Surah An Nisa Tafseer
Tafseer of An-Nisa : 155
Saheeh International
And [We cursed them] for their breaking of the covenant and their disbelief in the signs of Allah and their killing of the prophets without right and their saying, "Our hearts are wrapped". Rather, Allah has sealed them because of their disbelief, so they believe not, except for a few.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
১৫৫-১৫৯ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা’আলা যেসকল অপরাধের কারণে ইয়াহূদীদের ওপর লা‘নত করেছিলেন তা এখানে বর্ণনা করেছেন:
১. তাদের নিকট যেসকল অঙ্গীকার নেয়া হয়েছিল তা ভঙ্গ করার কারণে।
২. আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শন ও মুজিযার সাথে কুফরীর কারণে যা তারা সচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছিল।
৩. তাদের এ কথার কারণে যে, আমাদের অন্তর মোহরাঙ্কিত।
যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَقَالُوْا قُلُوْبُنَا فِيْٓ أَكِنَّةٍ مِّمَّا تَدْعُوْنَآ إِلَيْهِ)
“তারা বলেঃ তুমি যার প্রতি আমাদেরকে আহ্বান করছ সে বিষয়ে আমাদের অন্তর আবরণে আচ্ছাদিত।” (সূরা হা-মীম সিজদাহ ৪১:৫)
মূলত আল্লাহ তা‘আলা তাদের অন্তরে মোহর মেরে দিয়েছিলেন তাদের কুফরীর কারণে ফলে তাদের অল্প সংখ্যকই ঈমান আনে।
৪. মারইয়াম (আলাইহাস সালাম)-এর ওপর মিথ্যা অপবাদ প্রদানের কারণে। তারা মারইয়াম (আঃ)-কে ব্যভিচারের অপবাদ প্রদান করেছিল।
৫. তাদের এ কথা বলার কারণে যে, আমরা ঈসা (আঃ)-কে হত্যা করেছি।
এসব কথা ও কাজের কারণে কিয়ামত দিবস অবধি তাদের ওপর আল্লাহ তা’আলার অভিশাপ।
তারা ঈসা (আঃ)-কে হত্যা করেছে বলে যে দাবী করে তা মিথ্যা। প্রকৃতপক্ষে তারা ঈসা (আঃ)-কে হত্যা করতে পারেনি এবং শুলিতেও চড়াতে পারেনি। বরং একজন লোককে ঈসা (আঃ)-এর সদৃশ করে দেয়া হয়েছিল। তারা তাকে হত্যা করেছে। তারা নিহত লোকটির ব্যাপারে যে মতানৈক্য করেছে তা ধারণাপ্রসূত।
পূর্বেও উল্লেখ করা হয়েছে যে, যখন ঈসা (আঃ) বুঝতে পারলেন ইয়াহূদীরা তাকে হত্যা করার চক্রান্ত করছে তখন তিনি বার বা সতেরজন সহচর নিয়ে একত্র হয়ে তাদেরকে লক্ষ করে বলেন, তোমাদের মধ্যে কে আছো যাকে আমার সাদৃশ্য প্রদান করা হবে, আর তাকে হত্যা করা হবে। ফলে সে জান্নাতে আমার সাথে থাকবে। তাদের মধ্যে একজন যুবক বলেন, আমি। এভাবে তিনবার ঈসা (আঃ) বললে যুবকটি তিনবারই দাঁড়ায়।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাকে ঈসা (আঃ)-এর আকৃতি দান করেন। তারপর আল্লাহ তা‘আলা ঈসা (আঃ)-কে আকাশে তুলে নেন। পরে ইয়াহূদীরা এসে সে যুবকটিকে হত্যা করল এবং ক্রুস বিদ্ধ করল আর মনে করল তারা ঈসা (আঃ)-কেই হত্যা করেছে। (ইবনে কাসীর, ২/ ৫০১ এ বর্ণনা বিভিন্ন শব্দে এসেছে)
ঈসা (আঃ)-এর মত আকৃতিবিশিষ্ট লোকটিকে হত্যা করার পর ইয়াহূদীদের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। একদল বলল, ঈসাকে হত্যা করা হয়েছে, অন্য দল বলল, ক্রুসবিদ্ধ ব্যক্তি ঈসা (আঃ) নয়। অন্যদল বলল তারা ঈসা (আঃ)-কে আসমানে চড়তে স্বচক্ষে দেখেছে। মোট কথা তারা হত্যার ব্যাপারে মতবিরোধের শিকার।
(بَلْ رَّفَعَهُ اللّٰهُ إِلَيْهِ)
‘বরং আল্লাহ তাকে তাঁর নিকট তুলে নিয়েছেন’এ আয়াত দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হয় যে, আল্লাহ তা‘আলা ঈসা (আঃ)-কে জীবিত অবস্থায় স্বশরীরে আকাশে তুলে নেন।
বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হাদীসেও এ কথা প্রমাণিত। এ সকল হাদীসে ঈসা (আঃ)-কে আসমানে তুলে নেয়া ছাড়াও পুনরায় কিয়ামত দিবসের প্রাক্কালে পৃথিবীতে তার অবতরণ এবং আরো বহু কথা তার ব্যাপারে উল্লেখ করা হয়েছে। ইমাম ইবনু কাসীর (রহঃ) উক্ত হাদীসগুলো বর্ণনা করার পর বললেন, উল্লিখিত হাদীসগুলো রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে প্রমাণিত। অনেক সংখ্যক সাহাবী এসব হাদীস বর্ণনা করেছেন।
এ সমস্ত হাদীসে ঈসা (আঃ) কোথায় ও কিভাবে অবতরণ করবেন তা উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি দামেশকের মিনারা শারকিয়াতে ফজরের সালাতের ইকামাতের সময় অবতরণ করবেন। তিনি শূকর হত্যা করবেন, ক্রুস ভেঙ্গে ফেলবেন ও জিযিয়া কর বাতিল করবেন। তার শাসনামলে পৃথিবীর সমস্ত মানুষ মুসলিম হয়ে যাবে। তিনিই দাজ্জালকে হত্যা করবেন, তার যুগেই ইয়াযুজ-মাযুজ ও তাদের ফেতনা প্রকাশ পাবে এবং তার বদদু‘আয় বিনাশ ও ধ্বংস হয়ে যাবে। قبل موته “তার মৃত্যুর পূর্বে” আলোচ্য আয়াতে ه (তার সর্বনামটি কার দিকে প্রত্যাবর্তন করেছে এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে।)
একদল মুফাসসীরগণের মতে, খ্রিস্টানদেরকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ প্রত্যেক খ্রিস্টানগণ মৃত্যুর পূর্বে ঈসা (আঃ)-এর নবুওয়াতের সত্যতা উপলব্ধি করে তাঁর প্রতি ঈমান আনবে। কিন্তু সে মুহূর্তে ঈমান কোন কাজে আসবে না।
আরেক দল মুফাসসিরগণের মতে, (এবং এ ব্যাখ্যাটি সঠিক) ’’هُ‘‘ সর্বনামটি প্রত্যাবর্তন ঈসা (আঃ)-এর দিকে তিনি দ্বিতীয়বার যখন দুনিয়াতে অবতরণ করবেন, দাজ্জালকে হত্যা করবেন, ইসলাম প্রচারে মগ্ন হবেন, ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানগণের মধ্যে যারা বিরুদ্ধাচরণ করবে তাদেরকে হত্যা করবেন এবং সর্বত্র ইসলামের একচ্ছত্র আধিপত্য কায়িম হবে। অবশিষ্ট আহলে কিতাবরা ঈসা (আঃ)-এর মৃত্যুর পূর্বেই তাঁর প্রতি যথাযথ ঈমান আনবে।
সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যার হাতে আমার প্রাণ। সেই সত্তার শপথ! অবশ্যই এমন একদিন আসবে যেদিন তোমাদের মধ্যে ঈসা বিন মারইয়াম একজন ন্যায়পরায়ন শাসক হিসেবে অবতরণ করবেন। ক্রুস ভেঙ্গে চুরমার করবেন, শুকর নিধন করবেন, জিযিয়া কর বাতিল করবেন, মাল-সম্পদ এত বেশি হবে যে, (দান-সদাক্বাহ) গ্রহণ করার মত লোক থাকবে না। সেই সময় একটি সিজদা দুনিয়া এবং তার মধ্যে যা কিছু আছে তার থেকেও উত্তম হবে। এ হাদীস বর্ণনার পর আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বললেন: তোমরা ইচ্ছা করলে কুরআনের এ আয়াত তেলাওয়াত করতে পার:
(وَإِنْ مِّنْ أَهْلِ الْكِتٰبِ إِلَّا لَيُؤْمِنَنَّ بِه۪ قَبْلَ مَوْتِه۪ ج وَيَوْمَ الْقِيٰمَةِ يَكُوْنُ عَلَيْهِمْ شَهِيْدًا)
“আহলে কিতাবীগণের মধ্যে প্রত্যেকে নিজ মৃত্যুর পূর্বে তাকে (ঈসা) বিশ্বাস করবেই এবং কিয়ামাতের দিন সে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে”(সূরা নিসা ৪:১৫৯, সহীহ বুখারী হা: ৩৪৪৮)
এ ব্যাপারে আরো অনেক সহীহ হাদীস রয়েছে, যা প্রমাণ করে ঈসা (আঃ) আকাশে জীবিত রয়েছেন। কিয়ামাতের পূর্বে দুনিয়াতে আসবেন। এটাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আক্বীদাহ।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ইয়াহূদীদের ওপর লা‘নতের কারণসমূহ জানতে পারলাম।
২. খ্রিস্টানদের বাতিল আক্বীদাহ সম্পর্কে জানতে পারলাম।
৩. ঈসা (আঃ) দুনিয়ার আকাশে জীবিত আছেন। শেষ জামানায় আসবেন।
৪. আল্লাহ তা‘আলা উপরে আছেন, স্বসত্ত্বায় সর্বত্র বিরাজমান নন। যদি তাই না হতো তাহলে ঈসা (আঃ)-কে আকাশে তুলে নেয়ার কোন অর্থ হয় না।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings