Surah Az Zukhruf Tafseer
Tafseer of Az-Zukhruf : 11
Saheeh International
And who sends down rain from the sky in measured amounts, and We revive thereby a dead land - thus will you be brought forth -
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
৯-১৪ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
এ আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদে রুবুবিয়্যাহ তথা সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা ও মালিক একমাত্র আল্লাহ এ স্বীকারোক্তি মক্কার কুরাইশরাও দিত সে বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। এ সম্পর্কে যদি মক্কার কাফিরদেরকে জিজ্ঞাসা করা হত তাহলে তারা এ কথাই বলত যে, সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা ও মালিক আল্লাহ, যিনি জমিনকে বিছানাস্বরূপ বানিয়েছেন, আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন ইত্যাদি। শুধু তাই নয় বরং বিপদে পড়লে তারা একমাত্র আল্লাহকে ডাকত, কারণ তারা জানত এ বিপদ থেকে আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কেউ উদ্ধার করতে পারবে না। তারপরেও তারা মুসলিম হতে পারেনি, কারণ তারা তাওহীদে উলূহিয়্যাতে সরাসরি বিশ্বাস করত না এবং মানত না। কোন কিছুর প্রয়োজন পড়লে দেব-দেবীর কাছে যেত, তাদের নামে মানত করত, তাদের নামে কুরবানী করত।
তাই একজন ব্যক্তি আল্লাহ সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা ও সবকিছুর মালিক ইত্যাদি অর্থাৎ তাওহীদে রুবুবিয়্যাতে ঈমান আনলেই মু’মিন হবে না যতক্ষণ না সকল প্রকার ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্য সম্পাদন করে। এ সম্পর্কে আরো আলোচনা সূরা লুক্বমান-এর ২৫ নম্বর আয়াতে করা হয়েছে।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন : তিনি পৃথিবীকে মানুষের জন্য করেছেন শয্যাস্বরূপ, তা এমন শয্যা বা বিছানা যা স্থির ও স্থিতিশীল। তোমরা এর ওপর চলাফেরা করো, দণ্ডায়মান হও। নিদ্রা যাও এবং যেখানে ইচ্ছা যাতায়াত করো। তিনি এটাকে পর্বতমালা দ্বারা সুদৃঢ় করে দিয়েছেন, যাতে তা নড়াচড়া না করে এবং এতে চলার পথ তৈরী করে দিয়েছেন যাতে মানুষ সঠিক পথ লাভ করতে পারে। এ সম্পর্কে সূরা আন্ নাহ্ল-এর ১৫ নম্বর আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তিনিই আকাশ হতে পরিমিত বৃষ্টি বর্ষণ করেন যা দ্বারা মানুষের প্রয়োজন পূর্ণ হয়। তার থেকে কমও নয় আবার বেশিও নয়। আর এ পানির দ্বারা তিনিই মৃত জমিনকে সঞ্জীবিত করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ فِرَاشًا وَّالسَّمَا۬ٓءَ بِنَا۬ٓءً ص وَّأَنْزَلَ مِنَ السَّمَا۬ءِ مَا۬ٓءً فَأَخْرَجَ بِه۪ مِنَ الثَّمَرَاتِ رِزْقًا لَّكُمْ ج فَلَا تَجْعَلُوْا لِلّٰهِ أَنْدَادًا وَّأَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ)
“যিনি তোমাদের জন্য জমিনকে বিছানা ও আকাশকে ছাদস্বরূপ করেছেন এবং যিনি আকাশ হতে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর তার দ্বারা তোমাদের জন্য জীবিকাস্বরূপ ফল উৎপাদন করেন, অতএব তোমরা জেনে শুনে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক কর না।” (সূরা বাকারাহ ২ : ২২)
এ সম্পর্কেও সূরা আল হিজ্র, সূরা আন নাহ্ল সহ অন্যান্য জায়গাতেও আলোচনা করা হয়েছে।
আল্লাহ তা‘আলা সমস্ত জীবকে জোড়া জোড়া তথা নর ও নারী করে সৃষ্টি করেছেন। যাবতীয় উদ্ভিদ, শস্য, ফল-মূল এবং জীব-জন্তু সবকিছুরই বিপরীত লিঙ্গ রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(سُبْحٰنَ الَّذِیْ خَلَقَ الْاَزْوَاجَ کُلَّھَا مِمَّا تُنْۭبِتُ الْاَرْضُ وَمِنْ اَنْفُسِھِمْ وَمِمَّا لَا یَعْلَمُوْنَ)
“পবিত্র তিনি, যিনি জোড়া জোড়া করে সৃষ্টি করেছেন উদ্ভিদ, মানুষ এবং তারা যাদেরকে জানে না তাদের প্রত্যেককে।” (সূরা ইয়া-সীন ৩৬ : ৩৬)
আল্লাহ তা‘আলা মানুষের সওয়ারের জন্য নৌযান ও চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন। এ সম্পর্কে সূরা আন্ নাহ্ল এ আলোচনা করা হয়েছে।
لِتَسْتَوُوْا -এর অর্থ, لتستقروا অথবা لتستعلوا স্থির হয়ে বসতে পার অথবা সওয়ার হতে পার।
ظُهُوْرِه۪ এখানে একবচনের যমীর (সর্বনাম) ব্যবহার করা হয়েছে ‘জিন্স’ (শ্রেণি)-এর দিকে লক্ষ্য করে। অর্থাৎ যাতে তোমরা নৌযান অথবা চতুষ্পদ জন্তুর পিঠে স্থির হয়ে বসতে পার। তারপর আল্লাহ তা‘আলার নেয়ামতের কথা স্মরণ করবে যে, তোমাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা তা অনুগত করে দিয়েছেন।
مقرنين অর্থ- مطيعين অর্থাৎ- বশীভূত করে দেয়া, অনুগত করে দেয়া।
আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে সওয়ারে আরোহণের জন্য যে, দু‘আ পাঠ করতে হয় তা শিক্ষা দিয়েছেন। সেটা হলো,
(سُبْحَانَ الَّذِيْ سَخَّرَ لَنَا هٰذَا وَمَا كُنَّا لَه۫ مُقْرِنِيْنَ- وَإِنَّا إِلَي رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُوْنَ)
পবিত্র ও মহান তিনি যিনি একে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন, যদিও আমরা একে বশীভূত করতে সমর্থ ছিলাম না। আর আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিকট অবশ্যই প্রত্যাবর্তন করব। সওয়ারীতে আরোহণ করার ব্যাপারে আরো সহীহ বর্ণনা পাওয়া যায়।
‘আলী ইবনু রাবিয়া (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : আমি ‘আলী (রাঃ)-কে দেখলাম তিনি তার সওয়ারীর নিকট আসলেন, যখন সওয়ারীর ওপর পা রাখলেন তখন বললেন : بسم الله যখন সেটার ওপর বসলেন তখন বললেন : الحمد لله এবং এ দু‘আটি পাঠ করলেন :
(سُبْحَانَ الَّذِيْ سَخَّرَ لَنَا هٰذَا وَمَا كُنَّا لَه۫ مُقْرِنِيْنَ..)
অতঃপর তিনবার الحمد لله তিনবার الله اكبر এবং বললেন :
سبحانك لا اله الا انت قد ظلمت نفسي فاغفرلي
আপনি পবিত্র, আপনি ব্যতীত কোন সঠিক মা‘বূদ নেই। আমি আমার নিজের ওপর জুলুম করেছি সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। এটা মূলত সওয়ারীতে আরোহণ করার পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতেই সকল মুসলিমকে আরোহণ করা উচিত।
অতঃপর তিনি হাসলেন। আমি তাকে হাসির কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন : আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অনুরূপ করতে দেখেছি। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন : বান্দা যখন বলে- হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা কর তখন আল্লাহ তা‘আলা আনন্দিত হন এবং বলেন : আমার বান্দা জানে যে, আমি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না। (আবূ দাঊদ হা. ২৬০২, তিরমিযী হা. ৩৪৪৬, সহীহ)
অন্য বর্ণনায় এসেছে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন তাঁর বাহনে আরোহণ করতেন তখন তিনবার তাকবীর বলতেন, অতঃপর বলতেন :
(سُبْحَانَ الَّذِيْ سَخَّرَ لَنَا هٰذَا وَمَا كُنَّا لَه۫ مُقْرِنِيْنَ....)
তারপর বলতেন :
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ فِي سَفَرِي هَذَا مِنَ البِرِّ وَالتَّقْوَي، وَمِنَ العَمَلِ مَا تَرْضَي، اللّٰهُمَّ هَوِّنْ عَلَيْنَا المَسِيرَ، وَاطْوِ عَنَّا بُعْدَ الأَرْضِ، اللَّهُمَّ أَنْتَ الصَّاحِبُ فِي السَّفَرِ، وَالخَلِيفَةُ فِي الأَهْلِ، اللَّهُمَّ اصْحَبْنَا فِي سَفَرِنَا، وَاخْلُفْنَا فِي أَهْلِنَا
হে আল্লাহ! আমি আমার এ সফরে কল্যাণ ও তাক্বওয়া কামনা করছি এবং এমন আমল কামনা করছি যা আপনি পছন্দ করেন।
হে আল্লাহ তা‘আলা! আমাদের জন্য সফর সহজ করে দাও, দূরকে নিকটবর্তী করে দাও। হে আল্লাহ তা‘আলা! তুমি সফরে সাথী, পরিবারের প্রতিনিধি। হে আল্লাহ তা‘আলা! আমাদের সফরে তুমি সাথী হও এবং আমাদের পরিবারের প্রতিনিধি হও। (সহীহ মুসলিম, তিরমিযী হা. ২৪৪৭, আবূ দাঊদ হা. ২৫৯৯)
সফর থেকে ফিরে এসে বলতেন :
آيِبُونَ تَائِبُونَ عَابِدُونَ لِرَبِّنَا حَامِدُونَ
আমরা প্রত্যাবর্তনকারী, তাওবাকারী, ইবাদতকারী ও আমাদের প্রভুর প্রশংসাকারী। (সহীহ বুখারী হা. ৫৯৬৮, সহীহ মুসলিম হা. ১৩৪২)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : প্রত্যেক জন্তুর গজের ওপর শয়তান থাকে, যখন তার ওপর আরোহণ করবে তখন বিসমিল্লাহ বলবে যেমন তোমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে; তারপর সে জন্তু ব্যবহার কর। কারণ তারা আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশেই বহন করে নিয়ে চলে। (সিলসিলা সহীহাহ হা. ২২৭১)
সুতরাং একজন বুদ্ধিমান ও সচেতন মানুষের কর্তব্য হল সত্যিকার দাতা আল্লাহ তা‘আলার নেয়ামত ব্যবহার করার সময় অমনযোগী ও উদাসীন না হওয়া। বরং নেয়ামতের কৃজ্ঞতা প্রকাশের পাশাপাশি জন্তুর অধিকারের দিকে খেয়াল রাখা।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, তিনি ব্যতীত অন্য কেউ নয়। এ কথা মক্কার কুরাইশরাও স্বীকার করত।
২. আল্লাহ তা‘আলা সকল বস্তুকে জোড়া জোড়া করে সৃষ্টি করেছেন।
৩. মানুষকে মৃত্যুর পর অবশ্যই পুনরায় জীবিত করা হবে। যেমনভাবে জীবিত করা হয় মৃত জমিনকে।
৪. সওয়ারীতে আরোহণ করার পদ্ধতি ও দু‘আ জানতে পারলাম।
৫. কোন ব্যক্তি যে-কোন প্রকার ইবাদত আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্যের জন্য সম্পাদন করলে মু’মিন থাকবে না, যদিও আল্লাহ তা‘আলাকে রিযিকদাতা, সৃষ্টিকর্তা ইত্যাদিতে বিশ্বাস করে।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings