Surah Al Imran Tafseer
Tafseer of Ali 'Imran : 136
Saheeh International
Those - their reward is forgiveness from their Lord and gardens beneath which rivers flow [in Paradise], wherein they will abide eternally; and excellent is the reward of the [righteous] workers.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
১৩০-১৩৬ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা‘আলা অত্র আয়াতগুলোতে মু’মিনদেরকে কয়েকটি আদেশ ও নিষেধ করছেন এবং তাদের কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন।
১. মু’মিনদেরকে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খাওয়া নিষেধ করেছেন। পূর্বে সূরা বাকারার ২৭৮-২৮০ নং আয়াতে সুদ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেতে নিষেধ করা হয়েছে, এর অর্থ এমন নয় যে, চক্রবৃদ্ধি ছাড়া সুদ খাওয়া যাবে, বরং সকল প্রকার সুদ হারাম। আয়াতে চক্রবৃদ্ধি সুদ উল্লেখের কারণ হল তৎকালীন আরবের অধিকাংশ সুদী লেনদেন ছিল চক্রবৃদ্ধি হারে। তাই এভাবে বলা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুদ দাতা, গ্রহীতা, লেখক ও সাক্ষ্যদানকারীদের ওপর লা‘নত করেছেন। (সহীহ মুসলিম হা: ১৫৯) সুতরাং সকল প্রকার সুদ বর্জনীয়।
২. আল্লাহ তা‘আলা বলেন ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করার নির্দেশ দিচ্ছেন, কেননা তাদের একচ্ছত্র আনুগত্য করলে আল্লাহ তা‘আলা রহম করবেন। অন্যথায় আল্লাহ তা‘আলার রহমতের পরিবর্তে আমাদের আমল বরবাদ হয়ে যাবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(يٰٓأَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْآ أَطِيْعُوا اللّٰهَ وَأَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَلَا تُبْطِلُوْآ أَعْمَالَكُمْ)
“ওহে যারা ঈমান এনেছ! আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য স্বীকার কর। আর নিজেদের আমল নষ্ট কর না।” (সূরা মুহাম্মাদ ৪৭:৩৩)
৩. তারপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ক্ষমা ও জান্নাতের দিকে দ্রুত ধাবিত হবার জন্য প্রেরণা দিচ্ছেন। যে জান্নাতের প্রশস্ততা আকাশ-জমিন সমপরিমাণ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(سَابِقُوْآ إِلٰي مَغْفِرَةٍ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا كَعَرْضِ السَّمَآءِ وَالْأَرْضِ)
“তোমরা অগ্রগামী হও তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা ও সেই জান্নাত লাভের আশায় যা প্রশস্ততায় আকাশ ও পৃথিবীর মত।” (সূরা হাদীদ ৫৭:২১)
৪. মু’মিনদের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হল তারা সচ্ছল ও অসচ্ছল সর্বাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় ব্যয় করে। এরূপ ব্যয় করার ফযীলত অনেক। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে জনৈক ব্যক্তি এসে জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রাসূল! কোন্ সদাক্বাহ প্রতিদানের দিক দিয়ে সবচেয়ে উত্তম? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: তুমি দান করবে এমতাবস্থায় যে তুমি সুস্থ ও সম্পদের প্রতি তোমরা লালসা রয়েছে। সেই সাথে তুমি দরিদ্র হবার আশংকা কর এবং ধনী হবার আশা কর। (সহীহ বুখারী হা: ১৪১৯) এ সম্পর্কে সূরা বাকারাতে আলোচনা করা হয়েছে।
৫. (وَالْكٰظِمِيْنَ الْغَيْظَ)
অর্থাৎ যারা ক্রোধ দমন করতে পারে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের অনেক ফযীলত বর্ণনা করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: ঐ ব্যক্তি বীরপুরুষ নয় যে অন্যকে মল্ল যুদ্ধে পরাস্ত করে বরং প্রকৃতপক্ষে ঐ ব্যক্তি বীরপুরুষ যে ক্রোধের সময় নিজেকে সংবরণ করতে পারে। (সহীহ বুখারী হা: ৬১১৪) অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তির ক্রোধ প্রকাশ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা সংবরণ করে আল্লাহ তা‘আলা তাকে কিয়ামতের দিন সকল মাখলুকের সামনে ডেকে এনে এ ইখতিয়ার দেবেন সে যেন পছন্দমত হুর চয়ন করে নিতে পারে। (আবূ দাঊদ হা: ৪৭৭৭, তিরমিযী হা: ২০২১, সনদটি হাসান)
৬. (وَالْعَافِيْنَ عَنِ النَّاسِ)
যারা মানুষকে ক্ষমা করে দেয়, তাদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তিন বিষয়ে আমি শপথ গ্রহণ করেছি: ১. সদাকা প্রদানে মাল হ্রাস পায় না। ২. মানুষকে ক্ষমা করার দ্বারা সম্মান বেড়ে যায়, ৩. আল্লাহ তা‘আলা বিনয় প্রকাশকারীর মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। (সহীহ মুসলিম হা: ২৭৫৮, তিরমিযী হা: ২১২৯)
৭. (وَالَّذِيْنَ إِذَا فَعَلُوْا فَاحِشَةً)
‘এবং যখন কেউ অশ্লীল কার্য করে’, আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যখন কোন ব্যক্তি কোন পাপ কাজ করে, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলার সামনে হাযির হয়ে বলে, হে প্রভু! আমার দ্বারা পাপ কাজ সাধিত হয়েছে, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমার বান্দা যদিও পাপ কাজ করেছে কিন্তু তার বিশ্বাস রয়েছে যে, তার প্রভু তাকে পাপের কারণে ধরতেও পারেন আবার ক্ষমাও করতে পারেন। আমি আমার ঐ বান্দার পাপ ক্ষমা করে দিলাম। সে আবার পাপ করে ও তাওবাহ করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, এবারও ক্ষমা করে দিলাম, সে তৃতীয়বার পাপ করে ও তাওবাহ করে। আল্লাহ তা‘আলা তৃতীয়বারও ক্ষমা করে দেন। সে চতুর্থবার পাপ করে ও তাওবাহ করে, তখন আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করতঃ বলেন, আমার বান্দার এখন যা ইচ্ছা আমল করুক। (সহীহ মুসলিম হা: ২৭৫৮, সহীহ বুখারী হা: ৭৫০৭)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, শয়তান বলে, হে প্রভু! তোমার ইজ্জতের শপথ যতদিন তোমার বান্দাদের দেহে প্রাণ থাকবে ততদিন তাদেরকে পথভ্রষ্ট করতেই থাকব। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমার ইজ্জত ও মহত্বের শপথ, যতক্ষণ বান্দা আমার কাছে ক্ষমা চাইবে ততক্ষণ আমি তাকে ক্ষমা করবো। (আহমাদ হা: ১১২৪৪, হাসান)
৮. (وَلَمْ يُصِرُّوْا عَلٰي مَا فَعَلُوْا وَهُمْ يَعْلَمُوْنَ)
‘তার ওপর জেনে-শুনে অটল থাকে না।’ মু’মিনদের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হল তারা অপরাধ কাজ জানার পর সে অপরাধে অটল থাকে না। আল্লাহ তা‘আলা অপরাধ ক্ষমা করবেন, শর্ত হল জেনেশুনে বারবার করতে পারবে না।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা মানুষের ওপর দয়া কর, তোমাদেরকে দয়া করা হবে। মানুষকে ক্ষমা করে দাও, তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। যারা কথা বানিয়ে বলে তাদের জন্য দুর্ভোগ এবং দুর্ভোগ তাদের যারা জেনেশুনে পাপ কাজকে আঁকড়ে ধরে থাকে। (আদাবুল মুফরাদ হা: ৩৮০, সহীহ)
সুতরাং ধ্বংসাত্মক সুদী লেনদেন করা থেকে বিরত থাকতে হবে, আর আল্লাহ তা‘আলার ক্ষমার দিকে ধাবিত হওয়া উচিত। আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কেউ ক্ষমা করতে পারবে না।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সর্বক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলা এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আনুগত্য করা ওয়াজিব।
২. যারা দ্রুত ক্রোধ দমন করতে পারে তাদের অনেক ফযীলত রয়েছে।
৩. অপরাধ ঘটে গেলে দ্রুত তাওবাহ করা ওয়াজিব।
৪. মানুষকে ক্ষমা করা অনেক মহৎ কর্ম।
৫. ক্ষমা প্রার্থনা করা ও বারবার পাপ কাজ না করার অনেক ফযীলত রয়েছে।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings