Surah Sad Tafseer
Tafseer of Sad : 40
Saheeh International
And indeed, for him is nearness to Us and a good place of return.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
৩০-৪০ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
এ আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রিয় নাবী দাঊদ (আঃ)-এর সন্তান সুলাইমান (আঃ) ও তাঁকে প্রদত্ত মু‘জিযাহ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন : সে ছিল উত্তম বান্দা এবং অতিশয় আল্লাহ তা‘আলা অভিমুখী। তাই সূরা নামলের ১৫-৪৪ নম্বর আয়াতের তাফসীরে দেখেছি তিনি এসব ক্ষমতা, জীব-জন্তুর ভাষা বুঝতে পারা ইত্যাদি নেয়ামত পেয়েও কোনরূপ গর্ব-অহঙ্কার করেননি বরং তিনি আল্লাহ তা‘আলার কাছে এসব নেয়ামতের কৃতজ্ঞতার তাওফীক চেয়ে দু‘আ করলেন যাতে তিনি সৎআমল করতে পারেন এবং তাকে সৎ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করেন।
- صَافِنَاتٌ صافن বা صافناة
এর মানে এমন অশ্বরাজি যা তিন পায়ে ভর করে দাঁড়ায়। جياد- جواد এর বহুবচন, অর্থ হল দ্রুতগামী অশ্বরাজি। অর্থাৎ সুলাইমান (আঃ)-এর সামনে জিহাদের জন্য পালিত উৎকৃষ্ট দ্রুতগামী অশ্বরাজি পরিদর্শনের জন্য পেশ করা হলো। بِالْعَشِيِّ যোহর বা আসর থেকে সূর্য অস্তমিত হওয়া পর্যন্ত সময়কে বলা হয়, আমরা যাকে বিকাল বলে থাকি।
أَحْبَبْتُ (ভালবেসে ফেলেছি) এর অর্থ اثرت (প্রাধান্য দিয়ে ফেলেছি) আর عن এখানে علي এর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। (এর দ্বিতীয় অর্থ হলো : আমি তো আমার প্রতিপালকের স্মরণ হতে বিমুখ হয়ে সম্পদ-প্রীতিতে মগ্ন হয়ে পড়েছি।) আর تَوَارَتْ এর স্ত্রী লিঙ্গ কর্তৃকারক হলো الشمس (সূর্য), যা আয়াতে পূর্বে উল্লেখ করা হয়নি; কিন্তু বাগধারায় তা অনুমেয়। সারমর্ম এই যে, অশ্বরাজি পরিদর্শন করতে গিয়ে সুলাইমান (আঃ) আসর সালাতের সময় অতিবাহিত করে ফেলেন অথবা তখন তিনি যে অযীফা পাঠ করতেন তা ছুটে যায়। যার জন্য তিনি অনুতপ্ত হলেন এবং বলতে লাগলেন যে, আমি অশ্বরাজির মহব্বতে এমন মগ্ন হয়ে গেছি যে, সূর্য অস্তমিত হয়ে গেল এবং আমি আল্লাহ তা‘আলার স্মরণ, সালাত বা অযীফা থেকে অমনোযোগী হয়ে থেকে গেলাম। সুতরাং তার প্রায়শ্চিত্তস্বরূপ তিনি সমস্ত অশ্বরাজি আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় কুরবানি করে দিয়েছিলেন। ইমাম শাওকানী ও ইবনু কাসীর (রহঃ) এ তাফসীরকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। অনেকে এ বর্ণনাকেও যুক্তিযুক্ত মনে করে না। তাই এসব থেকে বিরত থাকাই ভাল।
সিংহাসনের ওপর একটি নিষ্প্রাণ দেহ প্রাপ্তির ঘটনা :
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(وَلَقَدْ فَتَنَّا سُلَيْمٰنَ)
‘সুলাইমান (আঃ)-কে আমি পরীক্ষা করেছিলাম।’ এ পরীক্ষা কী ছিল, সিংহাসনে রাখা নি®প্রাণ দেহটি কিসের ছিল? তা সিংহাসনে রাখার অর্থ কী? এসব বিবরণ কুরআন বা সহীহ হাদীসে বিদ্যমান নেই। তবে কোন কোন মুফাসসির সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত একটি ঘটনাকে আলোচ্য আয়াতের তাফসীর বলে সাব্যস্ত করেছেন।
একবার সুলাইমান (আঃ) স্বীয় মনোভাব ব্যক্ত করলেন যে, আজ রাতে আমি আমার (৯০ বা ১০০ জন) সকল স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করব যাতে প্রত্যেকের গর্ভে একটি সন্তান জন্মগ্রহণ করে, যারা আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় জিহাদ করবে। কিন্তু তিনি এ মনোভাব ব্যক্ত করে ইনশাআল্লাহ তা‘আলা বলেননি। ফলে স্ত্রীদের মধ্যে কেবল একজন গর্ভবতী হলেন এবং তার গর্ভ থেকে একটি মৃত এবং অসম্পূর্ণ সন্তান ভূমিষ্ট হলো। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলছেন : যদি সুলাইমান (আঃ) ইনশাআল্লাহু তা‘আলা বলতেন তাহলে তার প্রত্যেক স্ত্রীর গর্ভে সন্তান আসতো। (সহীহ বুখারী হা. ৩৪২৪, সহীহ মুসলিম হা. ১৬৫৪) ইনশাআল্লাহ তা‘আলা না বলাই ছিল সুলাইমান (আঃ)-এর ফিতনা, আর সিংহাসনের ওপর নিক্ষিপ্ত দেহ হলো ঐ অসম্পূর্ণ বাচ্চা। তবে এ আয়াতের সাথে উক্ত হাদীসকে তাফসীর হিসেবে উল্লেখ করা অনুমানভিত্তিক। হাদীসটি সহীহ বুখারীর, কিন্তু ইমাম বুখারী একবারও তা অত্র আয়াতের তাফসীরে নিয়ে আসেননি। অথচ জিহাদ, নাবীদের বর্ণনা, শপথসমূহ ইত্যাদি অধ্যায়ে বার বার নিয়ে এসেছেন। সুতরাং যদি উক্ত পরীক্ষা দ্বারা হাদীসে বর্ণিত ঘটনা উদ্দেশ্য হত তাহলে তিনি একবার হলেও নিয়ে আসতেন।
ইস্রাঈলী বর্ণনাগুলোতে আরো সাজিয়ে উল্লেখ করা হয় যে, সুলাইমান (আঃ) একটি আংটি দিয়ে রাজ্য পরিচালনা করতেন। একদা শয়তান আংটি হাতিয়ে নিয়ে নিজেই সুলাইমান সেজে সিংহাসনে বসে। ৪০ দিন পর সুলাইমান (আঃ) আংটি উদ্ধার করে সিংহাসন ফিরে পান। সিংহাসনে বসা ঐ শয়তানের রাখা কোন বস্তুকে এখানে নি®প্রাণ দেহ বলা হয়েছে।
বস্তুত এসবই বানোয়াট কাহিনী। ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন : আহলে কিতাবের একটি দল সুলাইমান (আঃ)-কে নাবী বলে স্বীকারই করতে চায় না। তাহলে তাদের দ্বারা কী আশা করা যায়।
আল্লাহ তা‘আলা সুলাইমান (আঃ)-কে অনেক মু‘জিযাহ তথা বৈশিষ্ট্য দান করেছেন। তন্মধ্যে বায়ু প্রবাহ, পক্ষীকুল ও জিন-শয়তানকে অনুগত করে দেয়া, পিপীলিকার ভাষা বুঝতে পারা ইত্যাদি সূরা সাবার ১২-১৪ নম্বর, নামলের ১৫-৪৪ নম্বর আয়াতে মোট পাঁচটি মু‘জিযাহ উল্লেখ করা হয়েছে। আলোচ্য আয়াতগুলোতের সাথে সম্পৃক্ত বাকী দুটি উল্লেখ করা হল-
(৬) আল্লাহ তা‘আলা তাকে এমন সাম্রাজ্য দান করেছিলেন যা পৃথিবীর আর কাউকে দান করেননি। যেমন ৩৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, নাবীদের কোন দু‘আ আল্লাহ তা‘আলার অনুমতি ব্যতিরেখে হয় না। সে হিসেবে সুলাইমান (আঃ)-এর এ দু‘আটি আল্লাহ তা‘আলার অনুমতিক্রমেই হয়েছিল। কেবল ক্ষমতা লাভের উদ্দেশ্যে তিনি এ দু‘আ করেননি বরং এর পেছনে আল্লাহ তা‘আলার বিধানাবলী বাস্তবায়ান করা এবং তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। সহীহ হাদীসে এসেছে, আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : একটি দুষ্ট জিন গতরাত্রে আমার ওপর বাড়াবাড়ি করেছিল সালাতে বাধা দেয়ার জন্য। আল্লাহ তা‘আলা আমাকে তার ওপর ক্ষমতা দান করেছিলেন তখন আমি ইচ্ছা করেছিলাম যে, মাসজিদের খুটির সাথে তাকে বেঁধে রাখি যাতে সকালে তোমরা তাকে দেখতে পাও। তখন আমার ভাই সুলাইমান যে দু‘আ করেছিল সে কথা আমার মনে পড়ে গেল। তিনি দু‘আ করেছিলেন,
(قَالَ رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَهَبْ لِيْ مُلْكًا لَّا يَنْۭبَغِيْ لِأَحَدٍ مِّنْۭ بَعْدِيْ)
“হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করুন এবং এমন এক রাজ্য দান করুন যার অধিকারী আমি ছাড়া আর কেউ না হয়।” (সহীহ বুখারী হা. ৪৮০৮, সহীহ মুসলিম হা. ৫৪১)
(৭) প্রাপ্ত অনুগ্রহরাজির হিসাব রাখা বা না রাখার অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। সুলাইমান (আঃ)-এর রাজত্ব লাভের দু‘আ কবূল করার পরে তার প্রতি বায়ু, জিন, পক্ষীকুল ও জীব-জন্তুকে অনুগত করে দেন। অতঃপর বলেন : ‘এগুলো আমার অনুগ্রহ, অতএব তুমি (তা থেকে) কাউকে দান কর কিংবা নিজের জন্য রেখে দাও, তজ্জন্যে তোমাকে জবাবদিহি করতে হবে না।’ বস্তুত এটি ছিল সুলাইমান (আঃ)-এর আমানতদারী ও বিশ্বস্ততার প্রতি আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে প্রদত্ত একপ্রকার সনদ। পৃথিবীর কোন ব্যক্তির জন্য সরাসরি আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে এ ধরনের সত্যায়নপত্র নাযিল হয়েছে বলে জানা যায় না। অথচ এ মহান নাবী সম্পর্কে ইসলামের শত্রু ইয়াহূদ-খ্রিস্টানরা বাজে কথা রটনা করে থাকে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত বাদ দিয়ে দুনিয়ার কোন কাজ নিয়ে ব্যস্ত হওয়া যাবে না।
২. আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে কোন জিনিস পরিত্যাগ করলে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর চেয়ে আরো উত্তম জিনিস দান করেন।
৩. একজন মু’মিন সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহ তা‘আলার ইবাদতে মশগুল থাকবে।
৪. এ আয়াতগুলোকে কেন্দ্র করে সুলাইমান (আঃ)-এর সম্পর্কে অনেক মিথ্যা ও বানোয়াট কাহিনী পাওয়া যায়, সে বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকা উচিত।
৫. আল্লাহ তা‘আলা তাঁর অনুগত বান্দাদেরকে দুনিয়াতেও মর্যাদার সাথে প্রতিষ্ঠিত রাখেন।
৬. সুলাইমান (আঃ) একজন নাবী ছিলেন, সেই সাথে বাদশাহও ছিলেন। তিনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারতেন কিন্তু তারপরেও ন্যায় ছাড়া অন্যায় কিছু করেননি।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings