Surah Ad Dukhan Tafseer
Tafseer of Ad-Dukhan : 16
Saheeh International
The Day We will strike with the greatest assault, indeed, We will take retribution.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
৯-১৬ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
(فَارْتَقِبْ يَوْمَ تَأْتِي السَّمَا۬ءُ بِدُخَانٍ مُّبِيْنٍ) আয়াতের শানে নুযূল :
সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরাইশদের বিদ্বেষমূলক আচরণে বিরক্ত হয়ে তাদের জন্য বদ-দু‘আ করলেন, যেন তাদের ওপর ইউসুফ (আঃ)-এর যুগের মতো দুর্ভিক্ষ আপতিত হয়। তখন তাদের ওপর দুর্ভিক্ষ পতিত হলো। এমনকি খাদ্যের অভাবে তারা হাড় পর্যন্ত খেতে শুরু করল। এক ব্যক্তি আকাশের দিকে তাকিয়ে ক্ষুধার তাড়নায় শুধু ধোঁয়াই দেখতে পেল। পরবর্তীতে তাদের জন্য দু‘আ করতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলা হলে তিনি তাদের জন্য দু‘আ করেন। আর তাদেরকে ক্ষণিকের জন্য উক্ত শাস্তি থেকে নাজাত দেয়া হয়। উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করেই
(فَارْتَقِبْ يَوْمَ تَأْتِي السَّمَا۬ءُ بِدُخَانٍ مُّبِيْنٍ)
পর্যন্ত অবতীর্ণ হয়। (সহীহ বুখারী হা. ৪৮২১-২২, ২৩, ২৪, সহীহ মুসলিম হা. ২৭৯৮)
শেষ যুগে ধোঁয়া বের হওয়া কিয়ামতের অন্যতম একটি বড় আলামত, যা কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত।
অত্র আয়াতের তাফসীরে ইমাম কুরতুবী ও ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন : অর্থাৎ হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনি কাফিরদের নিয়ে অপেক্ষা করুন ঐ দিনের, যেদিন আকাশ স্পষ্ট ধোঁয়াচ্ছন্ন হবে, মানুষকে আচ্ছন্ন করে নেবে এবং ঢেকে নেবে। সে সময় তাদেরকে তিরস্কার ও ভর্ৎসনা করে বলা হবে- এটা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি, অথবা তারা একে অপরকে এ কথা বলবে। (কুরতুবী ও ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
আয়াতে উল্লিখিত ধোঁয়া দ্বারা উদ্দেশ্য কী? তা কি সংঘটিত হয়ে গেছে, না ভবিষ্যতে সংঘটিত হবে? এ ব্যাপারে আলেমদের দুটি উক্তি রয়েছে :
(১) তাওহীদের ডাকে সাড়া না দেয়ায় কুরাইশদের প্রতি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বদ্দু‘আর ফলে তাদেরকে এমন কঠিন বিপদ ও ক্ষুধা আক্রান্ত করেছিল যে, ক্ষুধার তাড়নায় তারা এমন হয়ে গিয়েছিল যেন আকাশে ধোঁয়ার মত কিছু দেখছিল। আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) ও সালাফদের একটি দল এ মত পোষণ করেছেন। (তাফসীর কুরতুবী ১৬/১৩১) শানে নুযূল থেকেও এরূপ কথা বুঝা যায়।
(২) উক্ত ধোঁয়া ভবিষ্যতে ঘটমান কিয়ামতের আলামত, তা এখনো প্রকাশ পায়নি, কিয়ামতের পূর্বে তা সংঘটিত হবে। ইবনু আব্বাস (রাঃ) ও কতক সাহাবীসহ তাবেয়ীগণ এ মত পোষণ করেছেন।
ইবনু জারীর আত তাবারী ও ইবনু হাতেম আবদুল্লাহ ইবনে মুলাইকা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন : একদা ভোরে আমি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। তখন তিনি বললেন, গত রাতে সকাল পর্যন্ত একটুও ঘুমাতে পারিনি। আমি বললাম : কেন? তিনি বললেন : আমি শুনেছি লেজবিশিষ্ট তারকাটি উদিত হয়েছে। ফলে আমি ভয় পেলাম যে, এখন ধোঁয়া দেখা দেবে, যার কারণে আমি সকাল পর্যন্ত ঘুমাইনি। (তাফসীর তাবারী ২৫/১১৩, তাফসীর ইবনে কাসীর ৭/২৩০)
সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইবনে স্বাইয়াদকে বলেছিলেন :
إِنِّي خَبَأْتُ لَكَ خَبِيئًا قَالَ هُوَ الدُّخُّ قَالَ اخْسَأْ فَلَنْ تَعْدُوَ قَدْرَكَ
আমি তোমার জন্য একটি বিষয় গোপন রেখেছি। ইবনু স্বাইয়াদ বলল : তা হল- দুখ অর্থাৎ ধোঁয়া। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : তোমার ধ্বংস হোক, তোমার শক্তি বৃদ্ধি পাবে না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ধোঁয়া সম্পর্কিত উক্ত আয়াতটি গোপন রেখেছিলেন। (সহীহ বুখারী হা. ৬১৭৩) এতে প্রমাণিত হয় যে, ধোঁয়া ভবিষ্যতে সংঘটিত হবে এমন একটি আলামত। কারণ ইবনে স্বাইয়াদ মদীনার ইয়াহূদীদের অন্তর্ভুক্ত ছিল। মদীনায় হিজরত করার পর এ ঘটনা ঘটেছে।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : ছয়টি আলামত প্রকাশ হওয়ার পূর্বেই তাড়াতাড়ি আমল কর। সেগুলো হচ্ছে- পশ্চিমাকাশে সূর্যোদয়, ধোঁয়া, দাজ্জাল, ভূ-প্রাণী, তোমাদের কারো মৃত্যু অথবা কিয়ামত। (সহীহ মুসলিম হা. ৭৫৮৫)
আবূ মালেক আল আশআরী (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (রাঃ) বলেন : তোমাদের প্রভু তোমাদেরকে তিনটি জিনিসের ভয় প্রদর্শন করছেন। যার একটি হচ্ছে ধোঁয়া, যা মু’মিনের ওপর সর্দির ন্যায় প্রভাব ফেলবে। আর কাফিরদের পেট ফুলে তা কান দিয়ে বের হবে। (তাফসীর তাবারী ২০/১১৪, ইবনে কাসীর ৭/২৩৫, ইবনে কাসীর বলেন : সনদ ভাল)
কিয়ামতের নিদর্শনস্বরূপ এ ধোঁয়া চল্লিশ দিন বহাল থাকবে যা কাফিরদেরকে শ্বাসরুদ্ধ করে ফেলবে। আর মু’মিনদের অবস্থা সর্দি লাগার মত হবে। এ নিদর্শন কিয়ামতের পূর্বে প্রকাশ পাবে।
(إِنَّا كَاشِفُوا الْعَذَابِ)-এর দুটি অর্থ হতে পারে-
(১) আমি যদি তাদের থেকে আযাব সরিয়ে নেই এবং পুনরায় দুনিয়াতে প্রেরণ করি তাহলে তারা যে কুফরী ও অবাধ্যতায় লিপ্ত ছিল তা-ই করবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَلَوْ رَحِمْنٰهُمْ وَكَشَفْنَا مَا بِهِمْ مِّنْ ضُرٍّ لَّلَجُّوْا فِيْ طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُوْنَ)
“আমি তাদেরকে দয়া করলেও এবং তাদের দুঃখ-কষ্ট দূর করলেও তারা অবাধ্যতায় বিভ্রান্তের ন্যায় ঘুরতে থাকবে।” (সূরা মু’মিনূন ২৩ : ৭৫)
(২) শাস্তি যদি বিলম্ব করে দেই তাহলে তারা অপরাধে লিপ্ত থাকবেই।
(الْبَطْشَةَ الْكُبْرٰي)
বলতে এর দুটো অর্থ হতে পারে- একটি হলো, এখানে পাকড়াও বলতে বদরের যুদ্ধের দিন পাকড়াও করার কথা বলা হয়েছে। দ্বিতীয়টি হলো, এর দ্বারা কিয়ামত দিবসে যে শাস্তি প্রদান করা হবে তা-ই বুঝোনো হয়েছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. কিয়ামতের পূর্বে আকাশ ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে যাবে, যা কিয়ামতের অন্যতম একটি আলামত।
২. আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে শাস্তি দানের মাধ্যমে পরীক্ষা করেন যে, তারা ঈমান নিয়ে আসে কিনা।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings