Surah As Saffat Tafseer
Tafseer of As-Saffat : 148
Saheeh International
And they believed, so We gave them enjoyment [of life] for a time.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
১৩৯-১৪৮ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
অত্র আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা ইউনুস (আঃ) সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
ইউনুস (আঃ) সম্পর্কে কুরআনের ৬টি সূরার ১৮টি আয়াতে বর্ণনা এসেছে। সূরা ইউনুসের ৯৮ নম্বর আয়াতে তাঁর নাম ইউনুস, সূরা আম্বিয়ার ৮৭ নম্বর আয়াতে যুন-নূন (ذو النون) এবং সূরা কালামের ৪৮ নম্বর আয়াতে তাঁকে সাহেবুল হূত (صاحب الحوت) বলা হয়েছে। ‘নূন’ ও ‘হূত’ উভয় শব্দের অর্থ মাছ। যুন-নূন ও সাহেবুল হূত অর্থ মাছওয়ালা। একটি বিশেষ ঘটনার প্রেক্ষিতে তিনি উক্ত নামে পরিচিত হন।
সংক্ষিপ্ত ঘটনা : আল্লাহ তা‘আলা ইউনুস (আঃ)-কে ইরাকের নীনাওয়া (বর্তমান মুসেল) নামক শহরের নিকটবর্তী জনপদের অধিবাসীদের প্রতি নাবী হিসেবে প্রেরণ করেন। এখানে আশুরীদের শাসন ছিল, যারা এক লক্ষ্য বানী ইসরাঈলকে বন্দী করে রেখেছিল, সুতরাং তাদের হিদায়াত ও পথপ্রদর্শনের জন্য ইউনুস (আঃ)-কে নাবী করে প্রেরণ করা হয়। তিনি যথারীতি তাঁর সম্প্রদায়কে তাওহীদের দিকে আহ্বান করলেন। কিন্তু তারা তাঁর কথায় কর্ণপাত করল না এবং ঈমানও আনল না। বারংবার দাওয়াত দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হলে আল্লাহ তা‘আলার হুকুমে তিনি এলাকা ত্যাগ করে চলে যান। ইতোমধ্যে তাঁর জাতির ওপর আযাব নাযিল হওয়ার পূর্বাভাস দেখা দিল। তিনি জনপদ ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় বলেছিলেন, তিনদিন পর তোমাদের ওপর আযাব আসতে পারে। তারা ভাবল নাবী কখনো মিথ্যা বলেন না। ফলে তাঁর জাতি ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে দ্রুত কুফর ও শির্ক হতে তাওবা করে এবং সকলকে নিয়ে জঙ্গলে পালিয়ে গেল। সেখানে গিয়ে আসন্ন গযব হতে আল্লাহ তা‘আলার দরবারে আশ্রয় প্রার্থনা করে, ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের তাওবা কবূল করেন এবং আযাব তুলে নেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(فَلَوْلَا کَانَتْ قَرْیَةٌ اٰمَنَتْ فَنَفَعَھَآ اِیْمَانُھَآ اِلَّا قَوْمَ یُوْنُسَﺋ لَمَّآ اٰمَنُوْا کَشَفْنَا عَنْھُمْ عَذَابَ الْخِزْیِ فِی الْحَیٰوةِ الدُّنْیَا وَمَتَّعْنٰھُمْ اِلٰی حِیْنٍ)
“অতএব কোন জনপদবাসী কেন এমন হল না যে, তারা এমন সময় ঈমান আনত যখন ঈমান আনলে তাদের উপকারে আসত? তবে ইউনুসের সম্প্রদায় ব্যতীত। তারা যখন ঈমান আনল তখন আমি তাদের হতে পার্থিব জীবনের অপমানজনক শাস্তি তুলে নিলাম এবং তাদেরকে কিছু কালের জন্য জীবনোপকরণ ভোগ করতে দিলাম।” (সূরা ইউনুস ১০ : ৮৬)
ওদিকে ইউনুস (আঃ) ভেবেছিলেন যে, তাঁর জাতি আল্লাহ তা‘আলার গজবে ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্তু পরে জানতে পারলেন যে, আদৌ গযব আসেনি। তখন তিনি চিন্তায় পড়ে গেলেন যে, এখন তাঁর জাতি তাকে মিথ্যাবাদী ভাববে এবং মিথ্যাবাদীর শাস্তি হিসেবে তৎকালীন প্রথানুযায়ী তাকে হত্যা করবে। তখন তিনি জনপদে ফিরে না গিয়ে এমনকি আল্লাহ তা‘আলার হুকুমেরও অপেক্ষা না করে রাগান্বিত হয়ে অন্যত্র হিজরতের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লেন। এ কথাই অত্র সূরার ১৪০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে।
أَبَقَ শব্দের অর্থ প্রভুর নিকট থেকে কোন গোলাম পালিয়ে যাওয়া। ইউনুস (আঃ)-এর জন্য এ শব্দ ব্যবহার করার কারণ এই যে, তিনি আল্লাহ তা‘আলার অনুমতি না নিয়েই নিজ এলাকা থেকে চলে গিয়েছিলেন। নাবীরা আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দা। তাঁদের সামান্য পদস্খলনও বিরাটাকারে ধরপাকড়ের কারণ হয়ে যায়। এ কারণেই এ কঠোর ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে।
মাছের পেটে ইউনুস (আঃ) :
হিজরতকালে নদী পার হওয়ার সময় মাঝ নদীতে হঠাৎ নৌকা ডুবে যাবার উপক্রম হলে মাঝি বলল, একজনকে নদীতে ফেলে দিতে হবে। নইলে সবাইকে ডুবে মরতে হবে।
سَاهَمَ অর্থ লটারী করা। অর্থাৎ কাকে নদীতে ফেলবে এ জন্য লটারী করা হয়। লটারীতে পরপর তিনবার ইউনুস (আঃ) এর নাম আসে। ফলে তিনি নদীতে নিক্ষিপ্ত হন।
ادحاض অর্থ কাউকে অকৃতকার্য করে দেয়া, পরাজিত হওয়া। অর্থাৎ বারবার লটারীতে তিনবার ইউনুস (আঃ) এর নাম উঠতে থাকে ফলে পরাজিত ব্যক্তির ন্যায় সাগরে নিক্ষেপ করা হয়।
নদীতে ফেলে দেয়ার সাথে সাথে আল্লাহ তা‘আলার হুকুমে একটি বিরাটকার মাছ তাঁকে গলধঃকরণ করে। কিন্তু তিনি মাছের পেটে হযম হননি বরং এটা ছিল তাঁর জন্য নিরাপদ কয়েদখানা। মাওয়ার্দী বলেন : মাছের পেটে অবস্থান করাটা তাঁকে শাস্তি দানের উদ্দেশ্যে ছিল না বরং আদব শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে ছিল। যেমন পিতা তার শিশু সন্তানকে শাসন করে শিক্ষা দিয়ে থাকে। (কুরতুবী, সূরা আম্বিয়ার ৮৭ নম্বর আয়াতের তাফসীর)
ইউনুস (আঃ)-এর মুক্তি :
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(فَلَوْلَآ أَنَّه۫ كَانَ مِنَ الْمُسَبِّحِيْنَ)
অর্থাৎ যদি মাছের পেটে যাওয়ার পূর্ব থেকেই তাঁর অধিক ইবাদত ও সৎআমল না থাকত এবং মাছের পেটে যাওয়ার পর তাওবা ইস্তিগফার ও তাসবীহ পাঠ না করত তাহলে মাছের পেটেই থেকে যেতো, সেখানেই তার কবর হতো এবং সেখান হতেই কিয়ামতের দিন পুনরুত্থান হতো। তাওবাহ-ইস্তিগফার ও তাসবীহ দ্বারা বিপদাপদ দূর হয় এবং তা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। সূরা আম্বিয়ায় বর্ণিত হয়েছে যে, ইউনুস (আঃ) মাছের পেটে থাকাবস্থায় বিশেষভাবে এ কালেমা পাঠ করতেন-
( لَّآ إِلٰهَ إِلَّآ أَنْتَ سُبْحٰنَكَ ﺣ إِنِّيْ كُنْتُ مِنَ الظّٰلِمِيْنَ)
‘তুমি ব্যতীত কোন সত্যিকার মা‘বূদ নেই; তুমি পবিত্র, মহান! আমি তো সীমা লঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সূরা আম্বিয়া ২১ : ৮৭)
তাঁর অধিক পরিমাণ ইবাদত ও সৎ আমল এবং তাওবা ইস্তিগফারের ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর তাওবা কবূল করত মাছের পেট থেকে জীবিত অবস্থায় নদীর তীরে তরুলতাহীন শূন্য এলাকায় রেখে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(فَنَبَذْنٰهُ بِالْعَرَا۬ءِ) العراء
অর্থ গাছ-পালা তরুলতা শূন্য এলাকা। অর্থাৎ মাছের পেট থেকে নিক্ষেপিত হয়ে এক মরু এলাকায় পতিত হলেন, যেখানে কোন গাছ পালা কিছুই ছিল না। তখন ইউনুস (আঃ) স্বাভাবিকভাবেই রুগ্ন ছিলেন। ঐ অবস্থায় সেখানে উদ্গত লাউ জাতীয় গাছের পাতা খেয়ে জীবন ধারণ করেছিলেন যা পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ছিল।
يَّقْطِيْنٌ ঐ সকল গাছকে বলা হয়, যা নিজ কান্ডের ওপর দাঁড়াতে পারে না। যেমন লাউ, কুমড়া ইত্যাদি গাছ। কোন বর্ণনাতে লাউ গাছের কথা উল্লেখ রয়েছে। ছায়া ও অন্য উপকার নেয়ার জন্য এ ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
অতঃপর সুস্থ হয়ে আল্লাহ তা‘আলার হুকুমে নিজ জাতির কাছে ফিরে আসেন। জাতির লোকেরা তাঁর প্রতি ঈমান আনল এবং শির্ক থেকে মুক্ত হয়ে এক আল্লাহ তা‘আলা ইবাদত করতে লাগল, ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে দুনিয়ার সুখসম্পদ ভোগ করার সুযোগ করে দেন।
(وَأَرْسَلْنٰهُ إِلٰي مِائَةِ) এখান থেকে কোন কোন মুফাসসিরগণ বলতে চেয়েছেন যে, ইউনুস (আঃ) মাছের পেটে যাওয়ার পর নবুওয়াত পেয়েছেন। আল্লামা বাগাভী (রহঃ) বলেন : এ ঘটনার পরে তাঁকে অন্য এক জাতির কাছে প্রেরণ করা হয়েছিল। তাদের সংখ্যা ছিল এক লাখ অথবা ততোধিক। কিন্তু কুরআন ও হাদীস থেকে এ উক্তির কোন সমর্থন পাওয়া যায় না। এখানে ঘটনার শুরুতেই ইউনুস (আঃ)-এর রিসালাত উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বুঝা যায় যে, মাছের ঘটনা নাবী হওয়ার পর ঘটেছে। অতঃপর এখানে বাক্যটির পুনরাবৃত্তি করার কারণ এই যে, সুস্থ হওয়ার পর তাঁকে পুনরায় সেখানেই প্রেরণ করা হয়েছিল। এতে ব্যক্ত করা হয়েছে যে, তারা অল্পসংখ্যক লোক ছিল না, বরং তাদের সংখ্যা ছিল লাখেরও ওপরে।
সুতরাং প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত নাবীদের দাওয়াত কবূল করে নেয়া। তাহলে দুনিয়ার শাস্তি হতে রক্ষা ও পরকালে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আর ইউনুস (আঃ)-এর উক্ত দু‘আ দু‘আয়ে ইউনুস নামে পরিচিত।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : বিপদগ্রস্ত কোন মুসলিম যদি (নেক মকসূদ হাসিলে নিয়তে)
( لَّآ إِلٰهَ إِلَّآ أَنْتَ سُبْحٰنَكَ ﺣ إِنِّيْ كُنْتُ مِنَ الظّٰلِمِيْنَ)
দু‘আ পাঠ করে, তবে আল্লাহ তা কবূল করবেন। (তিরমিযী হা. ৩৫০৫, মিশকাত হা. ২২৯২, সহীহ)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : কোন মানুষের জন্য এ কথা বলা সমীচীন নয় যে, সে বলবে : আমি “ইউনুস ইবনু মাত্ত্বা” থেকে উত্তম। (সহীহ বুখারী হা. ৩৩৯৫-৩৪১৩, সহীহ মুসলিম হা. ১৬৭) অর্থাৎ নির্দিষ্ট কোন নাবীর মর্যাদার ওপর নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মর্যাদা বর্ণনা করা যাবে না, সমষ্টিগতভাবে বর্ণনা করা যাবে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. বিভ্রান্ত জাতির দুর্ব্যবহারে অতিষ্ট হয়ে তাদেরকে ছেড়ে চলে যাওয়া কোন সমাজ সংস্কারকে উচিত নয়।
২. কঠিন মুহূর্তেও কেবল আল্লাহ তা‘আলার কাছে সাহায্য চাইতে হবে।
৩. খালেস তাওবা ও সৎ আমলের কারণে অনেক সময় আল্লাহ তা‘আলা গযব উঠিয়ে নেন।
৪. আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশনা ব্যতীত যেহেতু কোন নাবীর জন্যও কোন কিছু করা সমীচীন নয় অতএব সাধারণ মানুষের উচিত আল্লাহ তা‘আলার বিধান যথাযথভাবে পালন করা।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings