Surah Sad Tafseer
Tafseer of Sad : 17
Saheeh International
Be patient over what they say and remember Our servant, David, the possessor of strength; indeed, he was one who repeatedly turned back [to Allah ].
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
১৭-২৯ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কাফির-মুশরিকদের অশোভনীয় কথায় ধৈর্য ধারণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন যেমন পূর্ববর্তী নাবীগণ ধৈর্য ধারণ করেছেন। তাদের কথা সত্যের কোন ক্ষতি করতে পারবে না এবং তোমারও কোন ক্ষতি করতে পারবে না, বরং এসব কথা তাদের নিজেদের জন্যই ক্ষতিকর। তাই ইবাদতের মাধ্যমে ধৈর্য ধারণের সহযোগিতা কামনা করার নির্দেশ দিয়ে অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(فَاصْبِرْ عَلٰي مَا يَقُوْلُوْنَ وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوْعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوْبِهَا ج وَمِنْ اٰنَآئِ اللَّيْلِ فَسَبِّحْ وَأَطْرَافَ النَّهَارِ لَعَلَّكَ تَرْضٰي)
“সুতরাং তারা যা বলে, সে বিষয়ে তুমি ধৈর্য ধারণ কর এবং সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর এবং রাত্রিকালে পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর, এবং দিবসের প্রান্তসমূহেও, যাতে তুমি সন্তুষ্ট হতে পার।” (সূরা ত্ব-হা ২০ : ১৩০)
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ধৈর্য ধারণের নির্দেশ দেয়ার পর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রিয় নাবী দাঊদ (আঃ) ও তাঁকে যে সকল মু‘জিযাহ দান করেছিলেন সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
দাঊদ (আঃ)-এর সাহস ও বীরত্ব সম্পর্কে সূরা বাক্বারার ২৪৬-২৫২ নম্বর আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে। বিপুল শক্তি ও রাষ্ট্রক্ষমতার অধিকারী ছিলেন দাঊদ (আঃ)। আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে নবুওয়াত ও মানুষের মাঝে বিচার-ফায়সালা করার প্রজ্ঞা দান করেছিলেন। বর্তমান ফিলিস্তীনসহ সমগ্র ইরাক ও শাম (সিরিয়া) এলাকায় তাঁর রাজত্ব ছিল। পৃথিবীর অতুলনীয় ক্ষমতার অধিকারী হয়েও তিনি ছিলেন সর্বদা আল্লাহ তা‘আলার প্রতি অনুগত ও সদা কৃতজ্ঞ। দাঊদ (আঃ) হলেন আল্লাহ তা‘আলার সেই বান্দা যাকে খুশী হয়ে পিতা আদম (আঃ) স্বীয় বয়স থেকে ৪০ বছর কেটে নিয়ে দান করার জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট সুপারিশ করেছিলেন এবং সেই হিসেবে দাঊদের বয়স ৬০ হতে ১০০ বছরে বৃদ্ধি পায়। (তিরমিযী, মিশকাত হা. ১১৮, হাসান সহীহ)
আলোচ্য আয়াতগুলোতে দাঊদ (আঃ)-এর কয়েকটি বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হয়েছে। যেমন-
(১) আল্লাহ তা‘আলা দাঊদ (আঃ)-কে আধ্যাত্মিক ও দৈহিক শক্তিতে বলিয়ান করে সৃষ্টি করেছিলেন। দৈহিক ও দুনিয়াবী শাসন শক্তির কথার দিকে ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে- (ذَا الْأَيْدِ) । আর আধ্যাত্মিক শক্তির দিকে ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে (اِنَّھ۫ٓ اَوَّابٌ)। দাঊদ (আঃ) তাঁর জাতির পক্ষ থেকে অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন এবং আল্লাহ তা‘আলার ইবাদতে খুব মনোযোগী ছিলেন। তিনি আল্লাহ তা‘আলার ইবাদতে এত দৃঢ়পদ ও অটুট ছিলেন যে, তাঁর সাথে তাসবীহ পাঠ করার জন্য আল্লাহ তা‘আলা পাহাড় ও পক্ষীকুলকে অনুগামী করে দিয়েছিলেন। আল্লাহ তা‘আলার বাণী :
(وَلَقَدْ اٰتَيْنَا دَاو۫دَ مِنَّا فَضْلًا ط يٰجِبَالُ أَوِّبِيْ مَعَه۫ وَالطَّيْرَ ج وَأَلَنَّا لَهُ الْحَدِيْدَ)
“আর আমি দাঊদকে দিয়েছিলাম আমার পক্ষ থেকে অনুগ্রহ (যেমন বলেছিলাম) হে পাহাড়-পর্বত! তোমরা দাঊদের সাথে আমার পবিত্রতা ঘোষণা কর এবং পাখিগুলোকেও এমন আদেশ দিয়েছিলাম। আর তার জন্য আমি লৌহকে নরম করেছিলাম।” (সূরা সাবা ৩৪ : ১০) যখন দাঊদ (আঃ) আল্লাহ তা‘আলার যিকির করতেন তখন পাহাড় ও পক্ষীকূল তাঁর সাথে যিকির করত, তিনি তাদের যিকির করা বুঝতে পারতেন। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে পৃথিবীর সবকিছু আল্লাহ তা‘আলার তাসবীহ পাঠ করে যদিও আমরা বুঝতে পারি না। (সূরা ইসরা ১৭ : ৪৪)
হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : আল্লাহ তা‘আলার নিকট সর্বাধিক প্রিয় সালাত হল দাঊদ (আঃ)-এর সালাত এবং সর্বাধিক প্রিয় সিয়াম হল দাঊদ (আঃ)-এর সিয়াম। তিনি অর্ধরাত্রি পর্যন্ত ঘুমাতেন। অতঃপর এক তৃতীয়াংশ সালাতে কাটাতেন এবং বাকী ষষ্ঠাংশ ঘুমাতেন। তিনি একদিন অন্তর অন্তর সিয়াম পালন করতেন। শত্র“র মোকাবেলায় তিনি কখনো পশ্চাদবরণ করতেন না। (সহীহ বুখারী হা. ১০৭৯, মিশকাত হা. ১২২৫)
(২) পাহাড়-পর্বত ও পক্ষীকুল তাঁর অনুগত ছিল। এ সম্পর্কে সূরা সাবার ১০-১১ নম্বর আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
(بِالْعَشِيِّ وَالْإِشْرَاقِ) ‘
সকাল-সন্ধ্যায়’ ইশরাক বলা হয় চাশতের সময়কে, এ সময়ে সালাতকে চাশতের সালাত ও আওয়াবিনের সালাতও বলা হয় (সহীহ মুসলিম হা. ৭৪৮)। চাশতের সালাত দু থেকে বার রাকাত পর্যন্ত পড়া যায়। চাশতের সময় সালাত আদায় করা অনেক ফযীলতের কাজ। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : তোমাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জন্য প্রতিদিন সাদকাহ করতে হয়। প্রত্যেক তাসবীহ পাঠ এক একটি সাদকাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা সাদকাহ, আল্লাহু আকবর বলা সাদকাহ, ভাল কাজের আদেশ করা সাদকাহ, খারাপ কাজে বাধা দেয়া সাদকাহ। এসব ক’টির জন্য যথেষ্ট হবে চাশতের দু’রাকাত সালাত। (সহীহ মুসলিম হা. ৭২০)
مَحْشُوْرَةً অর্থ একত্রিত বা জমা হওয়া। অর্থাৎ তাঁকে অপূর্ব সুমধুর কণ্ঠস্বর দান করা হয়েছিল। যখন তিনি যাবূর তেলাওয়াত করতেন, তখন কেবল মানুষ নয়, পাহাড়-পর্বত ও পক্ষীকুল পর্যন্ত তা একমনে শুনত।
(৩, ৪ ও ৫) তাঁকে দেয়া হয়েছিল সুদৃঢ় সাম্রাজ্য, গভীর প্রজ্ঞা ও অনন্য বাগ্মিতা। যেমন অত্র সূরার ২০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে। পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁর এ সাম্রাজ্য ছিল শাম ও ইরাক ব্যাপী। যা বর্তমান ফিলিস্তীনসহ সমগ্র ইরাক ও শাম (সিরিয়া) শামিল করে। যেমন ২৬ নম্বর আয়াতের বলা হয়েছে।
(৬) লোহাকে নরম করে দেয়া হয়েছিল। এ সম্পর্কে সূরা সাবার ১০-১১ নম্বর আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
আর তাঁকে দান করেছিলেন হিকমত তথা নবুওয়াত ও মহা প্রজ্ঞা এবং আরো দান করেছেন মীমাংসাকারী জ্ঞান। আরো দান করেছেন সর্বপ্রকার বাহ্যিক ও আধ্যাত্মিকতা যার মাধ্যমে তাঁর রাজ্যকে করেছিলেন সুদৃঢ়।
ইবাদতখানায় প্রবেশকারী বাদী-বিবাদীর বিচার
দাঊদ (আঃ) যেকোন ঘটনায় যদি বুঝতেন যে, এটি আল্লাহ তা‘আলার তরফ থেকে পরীক্ষা, তাহলে তিনি সাথে সাথে আল্লাহ তা‘আলার দিকে রুজু হতেন ও ক্ষমা প্রার্থনায় রত হতেন। এরই একটি উদাহরণ বর্ণিত হয়েছে নিম্নোক্ত ঘটনায়-
আল্লাহ তা‘আলা দাঊদ (আঃ)-কে মীমাংসা করার জ্ঞান দান করার পর দু’টি বিবাদমান ব্যক্তির বর্ণনা দিচ্ছেন যারা প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে দাঊদ (আঃ)-এর নিকট এসেছিল। যখন তারা তাঁর নিকট প্রবেশ করল তখন তিনি ভীত-বিহ্বল হলেন, বিবাদমান ব্যক্তি দু’টি তাঁকে বলল : আপনি ভয় পাবেন না, আমরা বিবাদমান দু’টি পক্ষ। একজন অপরজনের ওপর জুলুম করেছি, আপনি আমাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিন, কোন প্রকার জুলুম বা অবিচার করবেন না এবং আমাদেরকে সঠিক পথ নির্দেশ করুন। তখন তারা তাদের ঝগড়ার বিষয়বস্তু উপস্থাপন করল। একজন বলল, সে আমার ভাই, তার নিরানব্বইটি স্ত্রী রয়েছে আর আমার একটি মাত্র স্ত্রী, তারপরও সে আমার এ স্ত্রীকে তাকে দিয়ে দিতে বলে এবং আমার ওপর চাপ প্রয়োগ করে। এটি ছিল তাদের ঝগড়ার মূল ঘটনা।
তখন দাঊদ (আঃ) তাদের কথা অনুপাতে বিচার কার্য শুরু করলেন। তিনি বললেন : তোমার স্ত্রীকে তার স্ত্রীদের সাথে যুক্ত করার দাবী করে সে তোমার প্রতি জুলুম করেছে। অধিকাংশ শরীকরা একে অন্যের ওপর অবিচার করে থাকে, শুধুমাত্র মু’মিন ও সৎ কর্মপরায়ণ ব্যক্তি ব্যতীত। তবে তাদের সংখ্যা স্বল্প। এ মীমাংসা করার পর দাঊদ (আঃ) বুঝতে পারলেন যে, মহান রবের পক্ষ হতে এটা তার পরীক্ষা। তখন তিনি আল্লাহ তা‘আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলেন, সিজদায় লুটিয়ে পড়লেন এবং তাঁর অভিমুখী হলেন। এ আয়াত পাঠ করার পর সিজদাহ করতে হয়। দাঊদ (আঃ) এখানে সিজদাহ্ করেছেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ও এখানে অনুরূপ করেছেন। তখন আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করে দিলেন এবং বললেন : আমার নিকট তার জন্য রয়েছে উচ্চ মর্যাদা ও শুভ পরিণাম। কেননা তিনি ছিলেন তাওবাহ্কারী এবং স্বীয় রাজ্যে তিনি ন্যায়-নীতি প্রতিষ্ঠাকারী। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন :
إِنَّ الْمُقْسِطِيْنَ عِنْدَ اللّٰهِ عَلَي مَنَابِرَ مِنْ نُورٍ، عَنْ يَمِينِ الرَّحْمَنِ عَزَّ وَجَلَّ، وَكِلْتَا يَدَيْهِ يَمِيْنٌ، الَّذِينَ يَعْدِلُوْنَ فِي حُكْمِهِمْ وَأَهْلِيهِمْ وَمَا وَلُوا
সুবিচারক ও ন্যায়পরায়ণ লোকেরা নূরের মিম্বরের ওপর দয়াময় আল্লাহ তা‘আলার ডান দিকে অবস্থান করবে, আল্লাহ তা‘আলার উভয় হাতই ডান হাত তারা ঐ সব সুবিচারক যারা তাদের পরিবার-পরিজন ও অধিনস্তদের প্রতি সুবিচার করবে।” (সহীহ মুসলিম হা. ১৮২৭)
উপরোক্ত পাঁচটি আয়াতে বা অন্য কোথাও এরূপ কোন ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি যে, সে পরীক্ষা কী ছিল, দাঊদ (আঃ) কী ভুল করেছিলেন, যে কারণে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন এবং যা আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। ফলে সে প্রাচীন যুগের কোন ঘটনার ব্যাখ্যা নাবী ব্যতীত অন্য কারো পক্ষে এ যুগে দেয়া সম্ভব নয়। তাই ধারণা ও কল্পনার মাধ্যমে যেটাই বলা হবে, তাতে ভ্রান্তির আশঙ্কা থেকেই যাবে। কিন্তু পথভ্রষ্ট ইয়াহূদী পণ্ডিতেরা তাদের স্বগোত্রীয় এ মর্যাদাবান নাবীর উক্ত ঘটনাকে এমন নোংরাভাবে পেশ করেছে, যা কল্পনা করতেও গা শিউরে ওঠে। বলা হয়েছে, দাঊদ (আঃ)-এর নাকি ৯৯ জন স্ত্রী ছিল। এ সত্ত্বেও তিনি তাঁর এক সৈন্যের স্ত্রীকে জোরপূর্বক অপহরণ করেন। অতঃপর উক্ত সৈনিককে হত্যা করে তার স্ত্রীকে বিয়ে করেন। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে আল্লাহ তা‘আলা দু’জন ফেরেশতাকে বাদী ও বিবাদীর বেশে পাঠিয়ে তাকে শিক্ষা দেন। (নাঊযুবিল্লাহ)
تَسَوَّرُ অর্থ হলো প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করা।
أيد এটা يد থেকে নয় বরং ادييد-এর মাসদার اَيِّدْ। অর্থ শক্তি ও প্রবলতা।
نَعْجَةٌ শব্দটি আরবরা স্ত্রী, খাসী, দুম্বী ইত্যাদি অর্থে ব্যবহার করে থাকে। তবে এখানে স্ত্রী অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। (কুরতুবী, সা‘দী, অত্র আয়াতের তাফসীর)
এরপর আল্লাহ তা‘আলা দাঊদ (আঃ)-কে বলে সকল বিচারকদেরকে সতর্ক করে দিচ্ছেন যে, তারা যেন মানুষের মধ্যে সুবিচার করে এবং নিজ খেয়াল-খুশির অনুসরণ না করে। কেননা নিজ খেয়াল-খুশির অনুসরণ করলে তা সত্য পথ হতে বিচ্যুত করে দেবে। আর এ কারণে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।
সংশয় নিরসন :
(وَظَنَّ دَاو۫دُ اَنَّمَا فَتَنَّاھُ)
‘আর দাঊদ বুঝতে পারলেন যে, আমি তাকে পরীক্ষা করেছি।’ উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে জালালাইনে বলা হয়েছে, ‘অর্থাৎ উক্ত মহিলার প্রতি আসক্তির মাধ্যমে আমরা তাকে পরীক্ষায় ফেলেছি।’ ভিত্তিহীন এ তাফসীরের মাধ্যমে নাবীগণের উচ্চ মর্যাদাকে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে। বিশেষ করে দাঊদ (আঃ)-এর মত একজন রাসূলের ওপরে পরনারীর প্রতি আসক্ত হওয়ার অমার্জনীয় অপবাদ আরোপ করা হয়েছে। অথচ এটি পরিষ্কারভাবে ইয়াহূদী-খ্রিস্টানদের বানোয়াট গল্প ব্যতীত কিছুই নয়।
সূরা সোয়াদ-এর সিজদার বিধান
এ সিজদাহ জরুরী নয়, এটা সিজদায়ে শোকর। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন : এখানে সিজদাহ্ বাধ্যতামূলক নয়। তিনি বলেন : তবে আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এতে সিজদাহ্ করতে দেখেছি। (সহীহ বুখারী হা. ১০৬৯)
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এখানে সিজদাহ্ করার পর বলেন : দাঊদ (আঃ)-এর জন্য এ সিজদাহ্ ছিল তাওবার এবং আমাদের জন্য এ সিজদাহ্ হলো শোকরের।” (সহীহ বুখারী হা. ১০৬৯)
আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা মিম্বারের ওপর সূরা সোয়াদ পাঠ করেন। সিজদার আয়াত পর্যন্ত পৌঁছে তিনি মিম্বার হতে অবতরণ করেন ও সিজদাহ্ করেন। তাঁর সাথে অন্যান্য সবাই সিজদাহ্ করেন।
অন্য একদিন তিনি মিম্বারের ওপর এ সূরাটি পাঠ করেন। যখন তিনি সিজদার আয়াতে পৌঁছেন তখন সকলে সিজদার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। তখন তিনি বলেন : এটা ছিল দাঊদ (আঃ)-এর তাওবার সিজদাহ্, তোমরাও সিজদার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছ? অতঃপর তিনি মিম্বার হতে নেমে সিজদাহ্ করেন। (আবূ দাঊদ হা. ১৪১০)
তিলাওয়াতে সিজদার বিধান সম্পর্কে সূরা আল আ‘রাফ-এ আলোচনা করা হয়েছে।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৃষ্টির উদ্দেশ্য বর্ণনা করেন যদিও কাফির-মুশরিকরা মনে করে যে, আকাশ ও জমিন অনর্থক সৃষ্টি করা হয়েছে তথাপি এগুলো অনর্থক সৃষ্টি করা হয়নি। এগুলো যথাযথ কারণেই সৃষ্টি করা হয়েছে।
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
(أَفَحَسِبْتُمْ أَنَّمَا خَلَقْنٰكُمْ عَبَثًا وَّأَنَّكُمْ إِلَيْنَا لَا تُرْجَعُوْنَ)
‘তোমরা কি মনে করেছিলে যে, আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমরা আমার নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে না?’ (সূরা মু’মিনূন ২৩ : ১১৫)
এগুলো সৃষ্টি করার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো পরীক্ষা করা, কে সৎ কর্ম করে আর কে অসৎ কর্ম করে? যাতে করে তিনি সৎ কর্মপরায়ণদেরকে জান্নাতে এবং অসৎ কর্মপরায়ণদেরকে জাহান্নামে দিতে পারেন। কারণ উভয়ের প্রাপ্তি সমান হতে পারে না।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. পর্বতমালা, বিহংগকুলসহ সবকিছুই আল্লাহ তা‘আলার তাসবীহ পাঠ করে।
২. দাঊদ (আঃ)-এর মর্যাদা সম্পর্কে জানা গেল।
৩. সদা-সর্বদা ন্যায় বিচার করতে হবে। কখনো জুলুম করা যাবে না।
৪. নিজের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করে কোন কাজ করা যাবে না।
৫. অনিয়ম দেখলে প্রকৃত অবস্থা জানা পর্যন্ত সবর করা উচিত।
৬. যারা আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্যে শারীরিক ও আন্তরিকভাবে সুদৃঢ় আল্লাহ তা‘আলা তাদের গুণাগুণ বর্ণনা করেন।
৭. ইসতিগফার, ইবাদত বিশেষ করে সালাত পাপসমূহ মোচন করে দেয়।
৮. কেউ কারো ওপর জুলুম করলে সে বলতে পারবে যে, অমুক ব্যক্তি আমার ওপর জুলুম করেছে।
৯. স্বাভাবিক ভীতি নবুওয়াতের ও ওলীত্বের পরিপন্থী নয়।
১০. ন্যায় প্রতিষ্ঠাই ইসলামী রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি।
১১. দায়িত্বশীল নিয়োগের জন্য সর্বপ্রথম দেখার বিষয় হচ্ছে চরিত্র ও দীনদারিত্ব।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings