39:30
إِنَّكَ مَيِّتٌ وَإِنَّهُم مَّيِّتُونَ٣٠
Saheeh International
Indeed, you are to die, and indeed, they are to die.
২৭-৩১ নং আয়াতের তাফসীর: দৃষ্টান্ত দ্বারা কথা সঠিকভাবে অনুধাবন করা যায়। এ জন্যেই আল্লাহ তা'আলা নানা প্রকারের দৃষ্টান্তও পেশ করে থাকেন যেন মানুষ ভালভাবে বুঝতে পারে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ ... (আরবী) অর্থাৎ “আল্লাহ তা'আলা তোমাদের জন্য এই দৃষ্টান্তগুলো বর্ণনা করেছেন যেগুলো তোমরা নিজেদেরই মধ্যে ভালভাবে জানতে বুঝতে পার (শেষ পর্যন্ত)।” আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “ঐ দৃষ্টান্তগুলো আমি তোমাদের জন্যে বর্ণনা করে থাকি, শুধু জ্ঞানীরাই ওগুলো বুঝে থাকে।” (২৯:৪৩)।মহান আল্লাহ বলেনঃ আরবী ভাষায় এই কুরআন বক্রতামুক্ত। অর্থাৎ এই কুরআন স্পষ্ট আরবী ভাষায় রয়েছে। এতে নেই কোন বক্রতা এবং নেই কোন পরিবর্তন ও পরিবর্ধন। এতে রয়েছে খোলাখুলি দলীল ও উজ্জ্বল প্রমাণাদি। যাতে মানুষ এগুলো পড়ে ও বুঝে সাবধানতা অবলম্বন করতে পারে। তারা যেন এর শাস্তি সম্বলিত আয়াতগুলো পড়ে দুষ্কর্মগুলো পরিত্যাগ করতে পারে এবং এর সাওয়াবের আয়াতগুলোর প্রতি দৃষ্টি রেখে সৎ আমলের প্রতি আগ্রহী হয়। এরপর মহান আল্লাহ একত্ববাদী ও অংশীবাদীর দৃষ্টান্ত বর্ণনা করছেন যে, একজন গোলামের প্রভু অনেক এবং তারাও আবার পরস্পর বিরুদ্ধ ভাবাপন্ন। আর অন্য একজন গোলামের শুধুমাত্র একজন প্রভু ঐ প্রভু ছাড়া তার উপর অন্য কারো আধিপত্য নেই। এ দু’জন কি কখনো সমান হতে পারে? কখনো নয়। অনুরূপভাবে একত্ববাদী, যে শুধু এক ও অংশীবিহীন আল্লাহরই ইবাদত করে এবং মুশরিক, যে তার বহু মা'বুদ বানিয়ে রেখেছে, এ দু’জনও কখনো সমান হতে পারে না। এ দুজনের মধ্যে আসমান যমীনের পার্থক্য রয়েছে। এই প্রকাশ্য ও উজ্জ্বল দৃষ্টান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর প্রশংসা করা উচিত যে, তিনি স্বীয় বান্দাদেরকে এমনভাবে বুঝিয়েছেন যে, সত্য সম্পূর্ণরূপে প্রকাশিত হয়ে পড়েছে। শিরকের অসারতা এবং তাওহীদের বাস্তবতা সুন্দরভাবে মানুষের মন মগজে ভরে দেয়া হয়েছে। এখন মহান আল্লাহর সাথে একমাত্র ঐ ব্যক্তি শরীক স্থাপন করতে পারে যে একেবারে অজ্ঞান, যার মধ্যে বিবেক-বুদ্ধি মোটেই নেই। হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলার (আরবী) (নিশ্চয়ই তুমি মরণশীল এবং তারাও মরণশীল) এই উক্তি এবং (আরবী) (মুহাম্মদ সঃ একজন রাসূল মাত্র, তার পূর্বে বহু রাসূল গত হয়েছে। সুতরাং যদি সে মারা যায় অথবা সে নিহত হয় তবে তোমরা কি পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে? এবং কেউ পৃষ্ঠ প্রদর্শন করলে সে কখনো আল্লাহর ক্ষতি করবে না বরং আল্লাহ শীঘ্রই কৃতজ্ঞদেরকে পুরস্কৃত করবেন) (৩:১৪৪)-এই আয়াতটি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর ইন্তেকালের পর তাঁর মৃত্যুর প্রমাণ হিসেবে পাঠ করেন এবং জনগণকে বুঝিয়ে বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) ইন্তেকাল করেছেন। তার একথা শুনে সবারই বিশ্বাস হয় যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) ইন্তেকাল করেছেন। আয়াতের ভাবার্থ এই যে, সবাই এই দুনিয়া হতে বিদায় গ্রহণকারী এবং আখিরাতে সবাই আল্লাহ তাআলার নিকট একত্রিত হবে। সেখানে আল্লাহ তা'আলা অংশীবাদী ও একত্ববাদীদের মধ্যে পরিষ্কারভাবে ফায়সালা করবেন এবং সত্য প্রকাশিত হয়ে পড়বে। তাঁর চেয়ে উত্তম ফায়সালাকারী ও বড় জ্ঞানী আর কে আছে? ঈমানদার, একত্ববাদী এবং সুন্নাতের পাবন্দ ব্যক্তি সেদিন মুক্তি পাবে এবং মুশরিক, কাফির ও মিথ্যাপ্রতিপন্নকারী কঠিন শাস্তির শিকার হবে। অনুরূপভাবে দুনিয়ার যে দুই ব্যক্তির মধ্যে ঝগড়া ও বিরোধ ছিল, তাদেরকে আল্লাহর সামনে হাযির করা হবে এবং মহাপ্রতাপান্বিত আল্লাহ তাদের মধ্যে ফায়সালা করবেন। হযরত ইবনে যুবায়ের (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, যখন (আরবী)-এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয় তখন হযরত যুবায়ের (রাঃ) বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! কিয়ামতের দিন (দুনিয়ার) ঝগড়ার পুনরাবৃত্তি হবে?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “হ্যা, নিশ্চয়ই।” তখন হযরত যুবায়ের (রাঃ) বলেনঃ “তাহলে তো এটা খুবই কঠিন ব্যাপার হবে।” (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেন)মুসনাদে আহমাদের হাদীসে এও রয়েছে যে, যখন (আরবী) (এরপর অবশ্যই সেই দিন তোমাদেরকে নিয়ামত সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হবে) (১০২:৮) এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয় তখন হযরত যুবায়ের (রাঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! কোন নিয়ামত সম্বন্ধে আমরা জিজ্ঞাসিত হবো? আমরা তো খেজুর ও পানি খেয়েই জীবন যাপন করছি!” জবাবে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “এখন বেশী নিয়ামত নেই বটে, কিন্তু সত্বরই তোমরা অধিক নিয়ামত লাভ করবে।” (এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (রঃ) ও ইমাম ইবনে মাজাহও (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে হাসান বলেছেন) মুসনাদের এই হাদীসেই এটাও রয়েছে যে, (আরবী) এ আয়াতগুলো অবতীর্ণ হলে হযরত যুবায়ের ইবনে মুতঈম (রাঃ) বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! দুনিয়ায় আমাদের মধ্যে যে ঝগড়া-বিবাদ রয়েছে, কিয়ামতের দিন ওটারই কি পুনরাবৃত্তি করা হবে? সাথে সাথে ওর গুনাহ সম্বন্ধেও কি প্রশ্ন করা হবে?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বলেনঃ “হ্যা, অবশ্যই পুনরাবৃত্তি হবে এবং হকদারকে পূর্ণ হক দেয়া হবে।” একথা শুনে হযরত যুবায়ের (রাঃ) বলেনঃ “তাহলে তো কঠিন ব্যাপার হবে।” (ইমাম তিরমিযীও (রঃ) এটা বর্ণনা করেছেন এবং তিনি এটাকে হাসান সহীহ বলেছেন)হযরত উকবা ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম দু’জন প্রতিবেশীর পারস্পরিক ঝগড়া পেশ করা হবে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আবু সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! কিয়ামতের দিন সমস্ত ঝগড়ারই ফায়সালা করা হবে, এমনকি দু’টি বকরী, যারা দুনিয়ায় লড়াই করেছিল এবং শিং বিশিষ্ট বকরীটি শিং বিহীন বকরীকে শিং দ্বারা গুঁতো দিয়েছিল, তারও প্রতিশোধ আদায় করে দেয়া হবে।” (এ হাদীসটিও মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে)হযরত আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একদা দুটি বকরীকে পরস্পর লড়াই করতে দেখে বলেনঃ “হে আবু যার (রাঃ)! বকরী দুটি কি নিয়ে লড়াই করছে তা তুমি জান কি?” হযরত আবু যার (রাঃ) উত্তরে বলেনঃ “জ্বী, না।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “আল্লাহ তা'আলা কিন্তু জানেন এবং কিয়ামতের দিন তিনি তাদের উভয়ের মধ্যে ইনসাফের সাথে ফায়সালা করবেন।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন অত্যাচারী ও আত্মসাকারী বাদশাহকে আনয়ন করা হবে এবং তার প্রজারা তার সাথে ঝগড়া করে জয়লাভ করবে। তখন তার ব্যাপারে হুকুম দেয়া হবেঃ যাও, তাকে জাহান্নামের একটি স্তম্ভ বানিয়ে নাও।” (এ হাদীসটি হাফিয আবু বকর আল বাযযার (রঃ) বর্ণনা করেছেন। এ হাদীসের আগলাব ইবনে তামীম নামক একজন বর্ণনাকারীর স্মরণশক্তি দুর্বল ছিল)হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, ঐদিন প্রত্যেক সত্যবাদী মিথ্যাবাদীর সাথে, প্রত্যেক অত্যাচারিত ব্যক্তি অত্যাচারীর সাথে, প্রত্যেক সুপথপ্রাপ্ত ব্যক্তি পথভ্রষ্ট ব্যক্তির সাথে এবং প্রত্যেক দুর্বল ব্যক্তি সবল ব্যক্তির সাথে ঝগড়া করবে।ইবনে মুনদাহ (রঃ) কিতাবুর রূহ এর মধ্যে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে রিওয়াইয়াত করেছেন যে, জনগণ কিয়ামতের দিন ঝগড়া করবে, এমন কি আত্মা ও দেহের মধ্যেও ঝগড়া বাঁধবে। আত্মা দেহের উপর দোষারোপ করে বলবেঃ “এসব দুষ্কার্য তো তুমিই করেছিলে।” তখন দেহ আত্মাকে বলবেঃ “সমস্ত চাহিদা ও দুষ্টামি তো তোমারই ছিল।” তখন একজন ফেরেশতা তাদের মধ্যে ফায়সালা করবেন। তিনি বলবেনঃ “তোমাদের দৃষ্টান্ত এমন দুটি লোকের মত যাদের একজন চক্ষু বিশিষ্ট, কিন্তু খোড়া ও বিকলাঙ্গ। চলাফেরা করতে পারে না। দ্বিতীয়জন অন্ধ, কিন্তু তার পা ভাল, খোড়া নয়। সে চলাফেরা করতে পারে। তারা দু'জন একটি বাগানে রয়েছে। খোড়া অন্ধকে বললোঃ “ভাই, এই বাগানটি তো ফলে ভরপুর রয়েছে। কিন্তু আমার তো পা নেই যে, ফল পাড়বো?" তখন অন্ধ বললোঃ “এসো, আমার তো পা রয়েছে, আমি তোমাকে আমার পিঠের উপর চড়িয়ে নিচ্ছি।” অতঃপর তারা দুজন এভাবে পৌঁছলো এবং ইচ্ছা ও চাহিদা মত ফল পাড়লো। আচ্ছা বলতো, এ দু'জনের মধ্যে অপরাধী কে?” দেহ ও আত্মা উভয়ে জবাব দিলোঃ “দু'জনই সমান অপরাধী।” ফেরেশতারা তখন বলবেনঃ “তাহলে তো তোমরা নিজেরাই তোমাদের ফায়সালা করে দিলে। অর্থাৎ দেহ যেন সওয়ারী এবং আত্মা যেন সওয়ার বা আরোহী।” (এটা ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)হযরত ইবনে উমার (রাঃ) বলেনঃ “এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর আমরা বিস্ময়বোধ করছিলাম যে, আমাদের ও আহলে কিতাবের মধ্যে তো কোন ঝগড়া নেই। তাহলে কিয়ামতের দিন কার সাথে আমরা ঝগড়া করবো? এরপর যখন মুসলমানদের পরস্পরের মধ্যে ফিনা শুরু হয়ে গেল তখন আমরা বুঝলাম যে, এটাই হলো পরস্পরের ঝগড়া যা কিয়ামতের দিন পেশ করা হবে।” হযরত আবুল আলিয়া (রঃ) বলেন যে, এর দ্বারা আহলে কিবলার ঝগড়া বুঝানো হয়েছে। আর ইবনে যায়েদ (রঃ) বলেন যে, এর দ্বারা মুসলমান ও কাফিরের ঝগড়া উদ্দেশ্য। এসব ব্যাপারে সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী একমাত্র আল্লাহ।
Arabic Font Size
30
Translation Font Size
17
Arabic Font Face
Help spread the knowledge of Islam
Your regular support helps us reach our religious brothers and sisters with the message of Islam. Join our mission and be part of the big change.
Support Us