Surah As Saffat Tafseer
Tafseer of As-Saffat : 103
Saheeh International
And when they had both submitted and he put him down upon his forehead,
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
৯৯-১১৩ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
অত্র আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা ইব্রাহীম (আঃ)-এর হিজরত ও তাকে সৎ সন্তান ইসমা‘ঈল (আঃ)-কে দেয়ার পর যে পরীক্ষা করেছিলেন সে-কথা ব্যক্ত করেছেন। ইব্রাহীম (আঃ) যখন দেখলেন যে, তাঁর সম্প্রদায়ের লোকেরা সত্য গ্রহণ করছে না বিধায় তিনি সেখান থেকে হিজরত করলেন।
তখন ইবরাহীম (আঃ)-এর বয়স ৮৬ বছর, স্ত্রী হাজেরার বয়স ৭৬ বছর। (আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ১/১৭৯) বৈবাহিক জীবনে তখনো কোন সন্তান হয়নি। নিঃসন্তান ইবরাহীম (আঃ) আল্লাহ তা‘আলার কাছে দু‘আ করলেন, হে আল্লাহ আমাকে সৎ কর্মশীল সন্তান দান করুন। আল্লাহ তাঁর দু‘আ কবূল করে একজন ধৈর্যশীল সন্তান দান করলেন। এ ধৈর্যশীল সন্তানই ছিলেন ইসমাঈল (আঃ), এতে কোন মতভেদ নেই। কেননা এ ধৈর্যশীল সন্তানের সাথে ইবরাহীম (আঃ)-এর কুরবানীর ঘটনা বর্ণনার পরে ১১২ নম্বর আয়াতে ইসহাক (আঃ)-এর সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। উক্ত আয়াতগুলোর বর্ণনা পরম্পরায় স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, প্রথম সুসংবাদপ্রাপ্ত সন্তানটি ছিলেন ইসমাঈল, যাকে কুরবানী করার নির্দেশ প্রদান করা হয়। অতঃপর সুসংবাদপ্রাপ্ত দ্বিতীয় সন্তানটি ছিলেন ইসহাক। যেমন ইবরাহীম (আঃ) আল্লাহ তা‘আলার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে দু‘আ করেন,
(اَلْحَمْدُ لِلہِ الَّذِیْ وَھَبَ لِیْ عَلَی الْکِبَرِ اِسْمٰعِیْلَ وَاِسْحٰقَﺚ اِنَّ رَبِّیْ لَسَمِیْعُ الدُّعَا۬ئِ)
“সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি আমাকে আমার বার্ধক্যে ইস্মা‘ঈল ও ইস্হাককে দান করেছেন। আমার প্রতিপালক অবশ্যই প্রার্থনা শুনে থাকেন।” (সূরা ইবরাহীম ১৪ : ৩৯) অত্র আয়াতে ইসমাঈলের পরে ইসহাকের কথা উল্লেখ করেছেন। তাছাড়া সূরা বাকারার ১৩৩, ৩৬, ৪০; সূরা আলি ইমরানের ৮৪, নিসার ১৬৩, ইবরাহীমের ৩৯ আয়াতগুলোতে সর্বত্র ইসমাঈলের পরেই ইসহাকের আলোচনা এসেছে। উপরোক্ত আলোচনায় একথা স্পষ্ট হয় যে, ইসমাঈল (আঃ) ইসহাক থেকে বয়সে বড় এবং তাঁকে জবাই করার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল।
জাবীহ (যাকে জবেহ করতে যাওয়া হয়েছিল তিনি) কে ছিলেন- ইসমাঈল (আঃ)-না ইসহাক (আঃ)? এ বিষয়ে মুফাসসিরগণের মধ্যে মতভেদ থাকলেও সঠিক কথা হল ইসমাঈল (আঃ)-কে জবেহ করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
(فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ السَّعْيَ)
অর্থাৎ যখন চলাফেরা করার মত বয়স হল যেমন তের বা চৌদ্দ বছর বা কাছাকাছি তখন আল্লাহ তা‘আলা স্বপ্নের মাধ্যমে ইবরাহীম (আঃ)-কে জানিয়ে দিলেন যে, তুমি তোমার সন্তানকে কুরবানী কর। বৃদ্ধ বয়সে একটি সন্তান পেলেন তাও কুরবানী করার আদেশ চলে এসেছে। নাবীদের স্বপ্ন ওয়াহী, তাই পালন করতেই হবে। সে জন্য তিনি সন্তানের কাছে তাঁর স্বপ্নের কথা তুলে ধরে বলেন : আমি স্বপ্নে দেখলাম তোমাকে জবাই করছি, তোমার মতামত কী? পুত্র অত্যন্ত ধৈর্যশীল, তাই বাবার মত ছেলে জবাব দিয়ে বলল : আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে তা পালন করুন, ইনশা আল্লাহ আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন।
(وَتَلَّه۫ لِلْجَبِيْنِ) মানুষের মুখমন্ডলের ডানে ও বামে দুই পার্শ্ব থাকে এবং মাঝে থাকে جبهة বা কপাল। অতএব আয়াতের সঠিক অর্থ হবে; কাত করে শায়িত করল, অর্থাৎ এমনভাবে কাত করে শুইয়ে দিলেন যেমন পশুকে জবেহ করার সময় কিবলামুখী করে কাত করা হয়। বলা হয় এভাবে শোয়ানোর কারণ হল ইসমাঈল (আঃ) নিজেই কাত করে শোয়ানোর জন্য বলেছিলেন। যাতে তাঁর মুখমন্ডল পিতার সামনে না থাকে এবং পিতৃস্নেহ আল্লাহ তা‘আলার আদেশের ওপর প্রাধান্য পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকে। এসব কথা ভিত্তিহীন, কারণ নবীদের জন্য আল্লাহর নির্দেশ পালনে অন্য কোন বিষয় প্রাধান্য পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
(قَدْ صَدَّقْتَ الرُّؤْيا)
অর্থাৎ হে ইবরাহীম! মনের পরিপূর্ণ ইচ্ছার সাথে সন্তানকে জবেহ করার উদ্দেশ্যে মাটির ওপর শুইয়ে দেয়াতেই তুমি নিজ স্বপ্নকে বাস্তব করে দেখালে, আর স্পষ্ট হয়ে গেল যে, আল্লাহ তা‘আলার আদেশের তুলনায় তোমার নিকট কোন বস্তুই প্রিয় নয় এমনকি নিজের একটি মাত্র পুত্র সন্তানও নয়।
(إِنَّ هٰذَا) অর্থাৎ স্নেহভাজন একমাত্র সন্তানকে জবেহ করার আদেশ পালন করা একটি বড় পরীক্ষা ছিল, যাতে তুমি সফল হয়েছ।
(بِذِبْحٍ عَظِيْمٍ) জবেহযোগ্য মহান বস্তু একটি দুম্বা ছিল, যা আল্লাহ তা‘আলা জান্নাত থেকে জিবরীল (আঃ) মারফত পাঠিয়েছিলেন। (ইবনু কাসীর) ইসমাঈল (আঃ)-এর পরিবর্তে সেই দুম্বাটি জবেহ করা হয়েছিল।
(وَتَرَكْنَا عَلَيْهِ فِي الْا۬خِرِيْنَ)
অর্থাৎ ইবরাহীম (আঃ)-এর উক্ত সুন্নতকে কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য লাভের পথ ও ঈদুল আযহার দিনে সব থেকে পছন্দনীয় আমল বলে স্বীকৃতি দেয়া হয়।
(وَمِنْ ذُرِّيَّتِهِمَا) অর্থাৎ তাদের উভয়ের বংশ বিস্তার করেছিলাম। অধিকাংশ নাবী ও রাসূলদের আগমন তাঁদের বংশেই হয়েছে। ইসহাক (আঃ)-এর পুত্র ছিলেন ইয়া‘কূক (আঃ), যার বারটি সন্তান থেকে বানী ইসরাঈলের বারটি গোত্র সৃষ্টি হয়েছিল, তাদের বংশ থেকেই বানী ইসরাঈল জাতি বিস্তার লাভ করে এবং অধিকাংশ নাবী তাদের মধ্য থেকেই আগমন করেন। ইসমাঈল (আঃ) থেকে আরবদের বংশ বিস্তার হয় এবং তাদের মধ্য হতে শেষ নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আগমন ঘটে।
(وَّظٰلِمٌ لِّنَفْسِه۪ مُبِيْنٌ)
অর্থাৎ তারা শির্ক, পাপাচার অন্যায়-অবিচার ও বেহায়পনায় লিপ্ত ছিল। ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধরে বরকত থাকা সত্ত্বেও এখানে তাদের মধ্যে সৎ কর্মপরায়ণ ও অত্যাচারী বলে ইঙ্গিত করেছেন যে, মর্যাদাসম্পন্ন বাপদাদা ও বংশের সম্পর্কের আল্লাহর কাছে কোন মূল্য নেই, যদি ঈমান ও নেক আমল না থাকে। ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানরা যদিও ইসহাক (আঃ)-এর সন্তান, অনুরূপ আরবের মুশরিকরা ইসমাঈল (আঃ)-এর সন্তান, কিন্তু তাদের আমল যেহেতু স্পষ্ট ভ্রষ্টতা বা শির্ক ও অবাধ্যতার ওপর ছিল সেহেতু উচ্চ বংশ-মর্যাদা তাদের আল্লাহর প্রিয় বান্দায় পরিণত করতে পারবে না।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন :
وَمَنْ بَطَّأَ بِهِ عَمَلُهُ لَمْ يُسْرِعْ بِهِ نَسَبُهُ
যার আমল তাকে পিছে ফেলে দিয়েছে বংশনামা তাকে আগে নিয়ে যেতে পারবে না। (সহীহ মুসলিম হা. ৭০১৮)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. সন্তান দেওয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। তাই তাঁর কাছেই সন্তান প্রার্থনা করতে হবে এবং সৎ-সন্তান কামনা করতে করতে।
২. আল্লাহ তা‘আলার রহমত হতে নিরাশ হওয়া উচিত নয়, তিনি বৃদ্ধ বয়সে ও বন্ধ্যা নারীকেও সন্তান দানে সক্ষম যেমন ইবরাহীম (আঃ)-কে দিয়েছেন।
৩. পিতা-মাতা যেমন হবেন সন্তান তেমন হবে, এটা স্বাভাবিক কথা, তবে ব্যতিক্রমও হতে পারে। তাই পিতা-মাতার দীনদার ও পরহেযগার হওয়া উচিত।
৪. কুরবানীর মূল উদ্দেশ্য হল আল্লাহ তা‘আলার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করা এমনকি যদিও নিজের সবচেয়ে মূল্যবান বস্তু দান করেও হয়।
৫. ইবরাহীম (আঃ) কুরবানী করার জন্য ইসমাঈল (আঃ)-কে প্রস্তুত করেছিলেন, ইসহাক (আঃ)-কে নয়।
৬. মর্যাদা ও প্রশংসার মাপকাঠি হল ঈমান ও সৎ আমল, কোন উচ্চ বংশ বা ক্ষমতা নয়।
৭. আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্যশীল বান্দারা তাঁর নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করার চেষ্টা করে থাকেন যেমন ইবরাহীম (আঃ) করেছিলেন।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings