Surah Muhammad Tafseer
Tafseer of Muhammad : 9
Saheeh International
That is because they disliked what Allah revealed, so He rendered worthless their deeds.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
৪-৯ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
পূর্বের আয়াতগুলোতে মু’মিন ও কাফির উভয় দলের পরিচয় ও পরিণতি আলোচনার পর কাফির এবং যে সকল আহলে কিতাবীদের সাথে কোন চুক্তি হয়নি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন, সে সাথে শত্র“দের দ্রুত পরাভূত করার কৌশল শিক্ষা দিয়ে বলছেন : যখনই কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে প্রথমেই তাদের গর্দানে আঘাত করবে। তাহলে সহজেই তারা পরাভূত হবে।
অর্থাৎ যখন শত্র“দের অধিকাংশদেরকে হত্যা করে ফেলবে এবং তাদের শক্তি হ্রাস পেয়ে যাবে তখন অবশিষ্ট বন্দীদেরকে শক্ত করে বাঁধবে যাতে তারা পালাতে না পারে। অতঃপর যখন যুদ্ধ থেমে যাবে, আর তোমরা চিন্তামুক্ত হয়ে যাবে তখন বন্দিদের ব্যাপারে তোমরা স্বাধীন, ইচ্ছা করলে বন্দিদেরকে অনুগ্রহ করে বিনা মুক্তিপণে ছেড়ে দেবে, অথবা মুক্তিপণ নিয়ে অথবা হত্যা করবে যতক্ষণ না তারা যুদ্ধ থেকে বিরত থাকে। যদিও এখানে মুক্তিপণের কথা বলা হয়েছে কিন্তু অন্যান্য আয়াতে কাফিরদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক জিহাদ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ এসেছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(مَا كَانَ لِنَبِيٍّ أَنْ يَّكُوْنَ لَه۫ٓ أَسْرٰي حَتّٰي يُثْخِنَ فِي الْأَرْضِ)
“জমিনে ব্যাপকভাবে শত্র“কে পরাভূত না করা পর্যন্ত বন্দী রাখা কোন নাবীর জন্য সঙ্গত নয়।” (সূরা আনফাল ৮ : ৬৭) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন :
(فَاضْرِبُوْا فَوْقَ الْأَعْنَاقِ وَاضْرِبُوْا مِنْهُمْ كُلَّ بَنَانٍ)
“সুতরাং তোমরা আঘাত কর তাদের স্কন্ধে ও আঘাত কর তাদের প্রত্যেক আঙ্গুলের অগ্রভাগে। ” (সূরা আনফাল ৮ : ১৬)
এ দুয়ের মাঝে সমন্বয় করতে গিয়ে আলেম সমাজ অনেক কথা বলেছেন। কেউ বলেছেন, আয়াতটি রহিত হয়ে গেছে, কেউ বলেছেন এ আয়াতটি বন্দি করা নিষিদ্ধ সম্বলিত আয়াতগুলোকে রহিত করে দিয়েছে ইত্যাদি। ইমাম কুরতুবী (রহঃ) এ ব্যাপারে পাঁচটি মত ব্যক্ত করেছেন, তার মধ্যে উত্তম হল : আয়াতটি রহিত হয়নি বরং মুহকাম তথা কার্যকর রয়েছে। মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানের স্বাধীনতা রয়েছে- ইচ্ছা করলে বন্দী করে রাখতে পারে, ইচ্ছা করলে কোন মুক্তিপণ না নিয়ে ছেড়ে দিতে পারে আবার ইচ্ছা করলে মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দিতে পারে। যেমন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বদরের দিন উকবা বিন আবূ মুঈতকে বেঁধে হত্যা করেছিলেন, নযর বিন হারেসকে হত্যা করেছিলেন ও অন্য সকল বন্দিদেরকে মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন। সুমামাহ বিন আসালকে বিনা মুক্তিপণে ছেড়ে দিয়েছেন, হাওয়াজেন গোত্রের লোককে ছেড়ে দিয়েছেন। এ সব সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত (কুরতুবী)।
(وَلَوْ يَشَا۬ءُ اللّٰهُ لَانْتَصَرَ مِنْهُمْ)
অর্থাৎ জিহাদের বিধান দিয়েছেন কাফিরদের দ্বারা মু’মিনদেরকে পরীক্ষা করার জন্য ও মু’মিনদের দ্বারা কাফিরদেরকে শাস্তি দিতে। আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা করলে কাফিরদের উপর বিনা যুদ্ধে মু’মিনদের বিজয় দান করতে পারতেন, কিন্তু তিনি চান কাফির ও মু’মিনদের মাঝে জিহাদ হোক, ফলে মু’মিনদের ঈমান মজবুত হোক এবং দুনিয়ার সামান্য আঘাত ও কষ্টের বিনিময়ে আখিরাতে আযাব থেকে রক্ষা পেয়ে যাক এবং মর্যাদা বেড়ে যাক। আর কাফিররা মু’মিনদের হাতে দুনিয়াতে শাস্তি ভোগ করুক।
(فَلَنْ يُّضِلَّ أَعْمَالَهُمْ)
অর্থাৎ যারা আল্লাহ তা‘আলার পথে জিহাদ করে আল্লাহ তা‘আলা তাদের আমলের পুরস্কার বরবাদ করবেন না। বরং তাদের মর্তবা আরো বাড়িয়ে দেবেন।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : একজন শহীদ তার পরিবারের সত্তরজনকে সুপারিশ করতে পারবে। (আবূ দাউদ হা. ২৫২২, সহীহ)
سَيَهْدِيْهِمْ অর্থাৎ জান্নাতের দিকে পথ দেখাবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(إِنَّ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ يَهْدِيْهِمْ رَبُّهُمْ بِإِيْمَانِهِمْ ج تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهِمُ الْأَنْهٰرُ فِيْ جَنّٰتِ النَّعِيْمِ)
“নিশ্চয়ই যারা মু’মিন ও সৎ কর্মপরায়ণ তাদের প্রতিপালক তাদের ঈমানের কারণে তাদেরকে পথনির্দেশ করবেন নেয়ামতপূর্ণ জান্নাতের দিকে; যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত হবে।” (সূরা ইউনুস ১০ : ৯)
(إِنْ تَنْصُرُوا اللّٰهَ يَنْصُرْكُمْ)
আল্লাহ তা‘আলা বলছেন, যদি আমাকে সহযোগিতা কর তাহলে আমি তোমাদেরকে সহযোগিতা করব। আর যুদ্ধের ময়দানে তিনি তোমাদের পাসমূহ স্থির রাখবেন। কেউ বলেছেন, পুলসিরাতের ওপর পা অটল রাখবেন।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَلَيَنْصُرَنَّ اللّٰهُ مَنْ يَّنْصُرُه۫ ط إِنَّ اللّٰهَ لَقَوِيٌّ عَزِيْزٌ)
“আল্লাহ নিশ্চয়ই তাকে সাহায্য করেন যে তাঁকে সাহায্য করে। আল্লাহ নিশ্চয়ই শক্তিমান, পরাক্রমশালী।” (সূরা হাজ্জ ২২ : ৪০)
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(إِنَّا لَنَنْصُرُ رُسُلَنَا وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا فِي الْحَيٰوةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ يَقُوْمُ الْأَشْهَادُ)
“নিশ্চয়ই আমি আমার রাসূলদের ও মু’মিনদেরকে সাহায্য করব পার্থিব জীবনে ও যেদিন সাক্ষীগণ দন্ডায়মান হবে।” (সূরা মু’মিনুন ৪০ : ৫১) আল্লাহ তা‘আলাকে সাহায্য করার অর্থ আল্লাহ তা‘আলার দীনকে সাহায্য করা, যে সব এলাকায় মুসলিমরা নির্যাতিত ও অত্যাচারিত সেখানে তাদেরকে সাহায্য করা এবং আল্লাহ তা‘আলার পথে জিহাদ করা। তাহলে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে কাফিরদের ওপর সাহায্য করবেন।
কিন্তু আজকে মুসলিমরা দেশ ও জাতীর নামে বিভক্ত হওয়ার কারণে অন্যান্য দেশ বা জাতির মুসলিমদের ওপর কাফির-মুশরিকরা নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়ে যাচ্ছে অথচ আমরা তাদেরকে সহযোগিতা তো দূরের কথা তাদের পক্ষে কথা বলারও সাহস করি না।
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন -
الْمُسْلِمُونَ كَرَجُلٍ وَاحِدٍ، إِنِ اشْتَكَي عَيْنُهُ، اشْتَكَي كُلُّهُ، وَإِنِ اشْتَكَي، رَأْسُهُ اشْتَكَي كُلُّهُ
সারা বিশ্বের মুসলিমরা একটি ব্যক্তির ন্যায়, তার চোখে আঘাতপ্রাপ্ত হলে সারা শরীর আঘাত প্রাপ্ত হয়, তার মাথা আঘাত প্রাপ্ত হলে সারা শরীর আঘাতপ্রাপ্ত হয়। (সহীহ মুসলিম হা. ৬৭) তাই আমাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার সাহায্য পেতে হলে সকল মুসলিমকে সঠিক ঈমান ও আকীদাহ গ্রহণ করত একে অপরের ভাই হিসেবে বসবাস করতে হবে, সে মুসলিম যেখানেই থাকুক না কেন আর যে দেশেরই হোক না কেন।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. যতদিন কাফিররা যুদ্ধ করবে ততদিন যুদ্ধ করা আবশ্যক।
২. আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়াতেই মুসলিমদের হাতে কাফিরদের শাস্তি দিতে চান।
৩. বন্দিদের ব্যাপারে মুসলিমদের স্বাধীনতা রয়েছে।
৪. মুজাহিদদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ রয়েছে।
৫. যারা আল্লাহ তা‘আলার দীনকে সাহায্য করে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সাহায্য করবেন।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings