Surah Muhammad Tafseer
Tafseer of Muhammad : 16
Saheeh International
And among them, [O Muhammad], are those who listen to you, until when they depart from you, they say to those who were given knowledge, "What has he said just now?" Those are the ones of whom Allah has sealed over their hearts and who have followed their [own] desires.
Ibn Kathir Full
Tafseer 'Ibn Kathir Full' (BN)
১৬-১৯ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা'আলা মুনাফিকদের মেধাহীনতা, অজ্ঞতা এবং নির্বুদ্ধিতার বর্ণনা দিচ্ছেন যে, তারা মজলিসে বসে আল্লাহর রাসূল (সঃ)-এর কালাম শ্রবণ করা সত্ত্বেও তারা কিছুই বুঝে না। মজলিস শেষে জ্ঞানী সাহাবীদেরকে (রাঃ) তারা জিজ্ঞেস করেঃ “এই মাত্র তিনি কি বললেন?” মহান আল্লাহ বলেন যে, এরা হচ্ছে ওরাই যাদের অন্তর আল্লাহ মোহর করে দিয়েছেন। এরা নিজেদের কু-প্রবৃত্তির পিছনে পড়ে রয়েছে। এদের সঠিক বোধশক্তি এবং সৎ উদ্দেশ্যই নেই।
মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ যারা সৎপথ অবলম্বন করে আল্লাহ তাদের সৎপথে চলার শক্তি বৃদ্ধি করেন এবং তাদেরকে আল্লাহভীরু হবার তাওফীক দান করেন।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ কিয়ামতের লক্ষণ তো এসেই পড়েছে। অর্থাৎ কিয়ামত যে নিকটবর্তী হয়ে গেছে এর বহু লক্ষণ প্রকাশিত হয়েছে। যেমন অন্য জায়গায় আছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “এটা প্রথম ভয় প্রদর্শকদের মধ্য হতে একজন ভয় প্রদর্শক এবং নিকটবর্তী হওয়ার ব্যাপারটি নিকটবর্তী হয়েছে।”(৫৩:৫৬) আর এক জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “কিয়ামত আসন্ন, চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে।”(৫৪:১) আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা আরো বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আল্লাহর আদেশ আসবেই, সুতরাং ওটা ত্বরান্বিত করতে চেয়ো না।” (১৬:১) অন্য এক জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ মানুষের হিসাব নিকাশের সময় আসন্ন, কিন্তু তারা উদাসীনতায় মুখ ফিরিয়ে রয়েছে।”(২১:১)
সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর দুনিয়ায় রাসূলরূপে আগমন হচ্ছে কিয়ামতের নিদর্শনসমূহের মধ্যে একটি নিদর্শন। কেননা, তিনি রাসূলদেরকে সমাপ্তকারী। আল্লাহ তা'আলা তার দ্বারা দ্বীনকে পূর্ণ করেছেন এবং স্বীয় মাখলুকের উপর স্বীয় হুজ্জত পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) কিয়ামতের শর্তগুলো এবং নিদর্শনগুলো এমনভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন যে, তার পূর্বে কোন নবী এতো স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেননি। যেমন স্ব-স্ব স্থানে এগুলো বর্ণিত হয়েছে।
হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর আগমন কিয়ামতের শর্তসমূহের অন্তর্ভুক্ত। এ জন্যেই নবী (সঃ)-এর নাম হাদীসে এরূপ এসেছেঃ (আরবী) অর্থাৎ তিনি তাওবার নবী, (আরবী) অর্থাৎ লোকদেরকে তাঁর পায়ের উপর একত্রিত করা হবে, (আরবী) অর্থাৎ তার পরে আর কোন নবী আসবেন না।
হযরত সাহল ইবনে সা'দ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় মধ্যমা অঙ্গুলি এবং ওর পার্শ্বের অঙ্গুলির প্রতি ইশারা করে বলেনঃ “আমি এবং কিয়ামত এই অঙ্গুলিদ্বয়ের মত (অর্থাৎ এরূপ কাছাকাছি)।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ কিয়ামত এসে পড়লে তারা উপদেশ গ্রহণ করবে কেমন করে! অর্থাৎ কিয়ামত সংঘটিত হয়ে যাওয়ার পর উপদেশ ও শিক্ষাগ্রহণ বৃথা। যেমন আল্লাহ পাক অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “সেই দিন মানুষ উপদেশ গ্রহণ করবে, কিন্তু তখন তার জন্যে উপদেশ গ্রহণের সময় কোথায়?” (৮৯:২৩) অর্থাৎ এই দিনের উপদেশ গ্রহণে কোনই লাভ নেই। আর এক জায়গায় আছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “তারা ঐ সময় বলবেঃ আমরা এই কুরআনের উপর ঈমান আনলাম, কিন্তু এই দূরবর্তী স্থান হতে এই ক্ষমতা লাভ কি করে হতে পারে?” (৩৪:৫২) অর্থাৎ ঐ সময় তাদের ঈমান আনয়ন লাভজনক নয়।
এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ হে নবী (সঃ)! তুমি জেনে রেখো যে, আল্লাহ তাআলাই সত্য মা’রূদ। তিনি ছাড়া কোনই মাবুদ নেই। একথা দ্বারা আল্লাহ তা'আলা প্রকৃতপক্ষে স্বীয় একত্ববাদের সংবাদ দিয়েছেন। এর অর্থ এটা নয় যে, আল্লাহ পাক স্বীয় নবী (সঃ)-কে এটা জানার নির্দেশ দিচ্ছেন। এ জন্যেই এর উপর সংযোগ স্থাপন করে বলেনঃ “তুমি তোমার ও মুমিন নর-নারীদের ত্রুটির জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা কর।' সহীহ হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলতেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আমার পাপ, আমার অজ্ঞতা, আমার কাজে আমার সীমালংঘন বা বাড়াবাড়ি, প্রত্যেক ঐ জিনিস যা আপনি আমার চেয়ে বেশী জানেন, এগুলো আপনি ক্ষমা করে দিন! হে আল্লাহ! আপনি আমার অনিচ্ছাকৃত পাপ, ইচ্ছাকৃত পাপ, আমার দোষ-ত্রুটি এবং আমার কামনা-বাসনা ক্ষমা করে দিন! এগুলো সবই আমার মধ্যে রয়েছে।”
সহীহ হাদীসে আরো রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) নামায শেষে বলতেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আমি যেসব গুনাহ পূর্বে করেছি, পরে করেছি, গোপনে করেছি, প্রকাশ্যে করেছি, যা কিছু বাড়াবাড়ি করেছি এবং যা আপনি আমার চেয়ে বেশী জানেন, সবই মাফ করে দিন! আপনিই আমার মা’রূদ, আপনি ছাড়া কোন মা'বুদ নেই।”
অন্য সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “হে জনমণ্ডলী! তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আমি আল্লাহ তা'আলার নিকট প্রত্যহ সত্তর বারেরও বেশী তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকি।”
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সারভাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি (একদা) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট আগমন করি এবং তার সাথে তার খাদ্য হতে ভক্ষণ করি। তারপর আমি বলিঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন! তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “তোমাকেও মাফ করুন।” আমি বললামঃ আমি কি আপনার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করবো? তিনি উত্তরে বললেনঃ “হ্যা, এবং তোমার নিজের জন্যেও করবে।” অতঃপর তিনি (আরবী)-এ আয়াতটি পাঠ করলেন। তারপর আমি তার ডান ও বাম স্কন্ধের প্রতি লক্ষ্য করলাম, তখন দেখি যে, একটা জায়গা একটু উঁচু হয়ে রয়েছে, যেন ওটা তিল বা আঁচিল।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ), ইমাম মুসলিম (রঃ), ইমাম তিরমিযী (রঃ)-এবং ইমাম নাসাঈ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা (আরবী) পাঠকে নিজেদের জন্যে অবধারিত করে নাও এবং এ দু'টিকে খুব বেশী বেশী পাঠ করো। কেননা ইবলীস বলেঃ “আমি জনগণকে পাপের দ্বারা ধ্বংস করেছি এবং তারা আমাকে এ দু'টি কালেমা দ্বারা ধ্বংস করেছে। আমি যখন এটা দেখলাম তখন তাদেরকে কু-প্রবৃত্তির পিছনে লাগিয়ে দিলাম। সুতরাং তারা তখন মনে করে যে, তারা হিদায়াতের উপর রয়েছে।” (এ হাদীসটি আবূ ইয়ালা (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
অন্য একটি আসারে আছে যে, শয়তান বলেঃ “হে আল্লাহ! আপনার সম্মান ও মর্যাদার শপথ! যতক্ষণ পর্যন্ত কারো দেহে তার আত্মা থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমি তাকে বিভ্রান্ত করতে থাকবো।” তখন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “আমিও আমার ইযযত ও জালালের শপথ করে বলছি যে, যতক্ষণ পর্যন্ত সে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমি তাকে ক্ষমা করতে থকিবো।” ফযীলত সম্বলিত আরো বহু হাদীস রয়েছে।
আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ “আল্লাহ তোমাদের গতিবিধি এবং অবস্থান সম্বন্ধে সম্যক অবগত আছেন। যেমন অন্য আয়াতে আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আল্লাহ তিনিই যিনি রাত্রে তোমাদের মৃত্যু ঘটিয়ে দেন এবং দিনে তোমরা যা কিছু কর তা তিনি জানেন।”(৬:৬০) অন্য এক জায়গায় আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণকারী সবারই জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহরই; তিনি ওদের স্থায়ী ও অস্থায়ী অবস্থিতি সম্বন্ধে অবহিত; সুস্পষ্ট কিতাবে সবকিছুই আছে।”(১১:৬) ইবনে জুরায়েজ (রঃ)-এর উক্তি এটাই এবং ইমাম ইবনে জারীরও (রঃ) এটাকেই পছন্দ করেছেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এর দ্বারা দুনিয়ার গতিবিধি এবং আখিরাতের অবস্থানকে বুঝানো হয়েছে।
সুদ্দী (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হলো আল্লাহ তা'আলা দুনিয়ায় তোমাদের গতিবিধি এবং কবরে তোমাদের অবস্থান সম্বন্ধে সম্যক অবগত আছেন। তবে প্রথম উক্তিটিই বেশী উত্তম ও প্রকাশমান। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings