Surah Al Ahqaf Tafseer

Surah
Juz
Page
1
Al-Fatihah
The Opener
001
2
Al-Baqarah
The Cow
002
3
Ali 'Imran
Family of Imran
003
4
An-Nisa
The Women
004
5
Al-Ma'idah
The Table Spread
005
6
Al-An'am
The Cattle
006
7
Al-A'raf
The Heights
007
8
Al-Anfal
The Spoils of War
008
9
At-Tawbah
The Repentance
009
10
Yunus
Jonah
010
11
Hud
Hud
011
12
Yusuf
Joseph
012
13
Ar-Ra'd
The Thunder
013
14
Ibrahim
Abraham
014
15
Al-Hijr
The Rocky Tract
015
16
An-Nahl
The Bee
016
17
Al-Isra
The Night Journey
017
18
Al-Kahf
The Cave
018
19
Maryam
Mary
019
20
Taha
Ta-Ha
020
21
Al-Anbya
The Prophets
021
22
Al-Hajj
The Pilgrimage
022
23
Al-Mu'minun
The Believers
023
24
An-Nur
The Light
024
25
Al-Furqan
The Criterion
025
26
Ash-Shu'ara
The Poets
026
27
An-Naml
The Ant
027
28
Al-Qasas
The Stories
028
29
Al-'Ankabut
The Spider
029
30
Ar-Rum
The Romans
030
31
Luqman
Luqman
031
32
As-Sajdah
The Prostration
032
33
Al-Ahzab
The Combined Forces
033
34
Saba
Sheba
034
35
Fatir
Originator
035
36
Ya-Sin
Ya Sin
036
37
As-Saffat
Those who set the Ranks
037
38
Sad
The Letter "Saad"
038
39
Az-Zumar
The Troops
039
40
Ghafir
The Forgiver
040
41
Fussilat
Explained in Detail
041
42
Ash-Shuraa
The Consultation
042
43
Az-Zukhruf
The Ornaments of Gold
043
44
Ad-Dukhan
The Smoke
044
45
Al-Jathiyah
The Crouching
045
46
Al-Ahqaf
The Wind-Curved Sandhills
046
47
Muhammad
Muhammad
047
48
Al-Fath
The Victory
048
49
Al-Hujurat
The Rooms
049
50
Qaf
The Letter "Qaf"
050
51
Adh-Dhariyat
The Winnowing Winds
051
52
At-Tur
The Mount
052
53
An-Najm
The Star
053
54
Al-Qamar
The Moon
054
55
Ar-Rahman
The Beneficent
055
56
Al-Waqi'ah
The Inevitable
056
57
Al-Hadid
The Iron
057
58
Al-Mujadila
The Pleading Woman
058
59
Al-Hashr
The Exile
059
60
Al-Mumtahanah
She that is to be examined
060
61
As-Saf
The Ranks
061
62
Al-Jumu'ah
The Congregation, Friday
062
63
Al-Munafiqun
The Hypocrites
063
64
At-Taghabun
The Mutual Disillusion
064
65
At-Talaq
The Divorce
065
66
At-Tahrim
The Prohibition
066
67
Al-Mulk
The Sovereignty
067
68
Al-Qalam
The Pen
068
69
Al-Haqqah
The Reality
069
70
Al-Ma'arij
The Ascending Stairways
070
71
Nuh
Noah
071
72
Al-Jinn
The Jinn
072
73
Al-Muzzammil
The Enshrouded One
073
74
Al-Muddaththir
The Cloaked One
074
75
Al-Qiyamah
The Resurrection
075
76
Al-Insan
The Man
076
77
Al-Mursalat
The Emissaries
077
78
An-Naba
The Tidings
078
79
An-Nazi'at
Those who drag forth
079
80
Abasa
He Frowned
080
81
At-Takwir
The Overthrowing
081
82
Al-Infitar
The Cleaving
082
83
Al-Mutaffifin
The Defrauding
083
84
Al-Inshiqaq
The Sundering
084
85
Al-Buruj
The Mansions of the Stars
085
86
At-Tariq
The Nightcommer
086
87
Al-A'la
The Most High
087
88
Al-Ghashiyah
The Overwhelming
088
89
Al-Fajr
The Dawn
089
90
Al-Balad
The City
090
91
Ash-Shams
The Sun
091
92
Al-Layl
The Night
092
93
Ad-Duhaa
The Morning Hours
093
94
Ash-Sharh
The Relief
094
95
At-Tin
The Fig
095
96
Al-'Alaq
The Clot
096
97
Al-Qadr
The Power
097
98
Al-Bayyinah
The Clear Proof
098
99
Az-Zalzalah
The Earthquake
099
100
Al-'Adiyat
The Courser
100
101
Al-Qari'ah
The Calamity
101
102
At-Takathur
The Rivalry in world increase
102
103
Al-'Asr
The Declining Day
103
104
Al-Humazah
The Traducer
104
105
Al-Fil
The Elephant
105
106
Quraysh
Quraysh
106
107
Al-Ma'un
The Small kindnesses
107
108
Al-Kawthar
The Abundance
108
109
Al-Kafirun
The Disbelievers
109
110
An-Nasr
The Divine Support
110
111
Al-Masad
The Palm Fiber
111
112
Al-Ikhlas
The Sincerity
112
113
Al-Falaq
The Daybreak
113
114
An-Nas
Mankind
114

Al-Ahqaf : 30

46:30
قَالُوا۟يَٰقَوْمَنَآإِنَّاسَمِعْنَاكِتَٰبًاأُنزِلَمِنۢبَعْدِمُوسَىٰمُصَدِّقًالِّمَابَيْنَيَدَيْهِيَهْدِىٓإِلَىٱلْحَقِّوَإِلَىٰطَرِيقٍمُّسْتَقِيمٍ ٣٠

Saheeh International

They said, "O our people, indeed we have heard a [recited] Book revealed after Moses confirming what was before it which guides to the truth and to a straight path.

Tafseer 'Ibn Kathir Full' (BN)

২৯-৩২ নং আয়াতের তাফসীর:

মুসনাদে আহমাদে হযরত যুবায়ের (রাঃ) হতে এই আয়াতের তাফসীরে বর্ণিত আছে যে, এটা নাখলা নামক স্থানের ঘটনা। রাসূলুল্লাহ (সঃ) ঐ সময় ইশার নামায আদায় করছিলেন। এসব জ্বিন তার আশে-পাশে একত্রিতভাবে দাড়িয়ে যায়। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, ওগুলো নাসীবাইনের জ্বিন ছিল। তারা সাতজন ছিল।

প্রসিদ্ধ ইমাম হাফিয আবু বকর বায়হাকী (রঃ) তাঁর দালাইলুন নবুওয়াত নামক গ্রন্থে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে একটি রিওয়াইয়াত লিপিবদ্ধ করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) জ্বিনদেরকে শুনাবার উদ্দেশ্যেও কুরআন পাঠ করেননি এবং তাদেরকে তিনি দেখেননি। তিনি তো স্বীয় সাহাবীদের সাথে উকাযের বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। এদিকে ব্যাপার এই ঘটেছিল যে, শয়তানদেরও আকাশের খবরের মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল এবং তাদের উপর উল্কাপিণ্ড নিক্ষিপ্ত হওয়া শুরু হয়েছিল। শয়তানরা এসে তাদের কওমকে এ খবর দিলে তারা বলেঃ “অবশ্যই নতুন কিছু একটা ঘটেছে। সুতরাং তোমরা অনুসন্ধান করে দেখো।” একথা শুনে তারা বেরিয়ে পড়লো। তাদের বিভিন্ন দল বিভিন্ন দিকে গেল। যে দলটি আরব অভিমুখে গেল, তারা যখন তথায় পৌঁছলো তখন রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) উকাযের দিকে যাওয়ার পথে, নাখলায় স্বীয় সাহাবীদেরকে (রাঃ) ফজরের নামায পড়াচ্ছিলেন। ঐ জ্বিনদের কানে যখন তাঁর তিলাওয়াতের শব্দ পৌঁছলো তখন তারা তথায় থেমে গেল এবং কান লাগিয়ে মনোযোগের সাথে কুরআন পাঠ শুনতে লাগলো। এরপরে তারা পরস্পর বলাবলি করলোঃ এটাই ঐ জিনিস, যার কারণে আমাদের আকাশ পর্যন্ত পৌঁছার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এখান হতে ফিরে তারা সরাসরি তাদের কওমের নিকট পৌঁছে যায় এবং তাদেরকে বলেঃ “আমরা তো এক বিস্ময়কর কিতাব শ্রবণ করেছি, যা সঠিক পথ-নির্দেশ করে, ফলে আমরা এতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আমরা কখনো আমাদের প্রতিপালকের কোন শরীক স্থির করবো না।” এই ঘটনারই সংবাদ আল্লাহ তা'আলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে সূরায়ে জ্বিনে দিয়েছেন।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ), ইমাম মুসলিম (রঃ), ইমাম তিরমিযী (রঃ) এবং ইমাম নাসাঈ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেনঃ জ্বিনেরা অহী শুনতে থাকতো। একটা কথা যখন তাদের কানে যেতো তখন তারা ওর সাথে আরো দশটি কথা মিলিয়ে দিতো। সুতরাং একটি সত্য হতো এবং বাকী সবই মিথ্যা হয়ে যেতো। ইতিপূর্বে তাদের উপর তারকা নিক্ষেপ করা হতো না। অতঃপর যখন রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) প্রেরিত হলেন তখন তাদের উপর উল্কাপিণ্ড নিক্ষিপ্ত হতে লাগলো। তারা তাদের বসার জায়গায় যখন পৌছতো তখন তাদের উপর উল্কাপিণ্ড নিক্ষিপ্ত হতো। ফলে তারা সেখানে আর থাকতে পারতো না। তারা তখন এসে ইবলীসের নিকট এর অভিযোগ করলো। ইবলীস তখন বললো, অবশ্যই নতুন ব্যাপার কিছু ঘটেছে। তাই সে তার সেনাবাহিনীকে এই তথ্য উদঘাটনের জন্যে চতুর্দিকে ছড়িয়ে দিলো। একটি দল রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-কে নালার দুটি পাহাড়ের মাঝে নামায রত অবস্থায় পেলো। অতঃপর তারা গিয়ে ইবলীসকে এ খবর দিয়ে দিলো। ইবলীস তখন বললোঃ “এ কারণেই আকাশ রক্ষিত হয়েছে এবং তোমাদের তথায় যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।” (এটা ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী (রঃ) ও ইমাম নাসাঈ (রঃ)-ও এ রিওয়াইয়াতটি এনেছেন)

হযরত হাসান বসরী (রঃ)-ও এ কথাই বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) এ ঘটনার খবর রাখতেন না। যখন তার উপর অহী অবতীর্ণ হয় তখন তিনি তা জানতে পারেন। সীরাতে ইবনে ইসহাকে মুহাম্মাদ ইবনে কা'ব (রঃ)-এর একটি দীর্ঘ রিওয়াইয়াত বর্ণিত আছে, যাতে রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর তায়েফ গমন, তায়েফবাসীকে ইসলামের দাওয়াত প্রদান এবং তাদের তা প্রত্যাখ্যান করণ ইত্যাদি পূর্ণ ঘটনা বর্ণিত আছে। ঐ শোচনীয় অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সঃ) যে দুআটি করেছিলেন সেটাও হযরত হাসান বসরী (রঃ) বর্ণনা করেছেন। দু'আটি নিম্নরূপঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আমি মানুষের উপর আমার শক্তির দুর্বলতা, আমার কৌশলের স্বল্পতা এবং আমার অসহায়তার অভিযোগ আপনার নিকট করছি। হে দয়ালুদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় দয়ালু! আপনিই দয়ালুদের মধ্যে পরম দয়ালু। যাদেরকে দুর্বল মনে করা হয় আপনি তাদের প্রতিপালক। আপনি আমারও প্রতিপালক। আপনি আমাকে কার কাছে সমর্পণ করছেন? কোন দূরবর্তী শত্রুর কাছে কি, যে আমাকে অপারগ করবে? না কোন নিকটবর্তী বন্ধুর কাছে, যার কাছে আপনি আমার ব্যাপারে অধিকার দিয়ে রেখেছেন? যদি আমার প্রতি আপনার অসন্তোষ না থাকে তবে আমি আমার এ দুঃখ ও বেদনার জন্যে কোন পরোয়া করি না, তবে যদি আপনি আমাকে নিরাপদে রাখেন তাহলে এটা হবে আমার জন্যে সুখ-শান্তির ব্যাপার। আমি আপনার চেহারার ঔজ্জ্বল্যের মাধ্যমে, যার কারণে সমস্ত অন্ধকার আলোকিত হয়ে উঠেছে এবং যার উপর দুনিয়া ও আখিরাতের সমস্ত কাজের কল্যাণ নির্ভরশীল, আমার উপর আপনার ক্রোধ ও অসন্তুষ্টি নাযিল হোক এর থেকে আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আপনার সন্তুষ্টিই কামনা করি এবং পুণ্য কাজ করা ও পাপ কাজ হতে বিরত থাকার ক্ষমতা একমাত্র আপনার সাহায্যের মাধ্যমেই লাভ করা সম্ভব।” এই সফর হতে প্রত্যাবর্তনের পথেই তিনি নাখলায় রাত্রি যাপন করেন এবং ঐ রাত্রেই নাসীবাইনের জ্বিনেরা তাঁর কুরআন-তিলাওয়াত শ্রবণ করে। এটা সঠিক তো বটে, কিন্তু এতে এই উক্তিটির ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনার অবকাশ রয়েছে। কেননা, জ্বিনদের আল্লাহর কালাম শ্রবণ করা হচ্ছে অহী শুরু হওয়ার সময়ের ঘটনা। যেমন হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর উপরে বর্ণিত হাদীস হতে এটা প্রমাণিত হয়। আর তার তায়েফে গমন হচ্ছে তাঁর চাচা আবূ তালিবের মৃত্যুর পরের ঘটনা, যা হিজরতের এক বছর অথবা খুব বেশী হলে দু’বছর পূর্বের ঘটনা। যেমন এটা সীরাতে ইবনে ইসহাক প্রভৃতি গ্রন্থে রয়েছে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ্ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।

আবু বকর ইবনে শায়বা (রঃ)-এর বর্ণনামতে ঐ জ্বিনদের সংখ্যা ছিল নয়। তাদের একজনের নাম ছিল যাভীআহ্। তাদের ব্যাপারেই (আরবী) পর্যন্ত আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়। সুতরাং এই রিওয়াইয়াত এবং এর পূর্ববর্তী হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর রিওয়াইয়াতের চাহিদা এটাই যে, ঐ সময় যে জ্বিনগুলো এসেছিল তাদের উপস্থিতির খবর রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর জানা ছিল না। তারা তো তার অজান্তে তার মুখে আল্লাহর বাণী শুনে ফিরে গিয়েছিল। এরপরে প্রতিনিধি হিসেবে জ্বিনেরা দলে দলে তাঁর খিদমতে উপস্থিত হয়েছিল। যেমন এই অলোচনা সম্বলিত হাদীস ও আসারগুলো নিজ নিজ স্থানে আসছে ইনশা আল্লাহ।

হযরত আব্দুর রহমান (রঃ) হযরত মাসরূক (রঃ)-কে জিজ্ঞেস করেনঃ “যেই। রাত্রে জ্বিনেরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হতে কুরআন শুনেছিল ঐ রাত্রে কে তাঁকে এ খবর অবহিত করে?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “আমাকে তোমার পিতা হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) জানিয়েছেন যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-কে জ্বিনদের আগমনের খবর একটি গাছ অবহিত করেছিল। তাহলে খুব সম্ভব এটা প্রথমবারের খবর হবে এবং হাঁ বাচককে আমরা না বাচকের উপর অগ্রগণ্য মনে করবো। এও হতে পারে যে, যখন জুিনেরা তাঁর কুরআন পাঠ শুনছিল তখন তো তিনি এ খবর জানতেন না, কিন্তু ঐ গাছটি তাঁকে তাদের উপস্থিতির খবর প্রদান করে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ্ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। আবার এও হওয়া সম্ভব যে, এ ঘটনাটি এর পরবর্তী ঘটনাবলীর একটি হবে। এসব ব্যাপারে সঠিক জ্ঞানের অধিকারী একমাত্র আল্লাহ্।

ইমাম হাফিয বায়হাকী (রঃ) বলেন যে, প্রথমবারে তো রাসূলুল্লাহ (সঃ) জ্বিনদেরকে দেখেননি এবং বিশেষভাবে তাদেরকে শুনাবার জন্যে কুরআন পাঠও করেননি। হ্যা, তবে এর পরে জ্বিনেরা তাঁর কাছে আসে এবং তিনি তাদেরকে কুরআন পাঠ করে শুনিয়ে দেন এবং তাদেরকে তিনি মহামহিমান্বিত আল্লাহর দিকে আহ্বান জানান।

এ সম্পর্কে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীস সমূহঃ

হযরত আলকামা (রঃ) হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেনঃ “জ্বিনদের আগমনের রাত্রিতে আপনাদের মধ্যে কেউ কি রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর সাথে ছিলেন?” উত্তরে তিনি বলেন, তাঁর সাথে কেউই ছিলেন না। তিনি সারা রাত আমাদের হতে অনুপস্থিত থাকেন এবং আমরা থেকে থেকে বারবার এই ধারণাই করি যে, সম্ভবতঃ কোন শত্রু তার সাথে প্রতারণা করেছে। ঐ রাত্রি আমাদের খুব খারাপভাবে কাটে। সুবহে সাদেকের কিছু পূর্বে আমরা দেখি যে, তিনি হেরা পর্বতের গুহা হতে প্রত্যাবর্তন করছেন। আমরা তখন তার কাছে আমাদের সারা রাত্রির অবস্থা বর্ণনা করি। তখন তিনি বলেনঃ “আমার কাছে জ্বিনদের প্রতিনিধি এসেছিল, যাদের সঙ্গে গিয়ে আমি তাদেরকে কুরআন শুনিয়েছি।” অতঃপর তিনি আমাদেরকে সাথে করে নিয়ে যান এবং তাদের নিদর্শনাবলী ও তাদের আগুনের নিদর্শনাবলী আমাদেরকে প্রদর্শন করেন।”

শা'বী (রঃ) বলেন যে, জ্বিনেরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট খাদ্যের আবেদন জানায়। আমির (রঃ) বলেন যে, তারা তাঁর নিকট মক্কায় এ আবেদন জানিয়েছিল। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদেরকে বলেনঃ “প্রত্যেক হাড়, যার উপর আল্লাহর নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তা তোমাদের হাতে পূর্বের চেয়ে গোশত বিশিষ্ট হয়ে পতিত হবে। আর জন্তুর মল ও গোবর তোমাদের জন্তুগুলোর খাদ্য হবে। সুতরাং হে মুসলিমবৃন্দ! তোমরা এ দুটো জিনিস দ্বারা ইতিনজা করো না। এগুলো তোমাদের জ্বিন ভাইদের খাদ্য।” | অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ “ঐ রাত্রে আমরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে না পেয়ে খুবই বিচলিত হয়ে পড়ি এবং তাঁকে আমরা সমস্ত উপত্যকা ও ঘাঁটিতে অনুসন্ধান করি।” অন্য একটি হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আজ রাত্রে আমি জ্বিনদেরকে কুরআন শুনিয়েছি এবং তাদেরই মধ্যে এ কাজে রাত্রি কাটিয়েছি।”

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আজ রাত্রে তোমাদের মধ্যে কেউ ইচ্ছা করলে জ্বিনদের কাজে আমার সাথে থাকতে পারে।” তখন আমি ছাড়া আর কেউই এ কাজে তার কাছে হাযির হলো না। তিনি আমাকে সাথে নিয়ে চললেন। মক্কা শরীফের উঁচু অংশে পৌঁছে তিনি স্বীয় পা মুবারক দ্বারা একটি রেখা টানলেন এবং আমাকে বললেনঃ “তুমি এখানেই বসে থাকো।” অতঃপর তিনি সামনে অগ্রসর হন এবং এক জায়গায় দাঁড়িয়ে তিনি কিরআত পাঠ শুরু করেন। তারপর তার চতুর্দিকে এমন সব দল জমায়েত হয় যে, তাঁর মধ্যে ও আমার মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়ে যায় এবং তার কিরআত আর আমার কানে আসেনি। এরপর আমি দেখি যে, মেঘখণ্ড যেভাবে ভেঙ্গে যায় সেই ভাবে তারা এদিক ওদিক যেতে লাগলো এবং খুব অল্প সংখ্যকই অবশিষ্ট থাকলো। তারপর ফজরের সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) অবসর লাভ করলেন এবং সেখান হতে দূরে চলে গেলেন। প্রাকৃতিক প্রয়োজন পুরো করে তিনি আমার নিকট আসলেন এবং আমাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “বাকীগুলো কোথায়?” আমি জবাবে বললামঃ এই যে তারা। অতঃপর তিনি তাদেরকে হাড় ও জন্তুর মল বা গোবর দিলেন। তারপর তিনি মুসলমানদেরকে এ দুটি জিনিস দ্বারা ইসতিনজা করতে নিষেধ করলেন। (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

এই রিওয়াইয়াতের দ্বিতীয় সনদে আছে যে, যেখানে রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)-কে বসিয়েছিলেন, বসাবার পর তিনি তাঁকে বলেছিলেনঃ “সাবধান! এখান হতে সরবে না, অন্যথায় তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে।” অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, ফজরের সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর নিকট এসে তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “তুমি কি ঘুমিয়ে পড়েছিলে?” উত্তরে তিনি বললেনঃ না; না। আল্লাহর কসম! আমি জনগণের কাছে ফরিয়াদ করার ইচ্ছা করেছিলাম। কিন্তু আমি শুনতে পাই যে, আপনি লাঠি দ্বারা তাদেরকে ধমকাচ্ছেন এবং বলছেনঃ “তোমরা বসে পড়।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে বললেনঃ “তুমি যদি এখান হতে বের হতে তবে ভয় ছিল যে, তাদের কেউ হয়তো তোমাকে ছোঁ মেরে নিয়ে চলে যেতো।” তারপর তিনি তাঁকে বললেনঃ “আচ্ছা, তুমি কিছু দেখেছিলে কি?” জবাবে তিনি বলেনঃ “হ্যা, লোকগুলো ছিল কালো, অপরিচিত, ভয়াবহ এবং সাদা কাপড় পরিহিত।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “এগুলো ছিল নাসীবাইনের জ্বিন। তারা আমার কাছে খাদ্য চেয়েছিল।

আমি তাদেরকে হাড় ও গোবর দিয়েছিলাম।” হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এগুলোতে তাদের উপকার কি?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “প্রত্যেক হাড় তাদের হাতে আসামাত্রই ঐরূপ হয়ে যাবে ওটা খাওয়ার সময় যেরূপ ছিল অর্থাৎ গোশত বিশিষ্ট হয়ে যাবে। গোবরেও তারা ঐ দানা পাবে যা ঐদিনে ছিল যেই দিন ওটা খাওয়া হয়েছিল। সুতরাং তোমাদের মধ্যে কেউ যেন পায়খানা হতে বের হয়ে হাড় অথবা গোবর দ্বারা। ইসতিনজা না করে।”

এই রিওয়াইয়াতের অন্য সনদে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আজ রাত্রে পনেরোজন জ্বিন, যারা পরস্পর চাচাতো ও ফুফাতো ভাই, কুরআন শুনার জন্যে আমার নিকট আসবে।" তাতে হাড় ও গোবরের সাথে কয়লার কথাও রয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ “সকাল হলে আমি ঐ জায়গায় গমন করে দেখি যে, ওটা ষাটটি উটের বসার সমান জায়গা।"

অন্য একটি বর্ণনায় আছে যে, যখন জ্বিনদের ভিড় হয়ে গেল তখন তাদের সরদার ওয়াযদান বললোঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি এদেরকে এদিক ওদিক করে দিয়ে আপনাকে এই কষ্ট হতে রক্ষা করছি।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “আমার আল্লাহ তা'আলা হতে বড় রক্ষক আর কেউই নেই।” নবী (সঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ “তোমার নিকট পানি আছে কি?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “আমার নিকট পানি নেই বটে, তবে একটি পাত্রে খেজুর ভিজানো পানি (নবীয়) রয়েছে।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “উত্তম খেজুর ও পবিত্র পানি।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ), ইমাম আবু দাউদ (রঃ), ইমাম তিরমিযী (রঃ) এবং ইমাম ইবনে মাজাহ (রঃ) বর্ণনা করেছেন) মুসনাদে আহমাদের এ হাদীসে এও আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ)-কে বলেনঃ “আমাকে তুমি এই পানি দ্বারা অযু করিয়ে দাও।” অতঃপর তিনি অযু করেন এবং বলেনঃ “হে আল্লাহর বান্দা! এটা তো পবিত্র পানীয়।”

মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, যখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) জ্বিনদের নিকট হতে ফিরে আসেন তখন তিনি ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছিলেন। সুতরাং হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! ব্যাপার কি?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “আমার কাছে আমার মৃত্যুর খবর পৌঁছে গেছে।” এই হাদীসটিই কিছুটা বৃদ্ধির সাথে হাফিয আবু নঈম (রঃ)-এর কিতাবু দালাইলিন নবুওয়াতের মধ্যে বর্ণিত হয়েছে। তাতে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর মুখে এ কথা শুনে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) তাঁকে বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনার পরে খলীফা হবেন এমন ব্যক্তির নাম করুন।” তিনি বললেনঃ ‘কার নাম করবো?” হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) জবাবে বললেনঃ “হযরত আবু বকর (রাঃ)-কে মনোনীত করুন।” একথা শুনে তিনি নীরব থাকলেন। কিছু দূর চলার পর পুনরায় রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর ঐ অবস্থা হলো। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) পূর্বের ন্যায় প্রশ্ন করলেন এবং তিনি পূর্বের মতই উত্তর দিলেন। হযরত ইবনে মাসউদ খলীফা নির্বাচনের কথা বললে তিনি প্রশ্ন করেনঃ “কাকে?” হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) উমার (রাঃ)-এর নাম প্রস্তাব করেন। কিন্তু এবারও রাসূলুল্লাহ (সঃ) নীরব থাকেন। আবার কিছু দূর যাওয়ার পর তার ঐ একই অবস্থা দেখা দিলে ঐ একই প্রশ্ন ও উত্তরের আদান প্রদান হয়। এবার হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) হযরত আলী ইবনে আবি তালিব। (রাঃ)-এর নাম প্রস্তাব করেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তার সত্তার শপথ! যদি মানুষ তার আনুগত্য স্বীকার করে তবে তারা জান্নাতে চলে যাবে। কিন্তু এটা খুবই গারীব হাদীস এবং খুব সম্ভব এটা রক্ষিত নয়। আর যদি এর বিশুদ্ধতা মেনে নেয়া হয় তবে এ ঘটনাকে মদীনার ঘটনা স্বীকার করতে হবে। সেখানেও রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে জ্বিনদের প্রতিনিধি দল এসেছিল, যেমন সত্বরই আমরা বর্ণনা করছি ইনশাআল্লাহ। কেননা, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর জীবনের শেষ সময় ছিল মক্কা বিজয়ের পরবর্তী সময়। যখন মানব ও দানব দলে দলে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিল এবং অবতীর্ণ হয়েছিল নিম্নের সূরাটিঃ (আরবী) অর্থাৎ “যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এবং তুমি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবে। তখন তুমি তোমার প্রতিপালকের প্রশংসাসহ তার প্রবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো এবং তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো, তিনি তো তাওবা কবুলকারী।”(১১১:১-৩) এতে তাঁকে তাঁর মৃত্যুর সংবাদ দেয়া হয়, যেমন এটা হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর উক্তি এবং আমীরুল মুমিনীন হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) এর আনুকূল্য করেছেন।

এই হাদীসগুলো আমরা ইনশাআল্লাহ এই সূরার তাফসীরে আনয়ন করবো। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।

উপরোক্ত হাদীসটি অন্য সনদেও বর্ণিত আছে। কিন্তু এর ইসনাদও গারীব বা দুর্বল এবং পূর্বাপর সম্পর্কও বিস্ময়কর।

হযরত ইকরামা (রাঃ) বলেন যে, এই জ্বিনগুলো জাযীরায়ে মুসিলের ছিল। তাদের সংখ্যা ছিল বারো হাজার। হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) ঐ রেখা অংকিত জায়গায় বসেছিলেন। কিন্তু জ্বিনদের খেজুর বৃক্ষ বরাবর দেহ ইত্যাদি দেখে তিনি ভয় পান এবং পালিয়ে যাবার ইচ্ছা করেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিষেধাজ্ঞার কথা তার স্মরণ হয় যে, তিনি যেন ঐ অংকিত জায়গার বাইরে না। যান। যখন তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সামনে এটা বর্ণনা করেন তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বলেনঃ “তুমি যদি এর সীমা অতিক্রম করতে তবে কিয়ামত পর্যন্ত তোমার ও আমার মধ্যে সাক্ষাৎ লাভ সম্ভব হতো না।

অন্য এক রিওয়াইয়াতে আছে যে, .. (আরবী)-এই আয়াতে যে জ্বিনদের বর্ণনা রয়েছে তারা ছিল নীনওয়ার জ্বিন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাহাবীদেরকে বলেনঃ “আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, আমি যেন তাদেরকে কুরআন শুনিয়ে দিই তোমাদের মধ্যে কে আমার সাথে গমন করবে? এতে সবাই নিরুত্তর থাকে। তিনি দ্বিতীয়বার এই প্রশ্ন করেন। এবারও সবাই নীরব থাকে। তার তৃতীয়বারের প্রশ্নের জবাবে হুযায়েল গোত্রের লোক হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনার সাথে আমিই যাবো।” সুতরাং তাকে সাথে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ) হাজুন ঘাঁটিতে গেলেন। একটি রেখা অংকন করে হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ)-কে তথায় বসিয়ে দিলেন এবং তিনি সামনে অগ্রসর হলেন। হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) দেখতে পেলেন যে, গৃধিনীর মত কতকগুলো জীব মাটির খুবই নিকট দিয়ে উড়ে আসছে। কিছুক্ষণ পর খুবই গোলমাল শুনা গেল। শেষ পর্যন্ত হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর জীবনের ব্যাপারে আশংকা করলেন। অতঃপর যখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর কাছে আসলেন তখন তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! গোলমাল কিসের ছিল?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বললেনঃ “তাদের একজন নিহতকে নিয়ে গণ্ডগোল ছিল। তার ব্যাপারে তাদের মধ্যে মতানৈক্য ছিল। তাদের মধ্যে সঠিক ফায়সালা করে দেয়া হলো। এ ঘটনাগুলো পরিষ্কার যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) ইচ্ছাপূর্বক গিয়ে জ্বিনদেরকে কুরআন শুনিয়েছিলেন এবং তাদেরকে ইসলামের দিকে আহ্বান করেছিলেন। আর ঐ সময় তাদের যে মাসআলাগুলোর দরকার ছিল সেগুলো তাদেরকে বলে দেন। হ্যা, তবে প্রথমবার যখন জ্বিনেরা তার মুখে কুরআন শ্রবণ করে ঐ সময় না তিনি তাদেরকে শুনাবার উদ্দেশ্যে কুরআন পাঠ করেন, না তাদের আগমন ও উপস্থিতি তিনি অবগত ছিলেন। যেমন হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এ কথা বলেন। এর পরে তারা প্রতিনিধিরূপে আল্লাহর রাসূল (সঃ)-এর নিকট আগমন করে এবং রাসূলুল্লাহ (সঃ) ইচ্ছা করে তাদের কাছে আসেন এবং তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেন তখন হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) তাঁর সাথে ছিলেন না। তবে অবশ্যই তিনি কিছু দূরে বসেছিলেন। এই ঘটনায় রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাথে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) ছাড়া আর কেউ ছিলেন না।

যে রিওয়াইয়াতগুলোতে আছে যে, হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাথে ছিলেন এবং যেগুলোতে তার না থাকার কথা রয়েছে, এ দু' এর মধ্যে সামঞ্জস্য এভাবেও হতে পারে যে, প্রথমবার তিনি সঙ্গে ছিলেন না এবং দ্বিতীয়বার ছিলেন। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।

এটাও বর্ণিত আছে যে, নাখলাতে যে জ্বিনগুলো রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করেছিল ওগুলো ছিল নীনওয়ার জ্বিন। আর মক্কা শরীফে যেসব জ্বিন তার খিদমতে হাযির হয়েছিল ওগুলো নাসীবাইনের জ্বিন ছিল। যে। রিওয়াইয়াতগুলোতে রয়েছেঃ “আমরা ঐ রাত্রি মন্দভাবে অতিবাহিত করেছি’ এর দ্বারা হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) ছাড়া অন্যান্য সাহাবীদেরকে বুঝানো হয়েছে যেগুলোতে এটা জানা ছিল না যে, তিনি জ্বিনদেরকে কুরআন শুনাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু এটা খুব দূরের ব্যাখ্যা। এসব ব্যাপারে সঠিক জ্ঞানের অধিকারী একমাত্র আল্লাহ।

ইমাম হাফিয আবু বকর বায়হাকী (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর প্রয়োজন ও অযুর জন্যে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) একটি পাত্রে পানি নিয়ে তার সাথে যেতেন। একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর পিছনে পিছনে গিয়ে তিনি পৌছেন, তখন তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ “কে?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “আমি আবু হুরাইরা (রাঃ)।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন তাঁকে বললেনঃ “আমার ইসতিনজার জন্যে পাথর নিয়ে এসো, কিন্তু হাড় ও গোবর আনবে না।” হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেনঃ “আমি আমার ঝুলিতে পাথর ভরে নিয়ে আসলাম এবং তাঁর সামনে রেখেদিলাম। এর থেকে ফারেগ হয়ে যখন তিনি চলতে শুরু করলেন তখন আমিও তার পিছনে পিছনে চলতে লাগলাম। তাকে আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! হাড় ও গোবর আনতে নিষেধ করার কারণ কি? জবাবে তিনি বললেনঃ “আমার কাছে নাসীবাইনের জ্বিন প্রতিনিধিরা এসেছিল এবং তারা আমার কাছে খাদ্য চেয়েছিল। আমি আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা জানিয়েছিলাম যে, তারা যে হাড় ও গোবরের উপর দিয়ে যাবে তা যেন তারা তাদের খাদ্য হিসেবে পায়।” (এ হাদীসটি সহীহ বুখারীতে প্রায় এভাবেই বর্ণিত আছে)

সুতরাং এ হাদীসটি এবং এর পূর্ববর্তী হাদীসগুলো এ ইঙ্গিতই বহন করে যে, জ্বিনদের প্রতিনিধিরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট এর পরেও এসেছিল। এখন আমরা ঐ হাদীসগুলো বর্ণনা করছি যেগুলো দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় যে, জ্বিনেরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট কয়েকবার এসেছিল। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে যে রিওয়াইয়াত ইতিপূর্বে বর্ণিত হয়েছে ওটা ছাড়াও অন্য সনদে তার হতে আরো রিওয়াইয়াত বর্ণিত আছে। তাফসীরে ইবনে জারীরে হযরত ইবনে। আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি ... (আরবী) আয়াতের তাফসীরে বলেনঃ “তারা ছিল সাতজন জ্বিন। তারা নাসীবাইনে বসবাস করতো। তাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সঃ) নিজের পক্ষ হতে দূত হিসেবে জ্বিনদের নিকট পাঠিয়েছিলেন।”

হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, ঐ জ্বিনদের সংখ্যা ছিল সাত। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদের তিনজনকে হিরানের অধিবাসী ও চারজনকে নাসীবাইনের অধিবাসী বলেছেন। তাদের নামগুলো হলো হিসসী, হিসসা, মিনসী, সা’সির, নাসির, আরদূবিয়া, আখতাম।

আবূ হামযা শিমালী (রঃ) বলেন যে, জ্বিনদের এই গোত্রটিকে বানু শীসবান বলা হতো। এ গোত্রটি জ্বিনদের অন্যান্য গোত্রগুলো হতে সংখ্যায় বেশী ছিল এবং তাদেরকে সম্ভান্ত বংশীয় হিসেবে মান্য করা হতো। সাধারণতঃ এরা। ইবলীসের সেনাবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত ছিল।

হযরত সুফিয়ান সাওরী (রঃ) হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, এরা ছিল নয়জন, যাদের মধ্যে একজনের নাম ছিল যাভীআহ। তারা আসলে নাখলা হতে এসেছিল। কোন কোন গুরুজন হতে বর্ণিত আছে যে, তারা ছিল পনেরোজন, যেমন এ বর্ণনা পূর্বে গত হয়েছে।

একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, তারা ষাটটি সওয়ারীর উপর সওয়ার হয়ে এসেছিল। তাদের নেতার নাম ছিল ওয়ারদান। এটাও বর্ণিত আছে যে, তারা ছিল তিনশজন এবং এক রিওয়াইয়াতে তাদের সংখ্যা বারো হাজারও রয়েছে। এসবের মধ্যে সামঞ্জস্য এভাবে হতে পারে যে, প্রতিনিধিরা যেহেতু কয়েকবার এসেছিল, সেহেতু হতে পারে যে, কোনবার ছিল ছয়, সাত বা নয় জন, কোনবার এর চেয়ে বেশী ছিল এবং কোনবার এর চেয়েও বেশী ছিল। এর দলীল হিসেবে সহীহ বুখারীর এ রিওয়াইয়াতটিও গ্রহণ করা যেতে পারে যে, হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) যখন কোন বিষয় সম্পর্কে বলতেনঃ ‘আমার ধারণায় এটা এইরূপ হবে তখন তা প্রায় ঐরূপই হতো। একদা তিনি বসেছিলেন, এমন সময় একজন সুশ্রী লোক তার পার্শ্ব দিয়ে গমন করে। তাকে দেখে তিনি মন্তব্য করেনঃ “যদি আমার ধারণা ভুল না হয় তবে আমি বলতে পারি যে, এ লোকটি অজ্ঞতার যুগে লোকদের গণক বা যাদুকর ছিল। যাও, তাকে এখানে নিয়ে এসো।” লোকটি তার কাছে আসলে তিনি তার নিকট নিজের ধারণা প্রকাশ করলেন। সে তখন বললোঃ “আমি মুসলমানদের মধ্যে এমন বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান লোক আর দেখিনি।” হযরত উমার (রাঃ) তখন তাকে বললেনঃ “এখন আমার কথা এই যে, তুমি তোমার জানা কোন সঠিক ও সত্য খবর আমাদেরকে শুনিয়ে দাও।” সে বললোঃ “আচ্ছা, তাহলে শুনুন। আমি জাহিলিয়াতের যুগে লোকদের গণক ছিলাম। আমার কাছে আমার সাথী এক জ্বিন, যে সর্বাপেক্ষা বিস্ময়কর খবর আমার নিকট এনেছিল তা হচ্ছে এই যে, একদা আমি বাজারে ছিলাম, এমন সময় সে অত্যন্ত ভীত-বিহ্বল অবস্থায় আমার কাছে এসে বললোঃ (আরবী) অর্থাৎ “তুমি কি জ্বিনদের ধ্বংস, নৈরাশ্য এবং তাদের ছড়িয়ে পড়ার পর সংকুচিত হয়ে যাওয়া লক্ষ্য করনি এবং তাদের দুর্গতি দেখোনি?” এ কথা শুনে হযরত উমার (রাঃ) বলেনঃ “সে সত্য কথা বলেছে। একদা আমি তাদের মা’ৰূদদের (মূর্তিগুলোর) পার্শ্বে ঘুমিয়েছিলাম, এমন সময় একটি লোক এসে তথায় একটি গোবৎস (বাছুর) যবেহ করলো। অকস্মাৎ এমন একটি ভীষণ শব্দ হলো এরূপ উচ্চ ও বিকট শব্দ আমি ইতিপূর্বে কখনো শুনিনি। সে বললোঃ “হে জালীজ! পরিত্রাণকারী বিষয় এসে গেছে। একজন বাকপটু ব্যক্তি বাক চাতুর্যের সাথে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ' বলছেন।” শব্দ শুনে সবাই তো ভয়ে পালিয়ে গেল। কিন্তু আমি ওখানেই বসে থাকলাম যে, দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কি ঘটে? দ্বিতীয়বার ওভাবেই ঐ শব্দই শুনা গেল এবং সে ঐ কথাই বললো। অতঃপর কিছুদিন পরেই নবী (সঃ)-এর নবুওয়াতের আওয়ায় আমাদের কানে আসতে শুরু হলো। এই রিওয়াইয়াতের বাহ্যিক শব্দ দ্বারা তো এটাই জানা যাচ্ছে যে, হযরত উমার ফারূক (রাঃ) স্বয়ং যবেহকৃত বাছুর হতে এই শব্দ শুনেছিলেন। আর একটি দুর্বল রিওয়াইয়াতে স্পষ্টভাবে এটা এসেও গেছে। কিন্তু বাকী অন্যান্য রিওয়াইয়াতগুলো এটা বলে দেয় যে, ঐ যাদুকরই নিজের দেখা-শুনার একটি ঘটনা এটাও বর্ণনা করেছে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। ইমাম বায়হাকী (রঃ) এটাই বলেছেন এবং এটাই ভাল বলে মনে হচ্ছে। ঐ ব্যক্তির নাম ছিল সাওয়াদ ইবনে কারিব। যে ব্যক্তি এই ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ জানতে চায় তিনি যেন আমার ‘সীরাতে উমার' নামক কিতাবটি দেখে নেন। সমস্ত প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা আল্লাহর জন্যে।

ইমাম বায়হাকী (রঃ) বলেনঃ খুব সম্ভব এটা ঐ যাদুকর বা গণক যার বর্ণনা নাম ছাড়াই সহীহ হাদীসে রয়েছে। হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর মিম্বরে উঠে ভাষণ দিচ্ছিলেন। ঐ অবস্থাতেই তিনি জনগণকে জিজ্ঞেস করেনঃ “সাওয়াদ ইবনে কারিব এখানে আছে কি?” কিন্তু ঐ পূর্ণ এক বছরের মধ্যে কেউ হ্যা’ বললো না। পরের বছর আবার তিনি এটা জিজ্ঞেস করলেন। তখন হযরত বারা’ (রাঃ) উত্তরে বললেনঃ “সাওয়াদ ইবনে কারিব কে? এর দ্বারা উদ্দেশ্য কি?” জবাবে হযরত উমার (রাঃ) বললেনঃ “তার ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারটা খুবই বিস্ময়কর।” এভাবে তাদের মধ্যে আলোচনা চলছিল এমতাবস্থায় হযরত সাওয়াদ ইবনে কারিব (রাঃ) তথায় অকস্মাৎ হাযির হয়ে যান। হযরত উমার (রাঃ) তখন তাকে বলেনঃ “হে সাওয়াদ (রাঃ)! তোমার ইসলাম গ্রহণের প্রাথমিক ঘটনাটি বর্ণনা কর ।” তিনি তখন বললেনঃ “হ্যা, তাহলে শুনুন। আমি ভারতবর্ষে গমন করেছিলাম এবং তথায় অবস্থান করছিলাম। একদা রাত্রে আমার সাথী জ্বিনটি আমার কাছে আসে। ঐ সময় আমি ঘুমিয়েছিলাম। সে আমাকে জাগ্রত করে এবং বলেঃ “উঠো এবং জ্ঞান-বিবেক থাকলে শুনে ও বুঝে নাও যে, লুওয়াই ইবনে গালিব গোত্রের মধ্য হতে আল্লাহর রাসূল (সঃ) প্রেরিত হয়েছেন।” অতঃপর সে কবিতায় বললোঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি জ্বিনদের অনুভূতি এবং তাদের বস্তা ও বিছানা-পত্র বাঁধা দেখে বিস্ময়বোধ করছি। তুমি যদি হিদায়াত লাভ করতে চাও তবে এখনই মক্কার পথে যাত্রা শুরু কর। তুমি বুঝে নাও যে, ভাল ও মন্দ জ্বিন সমান নয়। অতি সত্বর গমন কর এবং বানু হাশিমের ঐ প্রিয় ব্যক্তির সুন্দর চেহারা দর্শনের মাধ্যমে স্বীয় চক্ষুদ্বয় ঠাণ্ডা কর।”

আমাকে পুনরায় তন্ত্রায় চেপে ধরে এবং সে আবার আমাকে জাগিয়ে তোলে। অতঃপর বলেঃ “হে সাওয়াদ ইবনে কারিব (রাঃ)! মহামহিমান্বিত আল্লাহ নবী (সঃ)-কে পাঠিয়েছেন, সুতরাং তুমি তাড়াতাড়ি তাঁর নিকট গিয়ে হিদায়াত লাভে ধন্য হও।” দ্বিতীয় রাত্রে আবার সে আমার নিকট আসে এবং আমাকে জাগিয়ে দিয়ে কবিতার মাধ্যমে বলেঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি জ্বিনদের অনুসন্ধান এবং তাদের বস্তা ও থলে কষা দেখে বিস্মিত হচ্ছি, তুমিও যদি সুপথ পেতে চাও তবে মক্কার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে যাও। জেনে রেখো যে, ওদের দুই পা ওদের লেজের মত নয়। তুমি তাড়াতাড়ি উঠো এবং বানু হাশিমের ঐ পছন্দনীয় ব্যক্তির নিকট পৌঁছে যাও এবং তাঁকে দর্শন করে স্বীয় চক্ষুদ্বয়কে জ্যোতির্ময় কর।”

তৃতীয় রাত্রে সে আবার আসলো এবং আমাকে জাগ্রত করে কবিতার ভাষায় বললোঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি জ্বিনদের খবর জেনে নেয়া এবং তাদের যাত্রীদের যাত্রার প্রস্তুতি গ্রহণ দেখে আশ্চর্যান্বিত হচ্ছি। তারা সব হিদায়াত লাভের উদ্দেশ্যে তাড়াতাড়ি মক্কার পথে যাত্রা শুরু করে দিয়েছে। তাদের মন্দরা ভালোদের মত নয়। তুমিও উঠো এবং বানু হাশিমের এই মহান ব্যক্তির খিদমতে হাযির হয়ে যাও। জেনে রেখো যে, মুমিন জ্বিনেরা কাফির জ্বিনদের মত নয়।”

পর্যায়ক্রমে তিন রাত্রি ধরে তার এসব কথা শুনে আমার হৃদয়ে ইসলামের প্রেম জেগে ওঠে এবং রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর প্রতি সম্মান ও ভালবাসায় আমার অন্তর পূর্ণ হয়ে যায়। সুতরাং আমি আমার স্ত্রীর পিঠে হাওদা কষে অন্য কোন জায়গায় অবস্থান না করে সরাসরি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর খিদমতে হাযির হয়ে গেলাম। ঐ সময় তিনি মক্কা শহরে ছিলেন এবং জনগণ তার চতুম্পার্শ্বে এমনভাবে বসেছিলেন যেমন ঘোড়ার উপর কেশর থাকে। নবী (সঃ) আমাকে দেখেই বলে উঠলেনঃ “হে সাওয়াদ ইবনে কারিব (রাঃ)! তোমার আগমন শুভ হোক! তুমি আমার কাছে কি করে, কি উদ্দেশ্যে এবং কার কথায় এসেছে তা আমি জানি।” আমি তখন বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি কিছু কবিতা বলতে চাই, অনুমতি দিলে বলি। তিনি বললেনঃ “হে সাওয়াদ (রাঃ)! ঠিক আছে, তুমি বল।” তখন আমি বলতে শুরু করলামঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমার নিকট আমার জ্বিন রাত্রে আমার ঘুমিয়ে পড়ার পর আসলো এবং আমাকে একটি সঠিক ও সত্য খবর দিলো। পর্যায়ক্রমে তিন রাত্রি সে আমার কাছে আসতে থাকলো এবং প্রতি রাত্রে আমাকে বলতে তাকলোঃ লুওয়াই ইবনে গালিবের মধ্যে আল্লাহর রাসূল (সঃ) প্রেরিত হয়েছেন। আমিও। তখন সফরের প্রস্তুতি গ্রহণ করলাম এবং তাড়াতাড়ি পথ অতিক্রম করে এখানে পৌঁছলাম। এখন আমি সাক্ষ্য দান করছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন প্রতিপালক নেই এবং আপনি আল্লাহর বিশ্বস্ত রাসূল। আপনার শাফাআতের উপর আমার আস্থা রয়েছে। হে সর্বাপেক্ষা মহান ও পবিত্র লোকদের সন্তান! হে সমস্ত রাসূলের চেয়ে উত্তম রাসূল (সঃ)! আপনি যে আসমানী হুকুম আমাদের কাছে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন তা যতই কঠিন ও স্বভাব বিরুদ্ধ হোক না কেন, এটা সম্ভব নয় যে, আমরা তা। পরিহার করি। আপনি অবশ্যই কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশকারী হবেন। কেননা, সেই দিন সেখানে আপনি ছাড়া সাওয়াদ ইবনে কারিব (রাঃ)-এর সুপারিশকারী আর কে হবে?” একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) খুব হাসলেন এবং বললেনঃ “হে সাওয়াদ (রাঃ)! তুমি মুক্তি পেয়ে গেছো।” হযরত উমার (রাঃ) এ ঘটনাটি শুনে হযরত সাওয়াদ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ “এখনো কি ঐ জ্বিন তোমার কাছে এসে থাকে?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “যখন হতে আমি কুরআন পাঠ করতে শুরু করি তখন হতে আর সে আমার কাছে আসে না। আমি মহান আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞ যে, তিনি আমাকে জ্বিনের পরিবর্তে তার পবিত্র কিতাব দান করেছেন।”

হাফিয আবু নাঈম (রঃ) স্বীয় ‘দালাইলুন নবুওয়াত’ নামক কিতাবে বর্ণনা করেছেন যে, মদীনা শরীফেও জ্বিন-প্রতিনিধিরা রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর খিদমতে হাযির হয়েছিল। হযরত আমর ইবনে গাইলান সাকাফী (রঃ) হযরত আবদুল্লাহ। ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর নিকট হাযির হয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করেনঃ “আমি অবগত হয়েছি যে, যেই রাত্রে জ্বিন-প্রতিনিধিরা রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর নিকট হাযির হয়েছিল সেদিন নাকি আপনিও তাঁর সাথে ছিলেন?” জবাবে হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ “হ্যা, এটা ঠিকই বটে।” হযরত আমর ইবনে গাইলান (রঃ) তখন তাঁকে বলেনঃ “আমাকে ঘটনাটি একটু শুনান তো?” হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) তখন বলতে শুরু করলেনঃ “দরিদ্র আসহাবে সুফফাকে লোকেরা রাত্রির খাবার খাওয়াবার জন্যে এক একজন এক একজনকে নিয়ে গেলেন। কিন্তু আমাকে কেউই নিয়ে গেলেন না। আমি একাই রয়ে গেলাম। রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) আমার পার্শ্ব দিয়ে গমনকালে আমাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “কে তুমি?” আমি উত্তরে বললামঃ আমি ইবনে মাসউদ (রাঃ)। তিনি প্রশ্ন করলেনঃ “তোমাকে কেউ নিয়ে যায়নি?” অতঃপর তিনি আমাকে বললেনঃ “আচ্ছা, তুমি আমার সাথেই চল, হয়তো কিছু মিলে যেতে পারে।” আমি তার সাথে চললাম। তিনি হযরত উম্মে সালমা (রাঃ)-এর কক্ষে প্রবেশ করলেন। আমি বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকলাম। কিছুক্ষণ পর বাড়ীর ভিতর হতে একজন দাসী এসে আমাকে বললো:“বাড়ীতে কোন খাবার নেই, আপনি আপনার শয়নস্থলে চলে যান। এটা রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাকে জানাতে বললেন। আমি তখন। মসজিদে ফিরে আসলাম এবং কিছু কংকর জমা করে ছোট একটি ঢেরি করলাম এবং তাতে মাথা রেখে স্বীয় কাপড় জড়িয়ে নিয়ে শুয়ে পড়লাম। অল্পক্ষণ পরেই ঐ দাসী আবার আমার কাছে এসে বললোঃ “আল্লাহর রাসূল (সঃ) আপনাকে ডাকছেন।” আমি তখন তার সাথে চললাম এবং আমি মনে মনে এই আশা পোষণ করলাম যে, এবার অবশ্যই কিছু খাবার আমি পাবো। আমি গন্তব্যস্থলে পৌছলে দেখি যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বাইরে বেরিয়ে এসেছেন। তাঁর হাতে খেজুর গাছের একটি সিক্ত ছড়ি, যেটাকে তিনি আমার বক্ষের উপর রেখে বললেনঃ “আমি যেখানে যাচ্ছি সেখানে তুমি আমার সাথে যাবে তো?” আমি জবাবে বললাম:আল্লাহ যা চান। তিনবার এই প্রশ্ন ও উত্তরের আদান-প্রদান হলো। অতঃপর তিনি চলতে শুরু করলেন এবং আমিও তার সাথে চলতে লাগলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি বাকী গারকাদে পৌছলেন। এরপর প্রায় ঐ বর্ণনাই রয়েছে যা উপরোল্লিখিত রিওয়াইয়াতগুলোতে গত হয়েছে। (এর ইসনাদ গারীব বা দুর্বল। এর সনদে একজন অস্পষ্ট বর্ণনাকারী রয়েছেন, যার নাম উল্লিখিত হয়নি)

হাফিয আবু নাঈম (রঃ) তাঁর দালাইলুন নবুওয়াত গ্রন্থে এনেছেন যে, মদীনার মসজিদে রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) ফজরের নামায আদায় করেন এবং ফিরে গিয়ে জনগণকে বলেনঃ “আজ রাত্রে জ্বিন প্রতিনিধিদের কাছে তোমাদের মধ্যে কে আমার সাথে যাবে?” কেউই তার এ প্রশ্নের উত্তর দিলেন না। তিনবারের প্রশ্নের পরেও কারো পক্ষ হতে কোন সাড়া এলো না। হযরত যুবায়ের ইবনে আওয়াম (রাঃ) বলেনঃ “রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) আমার পার্শ্ব দিয়ে গমন করার সময় আমার ডান হাতখানা ধরে আমাকে সঙ্গে নিয়ে চলতে শুরু করেন। মদীনার পাহাড়গুলো হতে বহু দূর এগিয়ে গিয়ে একেবারে সমতল ভূমিতে পৌছে গেলেন। অতঃপর বর্শার সমান লম্বা লম্বা দেহ বিশিষ্ট মানুষ নীচে নীচে কাপড় পরিহিত অবস্থায় আগমন করতে শুরু করলো। আমি তো তাদেরকে দেখে ভয়ে কাঁপতে লাগলাম।” তারপর তিনি হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর হাদীসের অনুরূপ ঘটনা বর্ণনা করেন। (এ হাদীসটিও গারীব। এসব ব্যাপারে আল্লাহ্ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন)

এই কিতাবেই একটি গারীব হাদীসে আছে, ইবরাহীম (রঃ) বলেনঃ “হযরত আব্দুল্লাহ্ (রাঃ)-এর সঙ্গীরা হজ্বপৰ্ব পালন উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছিলেন। আমিও তাঁদের মধ্যে একজন ছিলাম। পথে আমরা দেখি যে, একটি সাদা রঙ-এর সর্প পথে গড়াগড়ি খাচ্ছে এবং ওটা হতে মেশকের সুগন্ধ আসছে। আমি আমার সঙ্গীদেরকে বললাম:আপনারা চলে যান। আমি এখানে অবস্থান করবো এবং শেষ পর্যন্ত সর্পটির অবস্থা কি হয় তা দেখবো। সুতরাং তারা সবাই চলে গেলেন। আর আমি ওখানেই রয়ে গেলাম। অল্পক্ষণ পরেই সাপটি মারা গেল। আমি তখন একটি সাদা কাপড়ে ওকে জড়িয়ে দিয়ে পথের এক পার্শ্বে দাফন করে দিলাম। অতঃপর রাত্রের আহারের সময় আমি আমার সাথীদের সাথে মিলিত হলাম। আল্লাহর কসম! আমি বসে আছি এমন সময় পশ্চিম দিক হতে চারজন স্ত্রী লোক আসলো। তাদের মধ্যে একজন আমাকে জিজ্ঞেস করলোঃ “আমরকে কে দাফন করেছে?” আমি প্রশ্ন করলাম:কোন্ আমর? সে বললোঃ “তোমাদের কেউ কি একটি সাপকে দাফন করেছে?” আমি উত্তরে বললামঃ হ্যাঁ, আমি দাফন করেছি। সে তখন বললোঃ “আল্লাহর কসম! তুমি একজন বড় বীর পুরুষকে দাফন করেছে, যে তোমাদের নবী (সঃ)-কে মানতো এবং যে তাঁর নবী হওয়ার চারশ’ বছর পূর্ব হতেই তাঁর গুণাবলী সম্পর্কে ওয়াকিফহাল ছিল।” আমি তখন আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তা'আলার প্রশংসা করলাম। হজ্ব পৰ্ব পালন করে যখন আমরা হযরত উমার ফারুক (রাঃ)-এর খিদমতে হাযির হয়ে পথের ঘটনাটি বর্ণনা করলাম তখন তিনি বললেনঃ “স্ত্রী লোকটি সত্য কথাই বলেছে। আমি রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, সে তার উপর তার নবুওয়াত লাভের চারশ’ বছর পূর্বে ঈমান এনেছিল।” (এ হাদীসটি খুবই গরীব। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন)

একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, সাপটিকে দাফনকারী লোকটি ছিলেন হযরত সাফওয়ান ইবনে মুআত্তাল (রাঃ)। কথিত আছে যে, তথায় দাফনকৃত সাপটি ছিল ঐ নয়জন জ্বিনের মধ্যে একজন যারা কুরআন শুনার জন্যে প্রতিনিধি হিসেবে নবী (সঃ)-এর নিকট আগমন করেছিলেন। তার মৃত্যু এসব জ্বিনের মধ্যে সর্বশেষে হয়েছিল।

আবু নাঈম (রঃ)-এর একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, একটি লোক হযরত উসমান ইবনে আফফান (রাঃ)-এর খিদমতে হাযির হয়ে বলেনঃ “হে আমীরুল মুমিনীন! আমি একটি জংগলে ছিলাম। দেখি যে, দু'টি সাপ পরস্পর লড়াই করছে। শেষ পর্যন্ত একটি অপরটিকে মেরে ফেললো। অতঃপর আমি ওগুলোকে ঐ অবস্থায় রেখে যুদ্ধক্ষেত্রে গমন করলাম। সেখানে দেখলাম যে, বহু সাপ নিহত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। আর কতকগুলো সাপ হতে ইসলামের সুগন্ধ আসছে। আমি তখন ওগুলোকে এক এক করে শুকতে শুরু করলাম। শেষ পর্যন্ত একটি হলদে রঙ-এর ক্ষীণ সাপ হতে আমি ইসলামের সুগন্ধ পেলাম। আমি তখন ওকে আমার পাগড়ীতে জড়িয়ে দাফন করে দিলাম। অতঃপর আমি পথ চলতে শুরু করলাম, এমন সময় হঠাৎ একটি শব্দ শুনলামঃ “হে আল্লাহর বান্দা! তোমাকে আল্লাহ্ তা'আলার পক্ষ হতে হিদায়াত দান করা হয়েছে। ঐ সাপ দুটি জ্বিনদের গোত্র বানু শায়বান ও বানু কয়েসের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই দুই গোত্রের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধে এবং তাদের মধ্যে যতগুলো নিহত হয়েছে তা তো তুমি স্বচক্ষে দেখেছো। তাদের মধ্যে একজন শহীদকে তুমি দাফন করেছে, যে স্বয়ং আল্লাহর রাসূল (সাঃ)-এর মুখে তার অহী শুনেছেন।” এ কথা শুনে হযরত উসমান (রাঃ) লোকটিকে বললেনঃ “হে লোক! তুমি যদি তোমার বর্ণনায় সত্যবাদী হও তবে তো তুমি এক বিস্ময়কর ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে। আর যদি মিথ্যাবাদী হও তবে মিথ্যার প্রতিফল তুমিই পাবে।”

মহান আল্লাহ্ বলেনঃ (হে নবী সঃ!) তুমি স্মরণ কর, আমি তোমার প্রতি আকৃষ্ট করেছিলাম একদল জ্বিনকে, যারা কুরআন পাঠ শুনছিল, যখন তারা তার নিকট উপস্থিত হলো তখন তারা একে অপরকে বলতে লাগলো:চুপ করে শ্রবণ কর। এটা তাদের একটা আদব বা শিষ্টাচার।

হযরত জাবির ইবনে আবদিল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) সূরায়ে আর-রাহমান শেষ পর্যন্ত পাঠ করেন। অতঃপর তিনি স্বীয় সাহাবীদেরকে বলেনঃ “কি ব্যাপার, তোমরা যে সবাই নীরব থেকেছো? জ্বিনেরা তো তোমাদের চেয়ে উত্তম জবাবদাতা রূপে প্রমাণিত হলো”? যখনই আমি (আরবী) অর্থাৎ “সুতরাং তোমরা উভয়ে (দানব ও মানব) তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?"(৫৫:১৩) এ আয়াতটি পাঠ করেছি তখনই তারা উত্তরে বলেছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার এমন কোন নিয়ামত নেই যা আমরা অস্বীকার করতে পারি। সুতরাং সমস্ত প্রশংসা আপনারই প্রাপা।” (এ হাদীসটি ইমাম হাফিয বায়হাকী (রঃ) ও ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে গারীব বলেছেন)

এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ্ বলেনঃ “যখন কুরআন পাঠ সমাপ্ত হলো, (আরবী) শব্দটির অর্থ কুরআন কারীমের নিম্নের আয়াতগুলোতেও একই রূপঃ (আরবী) অর্থাৎ “যখন নামায সমাপ্ত হবে।”(৬২:১০) (আরবী) অর্থাৎ “তিনি ওগুলোকে সপ্ত আকাশে সমাপ্ত করলেন।”(২:২৯) (আরবী) অর্থাৎ “যখন তোমরা তোমাদের হজ্বের কার্যাবলী সমাপ্ত করবে।”(২:২০০) ঐ জ্বিনগুলো তাদের কওমকে সতর্ক করার জন্যে তাদের কাছে ফিরে যাবে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যেমন তারা দ্বীনের বোধশক্তি লাভ করে। আর যখন তারা তাদের কওমের কাছে পৌছবে তখন যেন তাদেরকেও সতর্ক করে দেয়, হয়তো তারাও তাদের পরিত্রাণ লাভের আশায় সতর্কতা অবলম্বন করবে।”(৯:১২২) এই আয়াত দ্বারা দলীল গ্রহণ করা হয়েছে যে, জ্বিনদের মধ্যেও আল্লাহর বাণী প্রচারকারী ও ভয় প্রদর্শনকারী রয়েছে। কিন্তু তাদের মধ্যে কাউকেও রাসূল করা হয়নি। এটা নিঃসন্দেহভাবে প্রমাণিত যে, জ্বিনদের মধ্যে রাসূল নেই। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি তোমার (নবী সঃ-এর) পূর্বে যতগুলো রাসূল পাঠিয়েছিলাম সবাই তারা জনপদের অধিবাসী মানুষই ছিল, যাদের কাছে আমি অহী পাঠাতাম।"(১২:১০৯) অন্য এক আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী)অর্থাৎ “(হে নবী সঃ)! তোমার পূর্বে আমি যতগুলো রাসূল পাঠিয়েছিলাম তারা সবাই খাদ্য খেতো এবং বাজারে চলাফেরা করতো।”(২৫:২০) হযরত ইবরাহীম খলীল (আঃ) সম্পর্কে কুরআন কারীমে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি তার সন্তানদের মধ্যে নবুওয়াত ও কিতাব রেখে দিয়েছি।”(২৯:২৭) সুতরাং তার পরে যতগুলো নবী এসেছিলেন তাঁরা সবাই তারই বংশোদ্ভূত ছিলেন। কিন্তু সূরায়ে আনআমের (আরবী) অর্থাৎ “হে জ্বিন ও মানব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্য হতে কি রাসূলগণ তোমাদের নিকট আসেনি?”(৬:১৩০) এই আয়াতে এই দুই শ্রেণী বা জাতির সমষ্টি উদ্দেশ্য। সুতরাং এর প্রয়োগ শুধু একটি জাতির উপরই হতে পারে। যেমন আল্লাহ পাকের উক্তিঃ (আরবী) অর্থাৎ “উভয় সমুদ্র হতে উৎপন্ন মুক্তা ও প্রবাল।”(৫৫:২২) অথচ প্রকৃতপক্ষে এগুলো উৎপন্ন হয় একটি সমুদ্র হতেই।

এরপর জ্বিনদের আরো উক্তি উদ্ধৃত করা হচ্ছেঃ হে আমাদের সম্প্রদায়! আমরা এমন এক কিতাবের পাঠ শ্রবণ করেছি যা অবতীর্ণ হয়েছে হযরত মূসা (আঃ)-এর পরে।' হযরত ঈসা (আঃ)-এর কিতাব ইনজীলের বর্ণনা ছেড়ে দেয়ার কারণ এই যে, প্রকৃতপক্ষে এটা তাওরাতকে পূর্ণকারী। এতে বেশীর ভাগ উপদেশ অন্তরকে নরমকারী বর্ণনাসমূহ ছিল। হারাম ও হালালের মাসআলাগুলো খুবই কম ছিল। সুতরাং প্রকৃত জিনিস তাওরাতই থাকে। এ জন্যেই বিদ্বান জ্বিনগুলো এরই কথা উল্লেখ করেছে। এটাকেই সামনে রেখে হযরত অরাকা ইবনে নওফল যখন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর মুখে হযরত জিবরাঈল (আঃ)-এর প্রথমবারে আগমনের অবস্থা শুনেন তখন তিনি বলেছিলেনঃ “ইনি হলেন আল্লাহ তা'আলার ঐ পবিত্র রহস্যবিদ যিনি হযরত মূসা (আঃ)-এর কাছে আসতেন। যদি আমি আরো কিছুদিন জীবিত থাকতাম, (শেষ পর্যন্ত)।

অতঃপর কুরআন কারীমের অন্য একটি বিশেষণের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যে, এটা এর পূর্ববর্তী সমস্ত আসমানী কিতাবের সত্যতা স্বীকার করে এবং সত্য ও সরল পথের দিকে পরিচালিত করে। সুতরাং কুরআন কারীম দুটি জিনিসকে অন্তর্ভুক্ত করে। একটি হলো খবর এবং অপরটি হলো দাবী বা যাজ্ঞা। অতএব, এর খবর হলো সত্য এবং দাবী বা যাচ্ছা হলো ন্যায় সঙ্গত। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমার প্রতিপালকের কথা সত্য ও ন্যায়ের দিক দিয়ে পরিপূর্ণ।”(৬:১১৫) আল্লাহ তা'আলা অন্য আয়াতে বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তিনি তাঁর রাসূল (সঃ)-কে পথ-নির্দেশ ও সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন।”(৯:৩৩) সুতরাং হিদায়াত হলো উপকার দানকারী ইলম এবং দ্বীন হলো সৎ আমল। জ্বিনদের উদ্দেশ্য এটাই ছিল।

জ্বিনেরা আরো বললোঃ “হে আমাদের সম্প্রদায়! আল্লাহর দিকে আহ্বানকারীর প্রতি সাড়া দাও।' এতে এরই প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) দানব ও মানব এই দুই দলের নিকটই রাসূল রূপে প্রেরিত হয়েছেন। কেননা, তিনি জ্বিনদেরকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করেন। আর তাদের সামনে তিনি কুরআন কারীমের ঐ সূরা পাঠ করেন যাতে এই দুটি দলকে সম্বোধন করা হয়েছে এবং তাদের নাম বরাবর আহকাম জারী করা হয়েছে এবং অঙ্গীকার ও ভয় প্রদর্শনের বর্ণনা রয়েছে। অর্থাৎ সূরায়ে আর-রহমান।

মহান আল্লাহ জ্বিনদের আরো কথা উদ্ধৃত করেনঃ (এরূপ করলে) তিনি (আল্লাহ) তোমাদের পাপ ক্ষমা করবেন।' কিন্তু এটা ঐ অবস্থায় হতে পারে যখন (আরবী) কে অতিরিক্ত মেনে না নেয়া হবে, যেহেতু তাফসীরকারদের একটি উক্তি এটাও রয়েছে। আর আরবী ব্যাকরণ অনুযায়ী (আরবী)-এর স্থলে (আরবী) খুব কমই অতিরিক্ত হিসেবে এসে থাকে। আর যদি অতিরিক্ত মেনে নেয়া হয় তবে ভাবার্থ হবেঃ ‘আল্লাহ তা'আলা তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন এবং তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হতে পরিত্রাণ দিবেন। এই আয়াত দ্বারা কোন কোন আলেম এই দলীল গ্রহণ করেছেন যে, মুমিন জুিনেরাও জান্নাত লাভ করবে না। হ্যা, তবে তারা শাস্তি হতে পরিত্রাণ লাভ করবে। এটাই হবে তাদের সৎকর্মের প্রতিদান। যদি এর চেয়েও বেশী মর্যাদা তারা লাভ করতো তবে এ স্থলে ঐ মুমিন জ্বিনেরা ওটাকে অবশ্যই বর্ণনা করতো। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর উক্তি এই যে, মুমিন জ্বিন জান্নাতে যাবে না। কেননা, তারা ইবলীসের বংশধর। আর ইবলীসের বংশধররা জান্নাতে যাবে না। কিন্তু সঠিক ও সত্য কথা এই যে, মুমিন জ্বিন। মুমিন মানুষের মতই এবং তারা জান্নাত লাভ করবে। যেমন এটা পূর্বযুগীয় মনীষীদের একটি দলের মাযহাব। জ্বিনেরা যে জান্নাত পাবে এর উপর কতকগুলো লোক নিম্নের আয়াতটিকে দলীল হিসেবে পেশ করেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তাদেরকে (হুরদেরকে) পূর্বে কোন মানুষ অথবা জ্বিন স্পর্শ করেনি।”(৫৫:৫৬) কিন্তু এই আয়াতকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনার অবকাশ রয়েছে। এর চেয়ে তো বড় উত্তম দলীল হলো মহান আল্লাহর নিম্নের উক্তিটিঃ (আরবী) অর্থাৎ “আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সামনে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে, তার জন্যে রয়েছে দুটি উদ্যান (দুটি জান্নাত)। সুতরাং তোমরা উভয়ে (জ্বিন ও মানুষ) তোমাদের প্রতিপালকের কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করবে।?”(৫৫:৪৬-৪৭) এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানুষ ও জ্বিনের উপর নিজের অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করছেন যে, তাদের মধ্যে যারা পুণ্যবান তাদের প্রতিদান হলো জান্নাত। আর মুমিন মানুষ অপেক্ষা মুমিন জিনেরাই এই আয়াতের বেশী শুকরিয়া আদায় করেছিল এবং এটা শোনামাত্রই বলেছিলঃ “হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার এমন কোন নিয়ামত নেই যা আমরা অস্বীকার করতে পারি।” এটা তো হতে পারে না যে, তাদের সামনে তাদের উপর এমন অনুগ্রহ করার কথা প্রকাশ করা হবে যা তারা লাভ করতেই পারবে না। মুমিন জ্বিনেরা যে জান্নাতে যাবে তার আর একটি দলীল এই যে, কাফির জ্বিন যখন জাহান্নামে যাবে যা ন্যায়ের স্থল, তখন মুমিন জ্বিন কেন জান্নাতে যাবে না যা অনুগ্রহের স্থল? বরং এটা তো আরো বেশী সঙ্গত। তাছাড়া এর উপর ঐ আয়াতগুলোকে দলীল হিসেবে পেশ করা যেতে পারে যেগুলোতে সাধারণভাবে মুমিনদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ এক জায়গায় বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ ‘যারা ঈমান আনে ও সঙ্কর্ম করে তাদের আপ্যায়নের জন্যে আছে ফিরদাউসের উদ্যান।”(১৮:১০৭) অনুরূপ আরো বহু আয়াত রয়েছে। এই মাসআলাটিকে আমি একটি পৃথক রচনায় বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছি। সুতরাং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই প্রাপ্য এবং আমি তারই নিকট কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

জান্নাতের তো অবস্থা এই যে, সমস্ত মুমিন তাতে প্রবেশ করার পরেও ওর মধ্যে সীমাহীন জায়গা শূন্য থাকবে। তাহলে ঈমানদার ও সৎকর্মশীল জ্বিনদেরকে জান্নাতে প্রবেশ না করানোর কি কারণ থাকতে পারে? এখানে দুটি বিষয়ের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। (এক) পাপরাশি ক্ষমা করে দেয়া এবং (দুই) যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হতে পরিত্রাণ দান করা। এ দু'টো থাকলেই তো জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়। কেননা, পরকালে নির্ধারিত রয়েছে জান্নাত, না হয় জাহান্নাম। সুতরাং যাকে জাহান্নাম হতে বাঁচিয়ে নেয়া হবে তার জন্যে জান্নাত অবধারিত হওয়া উচিত। আর এ ব্যাপারে কোন স্পষ্ট দলীল নেই যে, মুমিন জ্বিন জাহান্নাম হতে পরিত্রাণ লাভ করা সত্তেও জানাতে যাবে না। যদি এই ধরনের কোন স্পষ্ট দলীল থেকে থাকে তবে আমরা তা মেনে নিতে প্রস্তুত আছি। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। হযরত নূহ (আঃ)-এর ব্যাপারটাই দেখা যাক। তিনি তাঁর কওমকে বলেছিলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “(তোমরা ঈমান আনয়ন করলে) আল্লাহ তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করে দিবেন এবং তোমাদেরকে নির্ধারিত কাল পর্যন্ত অবকাশ দিবেন।” (৭১:৪) সুতরাং এখানেও তাদের জানাতে প্রবেশ করার কথা উল্লেখ করা না হলেও এটা প্রমাণিত হয় না যে, তাদের মধ্যে যারা ঈমান আনবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। বরং এটা সর্বসম্মত বিষয় যে, তারা জান্নাতে অবশ্যই প্রবেশ করবে। সুতরাং এখানে জ্বিনদের ব্যাপারেও এটাই বুঝে নিতে হবে।

জিনদের ব্যাপারে কতকগুলো গারীব উক্তি বর্ণনা করা হয়েছেঃ হযরত উমার ইবনে আবদিল আযীয (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, জ্বিনেরা জান্নাতে তো প্রবেশ করবে না, তবে তারা জান্নাতের ধারে ধারে এবং এদিকে ওদিকে থাকবে।

কতক লোক বলেন যে, তারা জান্নাতে যাবে বটে, কিন্তু তথায় দুনিয়ার সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থা হবে। অর্থাৎ মানুষ জ্বিনকে দেখতে পাবে, কিন্তু জ্বিন মানুষকে দেখতে পাবে না।

কেউ কেউ বলেন যে, তারা জান্নাতে পানাহার করবে না। শুধু আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা ও তাঁর মহিমা কীর্তনই হবে তাদের খাদ্য, যেমন ফেরেশতাগণ। কেননা, তারা ফেরেশতাদেরই শ্রেণীভুক্ত। কিন্তু এ সমুদয় উক্তির ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনার অবকাশ আছে এবং এগুলো সবই দলীলবিহীন উক্তি।

এরপর উপদেশদানকারী জ্বিনেরা তাদের কওমকে বললোঃ “কেউ যদি আল্লাহর দিকে আহ্বানকারীর প্রতি সাড়া না দেয় তবে সে পৃথিবীতে আল্লাহর অভিপ্রায় ব্যর্থ করতে পারবে না এবং আল্লাহ ব্যতীত তাদের কোন সাহায্যকারী থাকবে না। তারাই সুস্পষ্ট বিভ্রান্তিতে রয়েছে।

এই বক্তৃতার পন্থা কতই না পছন্দনীয় এবং এটা কতই না আকর্ষণীয়! উৎসাহও প্রদান করা হয়েছে এবং ভীতিও প্রদর্শন করা হয়েছে। এ কারণেই তাদের অধিকাংশই সঠিক পথে চলে আসে এবং তারা দলে দলে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর খিদমতে হাযির হয়ে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করে। যেমন আমরা পূর্বে এটা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছি এবং যার জন্যে আমরা মহান আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।

Quran Mazid
go_to_top
Quran Mazid
Surah
Juz
Page
1
Al-Fatihah
The Opener
001
2
Al-Baqarah
The Cow
002
3
Ali 'Imran
Family of Imran
003
4
An-Nisa
The Women
004
5
Al-Ma'idah
The Table Spread
005
6
Al-An'am
The Cattle
006
7
Al-A'raf
The Heights
007
8
Al-Anfal
The Spoils of War
008
9
At-Tawbah
The Repentance
009
10
Yunus
Jonah
010
11
Hud
Hud
011
12
Yusuf
Joseph
012
13
Ar-Ra'd
The Thunder
013
14
Ibrahim
Abraham
014
15
Al-Hijr
The Rocky Tract
015
16
An-Nahl
The Bee
016
17
Al-Isra
The Night Journey
017
18
Al-Kahf
The Cave
018
19
Maryam
Mary
019
20
Taha
Ta-Ha
020
21
Al-Anbya
The Prophets
021
22
Al-Hajj
The Pilgrimage
022
23
Al-Mu'minun
The Believers
023
24
An-Nur
The Light
024
25
Al-Furqan
The Criterion
025
26
Ash-Shu'ara
The Poets
026
27
An-Naml
The Ant
027
28
Al-Qasas
The Stories
028
29
Al-'Ankabut
The Spider
029
30
Ar-Rum
The Romans
030
31
Luqman
Luqman
031
32
As-Sajdah
The Prostration
032
33
Al-Ahzab
The Combined Forces
033
34
Saba
Sheba
034
35
Fatir
Originator
035
36
Ya-Sin
Ya Sin
036
37
As-Saffat
Those who set the Ranks
037
38
Sad
The Letter "Saad"
038
39
Az-Zumar
The Troops
039
40
Ghafir
The Forgiver
040
41
Fussilat
Explained in Detail
041
42
Ash-Shuraa
The Consultation
042
43
Az-Zukhruf
The Ornaments of Gold
043
44
Ad-Dukhan
The Smoke
044
45
Al-Jathiyah
The Crouching
045
46
Al-Ahqaf
The Wind-Curved Sandhills
046
47
Muhammad
Muhammad
047
48
Al-Fath
The Victory
048
49
Al-Hujurat
The Rooms
049
50
Qaf
The Letter "Qaf"
050
51
Adh-Dhariyat
The Winnowing Winds
051
52
At-Tur
The Mount
052
53
An-Najm
The Star
053
54
Al-Qamar
The Moon
054
55
Ar-Rahman
The Beneficent
055
56
Al-Waqi'ah
The Inevitable
056
57
Al-Hadid
The Iron
057
58
Al-Mujadila
The Pleading Woman
058
59
Al-Hashr
The Exile
059
60
Al-Mumtahanah
She that is to be examined
060
61
As-Saf
The Ranks
061
62
Al-Jumu'ah
The Congregation, Friday
062
63
Al-Munafiqun
The Hypocrites
063
64
At-Taghabun
The Mutual Disillusion
064
65
At-Talaq
The Divorce
065
66
At-Tahrim
The Prohibition
066
67
Al-Mulk
The Sovereignty
067
68
Al-Qalam
The Pen
068
69
Al-Haqqah
The Reality
069
70
Al-Ma'arij
The Ascending Stairways
070
71
Nuh
Noah
071
72
Al-Jinn
The Jinn
072
73
Al-Muzzammil
The Enshrouded One
073
74
Al-Muddaththir
The Cloaked One
074
75
Al-Qiyamah
The Resurrection
075
76
Al-Insan
The Man
076
77
Al-Mursalat
The Emissaries
077
78
An-Naba
The Tidings
078
79
An-Nazi'at
Those who drag forth
079
80
Abasa
He Frowned
080
81
At-Takwir
The Overthrowing
081
82
Al-Infitar
The Cleaving
082
83
Al-Mutaffifin
The Defrauding
083
84
Al-Inshiqaq
The Sundering
084
85
Al-Buruj
The Mansions of the Stars
085
86
At-Tariq
The Nightcommer
086
87
Al-A'la
The Most High
087
88
Al-Ghashiyah
The Overwhelming
088
89
Al-Fajr
The Dawn
089
90
Al-Balad
The City
090
91
Ash-Shams
The Sun
091
92
Al-Layl
The Night
092
93
Ad-Duhaa
The Morning Hours
093
94
Ash-Sharh
The Relief
094
95
At-Tin
The Fig
095
96
Al-'Alaq
The Clot
096
97
Al-Qadr
The Power
097
98
Al-Bayyinah
The Clear Proof
098
99
Az-Zalzalah
The Earthquake
099
100
Al-'Adiyat
The Courser
100
101
Al-Qari'ah
The Calamity
101
102
At-Takathur
The Rivalry in world increase
102
103
Al-'Asr
The Declining Day
103
104
Al-Humazah
The Traducer
104
105
Al-Fil
The Elephant
105
106
Quraysh
Quraysh
106
107
Al-Ma'un
The Small kindnesses
107
108
Al-Kawthar
The Abundance
108
109
Al-Kafirun
The Disbelievers
109
110
An-Nasr
The Divine Support
110
111
Al-Masad
The Palm Fiber
111
112
Al-Ikhlas
The Sincerity
112
113
Al-Falaq
The Daybreak
113
114
An-Nas
Mankind
114
Settings