Surah Fatir Tafseer
Tafseer of Fatir : 11
Saheeh International
And Allah created you from dust, then from a sperm-drop; then He made you mates. And no female conceives nor does she give birth except with His knowledge. And no aged person is granted [additional] life nor is his lifespan lessened but that it is in a register. Indeed, that for Allah is easy.
Tafsir Fathul Mazid
Tafseer 'Tafsir Fathul Mazid' (BN)
৯-১১ নং আয়াতের তাফসীর:
যারা পুনরুত্থানকে অস্বীকার করে অথবা পুনরুত্থান হওয়া অসম্ভব মনে করে, তাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা একটি অতি বোধগম্য দৃষ্টান্ত প্রদান করছেন। জমিন শুকিয়ে ধু-ধু মরুভূমিতে পরিণত হয়ে যায়, এমন ভূমি থেকে ফসল উৎপন্ন হবে তা অসম্ভব মনে হয়। কিন্তু বাতাসের মাধ্যমে আকাশের মেঘমালাকে সে ধু-ধু মরুভূমির দিকে নিয়ে আসেন। তারপর বৃষ্টি নাযিল করে সে ধু-ধু মরুভূমিকে সজিব ও উর্বর করে তোলেন, আর সেখান থেকে ফসল হয়। এসব তো তোমাদের চোখের সামনে হচ্ছে, প্রতিনিয়ত তোমরা তা প্রত্যক্ষ করছ। আল্লাহ তা‘আলা বলছেন, এ প্রাণহীন ধু-ধু মরুভূমি যেমন জীবিত করি তেমন তোমাদেরও জীবিত করব যদিও তোমরা মারা যাওয়ার পর নিশ্চিহ্ন হয়ে যাও। সুতরাং এত সুন্দর ও স্পষ্ট দৃষ্টান্ত দিয়ে বোঝানোর পরেও কি পুনরুত্থানকে অস্বীকার করার কোন সুযোগ আছে? না, কক্ষনো নয়, বরং সকলকে পুনরুত্থিত হতে হবেই।
(مَنْ كَانَ يُرِيْدُ الْعِزَّةَ فَلِلهِ الْعِزَّةُ جَمِيْعًا)
‘যে ব্যক্তি সম্মান লাভ করতে চায় (সে জেনে রাখুক!), সকল সম্মান আল্লাহরই জন্য’ অত্র আয়াতে বলা হচ্ছে যে, সমস্ত সম্মান একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য। আর তাঁর থেকে সম্মান নিতে হলে তাঁর আনুগত্য করতে হবে এবং তাঁর ইবাদত করতে হবে। যে তাঁর আনুগত্য করে তিনি তাকে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতে সম্মানীত করবেন। পক্ষান্তরে যারা তাঁকে ব্যতীত অন্যের ইবাদত করার মাধ্যমে সম্মান অর্জন করতে চায়, কাফির-মুশরিকদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে সম্মান অর্জন করতে চায়, মু’মিনদেরকে অপছন্দ করে তারা কোন দিন সম্মান খুঁজে পাবে না। কেননা তারা উদ্দিষ্ট জায়গা ব্যতীত অন্য জায়গায় সম্মান অন্বেষণ করে। অথচ সম্মান মূলত আল্লাহ তা‘আলার নিকট। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(الَّذِيْنَ يَتَّخِذُوْنَ الْكٰفِرِيْنَ أَوْلِيَا۬ءَ مِنْ دُوْنِ الْمُؤْمِنِيْنَ ط أَيَبْتَغُوْنَ عِنْدَهُمُ الْعِزَّةَ فَإِنَّ الْعِزَّةَ لِلّٰهِ جَمِيْعًا)
“মু’মিনগণের পরিবর্তে যারা কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে তারা কি তাদের নিকট ইযযত চায়? বরং সমস্ত ইযযত তো আল্লাহরই।” (সূরা নিসা ৪:১৩৯)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(وَلِلّهِ الْعِزَّةُ وَلِرَسُوْلِه۪ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ وَلٰكِنَّ الْمُنَافِقِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ)
“মান-সম্মান তো আল্লাহরই, তাঁর রাসূল এবং মু’মিনদের; কিন্তু মুনাফিকরা তা জানে না।” (সূরা মুনাফিকূন ৬৩:৮)
সুতরাং কেউ যদি দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মান অর্জন করতে চায় তাহলে অবশ্যই আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য করার মাধ্যমে তাঁর নিকটই সম্মান অন্বেষণ করতে হবে। কাফির-মুশরিকদের আনুগত্য করে, তাদের ক্ষমতাকে ভয় করে ও তাদের সাথে সুসম্পর্ক রেখে সম্মান পাওয়া যাবে না।
(إِلَيْهِ يَصْعَدُ الْكَلِمُ الطَّيِّبُ)
-অর্থাৎ পবিত্র বাণীসমূহ তাঁরই দিকে আরোহন করে। এখানে পবিত্র বাণী দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ তা‘আলার তাসবীহ-তাহমীদ, যিকির-আযকার ও তেলাওয়াতসহ সকল ভাল কথা। অনুরূপভাবে সকল “সৎ আমল” চাই সে আমল অন্তরের হোক আর অঙ্গ-প্রতঙ্গের হোক সবই তাঁর দিকে আরোহন করে। আরোহন করার অর্থ হলো এ সকল ভাল কথা ও কাজ ফেরেশ্তারা ঊর্ধ্বাকাশে আল্লাহ তা‘আলার কাছে নিয়ে যায়। আল্লাহ তা‘আলা তা কবুল করতঃ সওয়াব প্রদান করেন। পক্ষান্তরে অসৎ আমল সৎ আমলের বিপরীত। তাছাড়া এ আয়াত দ্বারা বোঝা যায়, আল্লাহ তা‘আলা ওপরে রয়েছেন। তিনি সর্বত্র বিরাজমান হলে এসকল উত্তম কথা ও সৎআমল ওপরে আরোহন করে নিয়ে যাওয়ার কোন অর্থই হয় না। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা সর্বত্র বিরাজমান নয়, বরং তিনি ওপরে রয়েছেন।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যারা অসৎ কর্ম করার চক্রান্ত করে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। আর তাদের এ চক্রান্ত কখনো সফল হবে না, বরং তা ব্যর্থ হবেই।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَانْظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ مَكْرِهِمْ أَنَّا دَمَّرْنٰهُمْ وَقَوْمَهُمْ أَجْمَعِيْنَ)
“অতএব দেখ, তাদের চক্রান্তের পরিণাম কী হয়েছেন আমি অবশ্যই তাদেরকে ও তাদের সম্প্রদায়ের সকলকে ধ্বংস করেছি।” (সূরা নামল ২৭:৫১)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(وَقَدْ مَكَرُوْا مَكْرَهُمْ وَعِنْدَ اللّٰهِ مَكْرُهُمْ ط وَإِنْ كَانَ مَكْرُهُمْ لِتَزُوْلَ مِنْهُ الْجِبَالُ)
“তারা ভীষণ চক্রান্ত করেছিল, কিন্তু তাদের চক্রান্ত আল্লাহর সামনেই ছিল যদিও তাদের চক্রান্ত এমন ছিল, যাতে পর্বত টলে যেত।” (সূরা ইবরাহীম ১৩:৪৬)
শাহর বিন হাওশাব এ আয়াতের তাফসীরে বলেন: এসব লোকেরা হল তারা যারা মানুষকে দেখানোর জন্য আমল করে। ইবনু আব্বাসসহ প্রমুখ বলেন: যারা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে হত্যা করার জন্য দারুন নাদওয়াতে একত্রিত হয়েছিল (কুরতুবী)। তবে সঠিক কথা হচ্ছেন এখানে খারাপ কাজের চক্রান্ত করার অর্থ হল- আল্লাহ তা‘আলার সাথে কুফরী করা এবং স্বীয় অনুসারীদেরকে তা করার নির্দেশ দেয়া। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَقَالَ الَّذِيْنَ اسْتُضْعِفُوْا لِلَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْا بَلْ مَكْرُ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ إِذْ تَأْمُرُوْنَنَآ أَنْ نَّكْفُرَ بِاللّٰهِ وَنَجْعَلَ لَه۫ٓ أَنْدَادًا)
“যাদেরকে দুর্বল মনে করা হত তারা অহঙ্কারীদেরকে বলবে: প্রকৃতপক্ষে তোমরাই তো দিবা-রাত্র চক্রান্তে লিপ্ত ছিলে, আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলে যেন আমরা আল্লাহকে অমান্য করি এবং তাঁর শরীক স্থাপন করি।” (সূরা সাবা ৩৪:৩৩, আযওয়াউল বায়ান)
(وَاللّٰهُ خَلَقَكُمْ.... أَزْوَاجًا)
‘আর আল্লাহ তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, মাটি থেকে, তারপর শুক্র থেকে, তারপর তোমাদেরকে করেছেন জোড়া জোড়া।’ এ সম্পর্কে সূরা আল হাজ্জ-এর ৫ নং আয়াতসহ অন্যান্য স্থানেও আলোচনা করা হয়েছে।
(وَمَا تَحْمِلُ مِنْ أُنْثٰي وَلَا تَضَعُ إِلَّا بِعِلْمِه)
অর্থাৎ কোন মহিলা কী গর্ভধারণ করে এবং কখন তা প্রসব করে তা আল্লাহ তা‘আলার জ্ঞানায়াত্ত্ব। তিনি সে সম্পর্কে অবগত আছেন অর্থাৎ সৃষ্টিকূলের মধ্যে যা কিছু হয় সবই আল্লাহ তা‘আলা দেখেন, শুনেন এবং সবই তাঁর জ্ঞানায়ত্ত্বে। এ বিষয়ে সূরা র্আ রা‘দ-এর ৮ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, কোন ব্যক্তির আয়ু বৃদ্ধি করা হোক অথবা হ্রাস করা হোক তা মূলত পূর্ব থেকেই লাওহে মাহফুযে লিপিবদ্ধ রয়েছে। তবে সৎ আমলের মাধ্যমে আয়ু বৃদ্ধি পায়, যেমন আত্মীয়তার বন্ধন বজায় রাখা।
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি “যে ব্যক্তি চায় তার রিযিক বৃদ্ধি করা হোক এবং তার আয়ু বৃদ্ধি করা হোক সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে।” (সহীহ বুখারী হা: ২০৬৮, সহীহ মুসলিম হা: ২৫৫৭)
আর আয়ু কমে যাওয়ার একটি কারণ হলো বেশি বেশি পাপ কাজ করা। তবে এ হ্রাস-বৃদ্ধিও লাওহে মাহফুযে লিপিবদ্ধ রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
( يَمْحُوا اللّٰهُ مَا يَشَا۬ءُ وَيُثْبِتُ ﺸ وَعِنْدَه۫ٓ أُمُّ الْكِتٰبِ)
“আল্লাহ যা ইচ্ছা তা নিশ্চিহ্ন করেন এবং যা ইচ্ছা তা প্রতিষ্ঠিত রাখেন এবং তাঁরই নিকট আছে উম্মুল কিতাব (লাওহে মাহফূজ)।” (সূরা রাদ ১৩:৩৯)
সৎ আমলের মাধ্যমে আয়ু বৃদ্ধি পাওয়া আর অসৎ আমলের মাধ্যমে আয়ু কমে যাওয়া উভয়টাই লাওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ রয়েছে। সুতরাং যে ব্যক্তি চায় তার আয়ু ও রিযিক বৃদ্ধি পাক সে যেন ভাল আমল করে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. পুনরুত্থান দিবস অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে। এতে কোনই সন্দেহ নেই।
২. আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত কেউ কাউকে সম্মান দান করতে পারে না।
৩. ভাল কথা ও সৎ আমলসমূহ আল্লাহ তা‘আলার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়।
৪. প্রত্যেকটি কাজ আল্লাহর জ্ঞানায়ত্বে। তিনি জানেন না এমন কোন কাজ সংঘটিত হয় না।
৫. আত্মীয়তার সম্পর্কের মাধ্যমে আয়ু বৃদ্ধি পায় আর পাপাচারের কারণে আয়ু কমে যায়।
৬. আল্লাহ তা‘আলা ঊর্ধ্বে আছেন, তাই ফেরেশতারা সৎ আমলসমূহকে ওপরে আল্লাহ তা‘আলার কাছে নিয়ে যায়।
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Be our beacon of hope! Your regular support fuels our mission to share Quranic wisdom. Donate monthly; be the change we need!
Are You Sure you want to Delete Pin
“” ?
Add to Collection
Bookmark
Pins
Social Share
Share With Social Media
Or Copy Link
Audio Settings