Surah Fussilat Tafseer
Tafseer of Fussilat : 19
Saheeh International
And [mention, O Muhammad], the Day when the enemies of Allah will be gathered to the Fire while they are [driven] assembled in rows,
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
১৯-২৪ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
(وَیَوْمَ یُحْشَرُ اَعْدَا۬ئُ اللہِ...... فَاِنْ یَّصْبِرُوْا فَالنَّارُ مَثْوًی لَّھُمْ)
এ আয়াতসমূহে কিয়ামতের মাঠে মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তাদেরই বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রদান করবে-আল্লাহ তা‘আলা এ সম্পর্কেই আলোকপাত করেছেন। অতঃপর তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম। দুনিয়াতে মানুষ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কত সেবাযতœ করে থাকে। কোন অঙ্গ আঘাতপ্রাপ্ত হলে যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়াসহ আর কত কি করে। কিন্তু এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের যদি সৎ ব্যবহার না করা হয়, যদি অসৎ কাজে ব্যবহার করা হয় তাহলে সে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মানুষের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(وَّنَسُوْقُ الْمُجْرِمِيْنَ إِلٰي جَهَنَّمَ وِرْدًا )
“এবং অপরাধীদেরকে তৃষ্ণাতুর অবস্থায় জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাব।” (সূরা মারইয়াম ১৯ : ৮৬)
আর তথায় তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রদান করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(اَلْيَوْمَ نَخْتِمُ عَلٰٓي أَفْوَاهِهِمْ وَتُكَلِّمُنَآ أَيْدِيْهِمْ وَتَشْهَدُ أَرْجُلُهُمْ بِمَا كَانُوْا يَكْسِبُوْنَ )
“আজ আমি এদের মুখে মোহর মেরে দেব, এদের হাত আমার সাথে কথা বলবে এবং এদের পা সাক্ষ্য দেবে যা তারা করত সে সম্পর্কে।” (সূরা ইয়া-সীন ৩৬ : ৬৫)
তখন অপরাধিরা তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে ধিক্কার প্রদান করবে এবং বলবে : তোমরা কেন আমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রদান করছ? তোমরা দূর হও, তোমরা চুপ করো ইত্যাদি। যেমন হাদীসে বলা হয়েছে।
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হেসে উঠলেন এবং সাহাবাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন : তোমরা কি জানো কী কারণে আমি হেসেছি? তারা বলল : হে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল! আপনি কি কারণে হাসলেন? উত্তরে তিনি বললেন : কিয়ামতের দিন বান্দা কর্তৃক তার রবের সাথে ঝগড়া করার কথা মনে করে আমি বিষ্ময়বোধ করছি। বান্দা বলবে : হে আমার প্রতিপালক! আপনি কি আমার সঙ্গে অঙ্গীকার করেননি যে, আপনি আমার ওপর জুলুম করবেন না? আল্লাহ তা‘আলা জবাবে বলবেন : হ্যাঁ, সে বলবে : আমিতো আমার আমলের ওপর আমার নিজের সাক্ষ্য ছাড়া আর কারো সাক্ষ্য কবূল করব না। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন : আমি এবং আমার সম্মানিত ফেরেশতারা কি সাক্ষী হিসেবে যথেষ্ট নয়? কিন্তু সে বারবার এ কথাই বলতে থাকবে। তখন আল্লাহ তা‘আলা তার মুখে মোহর লাগিয়ে দেবেন এবং তার দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে যে, সে কী করেছে। তখন সে তাদেরকে তিরস্কার করে বলবে : তোমরা চুপ করো, আমি তো তোমাদেরকে রক্ষা করার জন্যই তর্ক করছিলাম। (সহীহ মুসলিম হা. ২৯৬৯)
অন্য এক হাদীসে বলা হয়েছে, আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) বলেন : কাফির ও মুনাফিক্বদেরকে হিসাবের জন্য ডাকা হবে। তিনি তাদের প্রত্যেকের সম্মুখে তাদের কৃতকর্ম পেশ করবেন। তাদের প্রত্যেকে শপথ করে তার নিজের কৃতকর্ম অস্বীকার করবে এবং বলবে : হে আমার প্রতিপালক! আপনার ইজ্জতের শপথ করে বলছি : আপনার ফেরেশতারা এমন কিছু লিখে রেখেছে যা আমি কখনো করিনি। ফেরেশতারা বলবেন : তুমি কি অমুক দিন অমুক জায়গায় অমুক কাজ করনি? সে উত্তরে বলবে : হে আমার প্রতিপালক! আপনার মর্যাদার শপথ! আমি এ কাজ কখনো করিনি। অতঃপর তার মুখে মোহর লাগিয়ে দেয়া হবে এবং তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে। সর্বপ্রথম তার ডান উরু কথা বলবে। (ইবনু জারীর-ত্ববারী- ২৩/১৭)
সুতরাং মানুষ যে-কোন স্থানে যে-কোন অন্যায় অথবা ভাল কাজ যাই করুক না কেন আল্লাহ তা‘আলা তা সম্যক অবগত রয়েছেন। তিনি সব কিছুই জানেন, শুনেন ও দেখেন।
(تَعْمَلُوْنَ....... وَمَا كُنْتُمْ تَسْتَتِرُوْنَ) শানে নুযূল :
ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : বাইতুল্লাহর পার্শ্বে তিনজন লোক ঝগড়া করছিল। দু’জন কুরাইশ গোত্রের এবং একজন সাক্বীফ গোত্রের অথবা এর বিপরীত। তাদের একজন বলল : তোমরা কি মনে করো যে, আমরা যা বলি আল্লাহ তা‘আলা তা শুনেন? অন্যজন উত্তর দিলো, আমরা যা উচ্চকণ্ঠে বলি তা শুনেন কিন্তু যা চুপিচুপি বলি তা শুনেন না। তৃতীয় জন বলল : যদি তিনি আমাদের উচ্চৈঃস্বরের কথা শুনতে পান তাহলে আমরা যা আস্তে আস্তে বলি তাও তিনি শুনেন। তখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (সহীহ বুখারী হা. ৪৮১৬-১৭, সহীহ মুসলিম হা. ২৭৭৫)
অন্য বর্ণনায় ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন : একদা আমি কাবার আস্তিনে আচ্ছন্ন ছিলাম। এমন সময় তিনজন ব্যক্তি আগমন করল। তাদের পেটে চর্বি ছিল অনেক কিন্তু বুদ্ধি ছিল কম। তারা কিছু কথা বলল, আমি তা বুঝতে পারলাম না।
তাদের একজন বলল : তোমরা কি জান না আল্লাহ আমাদের কথা শুনেন। অপরজন বলল, আমরা আওয়াজ উঁচু করলে আল্লাহ তা‘আলা শুনতে পান, আর আওয়াজ উঁচু না করলে শুনতে পাননা। অপরজন বলল, যদি আল্লাহ কিছু শুনেন তাহলে সব কথাই শুনেন। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন : আমি একথা যখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে উল্লেখ করলাম তখন এ আয়াত নাযিল হয়। (তিরমিযী হা. ৩২৪৯, সহীহ)
(وَذٰلِكُمْ ظَنُّكُمُ الَّذِيْ ظَنَنْتُمْ بِرَبِّكُمْ)
“তোমাদের প্রতিপালক সম্বদ্ধে তোমাদের এ ধারণাই তোমাদের ধ্বংস করেছে” অর্থাৎ আল্লাহর ব্যাপারে এরূপ ধারণা করার কারণে তোমরা বেশি বেশি অপরাধ করেছ। ফলে তোমাদের ধ্বংস অনিবার্য হয়ে গেছে। হাদীসে এসেছে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ভাল ধারণা না নিয়ে যেন কেউ মারা না যায়। কেননা যে জাতি তাদের প্রতিপালকের ব্যাপারে খারাপ ধারণা করেছে তিনি তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। (সহীহ মুসলিম হা. ২৮৭৭)
সুতরাং আমরা প্রকাশ্য ও গোপনে যা কিছু করি সব আল্লাহ তা‘আলা দেখেন ও জানেন। তাঁর কাছে কোন কিছু অস্পষ্ট নয়। তাই আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল পাপ কাজ বর্জন করা উচিত।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. কিয়ামতের মাঠে আল্লাহ তা‘আলার শত্র“দেরকে জাহান্নামের সম্মুখে উপস্থিত করা হবে।
২. কিয়ামতের মাঠে মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে।
৩. অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে কথা বলার ক্ষমতা দেয়া হবে।
৪. সর্বপ্রথম কথা বলবে মানুষের ডান উরু।
৫. শাস্তি আসার পর ধৈর্য ধারণ করাতে কোনই লাভ নেই বরং তার পূর্বেই ঈমান আনতে হবে।
৬. আল্লাহ তা‘আলা মানুষের প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সকল কিছুই জানেন।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings