Surah Az Zukhruf Tafseer
Tafseer of Az-Zukhruf : 34
Saheeh International
And for their houses - doors and couches [of silver] upon which to recline
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
২৬-৩৫ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
এ আয়াতগুলোতে কয়েকটি বিষয়ের আলোচনা প্রস্ফুটিত হয়েছে। প্রথমত : একজন মু’মিন সকল প্রকার তাগুত ও শির্ক থেকে সম্পর্ক মুক্ত থাকবে এবং নিজের সকল বিষয় আল্লাহ তা‘আলার ওপর সোপর্দ করে দেবে। একনিষ্ঠ তাওহীদবাদী আল্লাহ তা‘আলার বন্ধু ইবরাহীম (আঃ)-এর ঘটনা এ কথাই বলে দিচ্ছে। ধর্মের জন্য তিনি তাঁর মুশরিক পিতা ও জাতির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে দ্বিধাবোধ করেননি। আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন :
(قَالَ أَفَرَأَيْتُمْ مَّا كُنْتُمْ تَعْبُدُوْنَ لا أَنْتُمْ وَاٰبَا۬ؤُكُمُ الْأَقْدَمُوْنَ ز فَإِنَّهُمْ عَدُوٌّ لِّيْٓ إِلَّا رَبَّ الْعٰلَمِيْنَ لا الَّذِيْ خَلَقَنِيْ فَهُوَ يَهْدِيْنِ)
“সে বলল : ‘তোমরা কি ভেবে দেখেছ, কিসের পূজা করছো ‘তোমরা এবং তোমাদের অতীত পিতৃপুরুষেরা? ‘তারা সকলেই আমার শত্র“, জগতসমূহের প্রতিপালক ব্যতীত; ‘যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, তিনিই আমাকে পথ প্রদর্শন করেন।” (সূরা শুআরা ২৬ : ৭৫-৭৮)
এ ছাড়াও সূরা আন‘আমের ৭৮-৭৯ নম্বর আয়াতে এবং সূরা মুমতাহিনার ৪ নম্বর আয়াতে উল্লেখ রয়েছে।
(وَجَعَلَهَا كَلِمَةًۭ بَاقِيَةً فِيْ عَقِبِه۪)
অর্থাৎ একনিষ্ঠভাবে শুধুমাত্র আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করা এবং আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত সকল বানানো মা‘বূদের ইবাদত থেকে নিজেকে মুক্ত ঘোষণা করার বাণীটি পরবর্তী বংশধরদের শিক্ষার জন্য অবশিষ্ট রেখেছেন। যাতে তারা সকল প্রকার তাগুতের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করে। এটাই হল লা ইলাহা ইল্লালাহ (لا اله الا الله) এর দাবী। لا اله আল্লাহ ব্যতীত সকল মা‘বূদ থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করবে, الا الله সকল প্রকার ইবাদত একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য সম্পাদন করবে। সুতরাং একজন মু’মিন সর্বদা সর্বক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করবে, কখনো আল্লাহ তা‘আলার বিধানের বাইরে যাবে না। একবার মাসজিদে যাবে, আরেক বার মন্দিরে যাবে, একবার মাসজিদ উদ্বোধন করবে আরেক বার মন্দির বা গির্জা উদ্বোধন করবে তা হতে পারে না।
দ্বিতীয়ত :
মানুষের জীবিকা, জীবন-মৃত্যু, কল্যাণ-অকল্যাণ ও মান-সম্মান সবকিছু আল্লাহ তা‘আলা বন্টন করে দিয়েছেন। এমনকি আল্লাহ তা‘আলা কাকে নবুওয়াত দেবেন তাও বন্টন করে দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলার বণ্টনানুপাতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন রাসূল হিসেবে প্রেরিত হলেন তখন মক্কার মুশরিকরা অস্বীকার করল। এবং বলতে লাগল কেন এ দুই গ্রামের (মক্কা ও তায়েফ) মধ্য হতে একজন সম্মানিত ব্যক্তিকে নাবী বানানো হয়নি। আল্লাহ তা‘আলা বলছেন : আমি আমার রহমত তথা নবুওয়াত উপযুক্ত ব্যক্তিকেই প্রদান করি। অতএব এখানে তাদের কোন হাত নেই।
(لِّيَتَّخِذَ بَعْضُهُمْ بَعْضًا سُخْرِيًّا)
অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা কাউকে ধনী বানিয়েছেন, কাউকে গরীব বানিয়েছেন, কাউকে মালিক বানিয়েছেন, কাউকে শ্রমিক বানিয়েছেন যাতে একজন অন্যজন দ্বারা উপকার নিতে পারে। সবাই যদি মালিক হতো তাহলে শ্রমিক হতো কে? আর সবাই যদি ধনী হতো তাহলে মুচি হতো কে? তাই আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য উপযুক্ত রিযিক বন্টন করে দিয়েছেন, আর এ সম্পর্কে কিয়ামতের দিন জিজ্ঞাসা করা হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَاللّٰهُ فَضَّلَ بَعْضَكُمْ عَلٰي بَعْضٍ فِي الرِّزْقِ ج فَمَا الَّذِيْنَ فُضِّلُوْا بِرَا۬دِّيْ رِزْقِهِمْ عَلٰي مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَهُمْ فِيْهِ سَوَا۬ءٌ ط أَفَبِنِعْمَةِ اللّٰهِ يَجْحَدُوْنَ)
“আল্লাহ জীবনোপকরণে তোমাদের কাউকে কারো ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। যাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে তারা তাদের অধীনস্থ দাস-দাসীদেরকে নিজেদের জীবনোপকরণ হতে এমন কিছু দেয় না যাতে তারা এ বিষয়ে তাদের সমান হয়ে যায়। তবে কি তারা আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করে?” (সূরা নাহ্ল ১৬ : ৭১)
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা করেছেন যে, সত্য প্রত্যাখ্যানে যদি মানুষ এক মতাবলম্বী হয়ে পড়ার আশংকা না থাকত তাহলে আমি দুনিয়ায় যারা আমার বিরুদ্ধাচরণ করে, আমাকে অস্বীকার করে তাদেরকে আমি দিতাম তাদের গৃহের জন্য রৌপ্য নির্মিত ছাদ ও সিঁড়ি যাতে তারা আরোহণ করতে পারে এবং তাদেরকে দিতাম তাদের গৃহের জন্য রৌপ্য নির্মিত দরজা, বিশ্রামের জন্য পালঙ্ক যাতে তারা হেলান দিয়ে বসে থাকবে। আর তার সাথে স্বর্ণ নির্মিতও। তবে এগুলো পার্থিব জীবনেই সীমাবদ্ধ। আর আখিরাতে তারা ভোগ করবে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি এবং মু’মিনগণ থাকবে পরম আনন্দে ও আরাম-আয়েশে। হাদীসে বলা হয়েছে।
একদা ‘উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাড়িতে গমন করেন, ঐ সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয় স্ত্রীদের থেকে ঈলা করছিলেন। (কিছু দিনের জন্য স্ত্রীদের সংগ ত্যাগ করার শপথ করাকে ঈলা বলে)। সে জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একাকী ছিলেন। ‘উমার (রাঃ) ঘরে প্রবেশ করে দেখেন যে, তিনি একটি চাটাইয়ের উপর শুয়ে আছেন এবং তাঁর দেহে চাটাইয়ের দাগ পড়ে গেছে। এ অবস্থা দেখে ‘উমার (রাঃ) কেঁদে ফেললেন এবং বললেন : হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! রূম সম্রাট কাইসার এবং পারস্য সম্রাট কিসরা তারা কত আরামে দিন অতিবাহিত করছে। আর আপনি আল্লাহ তা‘আলার প্রিয় ও মনোনীত বান্দা হওয়া সত্ত্বেও আপনার এ অবস্থা। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হেলান দেয়া অবস্থা থেকে সোজা হয়ে বসে বললেন : হে ইবনুল খাত্ত্বাব! তুমি কি সন্দেহের মধ্যে রয়েছো? অতঃপর তিনি বলেন : এরা হলো ঐ সকল লোক যারা তাদের পার্থিব জীবনেই তাদের ভোগ্য বস্তু পেয়ে গেছে। (সহীহ মুসলিম ২ : ১১৩)
অন্য এক হাদীসে বলা হয়েছে, সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : আল্লাহ তা‘আলার নিকট দুনিয়ার মূল্য যদি একটি মশার ডানার পরিমাণও হত তাহলে তিনি কোন কাফিরকে এক ঢোক পানিও পান করতে দিতেন না। (সহীহ, তিরমিযী হা. ২৩২০)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. একজন মু’মিন শির্ক ও মুশরিকদের সাথে সম্পর্ক যুক্ত থাকতে পারে না।
২. দুনিয়াতে সুখে থাকার মানেই এমনটি নয় যে, আখিরাতেও সে সুখে থাকবে।
৩. দুনিয়ার মূল্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট একটি মশার ডানার সমানও নয়।
৪. আল্লাহ কারো ইচ্ছামত কোন কিছু করেন না, বরং তিনি তাঁর ইচ্ছামত কাজ করে থাকেন।
৫. আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক ব্যক্তির রিযিক বরাদ্দ করে দিয়েছেন। কারো রিযিক শেষ না হওয়া পর্যন্ত সে দুনিয়া থেকে বিদায় নেবে না।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings