Surah Ash Shura Tafseer
Tafseer of Ash-Shuraa : 10
Saheeh International
And in anything over which you disagree - its ruling is [to be referred] to Allah . [Say], "That is Allah, my Lord; upon Him I have relied, and to Him I turn back."
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
৯-১২ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
আল্লাহ সকল কিছুর স্রষ্টা, তিনি সকলের অভিভাবক, তিনিই মৃতকে জীবিত করেন। তিনি ব্যতীত আর দ্বিতীয় কেউ এ কাজ করতে সক্ষম নয়। অর্থাৎ রুবুবিয়্যাহর মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা এসব জানার পরেও যারা আল্লাহ তা‘আলাকে বাদ দিয়ে অন্যকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করবে, অন্যের ইবাদত করবে, অন্যের কাছে সাহায্য চাইবে তারা মূলত মুশরিক, আর তারাই হলো জাহান্নামী। কারণ তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ স্বীকার করলেই কোন ব্যক্তি মুসলিম হতে পারবে না যতক্ষণ না তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ বা সকল ইবাতদ একমাত্র আল্লাহর জন্য সম্পাদন করে। মক্কার মুশরিকরাও তাওহীদুর রুবুরিয়্যাহ স্বীকার করত কিন্তু কোন কিছুর প্রয়োজন হলে সরাসরি আল্লাহ তা‘আলার কাছে চাইতো না বরং প্রতিমা ও মূর্তির মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার কাছে চাইতো। এ সম্পর্কে একাধিক স্থানে আলোচনা করা হয়েছে।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন : যদি তোমরা কোন বিষয় নিয়ে মতভেদ করো, তাহলে তার মীমাংসার জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট ফিরিয়ে দাও। তোমরা এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি বা ঝগড়া-বিবাদ না করে বরং আল্লাহ তা‘আলার কিতাব এবং তাঁর রাসূল-এর হাদীস থেকে সমাধান নাও। তোমরা সেখানেই তোমাদের বিষয়ের মীমাংসা খুঁজে পাবে। আল্লাহ বলেন।
(فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِيْ شَيْءٍ فَرُدُّوْهُ إِلَي اللّٰهِ وَالرَّسُوْلِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ ط ذٰلِكَ خَيْرٌ وَّأَحْسَنُ تَأْوِيْلًا)
“তবে কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ তৈরি হলে তা ফিরিয়ে দাও আল্লাহ ও রাসূলের দিকে। এটাই উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর।” (সূরা নিসা ৪ : ৫৯)
সুতরাং হে মুশরিকরা! তোমরা আল্লাহ তা‘আলার সাথে শির্ক করছ, আর নিজেদেরকে সঠিক ধর্মের অনুসারী বলে দাবি করছ, এর ফায়সালা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূল থেকে নিয়ে নাও। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(لَقَدْ کَفَرَ الَّذِیْنَ قَالُوْٓا اِنَّ اللہَ ھُوَ الْمَسِیْحُ ابْنُ مَرْیَمَﺚ وَقَالَ الْمَسِیْحُ یٰبَنِیْٓ اِسْرَا۬ءِیْلَ اعْبُدُوا اللہَ رَبِّیْ وَرَبَّکُمْﺚ اِنَّھ۫ مَنْ یُّشْرِکْ بِاللہِ فَقَدْ حَرَّمَ اللہُ عَلَیْھِ الْجَنَّةَ وَمَاْوٰٿھُ النَّارُﺚ وَمَا لِلظّٰلِمِیْنَ مِنْ اَنْصَارٍ)
“যারা বলে, ‘আল্লাহই মারিয়ামের ছেলে মসীহ’, তারা কুফরী করেছে। অথচ মসীহ বলেছিল, ‘হে বানী ইসরাঈল! তোমরা আমার প্রতিপালক ও তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহর ‘ইবাদত কর।’ কেউ আল্লাহর সাথে শরীক করলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাত অবশ্যই হারাম করবেন এবং তার আবাস হবে জাহান্নাম। জালিমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই।” (সূরা মায়িদা ৫ : ৭২)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ বলেছেন :
أَنَا أَغْنَي الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ، مَنْ عَمِلَ عَمَلًا أَشْرَكَ فِيهِ مَعِي غَيْرِي، تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُ
অংশী স্থাপনকারীদের অংশ থেকে আমি অমুখাপেক্ষী। যে ব্যক্তি আমার সাথে অন্যকে অংশী স্থাপন করে কোন আমল করল, আমি তাকে ও তার অংশী উভয়কে ছুঁড়ে মারব। (সহীহ মুসলিম হা. ২৯৮৫)
রাসূলুল্লাহ বলেছেন :
مَنْ لَقِيَ اللّٰهَ لَا يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا دَخَلَ الْجَنَّةَ، وَمَنْ لَقِيَهُ يُشْرِكُ بِهِ دَخَلَ النَّارَ
যে ব্যক্তি শির্ক মুক্ত অবস্থায় আল্লাহ তা‘আলার সাথে সাক্ষাত করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে আল্লাহ তা‘আলার সাথে শির্ক করা অবস্থায় সাক্ষাত করবে সে জাহান্নামে যাবে। (সহীহ মুসলিম হা. ৯৩)
সুতরাং সকল বিষয়ের সমাধান নিতে হবে কুরআন ও সুন্নাহ থেকে। কোন ব্যক্তির নিজস্ব চিন্তা ও মতামত থেকে নয়। আল্লাহ আমাদেরকে কুরআন ও সুন্নাহর দিকে ফিরে আসার তাওফীক দান করুন।
এরপর আল্লাহ বলেন : তিনিই আকাশ ও জমিনের একমাত্র সৃষ্টিকর্তা। তিনি ব্যতীত আর কোনই সৃষ্টিকর্তা নেই যারা কোন কিছু সৃষ্টি করতে পারে। সুতরাং তোমরা আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহের প্রতি লক্ষ্য করো যে, তিনি তোমাদের মধ্য হতে তোমাদের জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং গরু, ছাগল, ভেড়া, উট ইত্যাদিও তিনি মানুষের মতো নারী-পুরুষ করে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। এভাবেই মহান আল্লাহ তা‘আলা বংশ বিস্তার করেন। আর এভাবেই মহান আল্লাহর সৃষ্টি কাজ চলমান।
(لَيْسَ كَمِثْلِه۪ شَيْءٌ)
‘কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়’ আল্লাহ তা‘আলা এমন এক সত্ত্বা ও গুণাবলীর অধিকারী যাঁর সত্ত্বা, নাম, গুণ ও কর্মের সাথে কারো কোন সাদৃশ্য ও উপমা হয়না। সত্ত্বা ও গুণসহ সকল দিক থেকে তাঁর কোন সাদৃশ্য ও উপমা নেই। তিনি সকল জল্পনা-কল্পনার উপরে। তিনি সবকিছু থেকে বেপরোয়া, অভাবমুক্ত। তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন বরং সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী। তিনি সকলকে তাদের চাহিদা অনুপাতে দান করে থাকেন। কারো নিকট থেকে তাঁকে কোন কিছুই গ্রহণ করতে হয় না। তিনি অতুলনীয়। যারা আল্লাহ তা‘আলাকে মাখলূকের সাথে সাদৃশ্য দিয়ে বলে : আল্লাহ আমাদের মত শুনেন, আমাদের মত দেখেন ইত্যাদি- আয়াতের এ অংশ তাদের এমন কথার প্রতিবাদ করছে। সুতরাং কুরআন ও সহীহ হাদীসে প্রমাণিত সকল গুণাবলী আল্লাহ তা‘আলার জন্য রয়েছে তা বিশ্বাস করতে হবে, মুতাজিলা ও জাহমিয়াদের মত অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু তা কোন মাখলূকের সাথে সাদৃশ্য রাখে না, বরং আল্লাহ তা‘আলার সত্ত্বার শানে যেমন শোভা পায় তেমন। আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সে সম্পর্কে কোন সংবাদ দেননি ঐ বিষয় পর্যন্তই সেই বিশ্বাস সীমাবদ্ধ রাখব।
(وَهُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ)
অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা সকল সাদৃশ্য ও উপমার ঊর্ধ্বে থাকা সত্ত্বেও তিনি সবকিছু শুনেন এবং দেখেন।
যারা আল্লাহর গুণাবলী অস্বীকার করে আয়াতের এ অংশ তাদের কথার প্রতিবাদ করছে। সুতরাং আল্লাহর এ দু’টি গুণের মতই অন্যান্য গুণ যেমন আল্লাহর হাত রয়েছে (৪৮ : ১০১), আল্লাহর চেহারা রয়েছে (৫৫ : ২৭), পেন্ডলী রয়েছে (৬৮ : ৪২) ইত্যাদি কুরআন ও হাদীসে যেভাবে উল্লেখ রয়েছে সেভাবেই বিশ্বাস করব। বিশ্বাস করতে গিয়ে বাড়াবাড়িও করব না এবং অস্বীকারও করবনা।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আকাশ ও জমিনের রাজত্ব ও রিযিকের চাবি তাঁরই নিকট। তিনি যাকে খুশি রিযিক বৃদ্ধি করে দেন, আবার যার প্রতি ইচ্ছা তার রিযিককে সঙ্কুচিত করে দেন। তিনি তার ইচ্ছা অনুপাতে দান করে থাকেন। তিনি কারো আশা পূরণ করেন আবার কাউকে নিরাশ করেন। তিনি কাউকে রাজত্ব দান করেন, কারো থেকে রাজত্ব ছিনিয়ে নেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(مَا یَفْتَحِ اللہُ لِلنَّاسِ مِنْ رَّحْمَةٍ فَلَا مُمْسِکَ لَھَاﺆ وَمَا یُمْسِکْﺫ فَلَا مُرْسِلَ لَھ۫ مِنْۭ بَعْدِھ۪ﺚ وَھُوَ الْعَزِیْزُ الْحَکِیْمُ)
“আল্লাহ মানুষের জন্য যে রহমত উন্মুক্ত করে দেন তা কেউ প্রতিরোধ করতে পারে না; আর যা তিনি বন্ধ করে দেন তা বন্ধ করার পরে কেউ উন্মুক্ত করতে পারে না। তিনি প্র্রতাপশালী ও মহাপ্রজ্ঞাময়।” (সূরা ফাতির ৩৫ : ২)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. মু’মিনদের অভিভাবক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, তাঁর রাসূল ও মু’মিনগণ। সুতরাং তাদেরকেই অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।
২. কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে সকল সমস্যার সমাধান করতে হবে।
৩. আকাশ-জমিনের সকল কল্যাণ-অকল্যাণের চাবি একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার হাতে।
৪. সৃষ্টিকর্তা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা রিযিকদাতাও তিনিই, সুতরাং ‘ইবাদত পাবার যোগ্যও একমাত্র তিনি, অন্য কেউ নয়।
৫. আল্লাহ তা‘আলার মত কিছুই নেই, তাঁর গুণাবলীর শেষ নেই।
৬. আল্লাহ তা‘আলার গুণাবলী কুরআন ও সহীহ হাদীসে যেভাবে বর্ণিত হয়েছে সেভাবেই বিশ্বাস করব, কোন প্রকার অপব্যাখ্যা করব না এবং অস্বীকারও করব না।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings