Surah An Nisa Tafseer
Tafseer of An-Nisa : 13
Saheeh International
These are the limits [set by] Allah, and whoever obeys Allah and His Messenger will be admitted by Him to gardens [in Paradise] under which rivers flow, abiding eternally therein; and that is the great attainment.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
১১ হতে ১৪ নং আয়াতের তাফসীর:
শানে নুযূল:
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও আবূ বাকর (রাঃ) আমাকে (রোগাবস্থায়) দেখার জন্য পায়ে হেঁটে আসেন। আমাকে তারা অজ্ঞান অবস্থায় দেখতে পান। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওযূর পানি আনতে বলেন, অতঃপর ওযূ করে আমার ওপর অবশিষ্ট পানি ছিটিয়ে দেন। তখন আমার জ্ঞান ফিরে আসে। আমি বললাম, আমার সম্পদ কী করতে বলেন? তখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়-
(يُوْصِيْكُمُ اللّٰهُ فِيْٓ أَوْلَادِكُمْ)।
(সহীহ বুখারী হা: ৪৫৭৭, সহীহ মুসলিম হা: ১৬১৬)
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, জাবের (রাঃ) বলেন: সা’দ বিন রাবী (রাঃ)-এর স্ত্রী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আগমন করলেন। অতঃপর বলেছেন: হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! এ দু’জন সা’দের মেয়ে। তাদের পিতা উহুদের ময়দানে শাহাদাত বরণ করেছেন। তাদের চাচা সমস্ত সম্পদ নিয়ে নিয়েছে, তাদের জন্য কিছুই রাখেনি। আর সম্পদ ছাড়া তো তাদের বিবাহও দেয়া যাচ্ছে না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যাপারে ফায়সালা দেবেন। তখন মীরাসের আয়াত অবতীর্ণ হয়। (আবূ দাঊদ হা: ২৮৯১, তিরমিযী হা: ২০৯২, ইবনু মাযাহ হা: ২৭২০, সহীহ)
সম্পদ বণ্টনের পূর্বে করণীয়: মৃত ব্যক্তির সম্পদ থেকে প্রথমে শরীয়ত অনুযায়ী তার কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করবে, এতে কৃপণতা ও অপব্যয় কোনটিই করবে না। এরপর তার ঋণ পরিশোধ করবে। যদি ঋণ দিতে গিয়ে সমস্ত সম্পদ শেষ হয়ে যায় তাহলেও পরিশোধ করতে হবে। তারপর সম্পদ থাকলে সমস্ত স¤পদের এক-তৃতীয়াংশ থেকে ওসীয়ত পূর্ণ করবে। তারপর উত্তরাধিকার বণ্টন হবে।
(لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنْثَيَيْنِ)
‘এক পুত্রের অংশ দুই কন্যার অংশের সমান’ অর্থাৎ দু’মেয়ে যা পাবে এক ছেলে ততটুকু পাবে। এতে মেয়েদের ওপর জুলুম করা হয়নি এবং মর্যাদা খাটোও করা হয়নি। বরং ইসলামের এ উত্তরাধিকার নিয়ম ন্যায় ও সুবিচারের দাবীসমূহের সাথে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ। কারণ, মহিলাদেরকে ইসলাম জীবিকা উপার্জনের দায়িত্ব থেকে মুক্ত রেখেছে বরং পুরুষের ওপরই এ দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়েছে । এ ছাড়া মাহর বাবদ কিছু সম্পদ মহিলাদের কাছে আসে। একজন পুরুষই এ মাল তাকে দেয়া তাছাড়া একজন মহিলা পিতার সম্পদে যেমন উত্তরাধিকারী হয় তেমনি স্বামীর সম্পদেও হয়, এরূপ উভয় পক্ষ থেকে পাওয়ার কোন সুযোগ পুরুষের নেই। এদিক দিয়ে মহিলাদের তুলনায় পুরুষের ওপর অনেক বেশি আর্থিক দায়িত্ব আরোপিত হয়। সুতরাং মহিলার অংশ যদি অর্ধেকের পরিবর্তে পুরুষের সমান হত, তাহলে পুরুষের ওপর জুলুম করা হত। আল্লাহ তা‘আলা কারো ওপর জুলুম করেন না।
আয়াতে يوصيكم এর অর্থ হল يأمركم অর্থাৎ তিনি তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন।
(فَاِنْ کُنَّ نِسَا۬ئً)
‘তবে যদি শুধু কন্যা হয়’ এখানে মৃত ব্যক্তির মেয়েদের উত্তরাধিকার অবস্থা বর্ণনা করা হচ্ছে। তাদের অবস্থা তিনটি: ১. মৃত ব্যক্তির মেয়ে একাই থাকলে সমস্ত সম্পদের অর্ধেক পাবে, যদি কোন মৃত ব্যক্তির ছেলে না থাকে। ২. সমস্ত সম্পদের দুই তৃতীয়াংশ পাবে, যদি দুই বা ততধিক মেয়ে থাকে আর যদি মৃত ব্যক্তির কোন ছেলে না থাকে। ৩. মৃত ব্যক্তির ছেলে থাকলে ছেলে যা পাবে মেয়ে তার অর্ধেক পাবে।
(وَلِاَبَوَیْھِ لِکُلِّ وَاحِدٍ)
‘পিতা-মাতা প্রত্যেকে তার রেখে যাওয়া সম্পদের ছয়ভাগের একভাগ পাবে’ ওয়ারিশের ক্ষেত্রে পিতা-মাতার তিনটি অবস্থা বর্ণিত হয়েছে-
১. মৃত ব্যক্তির সন্তানাদি থাকলে পিতা-মাতা উভয়ে সমস্ত মালের ছয়ভাগের একভাগ পাবে।
২. মৃত ব্যক্তির সন্তানাদি না থাকলে মা এক তৃতীয়াংশ পাবে। অবশিষ্ট দু’ভাগ “আসাবাহ” হিসেবে বাবা পাবে।
৩. পিতা-মাতার সাথে মৃত ব্যক্তির ভাই-বোন জীবিত থাকাবস্থায় মা ছয়ভাগের একভাগ পাবে। বাকি সমস্ত মাল পিতার ভাগে চলে যাবে।
(مِنْۭ بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُّوْصِيْنَ بِهَآ أَوْ دَيْنٍ)
‘ওসীয়ত পালন ও ঋণ পরিশোধের পর।’ এখানে যদিও ঋণের পূর্বে অসীয়তকে আনা হয়েছে কিন্তু আগে ঋণ পরিশোধ করতে হবে তারপর অসীয়ত। এ বিষয়ে পূর্ব পরবর্তী সকল আলেম সমাজ একমত। আলী (রাঃ) বলেন: তোমরা
(مِنْۭ بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُّوْصِيْنَ بِهَآ أَوْ دَيْنٍ)
অর্থাৎ আগে অসীয়ত পূর্ণ কর তারপর ঋণ পরিশোধ করে থাক, আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অসীয়তের পূর্বে ঋণ পরিশোধ করতেন। (তিরমিযী হা: ২০৯৪, ইবনু মাযাহ হা: ২৭১৫, হাসান)
(وَلَکُمْ نِصْفُ مَا تَرَکَ اَزْوَاجُکُمْ)
‘আর তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সম্পদের অর্ধেক পাবে’ এখানে স্বামীর উত্তরাধিকার অবস্থা বর্ণনা করা হচ্ছে। স্বামীর অবস্থা দু’টি:
১. যদি তার স্ত্রীর ছেলে মেয়ে থাকে তাহলে সমস্ত সম্পদের এক-চতুর্থাংশ পাবে।
২. ছেলে-মেয়ে না থাকলে অর্ধেক পাবে।
(فَلَھُنَّ الثُّمُنُ مِمَّا تَرَکْتُمْ)
‘তারা তোমাদের রেখে যাওয়া সম্পদের আটভাগের একভাগ পাবে’ এখানে স্ত্রীর উত্তরাধিকারী অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে। স্ত্রীর দু’অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে:
১. স্বামীর সন্তান থাকলে এক অষ্টমাংশ পাবে।
২. স্বামীর সন্তান না থাকলে এক চতুর্থাংশ পাবে।
كلالة ‘কালালাহ’ বলা হয় যে ব্যক্তির পিতা-মাতা ও সন্তানাদি নেই। অর্থাৎ মূলও নেই, শাখা-প্রশাখাও নেই।
বিঃ দ্রষ্টব্য: যদি স্ত্রীর মাহর আদায় না করে থাকে তাহলে সেটাও ঋণ বলে গণ্য করা হবে এবং পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে বণ্টনের পূর্বেই আদায় করা জরুরী হবে।
(وَصِیَّةً مِّنَ اللہِ)
এটা হল আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ। পরের আয়াতে বলা হয়েছে, এটা হল আল্লাহ তা‘আলার সীমারেখা। অতএব কোনক্রমেই এ সীমা লঙ্ঘন করা হালাল হবে না। মৃত্যুর পূর্বে অসীয়ত করে সমস্ত সম্পদ দিয়ে দেয়া আর ওয়ারিশদের বঞ্চিত করা হারাম। এ অসীয়ত বাতিল বলে গণ্য হবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
(إِنَّ اللّٰهُ قَدْ أَعْطٰي كُلَّ ذِي حَقٍّ حَقَّهُ فَلَا وَصِيَّةَ لِوَارِثٍ)
নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক অধিকারীকে তার প্রাপ্য অধিকার দিয়েছেন। অতএব ওয়ারীশের জন্য কোন অসীয়ত নেই। (আবূ দাঊদ হা: ২৮৭০, তিরমিযী হা: ২১২০, সহীহ)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. মৃত ব্যক্তির সম্পদ বণ্টন স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা করে দিয়েছেন। এতে কোন বুদ্ধিজীবীর মন্তব্য খাটবে না।
২. আল্লাহ তা‘আলার সীমারেখা লঙ্ঘন করা হারাম।
৩. আল্লাহ তা‘আলা মহিলাদের ন্যায্য অধিকার দিয়েছেন। এ সিদ্ধান্তের ওপর সন্তুষ্ট থাকতে প্রতিটি মুসলিম নর-নারী বাধ্য, অন্যথায় ঈমান থাকবে না।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings