Surah Fussilat Tafseer
Tafseer of Fussilat : 1
Saheeh International
Ha, Meem.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
নামকরণ ও প্রেক্ষাপট :
এ সূরার দ্বিতীয় আরেকটি নাম রয়েছে সেটি হলো “ফুস্সিলাত”। এ সূরার তৃতীয় আয়াতে যে “ফুস্সিলাত” শব্দটি রয়েছে সেই শব্দ থেকেই এ নামে নামকরণ করা হয়েছে।
সূরাটি অবতীর্ণ হওয়ার কারণ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে যে, একদা কুরাইশ সর্দারগণ আপোষে পরামর্শ করল যে, মুহাম্মাদের অনুসারীদের সংখ্যা দিনের পর দিন বেড়েই চলছে। অতএব এ পথ বন্ধ করার জন্য আমাদের কিছু একটা করা দরকার। তাই তারা তাদের মধ্যে সবচেয়ে বাক্পটু শুদ্ধভাষী উতবা ইবনু রাবী‘-কে নির্বাচন করল যে, সে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে কথা বলবে। সুতরাং সে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে তাঁর ওপর আরবদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা এবং অনৈক্য সৃষ্টির অপবাদ দিয়ে প্রস্তাব পেশ করল যে, এ নতুন ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্য যদি ধন-মাল অর্জন করা হয়, তবে আমরা তোমার জন্য তা সঞ্চয় করে দিচ্ছি। আর যদি এর উদ্দেশ্য হয় নেতা বা সর্দার হওয়া, তবে আমরা তোমাকে আমাদের নেতা বা সর্দার মেনে নিচ্ছি। যদি কোন সুন্দরী নারীকে বিবাহ করতে চাও, তবে একজন নয়, বরং তোমার জন্য দশজন সুন্দরী নারীর ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। আর যদি তোমাকে জিন পেয়ে থাকে, যার কারণে তুমি আমাদের উপাস্যদের নিন্দা করো, তবে আমরা আমাদের খরচে তোমার চিকিৎসার ব্যবস্থা করছি। তিনি সমস্ত কথা শুনে চুপ রইলেন। যখন সে তার কথা শেষ করল, তিনি বললেন : হে আবুল ওয়ালিদ! তুমি কি শেষ করেছ? সে বলল : হ্যাঁ, শেষ করেছি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : হে ভাইপো! তুমি শোন, সে বলল : আপনি বলুন, আমি শুনব। তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম, তারপর এ সূরা পাঠ করলেন। এতে সে বড়ই প্রভাবিত হলো এবং ফিরে গিয়ে কুরাইশ সর্দারদেরকে বলল : যে জিনিস তিনি পেশ করেন তা জাদুবিদ্যা নয়, তিনি জ্যোতিষী নন এবং তাঁর কথা কবিতাও নয়। তার উদ্দেশ্য ছিল রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দা‘ওয়াতের ব্যাপারে কুরাইশদেরকে চিন্তা-ভাবনা করার প্রতি আহ্বান জানানো। কিন্তু তারা চিন্তা-ভাবনা করা তো দূরের কথা বরং তাকে উল্টো অপবাদ দিলো যে, তুমি তার জাদুর জালে বন্দী হয়ে গেছ। (মুসতাদরাক হাকিম ২/২৫৩, সহীহ)
১-৫ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
حٰم۬ (হা-মীম) এ জাতীয় “হুরূফুল মুক্বাত্বআত” বা বিচ্ছিন্ন অক্ষর সম্পর্কে সূরা আল বাকারার শুরুতে আলোচনা করা হয়েছে। এগুলোর সঠিক অর্থ একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন।
অত্র সূরায় প্রথমত সম্বোধন করা হয়েছে আরবের কুরাইশ গোত্রকে, কারণ তাদের সামনে কুরআন নাযিল হয়েছে এবং তাদের ভাষায় নাযিল হয়েছে। তারা কুরআনের অলৌকিকতা প্রত্যক্ষ করেছে এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অসংখ্য মু‘জিযাহ দেখেছে। এতদসত্ত্বেও তারা কুরআন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এবং উপলব্ধি তো দূরের কথা শ্রবণ করাও পছন্দ করেনি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর শুভেচ্ছামূলক উপদেশের জবাবস্বরূপ অবশেষে তারা বলে দিয়েছে, আপনার কথাবার্তা আমাদের বুঝে আসে না। আমাদের অন্তর এগুলো কবুল করে না এবং আমাদের কানও এগুলো শুনতে প্রস্তুত নয়। আপনার ও আমাদের মাঝখানে অন্তরাল আছে। সুতরাং এখন আপনি আপনার কাজ করুন এবং আমাদেরকে আমাদের অবস্থার ওপর ছেড়ে দিন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন : এ কুরআন দয়াময় আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ এবং এর আয়াতসমূহ বর্ণনার দিক দিয়ে, অর্থের দিক দিয়ে এবং বিধি-বিধানের দিক দিয়েও বিশদভাবে বিবৃত। এতে কোন প্রকার অস্পষ্টতা নেই। কোন্টি হালাল, কোন্টি হারাম, কোন কাজ করলে শাস্তি পেতে হবে আর কোন্ কাজ করলে শাস্তি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে এর প্রত্যেকটি বিষয়ই স্পষ্টভাবে বর্ণনা দেয়া আছে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(وَلَقَدْ جِئْنٰهُمْ بِكِتٰبٍ فَصَّلْنٰهُ عَلٰي عِلْمٍ هُدًي وَّرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ)
“অবশ্যই আমি তাদেরকে দিয়েছিলাম এমন এক কিতাব যা পূর্ণ জ্ঞান দ্বারা বিশদ ব্যাখ্যা করেছিলাম এবং যা ছিল মু’মিন সম্প্রদায়ের জন্য পথনির্দেশ ও দয়া।” (সূরা আ‘রাফ ৭ : ৫২)
আল্লাহ অন্যত্র বলেন,
(كِتٰبٌ أُحْكِمَتْ اٰيٰتُه۫ ثُمَّ فُصِّلَتْ مِنْ لَّدُنْ حَكِيْمٍ خَبِيْرٍ)
“এটা এমন গ্রন্থ যার আয়াতগুলো সুদৃঢ়, অতঃপর বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞের পক্ষ থেকে।” (সূরা হূদ ১১ : ১)
আর এ কুরআন আরবি ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে। যেহেতু কুরআন প্রথমত আরবদের উদ্দেশ্য করেই অবতীর্ণ হয়েছে তাই তাদের ভাষাতেই এটি অবতীর্ণ করা হয়েছে যাতে এটা বুঝতে সহজ হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(قُرْاٰنًا عَرَبِيًّا غَيْرَ ذِيْ عِوَجٍ لَّعَلَّهُمْ يَتَّقُوْنَ)
“এ কুরআন আরবি ভাষায়, এতে বিন্দুমাত্রও বক্রতা নেই, যাতে তারা সাবধানতা অবলম্বন করে।” (সূরা যুমার ৩৯ : ২৮)
أَكِنَّةٍ হলো كنان-এর বহুবচন। অর্থ হলো- আবরণ, পর্দা, অর্থাৎ আমাদের অন্তর আবৃত ও ঢাকা আছে। এ ক্ষেত্রে কাফিরদের তিনটি উক্তি উদ্ধৃত হয়েছে।
(এক) আমাদের অন্তরে পর্দা পড়ে আছে, ফলে আমরা তোমার কথা বুঝতে পারি না। (দুই) আমাদের কান বধির, ফলে তোমার কথা আমাদের কর্ণকুহরে প্রবেশ করে না এবং (তিন) আমাদের ও তোমার মাঝে অন্তরাল রয়েছে। আমরা তোমার ঈমান ও তাওহীদের দা‘ওয়াত বুঝতে পারি না। কাজেই তোমার কাজ তুমি করে যাও আর আমাদের কাজ আমরা করে যাই। কুরআন এসব উক্তি নিন্দার ছলে উদ্ধৃত করেছে, যেন এসব যুক্তি অর্থহীন হিসাবে প্রকাশ পায়। কিন্তু অন্যত্র কুরআন নিজেই তাদের এরূপ অবস্থা বর্ণনা করেছে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَجَعَلْنَا عَلٰي قُلُوْبِهِمْ أَكِنَّةً أَنْ يَّفْقَهُوْهُ وَفِيْٓ اٰذَانِهِمْ وَقْرًا)
“আমি তাদের অন্তরের ওপর আবরণ দিয়েছি যেন তারা তা উপলব্ধি করতে না পারে এবং তাদের কানে সৃষ্টি করেছি বধিরতা” (সূরা ইসরা ১৭ : ৪৬)
وَقْر অর্থ হলো, বোঝা। এখানে বধিরতা বুঝানো হয়েছে, যা সত্য শোনার ক্ষেত্রে অন্তরাল সৃষ্টি করে।
কাফিররা এরূপ ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করা সত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের সাথে কোন খারাপ ব্যবহার করেননি এবং দাওয়াতী ক্ষেত্রে কঠোরতা অবলম্বন করেননি। বরং তাদেরকে নরম কথা ও কোমল আচরণ দ্বারাই দাওয়াত দিয়েছেন। সুতরাং যার কাছে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে যাওয়া হবে সে দাওয়াত কবূল না করলে খারাপ আচরণ করতে হবে এমন নয়, হতে পারে ভাল ব্যবহার পেলে আল্লাহ তা‘আলা তার অন্তর উন্মুক্ত করে দেবেন।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. নিঃসন্দেহে কুরআন আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে অবতারিত।
২. কুরআন আরবি ভাষায় অবতীর্ণ, আর এর বিধি-বিধানগুলো স্পষ্টভাবে বিবৃত।
৩. সত্যের দা‘ওয়াত থেকে বিমুখ হলে জাহান্নামে যেতে হবে।
৪. কুরআন সতর্ককারী ও সুসংবাদ দানকারী গ্রন্থ।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings