Surah Al Imran Tafseer
Tafseer of Ali 'Imran : 125
Saheeh International
Yes, if you remain patient and conscious of Allah and the enemy come upon you [attacking] in rage, your Lord will reinforce you with five thousand angels having marks [of distinction]
Ibn Kathir Full
Tafseer 'Ibn Kathir Full' (BN)
১২৪-১২৯ নং আয়াতের তাফসীর:
মহান আল্লাহ এখানে হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-কে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। কেউ কেউ বলেন যে, এটা ছিল বদরের যুদ্ধের দিন। হযরত হাসান বসরী (রঃ), আমির (রঃ), শা'বী (রঃ), রাবী ইবনে আনাস (রাঃ) প্রভৃতির এটাই উক্তি। ইমাম ইবনে জারীরও (রঃ) এটাই পছন্দ করেছেন। মুসলমানদের নিকট এ সংবাদ পৌছে যে, কার ইবনে জাবির মুশরিকদেরকে সাহায্য করবে, কেননা সে মুশরিকদের নিকট এটা অঙ্গীকার করেছিল। এটা মুসলমানদের নিকট খুব কঠিন ঠেকে। তখন আল্লাহ তা'আলা (আরবী) হতে (আরবী) পর্যন্ত আয়াত অবতীর্ণ করেন। কারূ ইবনে জাবির মুশরিকদের পরাজয়ের সংবাদ শুনে তাদের সাহায্যার্থে আসেনি এবং আল্লাহ তাআলাও পাঁচ হাজার ফেরেশতা পাঠাননি। হযরত রাবী' ইবনে আনাস (রাঃ) বলেন যে, আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের সাহায্যের জন্যে প্রথমে এক হাজার ফেরেশতা পাঠিয়েছিলেন, তার পরে তিন হাজারে পৌছে যায় এবং শেষে পাঁচ হাজারে দাঁড়ায়। এখানে এ আয়াতে তিন হাজার ও পাঁচ হাজার ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য দানের অঙ্গীকার রয়েছে এবং বদরের যুদ্ধের সময় এক হাজার ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করার অঙ্গীকার ছিল। তথায় আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে পিছনে আগমনকারী এক হাজার ফেরেশতা দ্বারা সাহায্যকারী। (৮:৯) আয়াতদ্বয়ের মধ্যে সমতা এভাবেই হতে পারে। কেননা, তথায় (আরবী) শব্দ বিদ্যমান রয়েছে। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, প্রথমে পাঠান হয়েছিল এক হাজার অতঃপর তাদের পরে আর দু’হাজার পাঠিয়ে তাদের সংখ্যা তিন হাজার করা হয় এবং সর্বশেষে আরও দু’হাজার প্রেরণ করে তাদের সংখ্যা পাঁচ হাজারে পৌছিয়ে দেয়া হয়। বাহ্যতঃ এটাই জানা যাচ্ছে যে, এ অঙ্গীকার ছিল বদরের যুদ্ধের জন্যে, উহুদের যুদ্ধের জন্যে নয়। কিন্তু কেউ কেউ বলেন যে, এ অঙ্গীকার উহুদের যুদ্ধের জন্যেই ছিল। মুজাহিদ (রঃ), ইকরামা (রঃ), যহ্হাক (রঃ), মূসা ইবনে উকবা (রঃ) প্রভৃতির এটাই উক্তি কিন্তু তারা বলেন যে, মুসলমানগণ যুদ্ধক্ষেত্র হতে সরে পড়েছিলেন বলে ফেরেশতা অবতীর্ণ করা হয়নি। কেননা, সাথে সাথেই আল্লাহ তা'আলা (আরবী) অর্থাৎ যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ কর ও সংযমী হও'-এ কথা বলেছেন। (আরবী) শব্দের কয়েকটি অর্থ রয়েছেঃ (১) নিমিষে, (২) ক্রোধ ও (৩) ভ্রমণ। (আরবী) শব্দের অর্থ হচ্ছে চিহ্ন বিশিষ্ট। হযরত আলী (রাঃ) বলেন যে, বদরের যুদ্ধের দিন ফেরেশতাদের চিহ্নছিল সাদা পশম। আর তাদের ঘোড়ার চিহ্ন ছিল মস্তকের শুভ্রতা, হযরত আবু হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন যে, তাদের লাল পশমের চিহ্ন ছিল। হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, স্কন্ধের চুল ও লেজের চিহ্ন ছিল এবং রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সেনাবাহিনীর এ চিহ্নই ছিল। অর্থাৎ পশমের চিহ্ন। মাকহুল (রাঃ) বলেন যে, ফেরেশতাদের চিহ্ন ছিল পশমের শিরস্ত্রাণ এবং ঐ গুলোর রং ছিল কাল। হুনায়েনের যুদ্ধে যেসব ফেরেশতা এসেছিলেন তাঁদের চিহ্ন ছিল সাদা রঙ্গের পাগড়ী। তারা এসেছিলেন শুধুমাত্র সাহায্য করার জন্যে ও সংখ্যা বৃদ্ধির জন্যে। তারা যুদ্ধ করেনি। এও বর্ণিত আছে যে, বদরের যুদ্ধে হযরত যুবাইর (রাঃ)-এর মাথায় ছিল সাদা রঙ্গের পাগড়ী এবং ফেরেশতাদের মস্তকোপরি হলদে রঙ্গের পাগড়ী ছিল।
অতঃপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ ‘ফেরেশতাদেরকে অবতীর্ণ করা এবং তোমাদেরকে এর সুসংবাদ দেয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল তোমাদেরকে সন্তুষ্ট করা ও তোমাদের মনে শান্তি আনয়ন করা। নচেৎ আল্লাহ তা'আলা এত ব্যাপক ক্ষমতাবান যে, তিনি ফেরেশতা অবতীর্ণ না করেও এবং তোমাদের যুদ্ধ ছাড়াও তোমাদেরকে জয়যুক্ত করতে পারেন। সাহায্য শুধু আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতেই এসে থাকে। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছে এবং যদি আল্লাহ চাইতেন তবে তাদের দিক হতে প্রতিশোধ নিতেন, কিন্তু যেন তিনি তোমাদের একের দ্বারা অন্যের পরীক্ষা করেন; আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়, আল্লাহ তা'আলা তাদের কার্যাবলী কখনও বিনষ্ট করবেন না। আল্লাহ তাদেরকে তাদের ইঙ্গিত পর্যন্ত পৌছিয়ে দেবেন এবং তাদের অবস্থা ঠিক রাখবেন। আর তিনি তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন এবং তিনি তাদেরকে ওটা চিনিয়ে দেবেন।
তিনি মহাসম্মানিত এবং প্রত্যেক কার্যে বড় বিজ্ঞানময়। এ জিহাদের। নির্দেশও বিভিন্ন প্রকারের নিপুণতায় পরিপূর্ণ। এর ফলে কাফিরেরা ধ্বংস হবে বা লাঞ্ছিত হবে কিংবা তারা অকৃতকার্য হয়ে ফিরে যাবে।
এরপরে বলা হচ্ছে- নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সমস্ত কিছু আল্লাহরই অধিকারে রয়েছে। হে নবী (সঃ)! কোন কার্যের অধিকার তোমার নেই। যেমন অন্য স্থানে রয়েছে (আরবী) অর্থাৎ হে নবী! তোমার দায়িত্ব শুধুমাত্র পৌছিয়ে দেয়া এবং হিসাব গ্রহণের দায়িত্ব আমার।'(১৩:৪০) অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ তাদেরকে সুপথ প্রদর্শনের দায়িত্ব তোমার নেই, বরং আল্লাহ যাকে চান সুপথ প্রদর্শন করে থাকেন।' (২:২৭২) আর এক জায়গায় রয়েছে (আরবী) অর্থাৎ “তুমি যাকে ভালবাস তাকে সুপথ দেখাতে পার না, বরং আল্লাহ যাকে চান সুপথ দেখিয়ে থাকেন। (২৮:৫৬) সুতরাং হে নবী! আমার বান্দাদের কার্যের সাথে তোমার কোন সম্বন্ধ নেই। তোমার কাজ তো শুধু তাদের নিকট আমার নির্দেশ পৌছিয়ে দেয়া। এও সম্ভবনা রয়েছে যে, আল্লাহ পাক তাদেরকে তাওবা করার তাওফীক প্রদান করবেন, ফলে তারা মন্দ কার্যের পর ভাল কার্য করতে থাকবে এবং তিনি তাদের তাওবা কবুল করবেন। অথবা এরও সম্ভবনা রয়েছে যে, তিনি তাদেরকে তাদের কুফ্র ও পাপ কার্যের কারণে শাস্তি প্রদান করবেন। তখন এটা কিন্তু আল্লাহ তা'আলার পক্ষ হতে তাদের প্রতি অত্যাচার হবে না, বরং তারা তারই উপযুক্ত। সহীহ বুখারী শরীফে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) ফজরের নামাযে যখন দ্বিতীয় রাকআতের রুকূ' হতে মস্তক উত্তোলন করতেন এবং (আরবী) বলে নিতেন তখন তিনি কাফিরদের উপর বদদুআ করতঃ বলতেনঃ হে আল্লাহ! আপনি অমুক অমুক ব্যক্তির উপর অভিসম্পাত বর্ষণ করুন। সে সম্বন্ধেই (আরবী)-এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। যে কাফিরদের জন্যে তিনি বদদু'আ করতেন, মুসনাদ-ই-আহমাদের মধ্যে ওদের নামও এসেছে। যেমন হারিস ইবনে হিশাম, সাহল ইবনে উমার এবং সাফওয়ান ইবনে উমাইয়া। ওর মধ্যেই রয়েছে যে, শেষে ঐ লোকগুলো হিদায়াত প্রাপ্ত হয় ও মুসলমান হয়ে যায়। একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, এ বদদু'আ চার ব্যক্তির উপর ছিল, যা হতে তাঁকে বিরত রাখা হয়। সহীহ বুখারী শরীফে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন কারও উপর বদদু'আ বা ভাল দু'আ করার ইচ্ছে করতেন তখন রুকুর পরে (আরবী) বলার পর দুআ করতেন। কখনো বলতেনঃ “হে আল্লাহ! ওয়ালিদ ইবনে ওয়ালিদ, সালমা ইবনে হিশাম, আইয়াশ ইবনে আবু রাবী'আ এবং দুর্বল মুমিনদেরকে কাফিরদের হাত হতে মুক্তি দান করুন। হে আল্লাহ! মুযির গোত্রের উপর ধরপাকড় শাস্তি অবতীর্ণ করুন এবং তাদেরকে এমন দুর্ভিক্ষের মধ্যে পতিত করুন যেমন দুর্ভিক্ষ হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর যুগে ছিল।' এ প্রার্থনা তিনি উচ্চৈঃস্বরে করতেন। আবার কোন সময় ফজরের নামাযের কুনূতে এ কথাও বলতেনঃ হে আল্লাহ! অমুক অমুকের উপর অভিসম্পাত বর্ষণ করুন এবং আরবের কতকগুলো গোত্রের নাম নিতেন। অন্য বর্ণনায় রয়েছে যে, উহুদের যুদ্ধে যখন তাঁর পবিত্র দাঁত শহীদ হয়ে যায়, মুখমণ্ডল আহত হয় এবং রক্ত বইতে থাকে তখন পবিত্র মুখ দিয়ে বের হয়ঃ ‘ঐ সম্প্রদায় কিরূপে মুক্তি পেতে পারে যে স্বীয় নবীর সাথে এরূপ ব্যবহার করলো? অথচ তিনি তাদেরকে আল্লাহর পথে আহ্বান করছিলেন। তখন (আরবী)-এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। তিনি ঐ যুদ্ধে একটি গর্তে পড়ে গিয়েছিলেন এবং অনেক রক্ত প্রবাহিত হয়েছিল, কতক তো এ কারণে এবং একটি কারণ এও ছিল যে, তিনি দু’টি বর্ম পরিহিত ছিলেন, কাজেই উঠতে পারেননি। হযরত হুযাইফা (রাঃ)-এর ক্রীতদাস হযরত সালিম (রাঃ) তথায় পৌঁছেন এবং তার চেহারা মুবারক হতে রক্ত মুছে নেন। জ্ঞান ফিরলে তিনি এ কথা বলেন এবং ফলে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়।
অতঃপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ আকাশ ও পৃথিবীর সমুদয় বস্তু তাঁরই। সবাই তাঁর দাস। তিনি যাকে ইচ্ছে ক্ষমা করেন এবং যাকে ইচ্ছে শাস্তি দেন। তিনি যা চান তাই নির্দেশ দেন। কেউ তাঁর কার্যের হিসেব নিতে পারে না। তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings