Surah Ash Shura Tafseer
Tafseer of Ash-Shuraa : 1
Saheeh International
Ha, Meem.
Ibn Kathir Full
Tafseer 'Ibn Kathir Full' (BN)
১-৬ নং আয়াতের তাফসীর:
হুরূফে মুকাত্তাআ'ত বা বিচ্ছিন্ন অক্ষরগুলোর আলোচনা পূর্বে গত হয়েছে। ইমাম ইবনে জারীর এখানে একটি বিস্ময়কর, অদ্ভুত ও অস্বীকার্য আসার আনয়ন করেছেন। তাতে রয়েছে যে, একটি লোক হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট আগমন করে। ঐ সময় তাঁর নিকট হযরত হুযাইফা ইবনে ইয়ামানও (রাঃ) ছিলেন। ঐ আগন্তুক হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে এই অক্ষরগুলোর তাফসীর জিজ্ঞেস করলো। তিনি তখন কিছুক্ষণ মাথা নীচু করে রইলেন। লোকটি দ্বিতীয়বার ঐ প্রশ্নই করলো। তিনি এবারও মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং তার প্রশ্নকে মন্দ মনে করলেন। লোকটি তৃতীয়বার ঐ একই প্রশ্ন করলো। তিনি এবারও কোন উত্তর দিলেন না। তখন হযরত হুযাইফা (রাঃ) লোকটিকে বললেনঃ “আমি তোমাকে এর তাফসীর বলে দিচ্ছি এবং হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এটাকে কেন অপছন্দ করছেন সেটাও আমার জানা আছে। তাঁর আহলে বায়েতের একটি লোকের ব্যাপারে এটা অবতীর্ণ হয়েছে, যাকে আবদুল ইলাহ এবং আবদুল্লাহ বলা হবে। সে প্রাচ্যের নদীসমূহের একটি নদীর পার্শ্বে অবতরণ করবে এবং তথায় দু'টি শহর বসাবে। নদী কেটে ঐ দু'টি শহরের মধ্যে নিয়ে যাবে। অতঃপর যখন আল্লাহ তা'আলা তাদের দেশের পতন ঘটাবার এবং তাদের ধন-দৌলত ধ্বংস করে দেয়ার ইচ্ছা করবেন তখন ঐ শহর দুটির একটির উপর রাত্রিকালে আগুন আসবে এবং ঐ শহরকে জ্বালিয়ে ভষ্ম করে দিবে। তথাকার লোক সকালে ঐ অবস্থা দেখে অত্যন্ত বিস্ময়বোধ করবে। মনে হবে যেন সেখানে কিছুই ছিল না। অতঃপর সকাল সকালই তথাকার সমস্ত বড় বড় উদ্ধত, অহংকারী এবং সত্য বিরোধী লোক তথায় একত্রিত হবে। তৎক্ষণাৎ আল্লাহ তাআলা তাদের সবকেই ঐ শহর সহ ধ্বংস করে দিবেন। (আরবী)-এর অর্থ এটাই। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলার পক্ষ হতে এটা সিদ্ধান্ত ও ফায়সালা হয়ে গেছে। (আরবী) দ্বারা আদল বা ন্যায়পরায়ণতা বুঝানো হয়েছে। (আরবী) দ্বারা বুঝানো হয়েছে (আরবী) অর্থাৎ সত্বরই হবে এবং (আরবী) দ্বারা অর্থ নেয়া হয়েছে, ঐ দুই শহরে যা সংঘটিত হবে।”
এর চেয়ে বেশী বিস্ময়কর আর একটি রিওয়াইয়াত রয়েছে যা হাফিয আবু ইয়ালা মুসিলী (রঃ) মুসনাদে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর দ্বিতীয় জিলদ হতে বর্ণনা করেছেন। এটা হযরত আবূ যার (রাঃ) নবী (সঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এর ইসনাদ খুবই দুর্বল এবং ছেদ কাটা। এতে রয়েছে যে, হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) মিম্বরের উপর উঠে বলেনঃ “হে জনমণ্ডলী!
তোমাদের মধ্যে কেউ কি (আরবী)-এর তাফসীর রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) হতে শুনেছে?” তখন হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) লাফিয়ে উঠে বলেন, হ্যা, আমি (শুনেছি)। তিনি (রাসূলুল্লাহ সঃ) বলেছেনঃ (আরবী) হলো আল্লাহ তা'আলার নামসমূহের মধ্যে একটি নাম। (আরবী) দ্বারা অর্থ নেয়া হয়েছেঃ (আরবী) (অর্থাৎ বদরের দিন পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পলায়নকারীরা শাস্তি আস্বাদন করেছে)। (আরবী) দ্বারা উদ্দেশ্য হলোঃ (আরবী) অর্থাৎ যালিমরা তাদের পরিণাম কি তা সত্বরই জানতে পারবে।”(২৬:২২৭) হযরত উমার (রাঃ) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে (আরবী)-এর অর্থ জিজ্ঞেস করলে তিনি নীরব থাকেন। তখন হযরত আবু যার (রাঃ) দাড়িয়ে যান এবং হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর মতই তাফসীর করেন এবং বলেন যে, (আরবী)-এর অর্থ হলো (আরবী) অর্থাৎ (লোকদের উপর) আসমানী আযাব আসবে।
এরপর মহান আল্লাহ বলেন, হে নবী (সঃ) ! তোমার উপর যেমন এই কুরআনের অহী অবতীর্ণ হচ্ছে, অনুরূপভাবে তোমার পূর্ববর্তী নবী-রাসূলদের প্রতিও কিতাব ও সহীফাসমূহ অবতীর্ণ হয়েছিল। এগুলো সবই অবতীর্ণ হয়েছিল আল্লাহ তাআলার নিকট হতে যিনি স্বীয় প্রতিশোধ গ্রহণের ব্যাপারে পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত হারিস ইবনে হিশাম (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনার নিকট অহী কিভাবে আসে?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “কখনো ঘন্টার অবিরত শব্দের ন্যায়, যা আমার কাছে খুব কঠিন ও ভারী বোধ হয়। যখন ওটা শেষ হয়ে যায়। তখন আমাকে যা কিছু বলা হয় সবই আমার মুখস্থ হয়ে যায়। আর কখনো। ফেরেশতা মানুষের আকৃতিতে আমার নিকট আগমন করেন। আমার সাথে তিনি কথা বলেন এবং যা কিছু তিনি বলেন সবই আমি মনে করে নিই। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন যে, কঠিন শীতের সময় যখন তাঁর প্রতি অহী অবতীর্ণ হতো তখন তিনি অত্যন্ত ঘেমে যেতেন, এমনকি তাঁর কপাল মুবারক হতে টপ টপ করে ঘাম ঝরে পড়তো। (এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে অহীর অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তরে বলেনঃ “জিঞ্জিরের ঝন্ ঝন্ শব্দের মত একটা শব্দ শুনতে পাই। অতঃপর আমি ওর প্রতি কান। লাগিয়ে দিই। এরূপ অহী আমার কাছে খুবই কঠিন বোধ হয়। মনে হয় যেন আমার প্রাণবায়ু নির্গত হয়ে যাবে। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন) শরহে বুখারীর শুরুতে আমরা অহীর অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। সুতরাং সমুদয় প্রশংসা আল্লাহরই প্রাপ্য।
মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ যমীন ও আসমানের সমুদয় সৃষ্টজীব তাঁরই দাস এবং তাঁরই কর্তৃত্বাধীন। তার সামনে সবাই বিনীত ও বাধ্য। তিনি সমুন্নত, মহান। তার শ্রেষ্ঠত্ব, বড়ত্ব ও মাহাত্ম্যের অবস্থা এই যে, আকাশমণ্ডলী ঊর্ধ্বদেশ হতে ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয় এবং ফেরেশতারা তাঁদের প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করেন এবং মর্তবাসীদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আরশ বহনকারী ফেরেশতামণ্ডলী এবং ওর চতুষ্পর্শ্বের ফেরেশতারা তাদের প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং যারা তার প্রতি ঈমান রাখে তাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে (এবং বলে), হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আপনার রহমত ও জ্ঞান দ্বারা প্রত্যেক জিনিসকে ঘিরে রেখেছেন। সুতরাং যারা তাওবা করেছে এবং আপনার পথের অনুসারী হয়েছে তাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা করুন।”(৪০:৭)
অতঃপর মহান আল্লাহ বলেনঃ যারা আল্লাহর পরিবর্তে অপরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে, আল্লাহ তাদের প্রতি কঠোর দৃষ্টি রাখেন। তিনি স্বয়ং তাদেরকে পুরোপুরি শাস্তি প্রদান করবেন। তোমার (নবীর সঃ) কাজ শুধু তাদেরকে সতর্ক করে দেয়া। তুমি তাদের কর্মবিধায়ক নও, বরং সবকিছুর কর্মবিধায়ক হলেন আল্লাহ।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings