Surah Al Hujurat Tafseer
Tafseer of Al-Hujurat : 14
Saheeh International
The bedouins say, "We have believed." Say, "You have not [yet] believed; but say [instead], 'We have submitted,' for faith has not yet entered your hearts. And if you obey Allah and His Messenger, He will not deprive you from your deeds of anything. Indeed, Allah is Forgiving and Merciful."
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
১৪-১৮ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
الْأَعْرَابُ অর্থ বেদুঈন, মরুবাসী, যারা গ্রামে বসবাস করে। কোন কোন মুফাস্সিরের মতে, এ বেদুঈন লোকগুলো হলো, মদীনার বনু আসাদ ও খুযাইমাহ্ গোত্রের মুনাফিক। তারা দুর্ভিক্ষের সময় কেবল সাদকা লাভের উদ্দেশ্যে অথবা হত্যা ও বন্দী হওয়া থেকে বাঁচার জন্য মৌখিকভাবে ইসলাম গ্রহণ করার কথা ব্যক্ত করেছিল। কিন্তু তাদের ঈমান, ‘আক্বীদাহ্ এবং ইসলামের আন্তরিকতা মুক্ত ছিল। (ফাতহুল কাদীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
ইমাম ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন : এখানে এমন বেদুঈন লোকদের বুঝানো হয়েছে যারা নতুন মুসলিম হয়েছিল, কিন্তু ঈমান তাদের অন্তরে তখনো দৃঢ়ভাবে স্থান পায়নি। অথচ তাদের অন্তরে যতটুকু ঈমান ছিল দাবী করেছিল তার চেয়ে বেশি।
ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলে দিতে বললেন যে, বলো না আমরা ঈমান এনেছি বরং বলো ইসলাম গ্রহণ করেছি। তোমাদের অন্তরে এখনো পূর্ণ ঈমান প্রবেশ করেনি।
আয়াতের ভাষ্য দ্বারা বুঝা যাচ্ছে ঈমান ও ইসলামে পার্থক্য রয়েছে। এরূপ একটি হাদীস দ্বারাও বুঝা যায় যে, ঈমান ও ইসলামের মাঝে পার্থক্য রয়েছে। সা‘দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কতগুলো লোককে (দানের মাল হতে) দান করলেন এবং একটি লোককে কিছুই দিলেন না। তখন সা‘দ (রাঃ) বললেন : হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি অমুক অমুককে দিলেন আর অমুককে দিলেন না। অথচ সে মু’মিন। এ-কথা তিনবার বললেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জবাবে বললেন : সে কি মুসলিম? (সহীহ বুখারী হা. ২৭)
আবার অনেক আয়াত ও হাদীস প্রমাণ করে যে, ঈমান ও ইসলামের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(فَأَخْرَجْنَا مَنْ كَانَ فِيْهَا مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ - فَمَا وَجَدْنَا فِيْهَا غَيْرَ بَيْتٍ مِّنَ الْمُسْلِمِيْنَ)
“সেখানে যেসব মু’মিন ছিল আমি তাদের বের করে নিলাম। এবং সেখানে একটি পরিবার [লূত-এর পরিবার] ব্যতীত কোন মুসলিম আমি পাইনি।” (সূরা যারিয়াত ৫১ : ৩৫-৩৬)
হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) উভয়ের মাঝে সমাধান দিতে গিয়ে বলেন : যখন ঈমান ও ইসলাম একত্রে উল্লেখ থাকবে তখন আলাদা আলাদা অর্থে ব্যবহার হবে, আর যখন আলাদা আলাদা করে উল্লেখ থাকবে তখন একই অর্থ প্রকাশ করবে।
(قُوْلُوْآ أَسْلَمْنَا)
‘আমরা ইসলাম গ্রহণ করেছি’ প্রকৃতপক্ষে তাদের ঈমান ছিল না, হত্যা ও বন্দি হওয়ার ভয়ে বাহ্যিকভাবে আত্মসমর্পণ করেছিল। এটা মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য। বাহ্যিকভাবে মু’মিনদের মত ইসলামের কিছু বিধান পালন করলেই মু’মিন হওয়া যায় না যতক্ষণ না অন্তরের বিশ্বাস ও মহব্বতের সাথে আমল করবে। তাই তারা বাহ্যিকভাবে ইসলামের কিছু বিধান মেনে নিয়ে দাবী করছে আমরা মু’মিন হয়েছি, মূলত তারা মু’মিন ছিল না, তাই ইসলামের প্রতি তাদের বাহ্যিক আত্মসমর্পণ করাকে আভিধানিক অর্থে মুসলিম বলা হয়েছে।
(لَا يَلِتْكُمْ مِنْ أَعْمَالِكُمْ)
অর্থাৎ যদি তোমরা প্রকৃতপক্ষে স্বচ্ছ ঈমান এনে থাক তাহলে আল্লাহ তোমাদের কর্মের প্রতিদান কম করে দেবেন না, নষ্ট করবেন না।
যেমন আল্লাহ বলেন :
(وَالَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَاتَّبَعَتْھُمْ ذُرِّیَّتُھُمْ بِاِیْمَانٍ اَلْحَقْنَا بِھِمْ ذُرِّیَّتَھُمْ وَمَآ اَلَتْنٰھُمْ مِّنْ عَمَلِھِمْ مِّنْ شَیْءٍﺚ کُلُّ امْرِئئ بِمَا کَسَبَ رَھِیْنٌ)
“এবং যারা ঈমান আনে আর তাদের সন্তান-সন্ততিও ঈমানে তাদের অনুসারী হয়, তাদের সাথে মিলিত করব তাদের সন্তান-সন্ততিকে এবং আমি তাদের কর্মফলের ঘাটতি করব না, প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের জন্য দায়ী।” (সূরা তূর ৫২ : ২১)
অতঃপর শুধু মুখে নয় প্রকৃতপক্ষে যারা মু’মিন তাদের পরিচয় তুলে ধরতে গিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন : মু’মিন তারাই যারা ঈমান আনার পর সন্দেহ পোষণ করেনি বরং ঈমানের ওপর অটল থাকে এবং জান মাল দিয়ে জিহাদ করে আর তারাই সত্যবাদী।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(إِنَّ الَّذِيْنَ قَالُوْا رَبُّنَا اللّٰهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوْا)
“নিশ্চয়ই যারা বলে : আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, অতঃপর অবিচলিত থাকে।” (সূরা হা-মীম সিজদাহ ৪১ : ৩০)
(أَتُعَلِّمُونَ اللّٰهَ بِدِينِكُمْ)
‘তোমরা কি তোমাদের দীনের খবর আল্লাহকে জানাচ্ছ?’ এখানে تعليم শব্দটি اعلام বা জানানোর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ তোমাদের দীন ও অন্তরে যা আছে সে সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলাকে অবগত করছ? বেদুঈনরা যখন নিজেদেরকে মু’মিন বলে দাবী করল আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নাবীকে নির্দেশ দিলেন : “তুমি বল : তোমরা ঈমান আননি ও তোমাদের অন্তরে এখনো ঈমান প্রবেশ করেনি” বলে তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার জন্য এবং আরো নির্দেশ দিলেন যেন তিনি তাদেরকে ভর্ৎসনা করে বলেন : “তোমরা কি তোমাদের দীনের খবর আল্লাহকে জানাচ্ছ?”। তোমরা মুখে যতই বল আমরা মু’মিন, প্রকৃতপক্ষে কে মু’মিন আর কে ছদ্মবেশী মু’মিন, নিজের স্বার্থ হাসিল করার জন্য ইসলামের ছায়া তলে এসেছে, আল্লাহ তা‘আলা তার সব কিছু সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন।
(قُلْ لَا تَمُنُّوا عَلَيَّ إِسْلَامَكُمْ)
‘বল : তোমাদের ইসলাম দ্বারা আমাকে ধন্য করনি’ অর্থাৎ বেদুঈন আরবদের আচরণে বুঝা যাচ্ছে যে, তারা মনে করে আমরা ইসলাম গ্রহণ করে মুহাম্মাদকে অনুগ্রহ করেছি, তার শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছি। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জানিয়ে দিচ্ছেন যে, বলে দাও! তোমরা ইসলাম গ্রহণ করে আমাকে অনুগ্রহ করোনি বরং আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে হিদায়াত দিয়ে অনুগ্রহ করেছেন।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : হে আনসাররা! আমি কি তোমাদের পথহারা পাইনি, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা আমার মাধ্যমে তোমাদেরকে হিদায়াত দান করেছেন? তোমরা বিভিন্ন দলে বিচ্ছিন্ন ছিলে আল্লাহ আমার মাধ্যমে তোমাদেরকে একত্র করে দিয়েছেন? তোমরা নিঃস্ব ছিলে আমার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা ধনী করে দিয়েছেন? সাহাবীরা প্রত্যেক প্রশ্নের জবাবে বললেন : আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চেয়েও বেশি আমাদের ওপর অনুগ্রহকারী। (সহীহ বুখারী হা. ৪৩৩০)
(إِنَّ اللّٰهَ يَعْلَمُ غَيْبَ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ)
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ আকাশসমূহ ও পৃথিবীর গায়েবের বিষয় সম্পর্কে অবগত আছেন’ অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(اَلَآ اِنَّھُمْ یَثْنُوْنَ صُدُوْرَھُمْ لِیَسْتَخْفُوْا مِنْھُﺚ اَلَا حِیْنَ یَسْتَغْشُوْنَ ثِیَابَھُمْﺫ یَعْلَمُ مَا یُسِرُّوْنَ وَمَا یُعْلِنُوْنَﺆ اِنَّھ۫ عَلِیْمٌۭ بِذَاتِ الصُّدُوْرِ)
“সাবধান! নিশ্চয়ই তারা আল্লাহর নিকট গোপন রাখার জন্য তাদের বক্ষ দ্বিভাঁজ করে। সাবধান! তারা যখন নিজেদেরকে বস্ত্রে আচ্ছাদিত করে তখন তারা যা গোপন করে ও প্রকাশ করে, তিনি তা জানেন। অন্তরে যা আছে, নিশ্চয়ই তিনি তা সবিশেষ অবহিত।” (সূরা হূদ ১১ : ৫)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. প্রকৃত মু’মিনদের মুখের জবান ও অন্তরের বিশ্বাস এক ও অভিন্ন থাকবে।
২. ঈমান ও ইসলামের মাঝে সম্পর্ক একটি অপরটির পরিúূরক; বিপরীত নয়।
৩. প্রকৃত মু’মিনরা ঈমান আনার পর ঈমান থেকে সরে পড়ে না।
৪. সকল সৃষ্টি আল্লাহ তা‘আলার জ্ঞান দ্বারা বেষ্টিত।
৫. সকল গায়েব একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জ্ঞানায়ত্ত, অন্য কেউ গায়েব জানে না।
৬. ভাল কাজ করলে তা নিজের উপকারে আসবে আর খারাপ কাজ করলে তার পরিণতি নিজেকেই ভোগ করতে হবে।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings