে যান এবং তৎক্ষণাৎ মিম্বরের উপর উঠে জনগণকে সম্বোধন করে বলেনঃ “হে মানব মণ্ডলী! আমি তোমাদেরকে চারশ দিরহামের বেশী মোহর দিতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু এখন বলছি যে, যে কোন লোক তার মাল হতে ইচ্ছেমত মোহর নির্ধারণ করতে পারে। আমি বাধা দেব না।'
অন্য একটি বর্ণনায় ঐ স্ত্রীলোকটির আয়াতটিকে নিম্নরূপ পাঠ করার কথা বর্ণিত আছেঃ (আরবী) অর্থাৎ ‘এবং তোমরা তাদেরকে প্রচুর স্বর্ণ প্রদান করে থাক।' হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর পঠনেও এরূপই বর্ণিত আছে এবং উমারের উপর একটি স্ত্রীলোক বিজয় লাভ করলো’ হযরত উমার (রাঃ)-এর এ উক্তিও বর্ণিত আছে।
একটি বর্ণনায় এও রয়েছে যে, হযরত উমার (রাঃ) বলেনঃ যদিও বিল কিস্সা অর্থাৎ ইয়াযিদ ইবনে হুসাইন হারেসীরও, মেয়ে হয় তথাপি তারও মোহর বেশী নির্ধারণ করো না। আর তোমরা যদি এরূপ কর তবে ঐ অতিরিক্ত অংক বায়তুল মালে জমা করে নেবো।' তখন এক দীর্ঘ দেহ ও চওড়া নাক বিশিষ্টা স্ত্রীলোক বলেনঃ “জনাব! আপনি এ কথা বলতে পারেন না। তখন হযরত উমার (রাঃ) বলেনঃ “কেন?' তিনি বলেনঃ “যেহেতু আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ (আরবী)-তখন হযরত উমার (রাঃ) বলেন, “স্ত্রীলোকটি ঠিক বলেছে এবং পুরুষ লোকটি ভুল করেছে।'
অতঃপর আল্লাহ পাক বলেন- তোমাদের স্ত্রীদেরকে প্রদত্ত মোহর তোমরা কিরূপে ফিরিয়ে নেবে? অথচ তোমরা তাদের দ্বারা উপকৃত হয়েছ, প্রয়োজন মিটিয়েছ, তারা তোমাদের সঙ্গে মিলিত হয়েছে এবং তোমারা তাদের সঙ্গে মিলিত হয়েছ। অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।'
সহীহ বুখারী ও মুসলিমের ঐ হাদীসে রয়েছে যার মধ্যে একটি লোকের তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অভিযোগ পেশ করার কথা বর্ণিত আছে, অতঃপর তাদের উভয়ের শপথ গ্রহণ তার পরে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর উক্তিঃ ‘তোমাদের মধ্যে যে মিথ্যাবাদী তা আল্লাহ তা'আলা ভালভাবেই জানেন। তোমাদের মধ্যে কেউ এখনও তাওবা করছে কি? তিনি এ কথা তিনবার বলেন। তখন পুরুষ লোকটি বলে, তার মোহর সম্বন্ধে আপনি কি বলেন?' রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন বলেনঃ ‘ওর বিনিময়েই তো সে তোমার জন্য বৈধ হয়েছিল। এখন যদি তুমি তার উপর মিথ্যে অপবাদ দিয়ে থাক তবে তো এটা আরও বহু দূরের কথা।
অনুরূপভাবে আরও একটি হাদীসে রয়েছে যে, হযরত নারা (রাঃ) একটি কুমারীকে বিয়ে করেন। তার সাথে মিলিত হতে গিয়ে তিনি দেখেন যে, সে ব্যভিচার দ্বারা গর্ভবতী হয়েছে। তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট এটা বর্ণনা করলে তিনি তাকে পৃথক করিয়ে দেন এবং হযরত নারা (রাঃ)-কে মোহর দিয়ে দিতে বলেন এবং স্ত্রীকে চাবুক মারার নির্দেশ দেন এবং বলেনঃ “যে সন্তান জন্মগ্রহণ করবে সে তোমার গোলাম হবে এবং মোহর তো তাকে বৈধ করার কারণ ছিল।' (সুনান-ই-আবি দাউদ)
মোটকথা আয়াতের ভাবার্থ এই যে, স্বামী স্ত্রীর মধ্যে মিলন হয়েই গেছে। সুতরাং এখন মোহর ফিরিয়ে নেয়ার কোন অর্থ থাকে না। অতঃপর আল্লাহ পাক বলেন-বিবাহ বন্ধন হচ্ছে একটা দৃঢ় অঙ্গীকার যার মধ্যে তোমরা আবদ্ধ হয়েছ। তোমরা মহান আল্লাহর এ নির্দেশ শুনেছঃ “তোমরা তাদেরকে বন্ধনে রাখলে ভালভাবে রাখ, আর পরিত্যাগ করলে উত্তম পন্থায় পরিত্যাগ কর।' হাদীস শরীফেও রয়েছেঃ “তোমরা স্ত্রীদেরকে আল্লাহর আমানত দ্বারা গ্রহণ করে থাক এবং তাদেরকে আল্লাহর কালেমা দ্বারা নিজেদের জন্যে বৈধ করে থাক।' অর্থাৎ বিবাহের খুত্বার সাক্ষ্য দ্বারা তাদেরকে হালাল করে থাক।
মিরাজের রাত্রে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে যেসব দানে ভূষিত করা হয়েছিল তন্মধ্যে একটি এও ছিল যে, তাঁকে বলা হয়েছিল-তোমার উম্মতের কোন ভাষণই বৈধ নয় যে পর্যন্ত না সে সাক্ষ্য প্রদান করবে যে, তুমি আমার বান্দা এবং রাসূল।' (মুসনাদ-ই-ইবনে আবি হাতিম) সহীহ মুসলিম শরীফে হযরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর বিদায় হজ্বের ভাষণে বলেছিলেনঃ “তোমরা স্ত্রীদেরকে আল্লাহর আমানতরূপে গ্রহণ করেছ এবং তাদেরকে আল্লাহর কালেমা দ্বারা হালাল করেছ।
এরপর আল্লাহ তা'আলা বিমাতাকে বিয়ে করার অবৈধতা বর্ণনা করতঃ তার সম্মান ও মর্যাদার কথা প্রকাশ করেছেন। এমনকি বাপ হয়তো শুধু বিয়েই করেছে, এখনও মা পিত্রালয় হতে বিদায় হয়েও আসেনি। এমতাবস্থায় তার তালাক হয়ে গেল বা পিতা মারা গেল তথাপিও ঐ স্ত্রী তার ছেলের উপর হারাম হয়ে যাবে। এর উপর ইজমা হয়ে গেছে। হযরত আবু কায়েশ (রাঃ) যিনি একজন বড় মর্যাদা সম্পন্ন আনসারী সাহাবী ছিলেন, তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র কায়েস তার স্ত্রীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়, অথচ তিনি তার বিমাতা ছিলেন। তখন তার বিমাতা তাকে বলেন, “তুমি তোমার সম্প্রদায়ের মধ্যে একজন সৎ লোক।
কিন্তু আমি তোমাকে আমার ছেলেরূপ গণ্য করে থাকি। আচ্ছা, আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট যাচ্ছি।'
রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট এসে তিনি (পুত্রের বিমাতা) সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে বলেনঃ “তুমি বাড়ী ফিরে যাও। অতঃপর এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। এতে বলা হয়- যাকে বাপ বিয়ে করেছে তাকে বিয়ে করা পুত্রের জন্য হারাম।' এ ধরনের আরও বহু ঘটনা সে সময় বিদ্যমান ছিল যাদেরকে এ কামনা হতে বিরত রাখা হয়েছিল। এক তো হলো এ আবু কায়েশ (রাঃ)-এর ঘটনা। তার স্ত্রীর নাম ছিল উম্মে উবাইদিল্লাহ যামরা’ (রাঃ)।
দ্বিতীয় ঘটনা ছিল হযরত খালাফ (রাঃ)-এর যার ঘরে হযরত আবু তালহা (রাঃ)-এর কন্যা ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে সাফওয়ান তাঁকে বিয়ে করার ইচ্ছে করেছিল। হযরত সাহিলী (রাঃ) বলেন যে, অন্ধকার যুগে এরূপ বিয়ে চালু ছিল এবং সেটাকে নিয়মিত বিয়ে মনে করা হতো ও সম্পূর্ণ হালাল বলে গণ্য করা হতো। এ জন্যেই এখানেও বলা হচ্ছে-‘অতীতে যা হয়েছে তা হয়েছেই। যেমন দু’বোনকে একত্রে বিয়ে করার অবৈধতার কথা বর্ণনা করার পর এটাই বলা হয়েছে। কিনানা ইবনে খুযাইমাও এ কাজ করেছিল অর্থাৎ স্বীয় পিতার স্ত্রীকে বিয়ে করেছিল। তার গর্ভেই নাযারের জন্ম হয়। রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর ঘোষণা বিদ্যমান রয়েছেঃ “আমার উপরের বংশের উৎপত্তিও বিয়ের দ্বারাতেই হয়েছে ব্যভিচারের দ্বারা নয়। তাহলে বুঝা যাচ্ছে যে, এ প্রথা তাদের মধ্যে বরাবরই চালু ছিল, বৈধ ছিল এবং বিবাহ বলে গণ্য ছিল।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, যে আত্মীয়কে (বিয়ে করা) আল্লাহ তাআলা হারাম করেছেন ঐ সবকে অজ্ঞতা যুগের লোকেরাও হারাম বলে জানতো। শুধুমাত্র বিমাতা ও দু’বোনকে এক সাথে বিয়ে করাকে তারা হালাল মনে করতো। সুতরাং আল্লাহ তাআলা কুরআন পাকের মধ্যে এদেরকেও হারাম বলে ঘোষণা করেছেন। হযরত আতা’ (রঃ) এবং হযরত কাতাদাহও (রঃ) এটাই বলেন।
এটা স্মরণ রাখতে হবে যে, সাহিলী (রাঃ) কিনানার যে ঘটনাটি নকল করেছেন তা চিন্তা ও বিবেচনার বিষয়-সম্পূর্ণরূপে সঠিক নয়। যা হোক, এ সম্বন্ধে এ উম্মতের উপর সম্পূর্ণরূপে হারাম এবং এটা অত্যন্ত জঘন্য কাজ। এমনকি আল্লাহ পাক বলেন যে, নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল ও অরুচিকর এবং নিকৃষ্টতর পন্থা।
অন্য জায়গায় ঘোষিত হচ্ছে-‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটেও যেয়ো না, নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ ও নিকৃষ্টতর পন্থা। এখানে ওর চেয়েও বেশী বলেছেন যে, এটা অরুচিকরও বটে। অর্থাৎ এটা প্রকৃতপক্ষে অত্যন্ত ঘৃণ্য ও জঘন্য কাজ। এর ফলে পিতা ও পুত্রের মধ্যে শত্রুতার সৃষ্টি হয়। এটা সাধারণতঃ দেখা যায় যে, যে ব্যক্তি কোন স্ত্রীলোককে বিয়ে করে সে তার পূর্ব স্বামীর প্রতি শত্রুতাই পোষণ করে থাকে। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সহধর্মিণীগণকে মমিনদের মা রূপে গণ্য করা হয়েছে এবং উম্মতের উপর মা। দের মতই তাঁদেরকেও হারাম করা হয়েছে। কেননা, তাঁরা নবী (সঃ)-এর সহধর্মিণী, আর তিনি স্বীয় উম্মতের পিতার মতই। এমনকি ইজমা দ্বারা এটা সাব্যস্ত হয়েছে যে, তার হক বাপ দাদার হকের চাইতেও বেশী। বরং তার প্রতি ভালবাসাকে জীবনের প্রতি ভালবাসার উপরেও স্থান দেয়া হয়েছে। এও বলা হয়েছে যে, একাজ আল্লাহ তাআলার অসন্তুষ্টির কারণ এবং অতি নিকৃষ্ট পন্থা। সুতরাং যে একাজ করে সে ধর্মত্যাগীর মধ্যে গণ্য। কাজেই তাকে হত্যা করা হবে এবং তার মাল ফাই' (বিনা যুদ্ধেই শত্রুদের নিকট থেকে যে মাল পাওয়া যায় তাকে ফাই বলা হয়) হিসেবে বায়তুল মালের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়া হবে।
সুনান ও মুসনাদ-ই-আহমাদের মধ্যে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একজন সাহাবীকে ঐ ব্যক্তির দিকে প্রেরণ করেন যে তার পিতার মৃত্যুর পর তার স্ত্রীকে বিয়ে করেছিল। উক্ত সাহাবীর প্রতি নির্দেশ হয়েছিল যে, তিনি যেন তাকে হত্যা করেন ও তার মাল নিয়ে নেন। হযরত বারা ইবনে আযিব (রাঃ) বলেনঃ আমার পিতৃব্য হযরত হারিস ইবনে উমায়ের (রাঃ) নবী (সঃ) প্রদত্ত পতাকা নিয়ে আমার নিকট দিয়ে গমন করলে আমি তাকে জিজ্ঞেস করি, ‘রাসূলুল্লাহ (সঃ) আপনাকে কোথায় পাঠিয়েছেন? তিনি বলেন, আমি ঐ ব্যক্তির দিকে প্রেরিত হয়েছি যে তার পিতার স্ত্রীকে বিয়ে করেছে। তার গর্দান মারার জন্যে আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে'। (মুসনাদ-ই-আহমাদ)
মাসআলাঃ
এর উপর আলেমদের ইজমা রয়েছে যে, যে স্ত্রীর সঙ্গে পিতার সঙ্গম হয়েছে, হয় বিয়ে করেই হোক বা দাসী করেই হোক কিংবা সন্দেহের কারণেই হোক, ঐ স্ত্রীকে বিয়ে করা পুত্রের জন্যে হারাম। হ্যাঁ, তবে যদি সঙ্গম না হয়, শুধুমাত্র সহবাস হয় কিংবা তার এমন অঙ্গের প্রতি দৃষ্টিপাত করে যে অঙ্গের প্রতি ন্যর করা অপরিচিত হওয়ার অবস্থাতেও তার জন্যে হালাল ছিল না, এতে মতভেদ রয়েছে। ইমাম আহমাদ তো সে অবস্থাতেও স্ত্রীকে পুত্রের উপর হারাম বলে থাকেন। হাফিয ইবনে আসাকেরের নিম্নের ঘটনা দ্বারাও এ মাযহাবের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। ঘটনাটি এই যে, হযরত মুআবিয়া (রাঃ)-এর ক্রীতদাস হযরত খুদায়েজ হামশী (রাঃ) হযরত মুআবিয়ার জন্যে গৌরবর্ণের একটি সুশ্রী দাসী ক্রয় করেন এবং কাপড় ছাড়াই সাদীটিকে তার নিকট পাঠিয়ে দেন। তার হাতে একটি ছড়ি ছিল। এ ছড়ি দ্বারা ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘উত্তম সামগ্রী, যদি তার সামগ্রী হতো'।
অতঃপর তিনি বলেন, একে ইয়াযীদ ইবনে মুআবিয়ার নিকট পাঠিয়ে দাও।' আবার বলেন, না, না থাম। রাবীআ' ইবনে আমর হারসী (রঃ)-কে আমার নিকট ডেকে আন। তিনি একজন বড় ধর্মশাস্ত্রবিদ ছিলেন। তিনি এলে হযরত মুআবিয়া (রাঃ) তাঁকে নিম্নের মাসআলাটি জিজ্ঞেস করেনঃ “আমি এ স্ত্রীলোকটির এই এই অঙ্গ দেখেছি। সে কাপড় পরিহিতা ছিল না। এখন আমি। তাকে আমার পুত্র ইয়াযীদের নিকট পাঠাবার মনস্থ করেছি। এ তার জন্যে বৈধ হবে কি? হযরত রাবীআ’ বলেন, হে আমীরুল মুমিনীন! এরূপ করবেন না। এ তার যোগ্য হয়নি।' তখন হযরত মুআবিয়া (রাঃ) বলেন, আপনি ঠিকই বলেছেন।
অতঃপর তিনি তার লোকদেরকে বলেন, 'যাও, আবদুল্লাহ ইবনে সা'দা ফাযাযী (রাঃ)-কে ডেকে আন। তিনি এলেন। তিনি গোধুম বর্ণের ছিলেন। তাকে হযরত মুআবিয়া (রাঃ) বলেন, এ দাসীটি আমি তোমাকে দান করছি, যেন তোমার সাদা বর্ণের সন্তান জন্ম লাভ করে। এই আবদুল্লাহ ইবনে সাদা (রাঃ) ছিলেন ঐ ব্যক্তি যাকে রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত ফাতিমা (রাঃ)-কে প্রদান করেছিলেন। তিনি তাঁকে লালন পালন করেন, অতঃপর আল্লাহর নামে আযাদ করে দেন। তিনি হযরত মুআবিয়া (রাঃ)-এর নিকট চলে আসেন।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings