Surah Al Imran Tafseer
Tafseer of Ali 'Imran : 15
Saheeh International
Say, "Shall I inform you of [something] better than that? For those who fear Allah will be gardens in the presence of their Lord beneath which rivers flow, wherein they abide eternally, and purified spouses and approval from Allah . And Allah is Seeing of [His] servants -
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
১৪ ও ১৫ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা‘আলা বলছেন, তিনি পার্থিব জীবনকে বিভিন্ন প্রকারের উপভোগ্য বস্তু দ্বারা সুশোভিত করে দিয়েছেন।
حُبُّ الشَّهَوٰتِ
বা প্রবৃত্তির ভালবাসা, প্রবৃত্তির আনুগত্য করা। জান্নাত প্রবৃত্তির অনুসরণকে বর্জন ছাড়া লাভ করা সম্ভব নয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: জান্নাত কষ্টদায়ক বস্তু দ্বারা বেষ্টন করে রাখা হয়েছে, আর জাহান্নাম চাকচিক্যময় বস্তু ও প্রবৃত্তির অনুসরণ দ্বারা বেষ্টন করে রাখা হয়েছে। (সহীহ মুসলিম হা: ২৮২৩)
সুতরাং জান্নাত পেতে হলে কষ্ট ও কাঠিন্যতা অতিক্রম করতে হবে। আর জাহান্নামে যেতে হলে প্রবৃত্তির অনুসরণে কোন বাধা নেই যেমন খুশি তেমন চলতেও কোন বাধা নেই।
‘কাম্য জিনিস’ বলতে এমন সব জিনিসকে বুঝানো হয়েছে যা স্বভাবত মানুষ পছন্দ করে ও ভালবাসে। এ সব জিনিসের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া বা তা ভালবাসা অপছন্দনীয় নয়; তবে তা হতে হবে শরীয়তের গণ্ডির ভেতরে; কারণ দুনিয়ার সাজ-সজ্জা ও চাকচিক্য আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে পরীক্ষা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِنَّا جَعَلْنَا مَا عَلَي الْأَرْضِ زِيْنَةً لَّهَا لِنَبْلُوَهُمْ أَيُّهُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا)
“পৃথিবীর ওপর যা কিছু আছে আমি সেগুলোকে তার শোভা-সৌন্দর্য করেছি, মানুষের মধ্যে কর্মের দিক থেকে কে সর্বোত্তম তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য।” (সূরা কাহ্ফ ১৮:৭)
কাম্য জিনিসের মধ্যে প্রথম উল্লেখ করা হয়েছে নারী; কারণ মানুষ স্বভাবগতভাবে যেসব জিনিসের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয় তার প্রধান হল নারী। একজন পুরুষ সাবালক হবার পর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বোধ করে একজন সঙ্গিণীর। তাছাড়া পুরুষের কাছে নারী সর্বাধিক প্রিয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: মহিলা ও সুগন্ধি আমার কাছে অতি প্রিয় জিনিস। (নাসায়ী হা: ৩৯৪৯, আহমাদ হা: ৩৪৮২, হাসান) অন্যত্র তিনি বলেন: গোটা দুনিয়া হলো সম্পদ, আর তন্মধ্যে সর্বোত্তম সম্পদ হল সতী-সাধ্বী নারী। (সহীহ মুসলিম হা: ৩৭১৬, নাসায়ী হা: ৩২৩২)
সুতরাং যদি নারীর প্রতি ভালবাসা শরীয়তের সীমালঙ্ঘন না করে তা হলে তা উত্তম। পক্ষান্তরে নারীরাই সবচেয়ে বেশি ফেতনার কারণ। তাই তাদের থেকে সাবধান হতে হবে।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
ما تَرَكْتُ بَعْدِي فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَي الرِّجَالِ مِنَ النِّسَاءِ
আমি পুরুষদের জন্য নারীর চেয়ে বেশি ক্ষতিকর ও ফেতনার কারণ আর কিছু ছেড়ে যাইনি। (সহীহ বুখরী হা: ৫০৯৬, সহীহ মুসলিম হা: ২০৯৭-৯৮)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন:
أَوَّلَ فِتْنَةِ بَنِيْ إِسْرَائِيْلَ كَانَتْ فِي النِّسَاءِ
বানী ইসরাঈলের মধ্যে সর্বপ্রথম ফেতনা সৃষ্টি হয়েছিল মহিলাদের ব্যাপারে। (সহীহ মুসলিম হা: ২৭৪২)
অনুরূপভাবে মহান আল্লাহ তা‘আলা সন্তান, ধন-সম্পদ, চতুস্পদ জন্তু ইত্যাদির কথাও উল্লেখ করে বলেন যে, তিনি এ সব সম্পদ দ্বারা দুনিয়াকে সুশোভিত করে দিয়েছেন।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন, এ সবকিছু পরীক্ষাস্বরূপ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَاعْلَمُوْٓا اَنَّمَآ اَمْوَالُکُمْ وَاَوْلَادُکُمْ فِتْنَةٌﺫ وَّاَنَّ اللہَ عِنْدَھ۫ٓ اَجْرٌ عَظِیْمٌ)
“আর জেনে রাখ যে, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পরীক্ষাস্বরূপ এবং আল্লাহরই নিকট মহাপুরস্কার রয়েছে।” (সূরা আনফাল ৮:২৮)
সুতরাং দুনিয়ার এসব সম্পদের মোহে আকৃষ্ট হয়ে পরকালকে ভুলে গেলে চলবে না, বরং দুনিয়ার সম্পদকে পরকালের পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। মানুষের সন্তান ও সম্পদ উভয় জগতে তার কাজে আসবে যদি তা দীনের আলোকে গড়ে তুলা যায় । যেমন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
إذا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثَةِ أَشْيَاءَ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُوْ لَهُ
যখন মানুষ মৃত্যু বরণ করে তখন তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তিনটি আমল ব্যতীতঃ সদাকায়ে জারিয়া অথবা এমন জ্ঞান যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় অথবা সৎ সন্তান, যে তার জন্য দু‘আ করবে। (সহীহ মুসলিম হা: ১৬৩১)
তেমনিভাবে মানুষ যখন তার সম্পদের হক আদায় করবে তখন তার সম্পদ তার উপকারে আসবে। আর যদি হক আদায় না করে তবে সম্পদ তার জন্য পরকালে ক্ষতির কারণ হবে।
(وَالْقَنَاطِيرِ الْمُقَنْطَرَةِ)
“অঢেল ধন-সম্পদ” অঢেল সম্পদের পরিমাণ নিয়ে মতভেদ পাওয়া যায়। কেউ বলেন, এর পরিমাণ হচ্ছে বড় পাহাড়ের সমান।
অন্য একদল বলেন: দু’হাজার উকিয়া। হাসান বসরী (রহঃ) বলেন: বার শত স্বর্ণমুদ্রা। কারো মতে, এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা।
‘চিহ্নিত ঘোড়া’ এমন ঘোড়া যাকে চারণভূমিতে চরে খাওয়ার জন্য ছেড়ে দেয়া হয়েছে অথবা এমন ঘোড়া যাকে জিহাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে কিংবা এমন ঘোড়া যাকে অন্য থেকে পার্থক্য করার জন্য কোন কিছু দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে। (ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: ঘোড়া তিন প্রকার:
১. যে ব্যক্তি ঘোড়া প্রতিপালন করবে মানুষকে দেখানোর জন্য, গর্ব করার জন্য ও ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য, এমন ঘোড়া তার জন্য পাপের কারণ হবে।
২. যে ব্যক্তি ঘোড়া প্রতিপালন করবে আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় ব্যবহারের জন্য, কিন্তু তার দ্বারা নিজে উপকৃত হলেও আল্লাহ তা‘আলার হক ভুলে যায় না। এমন উদ্দেশ্যে ঘোড়া প্রতিপালনের কারণে সে ব্যক্তির জন্য তা জাহান্নামের অন্তরায় হবে।
৩. এমন ঘোড়া যা আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় জিহাদ করার জন্য প্রতিপালন করা হয় সে ঘোড়া প্রতিপালকের জন্য নেকীর কারণ হবে। (সহীহ মুসলিম হা: ৯৮৭)
এগুলো হল দুনিয়ার ভোগের সামগ্রী অথচ আল্লাহ তা‘আলার নিকট যে সমস্ত জিনিস রয়েছে তা এ সমস্ত বস্তু অপেক্ষা উত্তম। সেগুলো হল চিরস্থায়ী জান্নাত, যার নীচ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত। আর এগুলো হল তাদের জন্য যারা আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করবে, তাঁর প্রতি ঈমান আনবে, তাঁর আদেশ নিষেধ মানবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ أُولٰ۬ئِكَ أَصْحٰبُ الْجَنَّةِ)
“এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকর্ম করেছে তারাই জান্নাতবাসী।” (সূরা বাকারাহ ২:৮২)
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(وَبَشِّرِ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ جَنّٰتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهٰرُ)
“আর যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে তাদেরকে সুসংবাদ প্রদান কর যে, তাদের জন্য এমন জান্নাত রয়েছে যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়।” (সূরা বাকারাহ ২:২৫)
তাদের জন্য তথায় আরো থাকবে পূত-পবিত্র নারীগণ। যারা দুনিয়াবী সমস্ত অপবিত্রতা থেকে পবিত্র। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(حُوْرٌ مَّقْصُوْرٰتٌ فِی الْخِیَامِﮗﺆ فَبِاَیِّ اٰلَا۬ئِ رَبِّکُمَا تُکَذِّبٰنِﮘﺆ لَمْ یَطْمِثْھُنَّ اِنْسٌ قَبْلَھُمْ وَلَا جَا۬نٌّ)
“তাঁবুতে থাকবে সুরক্ষিত হূর; সুতরাং তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন কোন নেয়ামত অস্বীকার করবে? পূর্বে কোন মানুষ অথবা জিন তাদের স্পর্শ করেনি।” (সূরা আর-রহমান ৫৫:৭২-৭৪)
তাদের প্রতি থাকবে আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি; কেননা আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির চেয়ে বড় নি‘য়ামত আর কিছুই হতে পারে না। সুতরাং যারা আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ মোতাবেক কাজ করবে তাদের জন্যই রয়েছে এসমস্ত প্রতিদান।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. দুনিয়াকে বিভিন্ন জিনিস দ্বারা সুশোভিত করে দেয়া হয়েছে।
২. দুনিয়ার মোহে পড়ে পরকালকে ভুলে যাওয়া উচিত নয়।
৩. সন্তান ও সম্পদ সঠিক পন্থায় ব্যবহার করলে উপকারে আসবে অন্যথায় তা ক্ষতির কারণ হবে।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings