Surah Muhammad Tafseer
Tafseer of Muhammad : 14
Saheeh International
So is he who is on clear evidence from his Lord like him to whom the evil of his work has been made attractive and they follow their [own] desires?
Ibn Kathir Full
Tafseer 'Ibn Kathir Full' (BN)
১৪-১৫ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর দ্বীনে বিশ্বাসের সোপান পর্যন্ত পৌঁছে যাবে, যে অন্তর্চক্ষু লাভ করেছে, যার মধ্যে বিশুদ্ধ প্রকৃতির সাথে সাথে হিদায়াত ও ইলমও রয়েছে সেই ব্যক্তি কি ঐ ব্যক্তির সমান যে দুষ্কর্মকে সৎকর্ম মনে করে নিয়েছে এবং নিজের কু-প্রবৃত্তির পিছনে পড়ে রয়েছে? এই দুই ব্যক্তি কখনো সমান হতে পারে না। আল্লাহ পাকের এ উক্তিটি তার নিম্নের উক্তিগুলোর মতইঃ (আরবী) অর্থাৎ “(হে নবী সঃ)! তোমার উপর তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে যা অবতীর্ণ হয়েছে এটাকে যে সত্য বলে জানে সে কি অন্ধের মত?”(১৩:১৯) অর্থাৎ সে ও অন্ধ কখনো সমান হতে পারে না। আর এক জায়গায় আছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “জাহান্নামের অধিবাসী ও জান্নাতের অধিবাসী সমান নয়। জান্নাতবাসীরাই সফলকাম।”(৫৯:২০)
এরপর মহান আল্লাহ জান্নাতের গুণাবলী বর্ণনা করছেন যে, তাতে পানির প্রস্রবণ রয়েছে, যা কখনো নষ্ট হয় না এবং তাতে কোন পরিবর্তনও আসে না। এ পানি কখনো পচে দুর্গন্ধময় হয় না। এটা অত্যন্ত নির্মল পানি। মুক্তার মত স্বচ্ছ ও পরিষ্কার। এতে কোন খড়কুটা পড়ে না।
হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, জান্নাতী নদীগুলো মেশক বা মৃগনাভির পাহাড় হতে প্রবাহিত হয়। জান্নাতে পানি ছাড়া দুধের নহরও রয়েছে, যার স্বাদ কখনো পরিবর্তন হয় না। খুবই সাদা ও খুবই মিষ্ট। অত্যন্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। একটি মারফু হাদীসে আছে যে, এটা জন্তুর স্তনের দুধ নয়, বরং কুদরতী দুধ। আর তাতে রয়েছে সুস্বাদু সুরার নহর। এটা পানে মনে তৃপ্তি আসে এবং মস্তিষ্ক ঠাণ্ডা হয়। এ সুরা দুর্গন্ধময়ও নয় এবং তিক্তও নয়। এটা দেখতেও খারাপ নয়। বরং দেখতে অত্যন্ত সুন্দর। এটা পানেও সুস্বাদু এবং অতি সুগন্ধময়। এটা পানে জ্ঞানও লোপ পাবে না এবং মস্তিষ্ক বিকৃতও হবে না। যেমন অন্য জায়গায় আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তাতে ক্ষতিকর কিছুই থাকবে না এবং তাতে তারা মাতালও হবে ।”(৩৭:৪৭) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “সেই সুরা পানে তাদের শিরঃপীড়া হবে না, তারা জ্ঞান হারাও হবে।” (৫৬:১৯) আরো বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “শুভ্র উজ্জ্বল যা হবে পানকারীদের জন্যে সুস্বাদু।”(৩৭:৪৬) মার’ হাদীসে এসেছে যে, ঐ সুরা মানুষের হাতের নিংড়ানো নির্যাস নয়, বরং ওটা আল্লাহর হুকুমে তৈরী। ওটা সুস্বাদু ও সুদৃশ্য।
আর জান্নাতে আছে পরিশোধিত মধুর নহর, যা সুগন্ধময় ও অতি সুস্বাদু। মারফু হাদীসে এসেছে যে, এটা মধুমক্ষিকার পেট হতে বহির্ভূত নয়।
হযরত হাকীম ইবনে মুআবিয়া (রাঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন যে, তাঁর পিতা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ “জান্নাতে দুধ, পানি, মধু ও সুরার সমুদ্র রয়েছে। এগুলো হতে এসবের নহর ও ঝরণা প্রবাহিত হয়।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) ও ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে হাসান সহীহ বলেছেন)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে কায়েস (রাঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “এই নহরগুলো জান্নাতে আদন হতে বের হয়, 'তারপর একটি হাউযে আসে এবং সেখান হতে অন্যান্য নহরগুলোর মাধ্যমে সমস্ত জান্নাতে যায়।”
সহীহ হাদীসে রয়েছেঃ “তোমরা আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করলে ফিরদাউস জান্নাতের জন্যে প্রার্থনা করো। এটা সর্বাপেক্ষা উত্তম ও সর্বোচ্চ জান্নাত। ওটা হতেই জান্নাতের নহরগুলো প্রবাহিত হয়ে থাকে এবং ওর উপর রহমানের (আল্লাহর) আরশ রয়েছে।”
হযরত লাকীত ইবনে আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি প্রতিনিধি হিসেবে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট আগমন করেন এবং তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! জান্নাতে কি রয়েছে?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “জান্নাতে আছে পরিষ্কার ও পরিশোধিত মধুর নহর, শিরঃপীড়া হবে না ও জ্ঞান লোপ পাবে না এমন সুরার নহর, অপরিবর্তনীয় স্বাদ বিশিষ্ট দুধের নহর, নির্মল পানির নহর, বিবিধ ফলমূল এবং পবিত্র সহধর্মিণী।” হযরত লাকীত ইবনে আমির পুনরায় জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! সেখানে আমাদের জন্যে কি সতী স্ত্রীরা রয়েছে?” জবাবে তিনি বলেনঃ “সৎ পুরুষরা সতী নারী লাভ করবে। দুনিয়ার উপভোগের মত সেখানে তারা তাদেরকে উপভোগ করবে, তবে সেখানে ছেলে মেয়ে জন্মগ্রহণ করবে না।” (এ হাদীসটি হাফিয আবুল কাসিম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বলেনঃ “তোমরা হয়তো ধারণা করছো যে, জান্নাতের নহরগুলো পৃথিবীর নহরের মত খননকৃত যমীনে বা গর্তে প্রবাহিত হচ্ছে, কিন্তু তা নয়। আল্লাহর কসম! ওগুলো পরিষ্কার সমতল ভূমির উপর প্রবাহিত হচ্ছে। ওগুলোর ধারে ধারে মণি-মুক্তার তাবু রয়েছে এবং ওর মাটি হলো খাটি মৃগনাভি।" (এটা আবু বকর আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আবিদ দুনিয়া (রঃ) বর্ণনা করেছেন। আবু বকর ইবনে মিরদুওয়াইও (রঃ) এটা মার রূপে বর্ণনা করেছেন)
মহান আল্লাহ বলেনঃ সেখানে তাদের জন্যে থাকবে বিবিধ ফলমূল। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ অর্থাৎ “সেখানে তারা শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে সর্বপ্রকারের ফলের জন্যে ফরমায়েশ করবে।”(৪৪:৫৫) অন্য একটি আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “উভয় উদ্যানে (জান্নাতে) রয়েছে প্রত্যেক ফল দুই প্রকার।” (৫৫:৫২)
এসব নিয়ামতের সাথে সাথে এটা কত বড় নিয়ামত যে, তাদের প্রতিপালক তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তিনি তাদের জন্যে তার ক্ষমাকে বৈধ করেছেন। এখন তাদের কোন ভয় ও চিন্তার কারণ নেই। জান্নাতের এই ধুমধাম ও নিয়ামতরাশির বর্ণনা দেয়ার পর আল্লাহ তা'আলা জাহান্নামীদের অবস্থা বর্ণনা করছেন যে, তাদেরকে জাহান্নামে ফুটন্ত পানি পান করতে দেয়া হবে। পানি তাদের পেটের মধ্যে যাওয়া মাত্রই তাদের নাড়িভূড়ি ছিন্ন-বিছিন্ন করে দিবে। আল্লাহ আমাদেরকে রক্ষা করুন! এই জাহান্নামীরা এবং ঐ জান্নাতীরা কি কখনো সমান হতে পারে? কখনো নয়। কোথায় জান্নাতী আর কোথায় জাহান্নামী! কোথায় নিয়ামত এবং কোথায় যহমত!
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings