Surah Sad Tafseer
Tafseer of Sad : 43
Saheeh International
And We granted him his family and a like [number] with them as mercy from Us and a reminder for those of understanding.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
৪১-৪৪ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
এ আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নাবী আইয়ূব (আঃ)-কে পরীক্ষা ও তাঁকে প্রদত্ত কয়েকটি মু‘জিযাহ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। আইয়ুব (আঃ) ধৈর্যশীল নাবীগণের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় এবং অনন্য দৃষ্টান্ত ছিলেন। বিপদে ধৈর্য ধারণ করায় এবং আল্লাহ তা‘আলার পরীক্ষাকে হাসিমুখে বরণ করে নেয়ায় আল্লাহ তা‘আলা আইয়ূব (আঃ)-কে ‘ধৈর্যশীল’ ও ‘সুন্দর বান্দা’ হিসেবে প্রশংসা করেছেন। কুরআনে ৪টি সূরার ৮টি আয়াতে তাঁর কথা উল্লেখ রয়েছে।
(اَنِّیْ مَسَّنِیَ الشَّیْطٰنُ بِنُصْبٍ وَّعَذَابٍ)
‘শয়তান তো আমাকে যন্ত্রণা ও কষ্টে ফেলেছে’ অর্থাৎ আইয়ুব (আঃ) দীর্ঘ দিন অসুস্থ্য ও কষ্ট ভোগ করার বিষয়টি শয়তানের দিকে সম্বন্ধ করেছেন, আল্লাহ তা‘আলার দিকে নয়। এটা তিনি করেছেন আল্লাহ তা‘আলার প্রতি শিষ্টাচারের দিকে লক্ষ্য রেখে। কেননা শয়তান নাবীদের ওপর কোন ক্ষমতা রাখে না। এমনকি কোন নেক্কার বান্দাকেও শয়তান পথভ্রষ্ট করতে পারে না, তবে সে ধোঁকা দিতে পারে, বিপদে ফেলতে পারে, যা আল্লাহ তা‘আলার হুকুম ব্যতীত কার্যকর হয় না। بِنُصْبٍ দ্বারা শারীরিক কষ্ট বা রোগ আর عَذَابٍ দ্বারা ধন-সম্পদ ধ্বংস হওয়া বুঝোনো হয়েছে। উল্লেখ্য যে, তাঁর শরীরের মাংস খসে পড়ে গিয়েছিল, শরীরে পোকা হয়েছিল, পচে-গলে দুর্গন্ধময় হয়ে যাওয়ায় ঘর থেকে বের করে জঙ্গলে ফেলে আসা হয়েছিল, ১৮ বা ৩০ বছর ধরে রোগগ্রস্ত ছিলেন এ জাতীয় কথা নাবীবিদ্বেষী ও ইসলামের শত্র“দের বানোয়াট গল্পগুজব বৈ কিছুই নয়। তাঁর শারীরিক কী অসুখ হয়েছিল সে ব্যাপারে সহীহ কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না। তবে তাঁর ব্যাপারে বানোয়াট যে সকল অশালীন কথা বলা হয় তা একজন নাবীর জন্য সমীচিন না। তিনি বিপদে আক্রান্ত হলে আল্লাহ তা‘আলার কাছে দু‘আ করলেন এ কথা দিয়েই তাঁর আলোচনা শুরু করা হয়েছে। যেমন সূরা আম্বিয়াতেও এ কথা দ্বারাই শুরু করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর দু‘আ কবূল করে সকল কষ্ট ও বেদনা দূর করে দিলেন।
যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(فَاسْتَجَبْنَا لَھ۫ فَکَشَفْنَا مَا بِھ۪ مِنْ ضُرٍّ)
‘তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম, তার দুঃখ-কষ্ট দূরীভূত করে দিলাম’ (সূরা আম্বিয়া ২১ : ৮৪) কীভাবে দূর করা হয়েছিল তার চিকিৎসা বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন : তুমি তোমার পা দ্বারা মাটিতে আঘাত কর, ফলে তা থেকে ঠাণ্ডা পানি বের হবে, তুমি তা থেকে পান কর এবং তা দ্বারা গোসল কর এতে তোমার ভেতর ও দেহের কষ্ট দূর হয়ে যাবে।
(وَّاٰتَیْنٰھُ اَھْلَھ۫ وَمِثْلَھُمْ)
‘তাকে তার পরিবার-পরিজন ফিরিয়ে দিলাম এবং তাদের সঙ্গে তাদের সমপরিমাণ আরো দিলাম’ এখানে পরিষ্কারভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি তাঁর বিপদে ধৈর্য ধারণের পুরস্কার দ্বিগুণ পেয়েছিলেন দুনিয়াতে এবং আখেরাতে। বিপদে পড়ে যা কিছু তিনি হারিয়েছিলেন, সবকিছুই তিনি পর্যাপ্ত পরিমাণে ফেরত পেয়েছিলেন।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَکَذٰلِکَ نَجْزِی الْمُحْسِنِیْنَ)
“আর আমি এভাবেই সৎকর্মপরায়ণদেরকে পুরস্কৃত করি।” (সূরা আন‘আম ৬ : ৮৪) তিনি কি তাঁর মৃত সন্তানাদি পুনর্জীবিত পেয়েছিলেন, না-কি হারানো গবাদি পশু ফেরত পেয়েছিলেন এসব কষ্ট-কল্পনার কোন প্রয়োজন নেই।
(رَحْمَةً مِّنْ عِنْدِنَا)
‘আমার বিশেষ রহমতরূপে’ অর্থাৎ আইয়ূব (আঃ)-কে বিপদ থেকে মুক্তি ও পরিবারবর্গকে ফেরত দেয়া ইত্যাদি সবই ছিল আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে রহমত। তিনি অনুগ্রহ করে দান করেছেন। আয়াতের এ শব্দটিকে ‘রহীমা’ করে এটিকে আইয়ূব (আঃ)-এর স্ত্রীর নাম হিসেবে একদল লোক সমাজে চালু করে দিয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা যেন বলছেন যে, আইয়ূবের স্ত্রী রহীমা তার স্বামীকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল। পরে আমি তাকে আইয়ূবের কাছে ফিরিয়ে দিলাম। বস্তুত এটি একটি উদ্ভট মিথ্যা ব্যাখ্যা ছাড়া কিছুই নয়। মূলতঃ আইয়ূব (আঃ)-এর স্ত্রীর নাম কী ছিল সে বিষয়ে সঠিক কোন তথ্য কুরআন ও সহীহ হাদীসে নেই।
আইয়ূব (আঃ)-এর অত্র ঘটনা বর্ণনা করার পর আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَذِکْرٰی لِاُولِی الْاَلْبَابِ)
‘এবং জ্ঞানীদের জন্য উপদেশস্বরূপ’ আর সূরা আম্বিয়ায় বলা হয়েছে-
(وَذِکْرٰی لِلْعٰبِدِیْنَ)
‘আর এটা ‘ইবাদতকারীদের জন্য উপদেশস্বরূপ’, অর্থাৎ এতে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে যে, আল্লাহর দাসত্বকারী ব্যক্তিই প্রকৃত জ্ঞানী এবং প্রকৃত জ্ঞানী তিনিই যিনি জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলার দাসত্বকারী।
(وَخُذْ بِیَدِکَ ضِغْثًا)
‘এক মুঠো তৃণশলা হাতে নাও’ অত্র আয়াতে আরেকটি ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। তাহল আইয়ূব (আঃ) অসুস্থ অবস্থায় রাগের বশবর্তী হয়ে শপথ করলেন যে, তিনি সুস্থ হলে তাঁর স্ত্রীকে একশত বেত্রাঘাত করবেন। রোগ তাড়িত স্বামী কোন কারণবশত স্ত্রীর ওপর ক্রোধবশে এরূপ শপথ করতেও পারেন। কিন্তু কেন তিনি এ শপথ করেছিলেন তার কোন স্পষ্ট বর্ণনা কুরআন ও সহীহ সুন্নাতে পাওয়া যায় না। ফলে তাফসীরের কিতাবে নানান গল্পগুজব উল্লেখ রয়েছে যা আইয়ূব (আঃ)-এর পুণ্যশীলা স্ত্রীর উচ্চ মর্যাদার বিপরীত। আইয়ূব (আঃ)-এর স্ত্রী আল্লাহ তা‘আলার প্রিয় বান্দীদের অন্যতম। তাকে কোনরূপ কষ্টদান আল্লাহ তা‘আলা পছন্দ করেননি। অন্যদিকে শপথ ভঙ্গ করাটাও নাবীর মর্যাদার খেলাফ। তাই আল্লাহ তা‘আলা একটি সুন্দর পথ বলে দিলেন। তা হল, একমুষ্ঠি তৃণশলা নিয়ে প্রহার করবে যা মোটেও কষ্টদায়ক নয়।
প্রত্যেক নাবীকেই কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়েছে। তারা সকলেই সে সব পরীক্ষায় ধৈর্যধারণ করেছেন ও উত্তীর্ণ হয়েছেন। কিন্তু আইয়ূব (আঃ)-এর আলোচনায় বিশেষভাবে
(اِنَّا وَجَدْنٰھُ صَابِرًا)
“আমি তাকে অবশ্যই ধৈর্যশীল পেয়েছি।” (সূরা সোয়াদ ৩৮ : ৪৪) বলার মধ্যে ইঙ্গিত রয়েছে যে, আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে কঠিনতম কোন পরীক্ষায় ফেলেছিলেন। তবে সে পরীক্ষা কী তা কুরআনে উল্লেখ নেই। হাদীসে শুধু এতটুকু এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : আইয়ূব (আঃ) একদিন নগ্নাবস্থায় গোসল করছিলেন। এমন সময় তাঁর ওপর সোনার টিড্ডি পাখিসমূহ এসে পড়ে। তখন তিনি সেগুলোকে ধরে কাপড়ে ভরতে থাকেন। এমতাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে বলেন : হে আইয়ূব
أَلَمْ أَكُنْ أَغْنَيْتُكَ عَمَّا تَرَي
আমি কি তোমাকে এসব থেকে অমুখাপেক্ষী করিনি? আইয়ূব (আঃ) জবাবে বললেন :
بَلَي وَعِزَّتِكَ وَلَكِنْ لَا غِنَي بِي عَنْ بَرَكَتِكَ
তোমার ইযযতের কসম! অবশ্যই তুমি আমাকে তা দিয়েছ। কিন্তু তোমার বরকত থেকে আমি অমুখাপেক্ষী নই। (সহীহ বুখারী হা. ২৭৯) সুতরাং নাবীর মর্যাদার খেলাফ ও যা ফাসেকদের হাসি-ঠাট্টার খোরাক হয় এমন কথা ও মন্তব্য না করাই শ্রেয়।
আইয়ূব (আঃ) সম্পর্কে বিস্তারিত ঘটনা সূরা ‘আম্বিয়ার ৮৩-৮৪ নম্বর আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. বিপদে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। যেমন ধৈর্য ধারণ করেছিলেন আইয়ূব (আঃ)।
২. শপথ করলে তা অবশ্যই পূরণ করতে হবে। আর যদি শপথ ভঙ্গ করতে চায় তাহলে কাফ্ফারা আদায় করতে হবে।
৩. বড় পরীক্ষায় বড় পুরস্কার লাভ করা যায়। দুনিয়াতে সবচেয়ে বড় পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিলেন নাবী-রাসূলগণ, তারপর ঈমানে যারা তাদের পরবর্তী স্তরে তারা।
৪. প্রকৃত মু’মিনগণ আনন্দে ও বিষাদে সর্বাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলার রহমতের আশা করে। বিপদে পড়লে আল্লাহ তা‘আলার রহমত থেকে নিরাশ হয় না।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings