Surah An Nisa Tafseer
Tafseer of An-Nisa : 2
Saheeh International
And give to the orphans their properties and do not substitute the defective [of your own] for the good [of theirs]. And do not consume their properties into your own. Indeed, that is ever a great sin.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
২ হতে ৪ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা‘আলা ইয়াতীমদের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, যখন পিতৃহীন ইয়াতীম সাবালক হয়ে যাবে এবং তারা ভাল-মন্দ বুঝতে শিখবে তখন তাদের সম্পদ তাদেরকে বুঝিয়ে দাও। যেমন অত্র সূরার ৬ নং আয়াতে বলা হয়েছে।
الخبيث বা খারাপ বলতে অন্যায়ভাবে ইয়াতীমদের সম্পদ খাওয়া বুঝানো হয়েছে।
الطيب বা ভাল বলতে- নিজেদের হালাল সম্পদকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ ইয়াতীমদের সম্পদ অন্যায়ভাবে এনে তোমাদের হালাল সম্পদের সাথে মিশ্রণ করে সব সম্পদ হারাম বানিয়ে খেও না। এরূপ করা মহাপাপ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اِنَّ الَّذِیْنَ یَاْکُلُوْنَ اَمْوَالَ الْیَتٰمٰی ظُلْمًا اِنَّمَا یَاْکُلُوْنَ فِیْ بُطُوْنِھِمْ نَارًاﺚ وَسَیَصْلَوْنَ سَعِیْرًا)
“নিশ্চয়ই যারা অন্যায়ভাবে ইয়াতীমদের সম্পদ খায়, তারা তাদের পেটে কেবল আগুনই ভক্ষণ করে। আর অচিরেই তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে।”(সূরা নিসা ৪:১০)
(وَاِنْ خِفْتُمْ اَلَّا تُقْسِطُوْا فِی الْیَتٰمٰی)
‘আর যদি তোমরা ভয় কর যে ইয়াতীমদের (মেয়েদের) প্রতি সুবিচার করতে পারবে না’ এর শানে নুযূল: আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে একজন ইয়াতীম মেয়ে ছিল। সে মেয়েটির একটি বাগান ছিল। ঐ ব্যক্তি সে মেয়েকে বিবাহ করে কিন্তু কোন মাহর নির্ধারণ করেনি, কারণ মেয়ের প্রতি তার কোন আগ্রহ ছিল না। (শুধু সম্পদের লোভে বিবাহ করেছে) তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। (সহীহ বুখারী হা: ৪৫৭৩)
উরওয়াহ ইবনু যুবাইর (রহঃ) হতে বর্ণিত, তিনি আয়িশাহ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেন, মহান আল্লাহর বাণী-
(وَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تُقْسِطُوْا فِي الْيَتٰمٰي.... )
সম্পর্কে। তিনি উত্তরে বললেন, হে ভাগ্নে! সে হচ্ছে পিতৃহীনা বালিকা, অভিভাবকের তত্ত্বাবধানে থাকে, তার সম্পত্তিতে অংশীদার হয় এবং তার রূপ ও সম্পদ তাকে (অভিভাবককে) আকৃষ্ট করে। এরপর সেই অভিভাবক উপযুক্ত মাহর না দিয়ে তাকে বিবাহ করতে চায়। তদুপরি অন্য ব্যক্তি যে পরিমাণ মাহর দেয়, তা না দিয়ে এবং তার প্রতি ন্যায়বিচার না করে তাকে বিয়ে করতে চায়। এরপর তাদের পারিবারিক ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ মাহর এবং ন্যায় ও সমুচিত মাহর প্রদান ব্যতীত তাদের বিয়ে করতে নিষেধ করা হয়েছে এবং তদ্ব্যতীত যে সকল মহিলা পছন্দ হয় তাদেরকে বিয়ে করতে অনুমতি দেয়া হয়েছে। উরওয়াহ বলেন যে, আয়িশাহ (রাঃ)- বলেছেন, এ আয়াত নাযিল হবার পর লোকেরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে মহিলাদের ব্যাপারে জানতে চাইলে আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করেন:
(وَيَسْتَفْتُوْنَكَ فِي النِّسَا۬ءِ.... )-
“এবং লোকেরা আপনাকে নাবীদের বিষয়ে জিজ্ঞেস করে...”। আল্লাহ তা‘আলার বাণী- ‘তোমরা তাদেরকে বিয়ে করতে আগ্রহ প্রকাশ কর। অথচ ইয়াতীম বালিকার ধন-সম্পদ কম হলে এবং সুন্দরী না হলে তাকে বিবাহ করতে আগ্রহ প্রকাশ কর না।’ আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, তাই ইয়াতীম বালিকার মাল ও সৌন্দর্যের আকর্ষণে বিবাহ করতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে ন্যায়বিচার করলে ভিন্ন কথা। কেননা তারা সম্পদের অধিকারী না হলে এবং সুন্দরী না হলে তাদের কেউ বিবাহ করতে আগ্রহ প্রকাশ করে না। (সহীহ বুখারী হা: ৪৫৭৪, সহীহ মুসলিম হা: ৩০১৮)
তাই ইয়াতীম মেয়েদের প্রতি কেউ সুবিচার করতে সক্ষম না হলে অন্যত্র পছন্দমত একত্রে সর্বোচ্চ চার নারী বিবাহ করতে পারবে।
সালেম (রহঃ) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, গায়লান বিন সালামাহ নামে এক ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করে। তার দশজন স্ত্রী ছিল। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বলেন, তুমি এদের থেকে চারজন চয়ন করে নাও”। (অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে, বলা হয়েছে অন্যদের পৃথক করে দাও) তিনি উমার (রাঃ)-এর যুগে বাকি ছয়জনকে তালাক দিয়ে দেন। (মুসনাদ আহমাদ: ২/১৪, সনদ সহীহ)
একাধিক বিবাহের শর্ত হল সুবিচার করতে হবে আর যদি সুবিচার করতে সক্ষম না হয় তাহলে একজনকে বিবাহ করবে অথবা কোন ক্রীতদাস বিবাহ করবে। তবে সুবিচার করা খুবই কষ্টকর। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَنْ تَسْتَطِيْعُوْآ أَنْ تَعْدِلُوْا بَيْنَ النِّسَا۬ءِ وَلَوْ حَرَصْتُمْ فَلَا تَمِيْلُوْا كُلَّ الْمَيْلِ فَتَذَرُوْهَا كَالْمُعَلَّقَةِ)
“আর তোমরা যতই ইচ্ছা কর না কেন তোমাদের স্ত্রীদের মাঝে সুবিচার করতে পারবে না; যদিও তোমরা প্রবল ইচ্ছা কর; অতএব তোমরা কোন একজনের দিকে সম্পূর্ণভাবে ঝুঁকে পড় না ও অপরকে ঝুলানো অবস্থায় রেখ না।”(সূরা নিসা ৪:১২৯)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তির দু’জন স্ত্রী আছে, কিন্তু সে তন্মধ্যে একজনের দিকে ঝুঁকে যায়, এরূপ ব্যক্তি কিয়ামাতের দিন তার অর্ধদেহ ধসাবস্থায় উপস্থিত হবে। (আহমাদ: ২/৩৪৭, হাকিম: ২/১৮৬)
ইসলাম শর্তসাপেক্ষে একজন পুরুষকে সর্বোচ্চ চারজন নারীকে বিবাহ করার সুযোগ দেয়ায় নারীদের প্রতি অসম্মান করেনি, বরং তাদের যথাযথ ব্যবস্থা ও সম্মান অক্ষুন্ন রাখতেই এমন ব্যবস্থাপনা। কারণ এমনও সময় আসতে পারে যখন পুরুষের চেয়ে নারীদের সংখ্যার অনুপাত অনেক বেশি হবে। যা ইতোমধ্যে বর্তমান পৃথিবীতে অনুপাতের তারতম্য লক্ষ করা যাচ্ছে। সে সময় একজন নারী স্বামীর পরিচয় দিতে পেয়ে নিজেকে সৌভাগ্যশীল মনে করবে, এটা লক্ষ করবে না তার স্বামীর কতজন স্ত্রী আছে।
সুতরাং বহু বিবাহ ইসলামী শরীয়তের অন্যতম একটি বিধান। এ সকল শরয়ী বিধান যা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিয়ে এসেছেন তা কেউ ঘৃণা করলে সে কাফির হয়ে যাবে। এ জন্য মহিলাদের উচিত, একজন স্বামীর একাধিক স্ত্রী থাকাটা যেন তারা অপছন্দ না করে। কারণ এটা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের বিধান। তবে স্বভাবগতভাবে এ বিষয়টাকে অপছন্দ করা, ভাল না বাসার অর্থ শরয়ী বিধানকে অপছন্দ করা নয়। এরূপ অপছন্দের কারণে ঈমানের কোন ক্ষতি হবে না। অথবা কতক পুরুষ যারা স্ত্রীদের মাঝে সমতা বজায় রাখতে পারে না এজন্য একাধিক বিবাহকে অপছন্দ করা দোষণীয় নয়। কিন্তু একাধিক বিবাহ করার শরয়ী বিধানকে অপছন্দ করলে মুরতাদ হয়ে যাবে। কারণ সে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক আনীত বিধানকে অপছন্দ করেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(ذٰلِكَ بِأَنَّهُمْ كَرِهُوْا مَآ أَنْزَلَ اللّٰهُ فَأَحْبَطَ أَعْمَالَهُمْ)
“কারণ, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তা তারা অপছন্দ করছে; তাই আল্লাহ তাদের আমল বরবাদ করে দিয়েছেন।”(সূরা মুহাম্মাদ ৪৭:৯)
তারপর আল্লাহ তা‘আলা স্ত্রীদের মাহর সন্তুষ্ট মনে আদায় করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। স্ত্রী যদি খুশি হয়ে কিছু ছেড়ে দেয় তাহলে কোন সমস্যা নেই। এ আয়াত প্রমাণ করছে স্ত্রীকে মাহর প্রদান করা ওয়াজিব। এ বিষয়ে সকল আলেম একমত। (আল ইসতিযকার, ইবনু আব্দুল বার ১৬/৬৮)
মাহরের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন কোন পরিমাণ নেই (সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ ৩/১৬২)। যার যেমন সামর্থ্য সে সেই পরিমাণ দেবে, এতে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। তবে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি তা আদায় করে দেয়া উত্তম। মৃত্যুর সময় ক্ষমা চেয়ে নেয়া উচিত নয়।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. প্রত্যেক হারাম সম্পদ ও বস্তু অপবিত্র। আর প্রত্যেক হালাল সম্পদ ও বস্তু পবিত্র।
২. ইয়াতীমদের সম্পদ অন্যায়ভাবে খাওয়া হারাম।
৩. একত্রে একজন পুরুষ চারজন মহিলাকে বিবাহ করতে পারে তবে শর্ত হলো সকলের মাঝে সমতা বহাল রাখার যোগ্য হতে হবে।
৪. মাহর স্ত্রীর হক, তাই তাকে প্রদান করা আবশ্যক।
৫. ইসলামের কোন বিধানকে অপছন্দ করা কুফরী কাজ, বরং আনুগত্যের সাথে সকল বিধানকে মেনে নিতে হবে।
৬. ইসলাম নারীর অর্থনৈতিক অধিকার দিয়েছে, তাদের অর্থে স্বামীরও হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings