Surah Yasin Tafseer
Tafseer of Ya-Sin : 7
Saheeh International
Already the word has come into effect upon most of them, so they do not believe.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
নামকরণ :
يس (ইয়া-সীন) এগুলো “হুরূফুল মুক্বাত্বআত” বা বিচ্ছিন্ন অক্ষরসমূহ। এ সম্পর্কে সূরা বাকারার শুরুতে আলোচনা করা হয়েছে। এর আসল উদ্দেশ্য বা অর্থ একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন। এ শব্দটি এ সূরার প্রথম আয়াতে উল্লেখ থাকায় উক্ত নামে সূরার নামকরণ করা হয়েছে।
ফযীলত :
সূরা ইয়া-সীনের ফযীলতের ব্যাপারে বর্ণিত আছে যে, এটা কুরআনের অন্তর, মুমূর্ষু ব্যক্তির নিকট তা পাঠ করলে তার মৃত্যু সহজ হয়, কেউ রাত্রে এ সূরা পাঠ করলে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়, সূরা ইয়া-সীন একবার পাঠ করলে দশবার কুরআন খতম করার সমান সওয়াব পাওয়া যায় ইত্যাদি। এগুলোর প্রত্যেকটির সনদ বানোয়াট বা দুর্বল। এ সূরার ফযীলত সংক্রান্ত কোন সহীহ হাদীস পাওয়া যায় না। (ইবনু কাসীর)
১-৭ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
মক্কার কুরাইশরা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে রাসূল হিসেবে মেনে নিত না। হুদায়বিয়ার সন্ধি লেখার সময় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলী (রাঃ)-কে নির্দেশ দিয়ে বললেন লেখ :
هذا ما صالح عليه محمد رسول الله
অর্থাৎ এগুলো হচ্ছে সে-সব কথা যার ওপর ভিত্তি করে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সন্ধি করলেন। এ কথার প্রেক্ষিতে কুরাইশদের পক্ষ থেকে বলা হল : আমরা যদি আপনাকে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল হিসেবে মেনে নিতাম তাহলে আপনার সঙ্গে আমাদের যুদ্ধ হত না। (আর রাহীকুল মাখতুম)
তাদের এ কথার উত্তরে আল্লাহ তা‘আলা বিজ্ঞানময় কুরআনের শপথ করে বলেন যে, তুমি অবশ্যই একজন প্রেরিত রাসূল এবং সরল সঠিক পথে প্রতিষ্ঠিত।
আল্লাহ বলেন :
وَيَقُوْلُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَسْتَ مُرْسَلًا ط قُلْ كَفٰي بِاللّٰهِ شَهِيْدًاۭ بَيْنِيْ وَبَيْنَكُمْ لا وَمَنْ عِنْدَه۫ عِلْمُ الْكِتٰبِ))
“যারা কুফরী করেছে তারা বলে, ‘তুমি আল্লাহর প্রেরিত রাসূল নও।’ বল : ‘আল্লাহ এবং যাদের নিকট কিতাবের জ্ঞান আছে, তারা আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী হিসেবে যথেষ্ট।’’ (সূরা রা‘দ ১৩ : ৪৩)
আল্লাহ অন্যত্র বলেন,
(تِلْكَ اٰيٰتُ اللّٰهِ نَتْلُوْهَا عَلَيْكَ بِالْحَقِّ ط وَإِنَّكَ لَمِنَ الْمُرْسَلِيْنَ)
“এগুলো আল্লাহর নিদর্শন যা তোমার নিকট সত্যরূপে পাঠ করছি আর নিশ্চয়ই তুমি রাসূলগণের অন্তর্ভুক্ত।” (সূরা বাকারাহ ২ : ২৫২)
এরপর আল্লাহ তা‘আলা এ কুরআন অবতীর্ণ করার মূখ্য উদ্দেশ্য বর্ণনা করে বলেন : মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ এ কুরআন অবতীর্ণ করেছেন যাতে সে সকল লোকদেরকে আল্লাহ তা‘আলার শাস্তি ও জাহান্নামের ভয় দেখাতে পারেন যাদের পূর্বপুরুষদেরকে ভীতি-প্রদর্শন করা হয়নি, তারা এ সম্পর্কে গাফেল ছিল। কারণ আল্লাহ কোন জাতির কাছে রাসূল প্রেরণ না করে শাস্তি দেন না।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِيْنَ حَتّٰي نَبْعَثَ رَسُوْلًا)
“আমি রাসূল না পাঠান পর্যন্ত কাউকেও শাস্তি দেই না।” (সূরা ইসরা ১৭ : ১৫)
এখানে মূলত উদ্দেশ্য আরবরা, কেননা তাদের নিকট পূর্বে দীর্ঘ সময়ব্যাপী কোন ভীতি প্রদর্শনকারী আসেনি। তবে আরবগণ উদ্দেশ্য হলেও সকল মানব জাতি এতে শামিল। (ইবনু কাসীর)
এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন : তাদের অধিকাংশের জন্য الْقَوْلُ (বাণী) অর্থাৎ তাঁর শাস্তির বাণী অবধারিত হয়ে গেছে, সুতরাং তারা ঈমান আনবে না। আল্লাহ তা‘আলা ঈমান ও কুফর এবং জাহান্নাম ও জান্নাতের উভয় পথ মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন। ঈমানের পথে দাওয়াত দেয়ার জন্য নাবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। তারপরেও একশ্রেণির মানুষ ঈমানের পথ বর্জন করে কুফরীর পথ অবলম্বন করবে। তাদের ব্যাপারেই আল্লাহ তা‘আলার শাস্তির কথা অবধারিত হয়ে গেছে যেহেতু, তারা ঈমান আনবে না। পূর্ববর্তী নাবীদের উম্মাতের অধিকাংশ ব্যক্তিরাই ঈমান বর্জন করে কুফরীর পথ অবলম্বন করেছিল। এ উম্মাতেরও প্রথম দিকে এমন ছিল, কিয়ামত পর্যন্ত এরূপ থাকবে। সুতরাং তাদেরকে যতই সরল পথে আহ্বান করা হোক তারা ঈমান আনবে না। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَلَوْ شِئْنَا لَاٰتَيْنَا كُلَّ نَفْسٍ هُدٰهَا وَلٰكِنْ حَقَّ الْقَوْلُ مِنِّيْ لَأَمْلَئَنَّ جَهَنَّمَ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِيْنَ)
“আমি যদি ইচ্ছা করতাম, তবে প্রত্যেক ব্যক্তিকে সরল সঠিক পথ দান করতাম, কিন্তু আমার এ বাণী নির্ধারিত হয়ে রয়েছে যে, আমি অবশ্যই জিন ও মানুষ উভয়কে দিয়েই জাহান্নাম পরিপূর্ণ করব।” (সূরা সাজদাহ ৩২ : ১৩)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন :
(إِنَّ الَّذِيْنَ حَقَّتْ عَلَيْهِمْ كَلِمَتُ رَبِّكَ لَا يُؤْمِنُوْنَ- وَلَوْ جَا۬ءَتْهُمْ كُلُّ اٰيَةٍ حَتّٰي يَرَوُا الْعَذَابَ الْأَلِيْمَ) “
নিশ্চয়ই যাদের বিরুদ্ধে তোমার প্রতিপালকের বাক্য সাব্যস্ত হয়ে গিয়েছে, তারা ঈমান আনবে না, যদিও তাদের নিকট সর্বপ্রকার নিদর্শন আসে, যতক্ষণ না তারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে।” (সূরা ইউনুস ১০ : ৯৬-৯৭)
সুতরাং দীনের দাওয়াত পাওয়ার পরেও একশ্রেণির মানুষ কুফরী করবে, তাই বলে দাওয়াতী কার্যক্রম থেকে বিরত থাকা যাবে না, কারণ হিদায়াতের মালিক আল্লাহ তা‘আলা। কার মাধ্যমে কাকে হিদায়াত দেবেন তা আল্লাহ ভাল জানেন। অতএব দীনের দাওয়াতী কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে প্রেরিত রাসূল এবং সরল-সঠিক পথের ওপর প্রতিষ্ঠিত।
২. আল-কুরআন হলো বিজ্ঞানময় কিতাব, এর প্রতিটি আদেশ, নিষেধ ও নির্দেশনা বিজ্ঞানসম্মত।
৩. কুরআন অবতীর্ণ করার আসল উদ্দেশ্য হলো মানুষকে সরল-সঠিক পথের দিশা দেওয়া, যাতে ইহকালে শান্তি ও আখিরাতে নাজাত লাভ করতে পারে।
৪. দাওয়াত দিলে সবাই ঈমান আনবে এমন নয়, বরং যাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলার শাস্তির বাণী অবধারিত হয়ে গেছে তারা ঈমান আনার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings