Surah Al Fath Tafseer
Tafseer of Al-Fath : 3
Saheeh International
And [that] Allah may aid you with a mighty victory.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
নামকরণ ও ফযীলত :
(الفتح) আল-ফাতহ অর্থ বিজয়, অত্র সূরার প্রথম আয়াতে “ফাতহ” শব্দটি উল্লেখ রয়েছে এখান থেকেই এ নামে সূরার নামকরণ করা হয়েছে। তাছাড়া এ সূরাতে মক্কা বিজয়ের পূর্বাভাসও দেয়া হয়েছে।
এ সূরাটি মদীনায় অবতীর্ণ। ইমাম কুরতুবী বলেন : মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী জায়গায় হুদায়বিয়ার সন্ধিকে কেন্দ্র করেই রাতে অবতীর্ণ হয়েছে। উভয় মতের মাঝে কোন বৈপরিত্য নেই। কারণ হিজরত পরবর্তী সূরাগুলোকে মাদানী সূরা বলা হয়। (ফাতহুল কাদীর, অত্র সূরার তাফসীর)
আনাস (রাঃ) বলেন : যখন এ সূরা অবতীর্ণ হয় তখন সাহাবীরা চিন্তিত ও ভারাক্রান্ত অবস্থায় হুদায়বিয়া হতে প্রত্যাবর্তন করছিলেন। তারা হুদায়বিয়াতে কুরবানীর পশসমূহ জবাই করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : আমার কাছে এমন একটি আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে যা সমস্ত দুনিয়া হতে উত্তম। (সহীহ মুসলিম হা. ১৭৮৬)
আবদুল্লাহ বিন মুগাফফাল (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা বিজয়ের দিন চলার পথে বাহনের ওপর এ সূরা পড়েছিলেন এবং বারবার পুনরাবৃত্তি করতে ছিলেন। (সহীহ বুখারী হা. ৫০৩৪)
জায়েদ বিন আসলাম (রাঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা কোন এক সফরে গমন করছিলেন, সাথে উমার (রাঃ)-ও ছিলেন। উমার (রাঃ)-কোন বিষয়ে প্রশ্ন করলেন, কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জবাব দিলেন না। এভাবে তিনবার জিজ্ঞাসা করলেন কিন্তু কোন উত্তর দিলেন না। উমার (রাঃ) বললেন : উমারের মা ধ্বংস হয়ে গেছে, তিনবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করলাম, তিনি কোন উত্তর দিলেন না। উমার (রাঃ) বললেন : আমার উটকে নড়াচড়া করে মানুষের সামনে চলে গেলাম। ভয় করলাম আমার ব্যাপারে কুরআন অবতীর্ণ হয়ে না যায়। একজন লোককে উঁচু আওয়াজে আমার ব্যাপারে বলতে শুনলাম। আমি আশঙ্কা করছি হয়তো আমার ব্যাপারে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আসলাম এবং সালাম দিলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : আমার উপর এমন একটি সূরা অবতীর্ণ হয়েছে যা আমার কাছে অধিক প্রিয় তা হতে যাতে সূর্য উদিত হয় (পৃথিবী)। তারপর এ সূরা তিলাওয়াত করেন। (সহীহ বুখারী হা. ৪১৭৭)
ইমাম ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন : ষষ্ঠ হিজরীর যুলকাদাহ মাসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন হুদায়বিয়া থেকে ফিরে আসেন তখন এ সূরাটি অবতীর্ণ হয়। তখন তিনি উমরা করার জন্য মাসজিদে হারামের উদ্দেশ্যে রওনা করেছিলেন। কিন্তু মুশরিকরা বাধা দেয়। (ইবনু কাসীর অত্র সূরার ১ নং আয়াতের তাফসীর)
অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট : হাবীব ইবনু আবূ সাবিত (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন : আমি আবূ ওয়ায়িল (রাঃ)-এর কাছে কিছু জিজ্ঞাসা করার জন্য এলে তিনি বললেন : আমরা সিফফীনের ময়দানে ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি বললেন : তোমরা কি সে লোকদেরকে দেখতে পাচ্ছ না যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার কিতাবের দিকে আহ্বান করা হচ্ছে।
আলী (রাঃ) বললেন : হ্যাঁ, তখন সাহল ইবনু হুনাইফ (রাঃ) বললেন, প্রথমে তোমরা নিজেদের খবর নাও। হুদায়বিয়ার দিন অর্থাৎ নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং মক্কার মুশরিকদের মধ্যে যে সন্ধি হয়েছিল আমরা সেটা দেখেছি। যদি আমরা একে যুদ্ধ মনে করতাম তাহলে অবশ্যই আমরা যুদ্ধ করতাম। সেদিন উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বলেছিলেন : আমরা কি হকের ওপর নেই, আর তারা কি বাতিলের ওপর নয়? আমাদের নিহত ব্যক্তিরা জান্নাতে, আর তাদের নিহত ব্যক্তিরা কি জাহান্নামে যাবে না? তিনি বললেন : হ্যাঁ। তখন উমার (রাঃ) বললেন : তাহলে কেন আমাদের দীনের ব্যাপারে অপমানজনক শর্তারোপ করা হবে এবং আমরা ফিরে যাব? অথচ আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে এ সন্ধির ব্যাপারে হুকুম করেননি। তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : হে খাত্তাবের পুত্র! আমি আল্লাহ তা‘আলার রাসূল। আল্লাহ তা‘আলা কখনো আমাকে ধ্বংস করবেন না। উমার রাগে মনে দুঃখ নিয়ে ফিরে গেলেন। তিনি ধৈর্য ধরতে পারলেন না। তারপর আবূ বকর (রাঃ)-এর কাছে গেলেন এবং বললেন : হে আবূ বকর! আমরা কি হকের ওপর নই এবং তারা কি বাতিলের ওপর নয়? তিনি বললেন : হে খাত্তাবের পুত্র! নিশ্চয়ই তিনি আল্লাহ তা‘আলার রাসূল! আল্লাহ তা‘আলা কখনো তাঁকে ধ্বংস করবেন না। এ সময় সূরা ফাতহ অবতীর্ণ হয়। (সহীহ বুখারী হা. ৪৮৪৪, সহীহ মুসলিম হা. ১৭৮৫)
১-৩ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
আয়াতে উল্লেখিত ‘‘ফাতহুম মুবীন” সুস্পষ্ট বিজয় দ্বারা উদ্দেশ্য হল হুদায়বিয়ার সন্ধি। কারণ এ সন্ধির ফলে মুসলিমরা সর্বত্র ইসলামের দাওয়াত ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়। ফলে আরবের অনেক গোত্র ইসলামের ছায়াতলে আসে। এটা আরও সুস্পষ্ট করে যে, হুদায়বিয়ার সন্ধিতে ১৪০০ জন্য সাহাবী অংশগ্রহণ করেন। দু বছর পর যখন মক্কা বিজয়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন তখন সাথে সাহাবী ছিল দশ হাজার।
এটাই প্রমাণ করেছেন : সন্ধিই ছিল সুস্পষ্ট বিজয় যার কারণে মুসলিমদের সংখ্যা ও শক্তিসামর্থ্য বৃদ্ধি পায়। তাই সুস্পষ্ট বিজয় দ্বারা মক্কা বিজয় উদ্দেশ্য নয়। যদিও কিছু কিছু আলেমগণ মক্কা বিজয়ের কথা বলেছেন। (আযওয়াউল বায়ান, অত্র আয়াতের তাফসীর) এটাই অধিকাংশ আলেমদের কথা। তাছাড়া হুদায়বিয়ার সন্ধিই পরবর্তীতে মক্কা বিজয়ের কারণে পরিণত হয়েছিল।
ইবনু মাসঊদ (রাঃ) ও অন্যান্যদের থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : তোমরা বিজয় বলতে মক্কা বিজয়কে বুঝে থাক, আর আমরা বিজয় বলতে হুদায়বিয়ার সন্ধিকে বুঝে থাকি।
জাবের (রাঃ) বলেন : আমরা বিজয় বলতে কেবল হুদায়বিয়ার দিনকে গণ্য করতাম। (ইবনু জারীর. ২৬/৯৪)
বারা বিন আজেব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : তোমরা বিজয় বলতে মক্কা বিজয়কে বুঝে থাক। মক্কা বিজয় অবশ্য একটি বিজয়, কিন্তু আমরা হুদায়বিয়ার দিনের ‘বাইয়াতে রিদওয়ান’-কে বিজয় হিসেবে গণ্য করি। (সহীহ বুখারী হা. ৪১৫০)
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হুদায়বিয়া হতে প্রত্যাবর্তনকালে
(لِيَغْفِرَ لَكَ اللّٰهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْۭبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ)
আয়াত নাযিল হয়।
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : আমার কাছে এমন একটি আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে যা আমার কাছে জমিনে যা কিছু আছে তার চেয়ে অধিক প্রিয়। অতঃপর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদের কাছে এ আয়াতটি তিলাওয়াত করেন। সাহাবীরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মুবারকবাদ জানালেন এবং বললেন : হে আল্লাহ তা‘আলার নাবী! এতো আপনার জন্য আমাদের জন্য কি? তখন
(لِيُدْخِلَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا وَيُكَفِّرَ عَنْهُمْ)
আয়াত নাযিল হয়। (সহীহ বুখারী হা. ৪১৭২)
(لِّيَغْفِرَ لَكَ اللّٰهُ)
‘যাতে আল্লাহ তোমার আগের ও পরের ভুল-ক্রটি মাফ করেন’ অর্থাৎ আমি আপনাকে সুস্পষ্ট বিজয় দান করেছি যাতে বিজয় ও আপনার গুনাহ ক্ষমা দুটি একসাথে হয়। ফলে দুনিয়া ও পরকালের উভয় কল্যাণ আপনার হাসিল হবে যা আপনার চক্ষুকে শীতল করবে।
মুগীরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন : নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত আদায় করতেন (রাতের তাহাজ্জুদ) এমনকি তার উভয় পা ফুলে যেত। বলা হল : আল্লাহ তা‘আলা আপনার পূর্বাপর সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। (তারপরেও এতো ইবাদত করেন কেন?) জবাবে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : আমি কি আল্লাহ তা‘আলার কৃতজ্ঞ বান্দা হব না। (সহীহ বুখারী হা. ৪৮৩৬, সহীহ মুসলিম হা. ২৮১৯)
(وَيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكَ)
অর্থাৎ দুনিয়া ও আখিরাতে তার নেয়ামতকে পূর্ণ করে দিতে চান।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. সূরা আল-ফাতহ অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট জানলাম।
২. ফাতহুম মুবীন দ্বারা উদ্দেশ্য হুদায়বিয়ার সন্ধি, মক্কা বিজয় নয়।
৩. রাসূলের (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পূর্বাপর সকল অপরাধ আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করে দিয়েছেন।
৪. আল্লাহ তা‘আলার প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বেশি বেশি ইবাদত করতেন।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings